সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 447

শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-২৮ 
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

বিকাশ নিজের অফিসে বসে তলব করা কিছু রিপোর্টের উত্তর লিখে দেয়। নির্মলবাবুকে ডাক রেডি করতে বলে। অফিসে বন-পিয়ন কাবুল বসে আছে রেডি হয়ে। সপ্তাহে দুই দিন সদরের অফিসে ডাক নিয়ে যাওয়া-নিয়ে আসার সাধারণ রীতি রয়েছে বন অফিসের। যারা বন অফিসের সাথে যুক্ত নয় তারা ভাবতে পারে না ঠিক কী ধরণের ডাক চলাচল করে বন অফিসের মধ্যে। সাধারণত অন্যান্য অফিসে মানুষ বা গৃহপালিত পশু সম্বন্ধীয় তথ্যাদির ডাক চলাচল হয়। বন অফিসের ব্যাপারটি ভিন্ন। বন অফিসের ডাকে চলাচল করে বন গাছ এবং গাছের শত্রু মিত্রদের খবরাখবর। খবর দিতে হয় বনজ ও কাঠের উপর নির্ভরশীল মানুষের আবেদন ও অভিযোগের। সাথে থাকে বন কর্মীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ডাক রেডি করতে গিয়ে নির্মলবাবু বলেন- 
- স্যার লটগুলো পড়ে আছে, পাঠিয়ে দিলে হয়।  
- চেকিং করা হয়েছে। 
- না স্যার। 
- কালকের হাতিটির কোন খবর পেয়েছেন? 
- না স্যার।
- ঠিক আছে, আজকে এই ডাকগুলো পাঠিয়ে দিন। লট পরের ডাকে পাঠাব। চলুন লটগুলো চেক করে নিই। 
- স্যার। 
বিকাশ নির্মলবাবু নিলয় তাপস টিম্বার ডিপোতে যায়। টিম্বার ডিপোটি বেশ বড়- দশ হেক্টর হবে। বন অফিসে এই রকম কাঠের ডিপো থাকে বলে এখনো অনেকে বন অফিসকে ডিপো বলে। ডিপোতে ঢুকতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বিকাশ। ডিপো অনেকগুলো সমবেত সুরের মূর্ছনায় গমগম করছে। অনেকগুলো ঝর্ণার একটানা শব্দের মতো এই অনেক সমবেত সুর-শব্দ মনকে উতলা করে দেয় পাগল করে দেয়। এই সমবেত সুর ও গানের কথা মনে ও শরীরে অনেক অশ্ব ক্ষমতার শক্তি দেয় মোটা মোটা কাঠের গুঁড়িকে ঠেলতে। বিকাশ এক মনে শোনার চেষ্টা করে গানের কথা কী। এই গান যে পরিবর্তন হয় সময়ের সাথে… 
এক দল গাইছে- বিটবাবুর অনেক আগ (রাগ) … হেইওওও… টিপালু চোরক ধরিসে আজি… হেইওওও… এলায় দিবে চোদন (মারপিট) … হেইওওও… চোর করিবে বাপ বাপ…    
আবার আর একদল গাইছে - হামার পধান… হেইওওও… আছিল সরু… হেইওওও… পধান হয়া হেইওওও… হোলেক মোটা… হেইওওও পধান বেটা… হেইওওও… মারুতি কিনিলেক… হেইওওও… মারুতি গাড়ি… হেইওওও … ফাঁসি গেলেক… হেইওওও… কাদো আস্তায়(রাস্তায়)… হেইওওও…  
কাঠের গুঁড়ি যত মোটা হয় গানের কথাও বাড়তে থাকে পারিপার্শ্বিক ঘটনাকে ভিত্তি করে। বিকাশের মনে হয়  গানের কথাগুলো ডিপো শ্রমিকদের বা তাদের পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থাপনার খারাপ দিকের বর্ণনা। গরীব ডিপো শ্রমিক যে অন্যায় অবিচার পেটের দায়ে দিন রাত মুখ বুঝে সহ্য করে, যে রাগ মনের ভিতরে পুষে রাখে, সেই রাগ গানের রাগ-রাগিণী মাধ্যমে শক্তি হয়ে প্রাণ থেকে বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে বনের ভিতরে, নির্জন কাঠের ডিপোতে আর ঠেলে  নিয়ে যায় মোটা মোটা কাঠের গুঁড়ি। এই সমবেত গানে থাকে অনেক খিস্তি  খেউড়, যা সুরের তালে শুনতে আনন্দ  লাগে হাসি আসে; জীবনের সত্যের সাথে মিল খায় বলে শ্রদ্ধাও আসে মনে। কিন্তু অক্ষরে লিখতে সংকোচ হয়, এই এক নির্মম কপটতা নিজের ভিতরে। বিকাশ এক অবর্ণনীয় সুরাবেশে এগিয়ে যায় ডিপোর ভিতরে। দ্যাখে কিছু মহিলা শাল গাছের বাকল ছাড়িয়ে নিচ্ছে কুড়ুল শাবল দিয়ে। ডিপো অফিসার দ্রুত এসে বলে- 
- স্যার ওরা ডিবারকিং করছে।
বিকাশ শিশুর মতো জিজ্ঞাসা করে- 
- কেন? 
- কেন কী স্যার! ডিবারকিং না করলে যে শাল বোরার পোকা শাল লগটিকে ফুটো ফুটো করে দেবে। নিলামে দাম পাওয়া যাবে না। 
- ঠিক। দেখবেন তলার দিকটাও যেন ডিবারকিং হয়। অনেক মোটা লগ তো, ঘুরিয়ে নিতে হবে। 
- স্যার, হয়ে যাবে স্যার।
ডিপোতে অনেক কাঠের গুঁড়ি থাক থাক করে সাজানো আছে- বজরি ছিটানো কাঁচা গাড়ির রাস্তার দুই পাশে। প্রতিটি থাকে নম্বর ও বছর লেখা আছে। কাঠগুলো খোলা নিলামে বিক্রয় হয়ে গেলে দেশ বিদেশে পাড়ি দেয়। দেশ বিদেশে পাড়ি দেবার জন্য ট্রানজিট পাশ দেয় ডিপো অফিসার। নিলয় বলে-    
- কাটগুলো সব কি নিলামে বিক্রি হয়ে গেছে? 
- গত বছরের সব বিক্রি হয়ে গেছে। ডিপো অফিসার সুবলবাবু বলে। 
- তাও কেন এত কাঠ পড়ে আছে?
- শুধু বিক্রি হলে হবে? রেভেনিউ জমা দেবে, ডিপো ভাড়া জমা দেবে তারপর কাঠ তুলবে। কিছুতো  আছে ডিফল্টর- যারা নিলামে কাঠ কিনেছে কিন্তু কাঠ তুলছে না। সেই আবার কবে নিলাম হবে তার জন্যে বসে থাকতে হবে। 
- ডিফল্টরদের নামের লিস্ট তৈরি করে দিন, ওদের ব্ল্যাক লিস্টেড করতে হবে। -বিকাশ বলে।  
- সেটা কী স্যার। নিলয় বলে।
- তুমি ট্রাংকুইলাইজিং নিয়ে ব্যস্ত থাক, তাই জাননা। ব্ল্যাক লিস্টেড ক্রেতা বা ঠিকাদার হলো তারা, যারা সরকারের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে। একবার এরা ব্ল্যাক লিস্টেড হলে সারা রাজ্যে আর ব্যবসা করতে পারবে না। 
- এদের জন্য এত কাঠ নষ্ট হয়, এদের ব্ল্যাক লিস্টেড করা দরকার। -নির্মলবাবু বলে।    
- স্যার এখান থেকে এবারকার লটগুলো শুরু হলো। -সুবলবাবু বলে।  
- এই লগের নম্বর কত। 
- স্যার, ৯৫২৭
- ডিজিট?
- ৭৫০, ২/৫
- ডিজিট কী স্যার? -নিলয় জিজ্ঞাসা করে।   
- ডিজিট কাঠের ইতিহাসের ইঙ্গিত।  
নির্মলবাবু, সুবলবাবু নিলয় তাপস অবাক হয়ে বিকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবে, স্যার কী বলেন। সবাইর মুখ বিস্ময়ে মালদার ফজলি আমের মতো। পরিবেশটা নিদাঘ নির্জন দুপুরে পুকুরের জলের মতো স্থির হয়ে আছে। বিকাশ পুকুরে ঢিল দেওয়ার মতো বলে-   
- কি? বুঝলেন না তো? 
- না স্যার। কত দিন ধরে ডিপোতে কাজ করছি, এই ভাবে কোন দিন ভাবিনি।- সুবলবাবু বলে। 
- দেখুন ৭৫০ নম্বরটি হল গাছের নম্বর। ২/৫ হল, ঐ গাছের পাঁচটা লগ হয়েছে; এটা হল পাঁচটির মধ্যে দ্বিতীয় নম্বর লগ। রেজিস্টারটা নিয়ে আসুন।  
- এই দেখুন, ৭৫০ নম্বর গাছ, পর পর পাঁচটা লগের মাপ। দেখুন লেখা আছে CFC (Clear felled coup) ১৯৯৩, ডি- ফরেস্ট ব্লক; ১৯০৫ সালের শাল প্ল্যান্টেশন। জানেন ১৯০৫ সাল কেন বিখ্যাত। 
- স্যার বঙ্গভঙ্গ আইন চালু হয়েছিল।   
- জানেন বঙ্গভঙ্গ আইন প্রণয়ন করে লর্ড কার্জন তিস্তা তোর্সা সংকোষ জলঢাক্কা নদীর তীরে এই বনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকার করতে চলে আসে। ভাবুন ভাইসর লর্ড কার্জন আর কুচবিহারের মহারাজা নিপেন্দ্র নারায়ণ ১৯০৫ সালে এই ৭৫০ নম্বর গাছের আসেপাশে বাঘ খুঁজে চলেছে বা এই ৭৫০ নম্বর গাছের পাশে কোন গাছে মাচান বেঁধে রাত জেগে বসে আছে বাঘের জন্য।  
- স্যার গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। -নির্মলবাবু বলে। 
- শুধু বাঘ শিকার নয়। আরো অনেক ঘটনা আছে। ব্রিটিশরা সব ন্যাচারাল শাল গাছ কেটে নিয়ে যায় লন্ডনে। তখন এখনকার মতো জীব বৈচিত্র্য নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা ছিলোনা। ব্রিটিশদের চোখে তখন সম্পত্তি লাভের লোভের আগুন। গাছ মানুষ বাঘ কিছুই লোভের আগুন থেকে বাদ যায়নি। চোখ চিক চিক করতো লোভে। ন্যাচারাল ফরেস্ট কেটে ভালো ভালো কাঠ লন্ডনে নিয়ে যাবার পর সেই ফাঁকা জায়গায় চা গাছ লাগালো। অর্থাৎ গাছেরও খাও তলারও কুড়াও। তবে মাঝে মধ্যে শালের প্ল্যান্টেশনও করেছে- দাস শ্রমিক দিয়ে।  
- তা হলে তো তিস্তা থেকে সংকোষ পর্যন্ত একটা গোটা বন ছিল। সেটাই এখন খণ্ডবিখণ্ড। 
- ঠিক বলেছেন। এই পুরো বনে এখনকার সব বুনোরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াত। বিশেষভাবে হাতি বাঘ…
- এই জন্য হাতিগুলো এখনও সংকোষ থেকে তিস্তা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায়। - নির্মলবাবু বিকাশের মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে বলে।   
- এটাই এখনকার মানুষ বুনোদের সংঘাতের অন্তর্নিহিত কারণ। সে সব কথা এখন থাক, লট চেক করা যাক। 
- স্যার ঐ যে বলছিলেন লর্ড কার্জনের বাঘ শিকার।  
- হ্যাঁ, সে এক ভয়ঙ্কর অরাজকতা। লাট সাহেবরা ৪০০ -৫০০ লোক জন, ৪০ থেকে ৫০ টি কুনকি হাতি নিয়ে শিকারে বের হতেন। অন্যান্য বুনোদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বাঘের কথা বললে, বলতে হয় ১৮৭৫ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে মাত্র ৫০ বছরে ভারতে ৮০০০০ বাঘ শিকার করা হয়েছে। বেটা ভাইসরয় কার্জন বঙ্গভঙ্গ করে এখানে এসে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের সাথে শিকার করেন পূর্ব ভারতের সব থেকে বড় বাঘ।
- স্যার শিকারের গল্পগুলো শুনতে হবে। - নিলয় বলে। 
- সে আর এক দিন হবে। কাউন্ট করো তো কত লগ আছে।  
- তাপস লগ কাউন্ট করে। বলে, স্যার লগের কাট সার্ফেসটা কী সুন্দর। 
- কী সুন্দর, মানে। 
- কাট সার্ফেসে কী সুন্দর কত রিং। একেকটা রিঙের আলাদা আলাদা রঙ। 
- তাই? তাহলে সেন্টার থেকে বাইরের দিকে গোনো তো কতোগুলো রিং আছে।  
বিকাশ ভাবে বন দপ্তরে উল্লম্ব শ্রেণিবিন্যাসে সমস্ত কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান নয়। তাই তাপস নিলয়দের প্রশ্নের উত্তর হাতে কলমে দিলে ওদের মনে গেঁথে যাবে। বিকাশের জীবনেও কাবু কতো কী গেঁথে দিয়েছে চাকুরীর শুরুর সময়ে। আনন্দের সময়ের কথা ভুলে গেলেও কষ্টের সময়ের কথা মনে থাকে সব সময়। আনন্দ সময়ের কথার বিস্তৃতি বেশি বলে স্মৃতিতে সেগুলো হালকা হয়ে ধরা দেয় স্প্রিং উডের মতো। কষ্ট মনে খুব জোরে আঘাত করে, অন্তক্ষরণে রক্ত জমে গিয়ে গাঢ় রঙ তৈরি করে, যেটা স্পষ্ট দ্যাখা যায় অটম উডের মতো।  মনের স্মৃতির সিঁড়িতে আনন্দ ও কষ্ট কথা জমতে থাকে গাছের বার্ষিক বলয়ের মতো। 
বিকাশের মনে পড়ে প্রণয়ের কথা। ছেলেটি বিকাশের কয়েক দিন আগে যোগ দিয়েছিল শালবাড়ি বিটে- বন রক্ষী পদে। চাকুরী পেয়েছিল বাবার অকাল মৃত্যুতে অনুকম্পা জনিত কারণে। কাবু বলেছিল ওর বাবা পাশের বিভাগে বন রক্ষীর কাজ করত। বাড়ি ৪০ কিলোমিটার দূরে ছোট বন্দরে। আগে এখানে গ্রামের তেমাথা চৌমাথাতে যে সকল বাজার গড়ে উঠত  সেগুলোকে স্থানীয় ভাবে বন্দর বলত। প্রথম দিকে গোপাল ভালো কাজকর্ম করত। প্রণয়ের ছয় বছর বয়সে ওর মা মারা যায় ম্যালেরিয়াতে। তখন বন আর ম্যালেরিয়া সমার্থক ছিল। দিন দুই জ্বর ছিল প্রতিমার। গোপাল টোটলার ঝাল  ছেঁচে আদা ছেঁচে রস করে খাইয়ে দিয়েছিল প্রতিমাকে। ডিপোতে এই রকমের টোটকা করে কতো জনের জ্বর সেরে গ্যাছে। জ্বর ছাড়ল না প্রতিমার। ছয় বছরের ছেলে আর যখন তখন ডিউটির চাপে নাজেহাল গোপাল। ও যে বিটের বিশ্বস্ত স্টাফ। বিটবাবু পাশের চাবাগানের লেবার লাইনের এক বিধবা বউকে ঠিকা কাজে নিতে বলল। গুঞ্জরি কাজে ঢোকার পর বাপ-ছেলের খাওয়াদাওয়া সময় মত চলতে থাকল কিছু দিন। কিন্তু গুঞ্জরিকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু  হলো চাবাগানে ও বনে। বিটবাবুর ভালবাসার ঢাল রক্ষা করে গোপালকে। হঠাৎ বিটবাবু ট্রান্সফার হয়ে  যাওয়াতে আবার গোপাল একা হয়ে যায়।
 নতুন বিটবাবুও কান দেয় গুঞ্জনে। গোপালের মন খারাপ করে। একদিন কাবু গোপালের বিটে যাবার পর কাবুকে ধরে কেঁদেছিল অনেকক্ষণ।  কাবু সান্ত্বনা দিলেও স্বস্তি পায়নি মনে। এখন তো কাবু গোপাল একসাথে থাকেনা। তখন থেকে কেন যেন উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে যায়। চাবাগানের লাইনে যাতায়াত বেড়ে যায় গোপালের। মন ভালো রাখার জন্যে ঢুকে যায় “মিসানির” হাড়িয়ার   হাড়িতে। এক দিন হাড়িয়ায় মত্ত হয়ে বারণ সত্ত্বেও ডিউটিতে গিয়ে মারা পড়ে হাতির পায়ে ধাক্কা খেয়ে। বেচারি হাতির আর কী দোষ! কাবু নিয়ে এসে বড় করেছিল প্রণয়কে। তারপর সভা সমিতি করে এত বছর পরে চাকরিটা পেল অনাথ ছেলেটা। সেও পেলনা শালসিঁড়ির দয়া। ছেলেটার জ্বর হলো, ব্লক থেকে সদর সব হাসপাতালে ছুটল কাবু, কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা।  নিজের ছেলে না থাকার দুঃখ যে গোপালের ছেলের সুখ দূর করবে – সেটা আর কপালে জুটলনা কাবুর। কাবু বলতো- স্যার মনের এই কষ্ট-দাগ মোছার নয়, ভুলে যাবার নয়। সারা জীবন দগ দগ করে দেখা যাবে- সুপারি গাছের গায়ের মতো। কাবুর চোখ থেকে নিঃশব্দ-কান্নার জল ঝরে পড়ে। বলে-  স্যার চলেন বন টহল করে আসি। বিকাশের মনে পড়ে অপূর্ব মাধুরীর কথা। মন্টুবাবুর ঠাণ্ডা হুমকির কথা। গতকাল ঝড় উঠেছিল মনে। কী উদ্ভ্রান্তের মতো হেঁটে ছিল বনে। তাপস বলে –    
- স্যার ৯০ টি রিং আছে।  
- ৯০ টি, ঠিক নয়। সুবলবাবু আপনি গুনে দেখুন। 
স্মৃতিতে কত কথা লেপটে থাকে একে অপরের সাথে- স্বর্ণলতার মতো। এই লতার আগা গোড়া খোঁজা বৃথা, পাওয়া যায়না। এই লতা মারে না মরে না, বেঁচে থাকে এক সাথে কুল গাছের সাথে। স্বর্ণলতার মতো স্মৃতিও বেঁচে থাকে মানুষের সাথে। স্মৃতি চলে গেলে মানুষ চলে যায় বা মানুষ চলে গেলে স্মৃতিও চলে যায় সেই মানুষের সাথে … স্মৃতি জন্ম লয় অন্য মনে স্বর্ণলতার মতো…  সুবলবাবু বলে- 
- স্যার ৮৮ টা রিং আছে।
- ঠিক।
- স্যার কী ভাবে বুঝলেন?
