সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-March,2023 - Thursday ✍️ By- সুবীর সরকার 529

গঞ্জহাটের আখ্যান/৩

গঞ্জহাটের আখ্যান/৩
সুবীর সরকার
--------------------------

১০.
মধ্যরাতের অন্ধকারে ছুটে চলেছে চন্দ্রকান্ত ধনীর শ্বেতবর্ন অশ্ব। বাতাস থম ধরে আছে।আকাশে চাঁদ স্তিমিত। কোন এক গানবাড়ি থেকে ফিরে আসছেন চন্দ্র ধনী। তিনি এলাজানের বিশাল বিস্তারের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নামলেন। কি বিশাল এই নদী এলাজান! এলাজান বয়ে চলেছে। তার প্রবাহের পাশে পাশে কত কত গঞ্জ,বন্দর, গা গেরাম।এলাজান শালটিয়া হাউসের ডেরা বানিয়াদহ মরা মানসাই। আর সব মিলে মিশে বড় তোর্সা।নদী মিশে যায় নদীতে। আবার নদী থেকে বেরিয়ে আসা নদী। তখন সিঙ্গিমারি বল, ধরলা বল, মানসাই বল, বুড়ি তোর্সা বল সব কেমন ভ্রম ও বিভ্রমের ভেতর ঢুকে পড়া এক মস্ত সংশয়।

১১.
তখন চন্দ্র ধনীর পরদাদার জোতদারী আমল। কুচবিহার বা বেহার রাজ্যের শাসক ছিলেন মহারাজা 
হরেন্দ্রনারায়ণ ভূপ। এই এলাজান নদীর কাছেই ছিল বিশাল বন্দর রাশিডাঙ্গা।কিছু দূরেই বন্দর আক্রার হাট।বন্দর চিলকিরহাট।বন্দর গোসানী। পাট তামাক ধান ছিল প্রধান রপ্তানী পণ্য।কত কত রকমের সব ধান যে হত। হাটগুলো ছিল জমজমাট। কোন কোন হাট সারারাত ধরে চলতো।
আশেপাশে ছিল গভীর সব বনভূমি। রাজপুরুষ আর জোতদারদের মৃগয়া ক্ষেত্র।
দিনের বেলায় বাঘ ডাকত টাপুরহাটের জঙ্গলে।
হাটুরেরা সশস্ত্র এবং দল বেঁধে চলাচল করত।
আবার শীতে এলাজান নদীর চরে শরবনে গুলা বাঘেরা আস্তানা গারতো।দেখা মিলত হরিণের।
আর গ্রাম গঞ্জ ছুঁয়ে ছিড়ে বয়ে চলতো নদী এলাজান।
আবার কখনো শালটিয়ার বড় নৌকোর মাঝি ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে ঢুকে পড়ত এলাজান নদীর বিস্তারে। সেখানে তখন হয়তো ভাওয়াইয়া গাইতে গাইতে মাছ ধরছে সুবল দাস।কিংবা এলাজান নদীর পাড়ে পাড়ে বাদ্য ও বাজনা বাজতে থাকে।বিবাহ নাচের দেশে বয়ে চলে নদী এলাজান। নদী শালটিয়া। নদী মরা মানসাই।
১২.
কুচবিহার অধিপতি মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ কাশী যাত্রা করবেন। নদী এলাজানের পারে শুরু হয়েছে ভারি ব্যস্ততা।রাজপুরুষ আর স্থানীয় জোতদারেরা
সকল প্রস্তুতি তদারকি করছেন। নদীপার্শ্বে স্থাপিত হয়েছে সারি সারি শিবিকা। এলাজান থেকে যাত্রা শুরু করে ৪৫ দিন ধরে সেই রাজকীয় নৌবহর চলবে। এলাজানের কাছে পিঠে আকুল পশারের পশারির হাট। রশিডাঙা বন্দর থেকে ব্যাপারী মহাজনের হাজারমণি সব নৌকো।জমজমাট থাকে গোটা চত্বর।এলাজানের পারে পারে গা গঞ্জের মানুষের জমায়েত।সকলেই উৎসুক হয়ে আছে কবে কখন রাজাবাহাদুর এসে হাজির হন।
এতসব ঘটে।ঘটেই চলে।আর এলাজানের স্রোত গিয়ে মিশে যেতে থাকে শালটিয়ার খোদলে। কিংবা মরা মানসাই বুঝি ঢুকে পড়তে থাকে সবেগে এলাজানের বুকের ভেতর।

১৩.
চন্দ্রকান্ত ধনী তার বিভ্রম থেকে জেগে ওঠেন। একটা পুরোন কালখন্ড থেকে ফিরে এসে তিনি মস্ত হাই তোলেন আর আবার উঠে বসেন তার ঘোড়ার পিঠে। 
তিনি কিন্তু এলাজানের কাছ থেকে সরে যান না। সরে যেতে পারেন না।
তিনি এই নদী এলাজানের গতিপ্রবাহে জড়িয়ে থাকা অগণন মিথগুলির শরীরে হাত রেখে মিথগুলিকে পুনর্জাগরণ এনে দিতে থাকলে মধ্য নিশীথের খুব গহিন থেকে ভেসে আসতে থাকে রাতপাখিদের ডানার বিন্যাস। আর এলাজান বয়ে চলে রাশিডাঙার দিকে। কামরূপ কামতার দিকে।
এলাজানে ভেসে যায় কোন গ্রাম্য যুবতীর কঙ্খের কলসি।
এভাবে এলাজান মিথ হয়ে ওঠে।

১৪.
পর্যটক ফিচ সাহেব যখন সিঙ্গিমারি নদী দিয়ে কামতাপুরের দুর্গের পাশ দিয়ে কামরূপের দিকে যাচ্ছিলেন (অমিয়ভূণ মজুমদারের মধু সাধু খাঁ উপন্যাসে যার বর্ণনা পাই), আচ্ছা সেই সিঙ্গিমারীর জলে কি নদী এলাজান ঢুকে পড়েছিল! যেমন শালটিয়া বা মরা মানসাই বারবার কয়েকশ বছর জুড়ে নিজেদের জল নিজেদের মধ্যেই বিনিময় করে প্রবাহকে স্ফীত করে চলেছিল।
মানুষের জীবন,জীবনের পর জীবন এভাবেই বাঁচে নদী এলাজান প্রবাহের তীরে তীরে।
মহেন দেউনিয়া এলাজান নদীতে বসিয়ে দেন নৌকা বাইচের আসর। জলে বৈঠার ঘুঙ্ঘুর বাজে। নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষের মেলা।
মধ্য এলাজান থেকে ভেসে আসে গানের কলি_
"হাউসের মেলা জোড়া খেলা এলাজানের কাছাড়ে
ও হো রে লাল মিঞার নাও ফাইনালে"
এক শীতের দুপুরে এই এলাজনের পারেই চিতা জ্বলে উঠেছিল মহেন দেউনিয়ার।

১৫.
সেই কবে নূরুলদিনের নেতৃত্বে জ্বলে ওঠা কৃষক বিদ্রোহের আগুন কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছিল এলাজান সন্নিহিত ভূগোলেও। এলাজানের জলে কি ভেসে গিয়েছিল কৃষক সেনাদের ছিপ নৌকো!আর এর সাথে যুক্ত হয়েছিল এলাজানের কিনারে বসা আবুতারার হাটে মাঝে মাঝে কিসসা শোনাতে আসা ধলা ওস্তাদের নানান কিসিমের গল্প শুনতে জড়ো হওয়া হরেক রঙের সব মাটি আর ধুলো মাখা মানুষেরা।সেই গল্পে যেমন থাকত সিরাজ ডাকাতের কথা, তেমনি রাজার হাতির শিকারযাত্রার
সিজিল মিছিলের কথাও।
এলাজানের জলস্রোত জুড়ে কখনো ঘুরে বেড়াত
কামতাপুরের নীলাম্বর রাজার কথা।হোসেন শাহের সেনাদলের কথা।
এলাজানের জলে চাঁদনী রাতের আলো।আর
পুরোন বেহার রাজ্যের রাজধানী আঠারোকোটার
শিথানে গিয়ে এলাজান মিশে যেত নদী শালটিয়ার সাথে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri