মেটেলি টি গার্ডেন
গৌতম চক্রবর্তী
---------------------
মংপং, ওদলাবাড়ি, ডামডিম, মালবাজারের চা সাম্রাজ্য পেরিয়ে সারাটা পথ শুধু সবুজের হাতছানি। শিলিগুড়ি থেকে সেবক, মালবাজার হয়ে চালসা অথবা জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি কিংবা ছোট গাড়িতে দোমোহনী, মৌলানি হয়ে যেদিক দিয়েই আসা যাক না কেন এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যেই চালসা মোড়। জলপাইগুড়ি থেকে চালসার দূরত্ব প্রায় পঞ্চান্ন কিলোমিটার। জঙ্গল অধ্যুষিত বনপথ। শিলিগুড়ি থেকে রওনা হয়ে ছোট শহর মালবাজার ছাড়িয়ে যখন চালসা মোড়ে এসে পৌঁছালাম তখন প্রায় দশটা বাজে। আসার পথে কত পাহাড়ি নদী দেখলাম। অদ্ভুত তাদের সব নাম। লিস, ঘিস, চেল, মাল, নেওড়া ইত্যাদি। সাদা পাথরকুচিতে ভরা বিস্তীর্ণ নদীখাত, গিরিশ্রেণী, বনময় ছায়াবীথি। আর মাঝে মাঝে ছোট বড় গ্রাম-গঞ্জ-শহর। শিলিগুড়ি থেকে এই পথে ভ্রমণে আসা এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা। চালসা পর্যন্ত এই পথের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বারবার আসা যায়। তাছাড়া চালসাকে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরবঙ্গের পাহাড়-অরণ্য-নদী-ঝর্ণা-চা বাগানের মাধুর্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায়। চালসা দোকানপাটে বেশ জমজমাট। বেশকিছু দোকানপাট এবং চা মিষ্টির দোকানও আছে। চালসাতে সাময়িক যাত্রাবিরতি। পুরী সবজি আর গুড়ের রসগোল্লা দিয়ে টিফিন সারলাম। এখন বাঁ দিকে ঘুরে যাব পাহাড়ের ওপর। ডানদিকের রাস্তা চলে গেছে লাটাগুড়ি হয়ে গরুমারার দিকে আর সামনের রাস্তাটা গভীর অরণ্য ভেদ করে খুনিয়ার দিকে চাপড়ামারি অরণ্যে চলে গেছে। অন্যদিকে ঝালং-বিন্দু। আমার চার চাকার যন্ত্রদানব ছুটে চলেছে মেটেলির পথে। লক্ষ্য আজ মেটেলি, জুরান্তি, চালৌনি, এঙ্গো আর সামসিং চা বাগিচা ভ্রমণ। সময় পেলে নাগেশ্বরী। শিলিগুড়ি থেকে ৮৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সবুজ ডুয়ার্সের চালসা পার করে আরো উত্তরে সর্পিল পথে অনেকটাই উঁচুতে মেটেলি আমাদের গন্তব্য। থাকবো সামসিং এর বনবাংলোতে। যাব রকি আইল্যান্ড এবং সুন্তালেখোলাতেও। মাঝখানে চা বাগিচাগুলিতে ক্ষেত্রসমীক্ষা করে নেব।
ডুয়ার্সের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়েও বাকি পৃথিবী থেকে যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই রয়েছে ডুয়ার্সের চা জগত। খবরের কাগজে মাঝেমধ্যে চা শ্রমিকের মৃত্যু সংবাদ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না সেই জগতের খবর। বাইরের মানুষের কাছে বা ডুয়ার্সের নতুন প্রজন্মের কাছে বিশাল এই চা সাম্রাজ্যের ভুগোল সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। তাই একদিকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অন্যদিকে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ বাগিচাক্ষেত্র, উত্তরের অসাধারণ হিমালয় পর্বতমালা, অনাবিল সারল্য নিয়ে বাগিচার আদিবাসী ও নেপালি বাগিচা শ্রমিকদের জীবন জীবিকার সংগ্রাম এবং সামগ্রিকভাবে চা বাগিচাগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও পরিকাঠামোগত দিক তুলে আনবার চেষ্টা করছি এই কলমে। মালবাজার ব্লকের ২২টি চা বাগিচা জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের চারটি, রাজগঞ্জ ব্লকের দুটি, মেটেলি ব্লকের ১২টি বাগিচা সফর শেষ করে শুরু করব বানারহাট, নাগরাকাটা, ধূপগুড়ি, বিন্নাগুড়ি ইত্যাদি অঞ্চলের বাগিচাগুলির সমীক্ষা। পাশাপাশি লাটাগুড়িকে কেন্দ্র করে ক্রান্তির হাট এবং রামসাইয়ের যাদবপুর চা বাগিচার কাজ করলে জলপাইগুড়ির বাগিচা সফর শেষ হবে। মালবাজার ব্লকের চা বাগিচাগুলির পরিকাঠামোগত দিক এবং পর্যটন সম্ভাবনার আঙ্গিক নিয়েই আলোচনার পরিসর সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। মেটেলি