- দেখুন, মানুষ বাদ দিয়ে প্রকৃতির সৃষ্ট প্রতিটি প্রাণ প্রকৃতির নির্দেশ মেনে চলে। যেমন পেঁচা রাতে চলে কাক দিনে। পেঁচা যদি দিনে বের হয় কাক শিকার করে খেয়ে নেবে আবার কাক যদি রাতে বের হয় পেঁচা খেয়ে নেবে। প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়ম। গাছেও প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে। যখন জল খাদ্য প্রচুর থকে তখন গাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। আবার যখন গাছ খুব কষ্টে থাকে অর্থাৎ জল ও খাদ্য কম থাকে তখন গাছ খুব আস্তে বাড়তে থাকে। কষ্টের কথা তো গাঢ় হয়। আনন্দ ভুলে গেলেও কষ্ট কথা ভোলেনা মন। গাছেদের সুখ সময় বর্ষা। এই সময় গাছ খুব দ্রুত বাড়ে আর গাছের কষ্ট সময় শীত কাল। শীত কালেও গাছ বাড়ে তবে বাড়ে খুব ঘনত্ব নিয়ে। তাই শীতকালের বৃদ্ধির বলয় গাঢ়  হয় ও স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়। বছরে কয়টি শীত কাল থাকে? 
- স্যার একটি। সুবলবাবু বলে। 
- তাহলে ১৯০৫ সালে প্ল্যান্টেশন হলে ১৯৯৩ সালে গাছের বয়স কত?
- ৮৮ বছর। আচ্ছা, এই জন্য ৮৮ টি রিং। দারুণ ইন্টারেস্টিং তো ব্যাপারটি। 
- এই রকম অনেক মজাদার গল্প আছে শালসিঁড়ির পরতে পরতে। আচ্ছা নির্মল বাবু আপনার বাড়িতে কাঠের চেয়ার আছে। 
- স্যার।
- তার বিল আছে? 
- আছে স্যার। 
- তাহলে দেখবেন ওই বিলে একটা ট্রানজিট নম্বর আছে। সেই ট্রানজিট নম্বরে একটা লট নম্বর আছে। লট নম্বরের ঠিকানা আছে। সেই ঠিকানা অনুযায়ী আপনি যদি আজকে আমি যে ভাবে ৭৫০ নম্বর গাছ খুঁজে বার করলাম, সেই ভাবে খোঁজেন তাহলে দেখবেন আপনি যে চেয়ারটিতে বসে এখন টি ভি দেখছেন বা চা পান করছেন সেই চেয়ারের কাঠ যে গাছ থেকে পাওয়া গেছে সে গাছে মাচান বানিয়ে ভাইসর লর্ড কার্জন বাঘ শিকার করে ছিল একদিন।  
বিকাশের কথা শুনে নির্মলবাবুরা যেন আকাশ থেকে পড়ে। সুবলবাবু বলেন- স্যার আপনি এত গভীরে ভাবেন। আমি তো ২০ বছর বনে বনে কাজ করছি এই রকম একটা মজাদার ঘটনা প্রবাহ নিরস কাঠের ডিপোতেও থাকতে পারে কোন দিন ভাবিনি। রসহীন ডিপোতে শুধু পাটিগণিত নিয়ে কারো ভালো লাগেনা। আপনি যে ভাবে বললেন তাতে ডিপোতে কাজ করার আনন্দ বেড়ে গেল, এখন তো প্রতিটি গাছে ইতিহাস জানতে ইচ্ছা করছে। ডিপোতে বসে পুরো বনকে দেখতে পাচ্ছি।   
- স্যার ১৯০৫ সালের প্ল্যান্টেশনের জায়গাটা দেখতে যাব। বঙ্গভঙ্গের সময়ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের দিয়ে প্ল্যান্টেশন করিয়েছে! 
- সে যাওয়া যাবে। আগে আজকের কাজটা শেষ করি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri