এঙ্গো চা বাগিচা
এঙ্গো চা বাগিচা
গৌতম চক্রবর্তী
--------------------
যাদের জীবন ও জীবিকার বিনিময়ে ডুয়ার্সের জনপদ গড়ে উঠেছে, আমাদের সভ্যতার বনিয়াদ গড়ে উঠেছে, তাদের প্রতি আমাদের কোনও দায়িত্ব থাকবে না এটা হয়? আমি যেহেতু সমাজমনস্ক একজন লেখক তাই শ্রমিকদের কষ্ট, যন্ত্রণা বা চা-শিল্পে যদি সত্যি কোনও সমস্যা থাকে সেটাকে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা এটাই আমাদের দায় ও দায়িত্ব। অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন এত ভণিতা করার কী প্রয়োজন? প্রয়োজন এই কারণেই যে মালবাজার সার্কিটের বাগিচা সফর শেষ করে এবার সার্কিট সফর শুরু করলাম মেটেলিতে। পরবর্তী লেখা থেকে আমি সরাসরি চলে যাব বাগিচা বিষয়ক আলোচনায়। তাই দৃষ্টিভঙ্গিটা বলে না দিলে পাঠকবর্গের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটতে পারে। কারণ ক্ষেত্রসমীক্ষার মধ্যে থাকে নীরস তথ্যের কিছু কচকচানি এবং বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তাই নীরসতার মধ্যেও সরসতার কিছু উপাদান, কিছু তথ্য, কিছু ইতিহাস, কিছু বিনোদন তো রাখতেই হবে। কারণ আমি আগেই বলেছি এ কোনও গবেষণাপত্র নয়, এ হল আমার পথ পরিক্রমার বিবরণ। সুহানা সফর। আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন সাধারণ পাঠকবর্গ। সেই কারণেই তথ্যবিকৃতি বা তথ্যবিভ্রান্তি হলে গঠনমূলক সমালোচনা সবসময়েই স্বাগত। কারণ অভিজ্ঞতা থেকেই তো মানুষ শেখে। চা বাগিচার উপর কাজ করবার সময়ে ক্ষেত্রসমীক্ষা বা সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই ধরনের কাজ করার যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যে মানুষগুলির সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করেছি তা তো আগে কখনও পাইনি। এই অভিজ্ঞতা, এই সহযোগিতা এবারে পথ চলার ক্ষেত্রে আমার বাড়তি প্রাপ্তি।
আমাকে সরাসরিভাবে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে গাইড করেছেন চা-বিজ্ঞানে যে ব্যক্তির জ্ঞানের গভীরতার কোনও সীমা খুঁজে পাওয়া যায় না সেই শ্রদ্ধেয় রাম অবতার শর্মাজী, যিনি টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স ব্রাঞ্চের দীর্ঘিদিন সম্পাদক ছিলেন, পরবর্তীকালে কিছুদিন আইটিপিএ তে ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। বয়স প্রায় আশি পেরিয়ে গেছে। অনেকদিন যোগাযোগ নেই। তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। তাঁর অফুরন্ত জ্ঞান এবং উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পের উপর তাঁর প্রজ্ঞা ও সুগভীর পাণ্ডিত্য আমার মতো শিক্ষানবিশ লেখককে অনুপ্রেরণা প্রদান করেছে। মনে পড়ে ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার শ্রদ্ধেয় সুমন্ত্র গুহঠাকুরতা তাঁর ব্যস্ততার মাঝখানেও প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেছেন বিগত লেখাগুলোর ক্ষেত্রেও। হয়ত এবারে পথ চলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাব আরও বহু বিশিষ্টজনকে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আইটিপিএ-র অমিতাংশু চক্রবর্তী, যাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং চা-শিল্প সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনকানুন, শিল্প পরিচালনাগত জ্ঞানভাণ্ডার অগাধ। এখন এদের পাশাপাশি এসেছেন ডিবিআইটিএ-তে সঞ্জয় বাগচী যিনি ইতিমধ্যেই করোনাকালে চা ম্যানেজমেন্ট পরিচালনাতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আছেন প্রবীর চক্রবর্তী। চা ম্যানেজমেন্ট পরিচালনাতে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার মানুষ। তাই দুর্জয় সাহস, ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা আর উত্তরবঙ্গের প্রতি ডুয়ার্সের অবহেলার বিরুদ্ধে সোচ্চারিত প্রতিবাদ হিসাবে, ডুয়ার্সের আদি-অকৃত্রিম এই শিল্পের প্রতি অবহেলার বিরুদ্ধে জেহাদ হিসাবেই শুরু করেছি পথ চলা। লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী গজলডোবা থেকে গোপীমোহন। অর্থাৎ ১৮৭৪-এ গজলডোবা থেকে ১৯৩০-এর শেষ চা-বাগান গোপীমোহন যা অবশ্য বর্তমানে আলিপুরদুয়ার জেলায়। ইতিমধ্যেই মালবাজার মহকুমার প্রায় সবকটি বাগিচা পরিক্রমা আছে সহজ উঠোনের ওয়েবসাইটে। সময়ে গ্রন্থাকারে পরিবেশিত হবে চিকরাশি পাবলিকেশনের মাধ্যমে।
আজ ডুয়ার্সের মেটেলি সার্কিটের এঙ্গো চা বাগিচা সফর করতে এসেছি। মালবাজার মেটেলি চা বাগিচা সফর করতে করতে ডুয়ার্সে ইউরোপীয় উদ্যোগে চা বাগিচা পত্তনের রূপরেখা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ১৮৬৫ খৃস্টাব্দে ভুটান যুদ্ধের পর ইংরেজরা জলপাইগুড়িকে সদর দপ্তর হিসাবে গঠন করে একদিকে ভুটানের উপর খবরদারি করবার জন্য শহরের দক্ষিণদিকে একটা সেনা ছাউনি তৈরি করে, অন্যদিকে ডুয়ার্স এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে চা-বাগান প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। বস্তুত চা বাগানের সঙ্গে এলাকা জুড়ে বস্তির সঙ্গে গড়ে ওঠে নতুন সব বন্দর এবং পুরাতন জেলার একটা গণ্ডগ্রাম জলপাইগুড়ি হয় সদর দপ্তর। ১৮৭০ সালের পর থেকেই ডুয়ার্সে চা বাগান গড়ে তোলার ধূম পড়ে যায়। মালবাজার অর্থাৎ পশ্চিম ডুয়ার্স চিরকালই ভারত-ভুটান-তিব্বত বাণিজ্যপথ। মালবাজার থেকে ভুটান-তিব্বত পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো। অর্থাৎ বাণিজ্যপথে উত্তর পশ্চিম ডুয়ার্স ছিল বলে এই অঞ্চলের রাজস্ব রেকর্ড ভুটান সরকার ভালোভাবেই রেখেছিল। ফলে চা বাগানের জমি লীজ নিতে গেলে আইনের বাধা ছিল না। তাছাড়া তিস্তার উপর তখন দুটো বন্দর ছিল। একটি চামুর্চিঘাট ও অপরটি বার্নিশঘাট যেটি পার হয়ে সোজা জলপাইগুড়ি শহরে যাওয়া যেত। এর পাশাপাশি ১৮৭৪ সালে চা বাণিজ্য এবং এখানকার সোনার খনি বনজ সম্পদের জন্য চলে আসে রেলওয়ে। প্রথমে আসে নর্দান ষ্টেট, পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলওয়ে বা বিডিআর। চায়ের ব্যবসাতে প্রচুর মুনাফার সম্ভাবনায় ইংরেজরা জলপাইগুড়ি জেলা পত্তনের কিছুদিন পর থেকেই ডুয়ার্সের চা উৎপাদনের উপযুক্ত ভালো ভালো জমিগুলি বেছে নিয়ে চা-বাগান তৈরির কাজ শুরু করে এবং ১৮৭৮ সাল অবধি অনেকগুলি বাগান শুরু করেন।
বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানি আদতে ছিল পাট, বস্ত্র, কয়লা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের মালিক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডানকান ব্রাদার্স, গুডরিক, আইভিল, জেমস ফিনলে, শাহ ওয়ালেস, ম্যাকলয়েড রাসেল, অ্যান্ড্রু উইল, ডেভেনপোর্ট, গিলান্ডার্স আর্বুনট, কিলবার্ন, অক্টাভিয়াস স্টিল অ্যান্ড কোং। তারাও পুরোদস্তুর চা বাগিচা শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে। এঁদের প্রায় সকলেরই হেড অফিস ছিল লন্ডনে। এই দেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য তারা বিভিন্ন ম্যানেজিং এজেন্ট নিয়োগ করত। যে সব সাহেবরা এখানে আসতেন তাদের নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে এদেশে এনে হাজির করতেন বিভিন্ন ইউরোপীয় টি কোম্পানির মালিকরা। বিভিন্ন কোম্পাণী ইউরোপীয় মালিকের এজেন্ট হিসেবে বাগান দেখাশোনা করত। এই সকল এজেন্টেদের উপর বাগান পরিচালনা, ম্যানেজার, বিভিন্ন স্টাফ নিয়োগ থেকে শুরু করে শ্রমিক নিয়োগ এবং সর্বোপরি জমি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ সব দায়িত্বই ন্যস্ত থাকত। এইভাবে বিভিন্ন বাগান দেখাশোনার অভিজ্ঞতা থেকে এক সময়ে তারাও চা বাগিচা পত্তনে নেমে পড়ে। ডানকান ব্রাদার্স, গিলান্ডার্স আরবুটনাট, অক্টাভিয়াস ষ্টীল কোম্পানি, অ্যান্ড্রু উইল কোম্পানি, উইলিয়ামসন ম্যাগর, ম্যাকলয়েড এন্ড কোম্পানি, ওয়ালেস, জেমস ফিনলে প্রভৃতি ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট, কয়লা প্রভৃতি শিল্পের সাথে যুক্ত ইউরোপীয় চা কোম্পানির হাত ধরে ডুয়ার্সে জনপদ গড়ে ওঠে, অর্থনৈতিক বিকাশ শুরু হয়। সমগ্র পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে এরকম বহু বাগান ছিল যাদের খাতায় কলমে নাম রেজিস্ট্রি ছিল ওই ম্যানেজিং এজেন্টের নামেই। প্রকৃত মালিকের কোন পরিচয়ই থাকতো না। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ব্রিটিশ চালিত চা বাগান ছিল ৮০ শতাংশ আর ভারতীয় বিশেষত বাঙালি পরিচালিত বাগানের সংখ্যা ছিল ২০ শতাংশ। চা শিল্পে ব্রিটিশদের অধিপত্য স্বীকৃত ছিল। ১৮৮৬ সালের পরের দিকে ডুয়ার্স টি কোম্পানির হাতে গড়ে ওঠে হোপ, ভগতপুর, লুকসান, ঘাটিয়া, তন্ডূ। ১৮৮৭ সালে নিউ গ্লেনকো টি কোম্পানি তেরি করে পাথরঝোরা এবং গ্লেনকো টি এস্টেট। অ্যান্ড্রু উইল কোম্পানির হাতে গড়ে ওঠে কারবালা, বানারহাট, চুনাভাটি, জয়বীরপাড়া, এঙ্গো প্রভৃতি চা বাগান ও টি কোম্পানি লিমিটেড। আজ এঙ্গো টি কোম্পাণি লিমিটেডের এঙ্গো চা বাগিচায় সুহানা সফর।
ডিবিআইটি এর সদস্য মালবাজার মহকুমার এঙ্গো টি গার্ডেনটির পরিচালক গোষ্ঠী এঙ্গো টি কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালকমন্ডলী ২০০১ সালে বাগানটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ডুয়ার্সের অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই এঙ্গো চা বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৪ জন। বসন্ত কুমার ভুয়ালকা ১৯৬৯ সাল থেকে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। তারপর অশোক ভুয়ালকা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হন। পরবর্তীকালে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ২০১২ সালে পুনিত বজরঙ্গীলাল সোন্থালিয়া, ২০১৩ সালে হেমেন্দ্রনাথ রাজেন্দ্রনাথ চৌধুরী এবং প্রণব পুরুষোত্তম সিংঘি এবং ২০১৫ সালে ঊষাসুন্দর আয়েঙ্গার যৌথভাবে বাগান পরিচালনার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। যখন প্রথম বাগানে গিয়েছিলাম তখন মুকুলকান্ত ভার্মাকে পেয়েছিলাম ম্যানেজার হিসাবে। বাগানে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ২ টি। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস এবং প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। এঙ্গো বাগানটির চাষযোগ্য গ্রস এরিয়া ১৬১.৮১ হেক্টর এবং গ্র্যান্ট এরিয়াও তাই। বাগিচার আয়তন ও মোট চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ১০৯.১৪ হেক্টর এবং এই পুরো জমিটুকুই প্ল্যান্টেশন এরিয়া যেটা ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র সামান্যই। মোট চাষযোগ্য উপাদনক্ষম আবাদীক্ষেত্র ১০৯.১৪ হেক্টর হলেও তা অত্যন্ত উন্নত মানের। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং ড্রেন ও সেচযুক্ত 'প্ল্যান্টেশন এরিয়া' থেকে ২৪৫৪ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। বাগিচায় নিজস্ব উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার পরিমাণ ১০ থেকে ১১ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে আড়াই লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হয়। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহীত কাঁচা চা পাতায় প্রস্তুত রেডিমেড টি সাড়ে ৬ লাখ কেজি এবং ফ্যাক্টরিতে উন্নত মানের ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদন হয় যার মোট পরিমাণ প্রায় নয় থেকে সাড়ে নয় লক্ষ কেজি। উৎপাদিত চায়ের প্রকৃতি অনুযায়ী এই বাগানে উন্নত কোয়ালিটির চা উৎপাদিত হয়। বাগানটি চরিত্রগত দিক থেকে উন্নত প্রকৃতির বাগান।
এঙ্গো চা-বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ২৫ জন। করণিক ৭ জন। ক্যারিকাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ৪ জন। এঙ্গো টি গার্ডেন এসজিআরওয়াই বা এমজিএনআরইজিএস এর সুবিধা পায় না। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কাছে বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে নিজস্ব আর্থিক সোর্স এবং চা বিক্রি বাবদ আয় থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার এঙ্গো ট্রেডিং অ্যান্ড টি কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমান লিজের ভ্যালিডিটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত। চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ১৭২ টি। বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাস নেই। মোট শ্রমিক আবাস ১৭২। শ্রমিক সংখ্যা ৩৫৩। বাগিচায় শতকরা ৪৯ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ। বাগিচায় স্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা ১ টি, ভ্রাম্যমান ক্রেশ নেই । ক্ৰেশে শৌচাগার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় জলের ব্যবস্থা আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের সরবরাহ করা হয়। ক্ৰেশে নিয়মিত পোশাকও দেওয়া হয়। ক্ৰেশে মোট অ্যাটেনডেন্ট ২ জন। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাগিচা থেকে দূরবর্তী হলেও মেটেলি সংলগ্ন বাংলা মাধ্যমের স্কুল মেটেলি উচ্চ বিদ্যালইয়ে অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। শ্রমিক-সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা হিসাবে একটি ট্রাক আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব এবং খেলার মাঠ আছে।
এঙ্গো চা-বাগিচায় হাসপাতাল নেই । ডিসপেনসরির সংখ্যা ১ টি। আলাদাভাবে পুরুষ/মহিলা/আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে। মেটারনিটি ওয়ার্ডও আছে। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ২ টি এবং ফিমেল ওয়ার্ড ৩ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড ১ টি। বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার নেই। বাগিচায় অ্যাম্বুলেন্স আছে। বাইরে চিকিৎসার জন্য দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে শ্রমিককে রেফার করা হয়। বাগিচায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। প্রথম যখন এঙ্গো চা বাগান ভিজিট করি তখন চা বাগিচার অলটারনেটিভ মেডিসিনের এমবিবিএস ডাক্তার ড তারকনাথ সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এবার গিয়ে দেখতে পেলাম না। তারকনাথবাবু আবাসিক ডাক্তার হিসাবে আবাসিকভাবে বাগিচায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর পদটি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত না হলেও চা বাগানের ক্ষেত্রে মোটামুটি কাজ চালানোর মত ওষুধের জ্ঞান থাকলেই চলে। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ১ জন। নার্সের সহযোগী আয়া বা সমতুল মিডওয়াইফ ১ জন। কম্পাউন্ডার নেই । স্বাস্থ্য সহযোগী ১ জন। বাগিচায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায় ওষুধ সরবরাহ হয়। কিন্তু ওষুধের তালিকা স্টক অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয় না। চা-বাগানে ২০০৮ সাল থেকে লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। শতকরা ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয়। বিগত অর্থবর্ষে গড়ে ২০ লক্ষ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে জমা পড়েছে। বাগিচায় মালিকপক্ষ নিয়মিত প্রভিডেন্ড ফান্ডের পুরো অর্থই জমা দিয়ে দেয়। মজুরি চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন, জ্বালানি, চপ্পল, ছাতা, কম্বল নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। বছরে গড়ে ৫০-৬০ জন শ্রমিক গ্র্যাচুইটি পেয়ে থাকেন। শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটির অর্থ বকেয়া থাকে না।
এঙ্গো চা বাগিচাতে ফ্যাক্টরির অফিস থেকে বের হতেই পেলাম রাজ্যের শাসকদলের চা শ্রমিক সংগঠন তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাদল দাসগুপ্তকে। কিছুদিন আগেই শুনেছিলাম উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ খাতে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য প্রায় পঞ্চাশটি চা বাগান পরিচালন কর্তৃপক্ষের ব্যাংক একাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। একইসঙ্গে অনেক বাগানের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এজাহার দাখিল করা হয়েছিল এবং ছটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করা হয়েছিল। চা শ্রমিকদের মজুরি থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেটে নেওয়ার পরেও অধিকাংশ চা বাগানের মালিকপক্ষ সেই টাকা জমা করছেন না বলে অভিযোগ তুলে পিএফ অফিস ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছিল চা শ্রমিক সংগঠন তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। তারই ফল এটা। নেতৃত্বের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম তাঁরা খোজ নিয়ে দেখেছেন যে ৯০% চা বাগান মালিক শ্রমিকদের পিএফ এর টাকা কেটে নেওয়ার পরেও তা জমা করেননি। ইতিপূর্বে বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠকে মালিকপক্ষকে সতর্ক করা হলেও তারা কর্ণপাত করেননি বলে জানান বাদলবাবু। এই পরিস্থিতিতে চা
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