সার্কিট বা নাগরাকাটা বানারহাটের এই পর্বে ডুয়ার্সের চা বাগানগুলির পরিকাঠামোর দিকগুলো তুলে ধরবার পাশাপাশি চা বাগিচার জনজীবনের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলিকেও তুলে ধরার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে। সবিনয়ে বলে রাখি, এই লেখা কোন গবেষণাপত্র নয়, নয় বই থেকে হুবহু টুকে দেওয়া কোন থিসিস পেপার। অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য এই কাজটি আমি করতে নেমেছি সমাজমনস্ক একজন মানুষ হিসাবে, ইতিহাসের একজন শিক্ষক হিসাবে, ডুয়ার্সকে ভালোবাসে যে সকল মানুষজন তাদের একজন প্রতিনিধি হিসাবে, ডুয়ার্সের আদিবাসী, জনজাতিভুক্ত এবং নেপালী শ্রমিকদের বন্ধু হিসাবে এবং ডুয়ার্সের সমস্যাদীর্ণ চা বাগিচার একজন শুভানুধ্যায়ী হিসাবে।
এবারের সুহানা সফর চায়ের জনপদ মেটেলি। আইভিল, ইনডং, চালসা, কিলকট, মেটেলি, নাগেশ্বরী, জুরন্তি, এঙ্গো, চালৌনি, সামসিং হয়ে মালবাজারে এসে শেষ হবে আমার ক্ষেত্রসমীক্ষার কাজ। ২০১৭-র নভেম্বর মাস থেকে ডুয়ার্সের বাগিচাগুলিতে আমার শুরু হয়েছিল চরৈবেতি। চলতে চলতে কখন যে জলপাইগুড়ি সদর, রাজগঞ্জ, মেটেলি এবং মালবাজার ব্লকের প্রত্যেকটি চা বাগানে সমীক্ষা করে ফেলেছিলাম তা নিজেই বুঝতে পারিনি। ডুয়ার্সের বাগানগুলি সমীক্ষা করতে গিয়ে কোন কোন সময় ওঁরাও পরিবারে রাত্রিযাপন করে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাদের সমাজ জীবন সম্পর্কে যেমন জেনেছি, তেমনি ডুয়ার্সের আদিবাসীদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবন কেমনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তারও স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছি। পাশাপাশি জনকল্যাণের নামে খ্রিষ্টধর্মের ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়ার সর্বনাশা দিকগুলিও পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা আছে সেটাও উপলব্ধি করছি। ডানকানসের বাগরাকোট, কিলকট, নাগেশ্বরী ছাড়াও সামসিং, রায়পুর, জয়পুর, শিকারপুর, ভান্ডারপুর, মানাবাড়ি, সোনালী, কুমলাই, তুনবাড়ি বাগানের ভয়ঙ্করতম শ্রমিক শোষণ এবং পরিকাঠামোগত সমস্যার সংকট লক্ষ্য করেছি। অন্যদিকে সোনগাছি, আইভিল, চালসা, চিলৌনি, এঙ্গো, জুরান্তি, মেটেলি, লিজ রিভার, পাথরঝোরা, ওদলাবাড়ি, ডেঙ্গুয়াঝাড়, ডামডিম, করলাভ্যালি, রাঙ্গামাটি ইত্যাদি বাগিচাগুলির মত সুনাম অর্জনকারী বাগিচাগুলিতেও ঘুরে দেখেছি। বিস্তারিত সমীক্ষা করে দেখেছি ভান্ডিগুড়ি, সরস্বতীপুর, কৈলাসপুর, আনন্দপুর, যোগেশচন্দ্র, নেপুচাপুর, সাইলি, রানীচেরা, গুরজংঝোরার মত সমস্যাদীর্ণ চা বাগিচা ক্ষেত্রগুলিতে যারা সুনাম বজায় রেখে টিকে থাকবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। তাই সীমিত সামর্থে নিজের উদ্যোগেই বেরিয়ে পড়েছি জলপাইগুড়ির বগিচাগুলির সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে তুলে ধরার লক্ষ্যে।
চা এর জগতে অত্যন্ত সুনামের অধিকারী মালবাজার মহকুমার মেটেলি টি গার্ডেনটির পরিচালক মেটেলি টি কোম্পানি লিমিটেড। ডিবিআইটিএ ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত এই বাগানটির বর্তমান ডিরেকটর দীপঙ্কর চ্যাটার্জী ১৯৮৮ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি কোম্পানির দায়িত্বভার গ্রহণ করে। রুদ্র চ্যাটার্জী ডিরেকটর হিসাবে যোগদান করেন ২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফের সংখ্যা ৭ জন। বাগানে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলো হল পিটিডব্লিউইউ, ডব্লিউবিটিজিইএ এবং টিইএডব্লিউ বি। বাগিচার আয়তন ১০৪৬ হেক্টর। চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৭০৮.০৯ হেক্টর। এক্সটেনডেড জমি নেই। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৩৪.৪২ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৭২.৬০ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদিক্ষেত্র ৭০৮.০৯ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং ড্রেন ও সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে প্রতি হেক্টর জমি পিছু ১৯০০ কেজি করে চা উৎপাদিত হয় । মেটেলি চা বাগিচার নিজস্ব উৎপাদিত চা ৫০ লাখ কেজি এবং ফ্যাক্টরিতে প্রস্তুত মোট বিক্রয়যোগ্য চা ১১ লাখ কেজি। বহিরাগত বাগান থেকে সংগৃহীত এবং কেনা কাঁচা চা পাতায় প্রস্তুত বিক্রয়যোগ্য চায়ের পরিমাণ ২ - ২.৫০ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে মোট ১৩-১৪ লাখ কেজি বিক্রয়যোগ্য চা উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত চা এর প্রকৃতি অনুযায়ী এই বাগানে ইনঅরগানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত চা চরিত্রগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত মানের চা উৎপাদিত হয়। মেটেলি চা বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ১২৮ জন। করণিক ৬ জন এবং ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিকাল স্টাফ ১৯ জন । বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৯৫০ জন। মোট জনসংখ্যা ৬৬২৭। স্থায়ী শ্রমিক ১৫০৫ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৭৬ জন। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক সংখ্যা ২৬ জন। কম্পিউটার অপারেটর ৪ জন। সর্বমোট সাব স্টাফ ১২৮ জন। ক্ল্যারিক্যাল, টেকনিক্যাল এবং অস্থায়ী মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৫১ । কর্মরত শ্রমিক ১৭৬৪ জন। অশ্রমিক সদস্যদের সংখ্যা ৪৯৬৩ জন।
মেটেলি চা বাগানটি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের থেকে আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। বাগান পরিচালনার কার্যকরী মূলধন আসে ব্যাঙ্ক, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার লক্ষী টি কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমান লিজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা ২০৩০ পর্যন্ত। মেটেলি চা বাগানে আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৯০৮ টি। বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাসের সংখ্যা ১৭৬৮। শতকরা ৫১ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। বাগিচায় শৌচাগার যুক্ত বাড়ির সংখ্যা ৯৬৮ টি। মেটেলি চা বাগিচায় বাৎসরিক বোনাসের হার কুড়ি শতাংশ। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার আছেন। বাগিচার ক্রেশগুলিতে আছে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। ক্রেশগুলিতে শৌচাগার আছে। দুধ বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের সরবরাহ করা হয়। নিয়মিত ঔষধ দেওয়া হয়। পানীয়জল পর্যাপ্ত পরিমাণ। ক্রেশে মোট অ্যাটেনডেন্ট ১৬ জন। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় মেটেলি হাইস্কুল। বাগিচার শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা আছে। যানবাহনের সংখ্যা দুটি। একটি বাস এবং একটি ট্রাক। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব আছে। আছে খেলার মাঠ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। মেটেলি চা বাগানটি প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে তাদের বকেয়া সহ সম্পূর্ণ অর্থ জমা করেছে। মজুরি, রেশন, চপ্পল, ছাতা, কম্বল নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের কোনো ক্ষোভ নেই।
মেটেলি চা বাগিচার আলোচনা প্রসঙ্গে চা বাগিচার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দিক নিয়েও একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। করোনার সময়কালে কোভিড প্রোটোকল না মানার অভিযোগ উঠেছিল ডুয়ার্সের চা বাগানগুলির একাংশের বিরুদ্ধে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে অস্থায়ী শ্রমিকদের কাজে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ যেমন ছিল, পাশাপাশি কাঁচা পাতা তোলার পর ওজনের সময় শারীরিক দূরত্বও কোথাও কোথাও মানা হয় নি বলে শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ ছিল। কর্মস্থলে মাস্ক বা স্যানিটাইজারের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসার বিষয়টিও ছিল। মালিকদের সংগঠনগুলি অবশ্য অভিযোগ মানতে রাজি ছিল না সেইসময়ে। তাদের বক্তব্য ছিল প্রোটোকল মেনেই সর্বত্র কাজ হয়েছে। চা বাগানে ১০০ শতাংশ শ্রমিক ব্যবহারের সরকারি অনুমতি ছিল করোনার আধিক্য একটু কমার পর। ভরা মরশুমে বাগানগুলির নিজস্ব স্থায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি আরও শ্রমিকের প্রয়োজন যখন হয়েছিল তখন দেখা গিয়েছিল গাড়িতে গাদাগাদি করে শ্রমিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখন চা শ্রমিকদের যৌথ সংগঠন জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ও ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জন বারলা, নাগরাকাটার বিধায়ক ও চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুক্রা মুন্ডাও একযোগে বলেছিলেন গাড়িতে গাদাগাদি করে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিছু বাগান এসবের ধার ধারছে না। এর ফলে বহু মানুষ যে কোনও সময় বিপদের মুখে পড়তে পারেন৷ তাদের অভিযোগ ছিল ১০০ শতাংশ শ্রমিক কাজে লাগানোর অনুমতি মিললেও বাগানগুলিতে কোভিড প্রোটোকল মানার বিষয়টি আরও ঢিলেঢালা হয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। মালিকদের যে সামাজিক দায়দায়িত্ব বলতে কিছু রয়েছে তা ওরা ভুলেই গিয়েছেন।
এককালে চা-বাগানেই মিলত চিকিৎসা পরিষেবা এবং ওযুধ, করা হত ছোটখাটো শল্য চিকিৎসাও। সে ছবি এখন আমূল বদলে গিয়েছে। ডুয়ার্সের সবুজ ছুঁয়ে ভুটান পাহাড়ের দিকে দিকে যেতে যেতে আকস্মিক চোখ চলে যায় নাগেশ্বরী, কিলকটের বন্ধ হাসপাতালের ঘরগুলোর দিকে। বোঝা যায় প্রায়-পরিত্যক্ত ঘর। অথচ ডানকানসের পরিচালিত এই বাগানগুলির হাসপাতালে অতীতের মেল, ফিমেল, আইসোলেশন, মেটারনিটি ওয়ার্ডের ঘরগুলি এখন পরিকাঠামোহীন ভগ্নাবশেষ মাত্র। কিন্তু ব্যাতিক্রমীভাবে চোখে পড়ল মেটেলি চা বাগিচায় খুব সুন্দর এবং গোছানো হাসপাতাল আছে। মূর্তি ডিভিশনে একটি ডিসপেনসরি এবং একটি ডিসপেনসরি মেটেলি ডিভিশনে। আলাদাভাবে মেটেলি চা বাগিচায় পুরুষ এবং মহিলাদের ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২ টি। হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সুষমা কন্ডোলিয়ার কাছ থেকে জানলাম মেটারনিটি ওয়ার্ড নামেমাত্র থাকলেও সমস্ত মেটারনিটি রোগীদেরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আইসোলেশন ওয়ার্ড আগে ছিল ছয়টি। বর্তমানে তিনটি রয়েছে। মেটেলি চা বাগিচাতে বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। তবে এখানে অপারেশন করা হয় না। বাগিচায় আছে। বাইরে চিকিৎসার জন্য শ্রমিককদের রেফার করলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাবস্থা আছে। বাগিচায় স্হায়ী ডাক্তারবাবু আবাসিক ভিত্তিতে চা বাগিচায় নিযুক্ত। তবে সমীক্ষার সময়ে তিনি কোন কথা বলতে চাননি। সিনিয়ার নার্স সুষমাদেবীর কাছ থেকে জানা গেল মূর্তি ডিভিশনে একজন নার্স এবং মেটেলি ডিভিশনে একজন নার্স এবং আরো দুজন করে মিড ওয়াইভস স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কার্যাবলিতে সহযোগিতা করে থাকে। বাগানে ফার্মাসিস্ট একজন। তিনিই কম্পাউন্ডারের কাজ করে থাকেন। তাই প্রশ্ন জাগে লক্ষী টি কোম্পাণীর মেটেলি চা বাগান, গুডরিকসের চালৌনি বা চালসা বা আইভিলের বাগানে যদি উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকে তাহলে বেনিয়া গোষ্ঠীভুক্ত বাগানগুলি সেই দায়িত্ব পালন করবে না কেন?