আইভিল চা বাগান
গৌতম চক্রবর্তী
----------------------
সিনক্লেয়ার্স গ্রুপের রিসর্ট। অবকাশ যাপনের এক মহার্ঘ্য আবাস। এখানেই ঘাঁটি গেড়ে পূর্ব ডুয়ার্সের সবকটি ভ্রমণ স্পট দেখে নেওয়া যায়। সুইমিং পুল, মালটিজিম, বার, রেস্তোরাঁ, কনফারেন্স হল, ম্যাসেজ পার্লার, সাজানো-গোছানো বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, লাইব্রেরি, ইন্ন্ডোর গেমস রুম, চিলড্রেনস পার্কসহ প্রমোদ ভ্রমণের হরেক আয়োজন পর্যটকদের জন্য। অত্যন্ত ব্যয়বহুল সিনক্লেয়ার্স রিট্রিটে কটেজগুলি অত্যন্ত সুন্দর। সামনে নিখুঁত সবুজ লন। কত রকমের আধুনিক ব্যবস্থা। এখানে বসে দুচোখ ভরে দেখে নেওয়া যায় ডুয়ার্সের প্রশস্ত মালভূমি, চা বাগিচা, দূরের নীল পাহাড় এবং আকাশ ভরা মেঘপুঞ্জ। জলপাইগুড়ি জেলার ডুয়ার্সের চা বাগিচা অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত আইভিল চা বাগিচা এবং টি এস্টেট। আইভিল চা বাগানটি জলপাইগুড়ি জেলার মেটেলি তফসিলের অন্তর্গত। এটি চালসা থেকে কিছুটা দূরে। চালসা এবং মেটেলি চা বাগান অধ্যুষিত অঞ্চল। সোনগাছি, আইভিল, ইনডং, এঙ্গো, জুরান্তী বাগান ক্ষেত্রসমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়ে চালসায় এসেছি। মেটেলি বাজারকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন পেশার অন্তত তিন হাজার নরনারী জড়ো হয়েছিলেন বসতি গড়ার জন্য। যাবতীয় জমি ছিল সরকারি খাস মহলের। তাই ব্যক্তিগতভাবে কারো তা কিনে নেবার অধিকার ছিল না। কেবলমাত্র অস্থায়ী পাট্টার বিনিময়ে বাসিন্দারা ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারত। কালিম্পং এর পাদদেশে এবং ভুটান রেঞ্জের সন্নিহিত অঞ্চলে মালবাজার মহকুমার অন্তর্গত চালসাতে অবস্থিত এই টি এস্টেট। নিকটবর্তী রেলস্টেশন নিউ মাল জংশন চা বাগানের ফ্যাক্টরি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। চা বাগানের ঠিকানা আইভিল টি এস্টেট, মেটেলি। বাগানের চারটি ডিভিশন। এগুলি হলো নয়া কামান, গুনটি, সাতখায়া এবং ডাংগি। সাদরি ভাষায় নদী বা ঝোরার পার্শ্ববর্তী উঁচু ডাঙ্গা বা মাটি কথাটি থেকে ডাংগি নামের এই ডিভিশনের সৃষ্টি হয়। সাতখাওয়া চা বাগিচার সঙ্গে ১৯৬৮ সালে আইভিল চা বাগানের সংযুক্তিকরণ ঘটে।
সদর মহকুমার অন্তর্গত পুরনো জনপদ মাটিয়ালি শব্দটা রাজবংশী বাংলা ভাষা থেকে উদ্ভব হয়েছে বলে কারো কারোর ধারণা আছে। মাটির আল দিয়ে জমিকে বাধা হয়েছে তাই মাটিয়ালি। ভাষাতত্ত্ববিদেরা হয়ত প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করতে পারবে। পুরনো মেটেলির ছবিটা যেন চোখের সামনে ভাসছিল। চালসার সিনক্লেয়ার্সকে পিছনে রেখে এগিয়ে চলেছি। সামনে অনন্ত সবুজ প্রান্তর। মাঝখানে সবুজ শ্যামলিমা চিরে মসৃণ রাস্তা। মানকচু বাগিচার মাঝে মাঝে শিরীষ গাছের জঙ্গল। সবুজের সমারোহ। ডাইনে কিলকট, আইভিল, এঙ্গো, চালসা ইত্যাদি ছায়াঘেরা চা বাগিচা পেরিয়ে মাটিয়ালি বা মেটেলি ব্যস্ত জনপদ। গ্রাম পঞ্চায়েত মাটিয়ালি বাতাবাড়ি ১ নম্বর অঞ্চল। নিকটবর্তী শহর মালবাজার ১০ কিলোমিটার। বাকি চার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি হল লাটাগুড়ি, এঙ্গো টি গার্ডেন, জুরান্তি টি গার্ডেন, সোনগাছি টি গার্ডেন, নাগেশ্বরী টি গার্ডেন, চালুনি টি গার্ডেন, সামসিং টি গার্ডেন, মেটেলি টি গার্ডেন ইত্যাদি। বৈদ্যুতিক সুবিধাযুক্ত শ্রমিক আবাস, বাবুদের স্টাফ কোয়ার্টারস, ম্যানেজারস বাংলো সহ বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অসাধারণ। আইভিল বাগানে হাঁটতে হাঁটতে নিজের মনেই মেটেলি জনপদের ইতিহাস নেড়েচেড়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম স্মৃতিচারণার মাধ্যমে। পশ্চিম ডুয়ার্সের সবচেয়ে পুরনো জনপদগুলির মধ্যে মেটেলি অন্যতম। তাই মাটিয়ালি ইংরেজি ও বাংলায় মেটেলি। আবার আদিবাসী এবং নেপালী উচ্চারণে মতোয়ালি। প্রাথমিক পর্বে বাগানটি সোনাপানি নামে পরিচিত ছিল। কারণ প্রাকৃতিকভাবে ঝর্ণা থেকে যে জলরাশি নির্গত হত তার ওপর সূর্যালোক পড়লে তা সোনালী বর্ণ ধারণ করে বাগানের ঝরনার জল সোনা রং ছড়াত বলে এই বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ধরনের ঝর্ণার নামকরণ থেকে বাগিচার নাম সোনাপানি হয়। সাদরি ভাষায় ডেঙ্গি শব্দের বাংলা অর্থ ডাঙ্গা অর্থাৎ জলের পার্শ্ববর্তী উচ্চতম স্থান। এই কারণে উচ্চতম স্থান অধ্যুষিত অঞ্চল ডেঙ্গি বা ডাঙ্গি ডিভিশন।
জলপাইগুড়ি জেলার আইভিল চা বাগানটির ডুয়ার্সের অন্যতম সেরা চা উৎপাদক বাগান হিসাবে সুনাম আছে। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বেঞ্জামিন সিম্পসনকে আইভিল চা বাগিচার লিজ প্রদান করা হয়। ভুটানে অ্যাসলে ইডেনের অভিযানকালে বেঞ্জামিন সিমসন তাঁর মেডিকেল অফিসার ছিলেন। ভুটানের হাত থেকে ব্রিটিশরা যখন ভুটান পুনরুদ্ধার করল তখন এই লিজ হস্তান্তর হয়। বেঞ্জামিন সিম্পসনের পুত্র পি এ সিম্পসন এই বাগানের সম্পত্তি রক্ষা করতে থাকেন এবং ১৯২০ সাল পর্যন্ত বাগানের ম্যানেজার রূপে তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করেন। প্রাথমিক পর্বে আইভিল চা বাগান উইলিয়ামসন মেজর কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২০ সালে ফাগু চা বাগান যখন আইভিল চা বাগানের সঙ্গে মিশে গিয়ে আইভিল টি কোম্পানি নামে পরিচিত হল তখন বিদেশে অর্থাৎ ব্রিটেনে আইভিল টি-এস্টেটের এজেন্সির দায়িত্ব পেল গুডরিক টি এস্টেট এন্ড কোম্পানি। শুধুমাত্র কলকাতার এজেন্সির দায়িত্ব রইল উইলিয়ামসন মেজর কোম্পানির হাতে। ব্রিটেনে পরবর্তীকালে গুডরিক এবং ডানকানস কোম্পানি দুটি মিশে গিয়ে ডানকান গুডরিক কোম্পানি গঠিত হয়। আইভিল টি কোম্পানির এজেন্সি তখন থেকে ডানকান ব্রাদার্সের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭৭ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই মালিকানা বলবৎ থাকে। ১৯৭৮ এর ১লা জানুয়ারি থেকে কলকাতার গুডরিক লিমিটেডের হাতে চা বাগিচার পরিচালনগত দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। বৈদ্যুতিক সুবিধাযুক্ত শ্রমিক আবাস, বাবুদের স্টাফ কোয়ার্টারস, ম্যানেজারস বাংলো সহ বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্য অসাধারণ। ডিবিআইটিএ পরিচালিত ম্যানেজমেন্ট সংগঠনের সদস্য মালবাজার সাব ডিভিশনের মেটেলি ব্লকের আইভিল চা বাগানটির পরিচালক গোষ্ঠী গুডরিক গ্রুপ লিমিটেড ১৮৯২ সালে বাগানটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৯ জন। বাগানে প্রতিষ্ঠিত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ৪ টি। এগুলো হলো এনইউপিডব্লিউ, পিটিডব্লিউইউ, সিবিএমিউ, টিটিপিডব্লিউইউ।
বাগিচার আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ১৫০৮.১ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৪৩ হেক্টর। রিপ্ল্যান্টেড এরিয়া ১৩ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৮২৭.৮৪ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য আবাদীক্ষেত্রও তাই। প্রতি হেক্টর জমি পিছু ২৩৪৯ কেজি করে চা ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়। মোট কর্মরত শ্রমিক ২১৪৬ জন। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত চা ১৭-২০ লাখ কেজিরও বেশি। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাগানে গুণগত মানের ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। আইভিল চা বাগিচাতে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ৭০-৮০ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ১২-১৫ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহিত কাঁচা পাতা ১০-১৫ লাখ কেজি। তাই মোট বাৎসরিক তৈরি চা ১৭-২০ লাখ কেজি বলা যেতেই পারে। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাগানে গুণগত মানের ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। বাগানটির লীজ হোল্ডার গুডরিক গ্রুপ লিমিটেড। লীজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা ২০৩১। বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ১১৩ জন। করণিক ১৭ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৬ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১৯৯৪ । মোট জনসংখ্যা ৮৩০৬ জন। স্থায়ী শ্রমিক ১৯৪৯ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৮ জন। কম্পিউটার অপারেটর ২ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ২১৪৬ জন। অ-শ্রমিক সংখ্যা ৬১৬০ জন। মোট শ্রমিক আবাস ১৪০১ টি। হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন শ্রমিক বস্তিগুলি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। বাগিচায় ব্যাক্তিগত ইলেক্ট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৭৬০ টি। ক্লাস্টার মিটার সহ বাড়ির সংখ্যা ৫৬৬। বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাসের সংখ্যা ৭৫। মোট শ্রমিক ২১৪৬ জন। আইভিল বাগানে শতকরা ৬৫ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। জানলাম শ্রমিক আবাস নির্মাণ, মেরামতি এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কোম্পাণি বছরে গড়ে ২০ লাখ টাকা খরচ করে। বাগিচায় শৌচাগারের সংখ্যা ১৩২৮।
বাগিচাতে হাঁটতে হাঁটতে একটু স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লাম। পুরনো আমলের বার্মা সেলের যে পেট্রোল পাম্প ছিল সেখানেই লম্বা একখানা কাঠের একতলা বাড়িতে ছিল ছাত্রাবাস। চালসা, বাতাবাড়ি প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বিভিন্ন চা-বাগানের বাসিন্দারা যারা ছিল তাদের সন্তানেরাই এই ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করত। ১৯৫৩ সালে মেটেলি প্রগতি সংঘ, ১৯৫৭ সালে মেটেলি পাবলিক লাইব্রেরি এবং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। চল্লিশের দশকের গোড়ায় মেটেলি কালিবাড়িতে কাজ চালানোর মত একটি মঞ্চ তৈরি হয়। লাগোয়া বাগানের কর্মচারীরা কাজের শেষে সন্ধ্যাবেলায় আসতেন নাটকের মহড়া দিতে। গোটা কয়েক হ্যারিকেনের আলোয় চমৎকার মহড়া চলত। নাটকের দিন হ্যাজাক এবং লাইট ভাড়া করে আনা হতো। নাট্যচর্চা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হতে আন্তঃবাগান এবং বাজার অঞ্চলকে নিয়ে। ১৯৫৭ সালে মেটেলি ইয়ংমেন্স অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় খেলাধূলার জন্য। তখনকার দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলতে বোঝাত পরপর কয়েক রাত নাটক বা যাত্রা। ডুয়ার্সের অন্য তিনটি পুরনো জনপদ ডামডিম, ওদলাবাড়ি এবং মালবাজার তখন ছিল খুবই ছোট জায়গা। সাপ্তাহিক হাট ছিল না। বাতাবাড়ি এবং সাইলি হাট ছিল ছোট। সপ্তাহে একদিনের হাট শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহের জায়গাই শুধু নয়, হাট ছিল সকলের মিলনক্ষেত্র। ব্যবসায়ীদের জন্য হাট ছিল আদর্শ স্থান। সারাদিন ধরে চলত কেনাবেচা। প্রশাসনিক কেন্দ্র জলপাইগুড়ি কিংবা দূরের কোনও বাগানে যাবার প্রয়োজন হলে মোটরগাড়ি ব্যবহার করা হত। একমাত্র চা বাগিচার বড় সাহেবদের ছিল মোটরগাড়ি। তখনও পেট্রোল পাম্প হয় নি। তাই শহর থেকে ছোট ছোট তেল বোঝাই টিন এনে মজুত রাখতে হত এবং তা গাড়িতে বহন করতে হত। সেবক ব্রিজ চালু হয়ে গেলেও গুরুত্বহীন শিলিগুড়িতে যাবার প্রশ্নই ছিল না।
দেখলাম আইভিল চা বাগিচায় হাসপাতাল ২ টি। ডিসপেনসারি আছে। বাগানে আছেন এমবিবিএস ডাক্তার। নাম বি কে দাস। তিনি আবাসিক ডাক্তার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে বাগিচায় তাঁর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ২ জন। বাগিচায় নার্সের সহযোগী মিড ওয়াইভস ৩ জন। কম্পাউন্ডার অথবা স্বাস্থ্য সহযোগী ৩ জন। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৫, ফিমেল ওয়ার্ড ১৬, মেটারনিটি ওয়ার্ড ৪ টি, আইসোলেশন ওয়ার্ড ১০ টি। বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিকটবর্তী চালসাতে। চিকিৎসা বাগানেই হয়। তবে দুরারোগ্য রোগের জন্য শ্রমিকদের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে অথবা মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। বাগিচায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ হয়। দেখলাম বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার আছেন ২ জন। স্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা ১ টি এবং মোবাইল ক্রেশের সংখ্যা ৪ টি। ক্রেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। ক্রেশে দেখলাম মোট অ্যাটেনডেন্ট আছে ৪ জন। বাগিচা সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয় আছে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা স্কুল বাস আছে। ফিরে গেলাম আবার পুরণো ইতিহাসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ডুয়ার্সের বিভিন্ন স্থানে একটি করে পাবলিক বাস চলাচল শুরু করল। মেটেলি থেকে বার্নিশঘাট পর্যন্ত একটি বাস সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসত আজিজা মহল নামে। সর্বপ্রথম বাস সার্ভিস চালু করেন বাতাবাড়ির ধনী জোতদার আফতাবউদ্দিন আহমেদ। বাসটি মেটেলি থানা এলাকায় চলত। একটি হাট বাস রবিবার হাটের দিন মেটেলি যাতায়াত করত মানুষ এবং মালপত্র নিয়ে। যাত্রী অনুসারে ট্রিপ বাড়ানো বা কমানো হত। সেবক ব্রিজ চালু হয়ে গেলেও গুরুত্বহীন শিলিগুড়িতে যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। চমক ভাঙল ড্রাইভারের ডাকে। তাকিয়ে দেখি চা বাগিচার ফটকে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আবার গেলাম অফিসে। অফিস তখন জমজমাট। আইভিল চা বাগান সার্ভে সাঙ্গ করে ফিরলাম জলপাইগুড়ি। পরের সপ্তাহে মেটেলি সার্কিটের পরের বাগানগুলির সার্ভে করব মেটেলিতে থেকে।