সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

16.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৬

16.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৬

15.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৫

15.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৫

14.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৪

14.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৪

13.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৩

13.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৩

12.অন্তহীন আকাশের নীচে/১২

12.অন্তহীন আকাশের নীচে/১২

11.অন্তহীন আকাশের নীচে-/১১

11.অন্তহীন আকাশের নীচে-/১১

10.অন্তহীন আকাশের নীচে/১০

10.অন্তহীন আকাশের নীচে/১০

9.অন্তহীন আকাশের নীচে/৯

9.অন্তহীন আকাশের নীচে/৯

8.অন্তহীন আকাশের নীচে/৮

8.অন্তহীন আকাশের নীচে/৮

7.অন্তহীন আকাশের নীচে/পর্ব ৭

7.অন্তহীন আকাশের নীচে/পর্ব ৭

6.অন্তহীন আকাশের নীচে/৬

6.অন্তহীন আকাশের নীচে/৬

5.অন্তহীন আকাশের নীচে/৫

5.অন্তহীন আকাশের নীচে/৫

4.অন্তহীন আকাশের নীচে/৪

4.অন্তহীন আকাশের নীচে/৪

3.অন্তহীন আকাশের নীচে/৩

3.অন্তহীন আকাশের নীচে/৩

2.অন্তহীন আকাশের নীচে/২

2.অন্তহীন আকাশের নীচে/২

1.অন্তহীন আকাশের নীচে-১

1.অন্তহীন আকাশের নীচে-১

07-January,2023 - Saturday ✍️ By- দেবপ্রিয়া সরকার 501

অন্তহীন আকাশের নীচে/৩

অন্তহীন আকাশের নীচে
দেবপ্রিয়া সরকার 
পর্ব ৩
####################

আমগাছের ডালের ওপর দুটো ফিঙে বসে খুনসুটি করছিল একে অপরের সঙ্গে। একটা বোধহয় পুরুষ , অন্যটা মেয়ে। সোহাগী মেয়ে পাখিটা মাঝে মাঝেই তফাতে সরে যাচ্ছে। পরক্ষণেই অপরজন গুটি গুটি এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে, মাথা ঘষছে সঙ্গিনীর ডানায়। হয়তো মানভঞ্জনের পালা চলছে তাদের অথবা আদর আদর খেলা। জানালা দিয়ে একমনে ফিঙে দুটোর তামাশা দেখছেন উষারানী। মাঝে মাঝে কৌতুকের হাসি ফুটছে তাঁর ঠোঁটে। পাখি ঘরে ঢুকে চুপচাপ হাসিমুখে দেখছিল সবটা। একটু পড়ে আলত স্বরে ডাকল, দিদা, ও দিদা। কী করছ? আমি পাখি। তুমি বলেছিলে রাজকুমারীর বিয়ের গল্প শোনাবে, কোচিঙয়ে যাবার আগে তাই চলে এলাম তোমার কাছে। 
পাখির গলার শব্দে ঘোর ভাঙল উষারানীর। বাইরের ফিঙেদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তিনি তাকালেন বকুলের মেয়ে পাখির দিকে। হাসি মুখে বললেন, এসেছিস পাখি দিদিভাই? বোস এখানে বোস। 
দিনরাত একা ঘরে থাকা উষারানীর কাছে কেউ এলে ভারী আনন্দ হয় তাঁর। যে আসে খুশি মনে তাকেই কাছে টেনে নেন। পাখি সুযোগ পেলেই চলে আসে উষারানীর ঘরে। আজও যেমন একটু বাড়তি সময় পেয়ে চলে এসেছে। যদিও তার মা এখানে ঘনঘন আসা পছন্দ করেনা তবুও উষারানীর স্নেহের টান বারবার তাকে নিয়ে আসে এই আলোছায়া মাখা ঘরখানায়। আসবাব বলতে এখানে প্রায় কিছুই নেই, যাও বা আছে তাও বহুব্যবহারে জীর্ণ। দেওয়ালে রঙের প্রলেপ পড়ে না বহুকাল। তবুও পাখির মনে হয় অদ্ভুত মায়ার আঁচল বিছানো আছে ঘরটাতে। একবার ঢুকলে বারবার আসতে মন চায়। তাই হয়তো তার মা বকুলও হাজার অসুবিধে সত্বেও রাগে গজগজ করতে করতে থেকে যায় উষারানীর কাছে। ছেড়ে যেতে চায় না এই ঘরের চৌহদ্দি।  
হাত ধরে পাখিকে নিজের কোলের কাছে বসালেন উষারানী। ঘোলাটে চোখদুটো আচমকা চকচক করে উঠল তাঁর। তারপর বলতে শুরু করলেন, সারা শহরে তখন সাজো সাজো রব। রাস্তার পাশে বাড়িগুলোকে আলোর মালায় সাজানো হয়েছিল। বাঁশ বেঁধে বানানো হয়েছিল বড় বড় তোড়ন। উনিশটা কামানের সেলামী দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল মহারাজ এবং তাঁর সঙ্গে আসা বরযাত্রীদের। সে এক বিরাট সমারোহ! বরযাত্রীদলের শুরুতে ছিলেন রাজদূতেরা। তারপর সুদৃশ্য সাজের একদল নর্তকী। চল্লিশটা হাতি এবং অজস্র ঘোড়া চলছিল সার বেঁধে। তাদের পেছনে ছিল ঝলমলে পোশাক পরা রাজকীয় বাজনদার আর একদম শেষে বরের বেশে জয়পুরের মহারাজা! আমাদের হবু জামাইবাবু। খাওয়াদাওয়ারও এলাহি আয়োজন হয়েছিল! হাজার হাজার লোকের রান্না করছিল ঠাকুর-চাকরেরা। হালুইকর বসেছিল ভিয়েন নিয়ে। বরযাত্রীদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অনেক গণ্যমান্য মানুষদের। ব্রাহ্মণদের জন্য একরকম রান্না হচ্ছে তো গরিব ও জেলবন্দি কয়েদিদের জন্য আরেক রকম। সমস্ত রাজ কর্মচারী, রক্ষী, সেপাই, বরকন্দাজদের নেমন্তন্ন ছিল মহাভোজে। সানাইয়ের সুরে ভেসে যাচ্ছিল চারদিক।* 
-আর রাজকুমারী? তাঁকে কেমন লাগছিল? নিশ্চয়ই খুব জাঁকজমক ছিল সাজে?
-রাজকুমারী গায়ত্রী দেবীর চেহারা তো এমনিতেই ছিল পরীর মতো তারওপর গা ভর্তি গয়না, সুন্দর নক্সা করা শাড়ি, কপালে চন্দনের কারুকাজ, দু’হাত ভরা মেহেন্দিতে এক্কেবারে অপরূপা লাগছিল তাঁকে।
একবার মনে মনে কনের সাজে সেজে ওঠা রাজকুমারীর চেহারাটা কল্পনা করার চেষ্টা করল পাখি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রাজকুমারীর বদলে তার মনের চোখে ধরা পড়ল নিজেরই মুখাবয়ব! লজ্জায় রাঙা হল সে। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তুমি এতো সব আয়োজন নিজের চোখে দেখেছিলে দিদা?
-দেখেছিলাম তো। আমি মাত্র একবছর আগেই তোর দাদুর সঙ্গে এই শহরে এসেছিলাম। রাঘব তখন কোলে। আমার শাশুড়ি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কিছুতেই আসতে দেবেন না। এদিকে তোর দাদুও নাছোড়বান্দা! বিয়ের দু’বছর হতে চলল। সে আর কিছুতেই বউ-ছেলে ছেড়ে একলা একলা শহরে পড়ে থাকবে না।  শেষকালে ওর জোরাজুরিতেই চলে এলাম এখানে। শাশুড়িও সঙ্গে এলেন। নাতিকে যে সে চোখে হারায়! 
একসঙ্গে এতোগুলো কথা বলে হাঁপাচ্ছিলেন ঊষারানী। তাঁকে চুপ করে থাকতে দেখে পাখি বলল, দাদু কি রাজবাড়িতে কাজ করতেন? 
একটু দম নিয়ে ঊষারানী বললেন, হ্যাঁ রে পাখিদিদি, রাজার সেরেস্তার কর্মচারী ছিলেন তোর দাদু। মাঝেমধ্যে আমিও যেতাম রাজবাড়িতে। অন্দরমহলে কোনও বড় কাজ হলেই ডাক পড়ত। রাজার বাড়ি বলে কথা! উৎসব অনুষ্ঠান লেগেই থাকত। আজ এই পরব তো কাল ওই পুজো। আজ এই অতিথি তো কাল ওই কুটুম। দেশি-বিদেশি লোক দলে দলে আসছে তো আসছেই। প্রচুর উৎসব হতে দেখেছি রাজবাড়িতে, কিন্তু ওই বিয়ের মতো অনুষ্ঠান আর একটাও দেখিনি!
কাঁপাকাঁপা গলায় কথাগুলো বলে একটা তৃপ্তির হাসি হাসলেন ঊষারানী। বকুল ছাদ থেকে একগোছা কাপড় নিয়ে ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠল, তুই এখনও এখানে বসে আছিস পাখি? ক’টা বাজে সেই খেয়াল আছে? আজকে কি টিউশনি ফাঁকি দিতে চাস?
পাখি কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, না না যাচ্ছি তো। স্যাররা আসতে দেরি করেন। কোচিং ক্লাসে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকার থেকে ভাবলাম দিদার সঙ্গে একটু গল্প করে যাই। দিদার কাছ থেকে রাজবাড়ির গল্প শুনতে আমার খুব ভাল লাগে।  
বকুল ঊষারানীর দিকে একটা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি দিয়ে বলল, রাজপাট সব কোন কালে চুকেবুকে গিয়েছে তার ঠিক নেই, এই বুড়িই শুধু পড়ে আছে রাজা-রানির গপ্প আঁকড়ে। দিনরাত কেবল রাজবাড়িতে এই ছিল আর রাজবাড়িতে ওই ছিল! তা যাও না কেন বাপু ওই রাজবাড়িতেই গিয়ে থাকো গে। আমাদের শুধু শুধু জ্বালাবার কী দরকার?
-আহ মা! তুমি সুযোগ পেলেই দিদাকে কথা শোনাও। বয়স্ক মানুষ আর কী করবেন? রাজবাড়ির সকলকে দিদা কত কাছ থেকে দেখেছেন। এমন মানুষ এখন গোটা শহরে আর ক’টা আছেন বলতে পারো? আমার তো খুব ভাল লাগে রাজারানিদের গল্প শুনতে। বইতে তো আর এতকিছু লেখা থাকে না। নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে কার না ইচ্ছে করে বলো? ইন্দ্রদাও মাঝে মাঝে রাজাদের নিয়ে কত ভাল ভাল গল্প করে। সেদিনই গল্প বলছিলেন মহারাজ বিশ্ব সিংহ এবং কোচ-কামতা রাজ্য প্রতিষ্ঠার। 
-ইন্দ্রদাটা আবার কে?
-আমাদের কোচিঙয়ের স্যার। ইতিহাস পড়ায়। শুনেছি উত্তরবঙ্গের ইতিহাস নিয়ে কীসব গবেষণা করছে ইন্দ্রদা। সেসব গবেষণা নাকি শিগগির ছাপা হবে বিদেশের কোনও কাগজে। ইংরেজি স্যার সৌরিশদা বলে ইন্দ্রদাকে তারপর আর পাওয়া যাবে না কোচিং সেন্টারে পড়ানোর জন্য। চাকরি পেয়ে যেকোনো দিন ইন্দ্রদা এই শহর ছেড়ে চলে যাবে। 
শেষের কথাগুলো বলার সময় গলাটা কেমন ভারী হয়ে আসছিল পাখির। বকুলের নজর এড়ায়নি। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য হাতের কাপড়গুলো ভাঁজ করতে করতে বলল, কে কোচিঙয়ে পড়ালো না পড়ালো তাতে তোর কী? আর কয়েকমাস পরেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কলেজে ভর্তি হবি। তখন তো আর এই কোচিঙয়ে তুই পড়তে আসবি না। ওদের ভাবনা ওদের ভাবতে দে। এখন যা আর মেলা বকবক করিস না। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
পাখি ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে ঊষারানীর কাছে এসে বলল, আজ তবে আসি দিদা? টিউশনের সময় হয়ে গেল। আমি এরমধ্যে আবার আসব তোমার কাছে। রাজকুমারীর বিয়ের গল্প পুরোটা শুনতেই হবে। তুমি মনে করে রেখো, কেমন?
ফোকলা দাঁত বের করে আহ্লাদের হাসি হাসলেন ঊষারানী। 
ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যমনস্কভাবে হাঁটতে লাগল পাখি। কোচিং সেন্টার মিনিট দশেকের হাঁটা পথ। বকুল আর সুরেনের পাখিই একমাত্র সন্তান। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে পাখি জেনেছে বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিল তার মা বকুল। কিন্তু প্রসবকালে কিছু জটিলতা হওয়ায় বাচ্চাটা বাঁচেনি। এরপর বেশ কয়েকবছর আর সন্তানের মুখ দেখতে পায়নি তার বাবা-মা। ডাক্তারের দোরে অনেক ঘুরেছে। মাথা ঠুকেছে মন্দিরে মন্দিরে। অবশেষে লাগাতার চিকিৎসা, অজস্র প্রার্থনা, মানত, উপবাসের পর তাদের কোল আলো করে এসেছে পাখি। তাই বাবা-মায়ের কাছে পাখি একটু বেশিই আদর যত্ন পেয়ে বড় হয়েছে।
কাপড়ের দোকানের সামান্য কর্মচারী হয়েও মেয়ের লালনপালনে তার বাবা সুরেন কোনও ত্রুটি রাখেনি। মূলত পাখির লেখাপড়ার বাড়তি খরচ জোগাতেই ঊষারানীকে দেখাশোনার কাজ নিয়েছে তার মা। বাবা-মায়ের পরিশ্রমের মূল্য সাধ্য মতো চুকিয়েছে পাখিও। চিরকাল ক্লাসে প্রথম দশে থেকেছে। মাধ্যমিকেও নজরকাড়া ফল করে চমকে দিয়েছে সকলকে। স্কুলের ম্যাডামদের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারের স্যাররাও পাখিকে উৎসাহ দেন। বিভিন্ন রেফারেন্স বই, নোটস দিয়ে সাহায্য করেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে এজন্য পাখির কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বিশেষ করে ইন্দ্রদার কাছে। ইন্দ্রদা নিজেও অনেক লড়াই করে মানুষ হয়েছে। তাই হয়তো পাখির যন্ত্রণাটা ভাল করে বোঝে। সবসময় ভাল ভাল কথা বলে তার মনোবল বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে। 
ইন্দ্রদার কারণেই হয়তো ইতিহাসের প্রতি একটা ভাললাগা তৈরি হয়েছে পাখির। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও পুরনো দিনের বিভিন্ন গল্পগাছা পড়তে ও শুনতে তার বেশ লাগে। রাজকাহিনি শোনার লোভেই সে সুযোগ পেলে চলে যায় ঊষারানীর কাছে। রাজপুত্র, রাজকন্যাদের গল্প শুনতে শুনতে সেও পাড়ি জমায় কোনও অলীক কল্পনার জগতে। মনের চোখে ভেসে ওঠে সুদৃশ্য একখানা স্বপ্নপুরীর কল্পচিত্র আর সেই স্বপ্নপুরীর রাজা হিসেবে বারবার আবির্ভূত হয় এক সুদর্শন যুবাপুরুষ-ইন্দ্রায়ুধ!

*তথ্যসূত্র- আ প্রিন্সেস রিমেম্বারসঃ গায়ত্রী দেবী    

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri