সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 462

শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি - ২৬
বিমল দেবনাথ 
^^^^^^^^^^^^^^

অকাল বোধনের পরেও কাশ ফুল থাকে। কাশ ফুলের বিসর্জন হয় হেমন্তের বর্ষায়। কখনো বিসর্জন হয় শরতের  বৃষ্টিতে-  অকালে। প্রতি বছর সাদা ঢেউ রেখে যায় দাগ। সে দাগ ভাসিয়ে নিতে পারে না বুক ফাটা মেঘের জল। তিস্তা তোর্সা রায়ঢাক জলঢাক্কা কী ভয়ানক হয়ে ওঠে বর্ষায় - ভাসিয়ে নিয়ে যায়, বয়ে নিয়ে যায় কত কী। সৃষ্টিতে কী ধ্বংস থাকে! সৃষ্টির আলোর চোখ ধাঁধানো উদ্ভাস বা নিকষকালো অন্ধকার কি ঢেকে রাখে ধ্বংস। কাশ মাটি বাঁধে বুক বাঁধে। প্রতি বছর নিয়ম করে দুপাশের বিশাল পান্নার সাগরের মাঝখানে- বুকে জেগে ওঠে সরল সাদা, মুক্তোর উপসাগর।  শরত হেমন্তে ডুয়ার্সের এই সরস্বতী সাদা কাশ বন যে দ্যাখে সে মোহিত হয়ে যায়। 
জল কমে গেলে বিকাশ হাঁটে কাশ বনে  সাদা মনে, দাগ খোঁজে, পায়ের ছাপ খোঁজে- দ্বিপদ চতুষ্পদের। পর্ণমোচী বনের ভিতর সরস্বতী সাদা কাশবন নদী-পাড় কত কিছুর খোঁজ দেয় শালসিঁড়ির সৈন্যদের… বিকাশ দাগে দাগে পৌঁছে যায় জল ছেড়ে নদী পাড়ে - শিমুলের দেশে। লাল শিমূল এখন প্রসব করছে দলা দলা সাদা তুলো। তুলো নয় চিঠির সাদা খাম। খামের ভিতর আছে  হলুদ ময়না পাতা ওদাল পাতা আগুন লাল জলপাই পাতা। রঙিন চিঠির শেষে ইতি লিখে- সই করেছে বসন্ত। বিকাশ ভাবে- কি বিচিত্র এই বন। বনে জীর্ণতা রঙিন বসন্ত আনে! বন সৃষ্টিতে সবুজ হয়ে ওঠে।  বিকাশের মুখে চুলে  লেগে যায় দলা দলা  সাদা তুলো – যেন সাদা  মুকুট। চোখে চিরহরিৎ লালি গাছের পাতা- সবুজ স্বপ্ন। স্বপ্ন নিয়ে ওঠে আসে ডাঙায় - নদী পাড় ছেড়ে। 
 মালাগিরি এখনো মুছতে পারেনি শ্মশানের পোড়া কাঠের গন্ধ।  দহনে গাছ আগুন ঝরালেও  শালসিঁড়ি বেড়ে  চলে  নদী থেকে বনে। বিকাশ হাঁটে বনে বনে। পায়ের চাপে শুকনো পাতা মড় মড় শব্দ করে। গাছে গাছে ঝরা পাতার উত্তর সূরী চিকন সবুজ হাসে। বিকাশ গাছে গাছে দ্যাখে- ফুলেরা গেছে ফল-কারাবাসে। এই কারাবাস কত ভালো- দহন থেকে। বিকাশ  তুলে নেয় ঝড়ে ঝরে পড়া রক্ত রঙের একটা ওদাল ফল, ভেঙ্গে পড়া কারিপাতার সরু ডাল। এখানে তো কোন ওদাল গাছ নেই। এই রক্ত জমাট বাঁধা লাল রঙের ওদাল ফল এসেছে কত দূর থেকে। ঝড়-রানারের মতো ছুটে বয়ে আনে উত্তর পুরুষ অন্য বুনোদের মত! তাহলে ঝড় তো ভালো। কেন যে মানুষ কালবৈশাখী বলে! বিকাশ দুহাতে কারিপাতা ডলে- আঃ কী সুন্দর গন্ধ! উগ্র ঝাঁঝালো হলেও ভালো- কাঠ পোড়ার গন্ধ চলে যায় নাক থেকে মন থেকে। কারিপাতার এই উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধ এখন মাধুরীর খুব প্রয়োজন। নারী আর শালসিঁড়ি তো এক। থেমে থাকে কী করে। বিকাশ শাল গাছে মস্ দ্যাখে। অর্কিড দ্যাখে। বসন্তে বনে যখন সবাই ময়ূরের মতো নাচছে তখন মস্ অর্কিড চাতকের মতো কাঁদে। কবে বর্ষা আসবে ঝম-ঝম করে। মাধুরীর চোখে বুকে ময়ূখ খেলবে নাচবে আবার শালসিঁড়ি ছুঁয়ে।   বিকাশ বনের রাস্তা ছেড়ে পাকদণ্ডী ধরে।
বিকাশের আজ কী হয়েছে বিকাশ বুঝতে পারে না। আজ শুধু ওর হাঁটতে ইচ্ছা করছে। পায়ের সাথে পা মিলে গ্যাছে খরগোস ময়ূর বন বিড়াল হরিণ লেপার্ড আরও কত বুনোদের। দেখা পায়নি কারো। কখনো কখনো এই রকম হয়- স্পর্শ পাবে দেখা পাবে না। এই স্পর্শ ভালোবাসার হতে পারে ঘৃণার হতে পারে রাগের হতে পারে। বিকাশ শুধু হাঁটে । কী পাকদণ্ডী কার পাকদণ্ডী কিছু দ্যাখে না। ভাবে- বন কী অদ্ভুত, সব বিষ আত্মীকরণ করে নেয় অজান্তে। বিষ নিয়ে কি বাস কার যায়! তবুও সমাজের দণ্ডমুণ্ডরা কত বিষ ছাড়ে। এই বিষ দেখা না গেলেও কালো, বাদামি ধোঁয়া থেকেও বেশি বিষাক্ত। বিকাশের গায়ে যেন বিছুটি পাতা লাগে, জ্বলে উঠে শরীর মন…
শ্মশানে দাউ দাউ করে জ্বলে শব। যে চলে যায় নিয়ে যায় না জাগতিক কিছু। দিয় সব সুখ সম্পদ দুঃখ অশান্তি। নিয়ে যায় শুধু শান্তি। এই শান্তির জায়গায়ও বিকাশের মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একটা ফোন।
- নমস্কার স্যার। বলুন… হ্যাঁ স্যার …শিবু বাবু তো, চিনি… হ্যাঁ স্যার রাতেই ফিরছি…  
- স্যার, শিবু ঘোষ, মানিক মিত্র ভীম ওঁড়াও লোক জন নিয়ে এসেছে- নির্মল বাবু বলে।
- ওদের তো আরও আগে আসার কথা। এই এল!   
বিকাশের মনের ভিতর একটা বিশ্রী শব্দ অনুচ্চারিত রয়ে গেল ধুন্দুলের কালো বীচির মতো। গতকাল অপূর্ব-শ্মশান- বাড়ি করে ফিরতে অনেক রাত হয়েছিল। তারপর ওরা অফিসে সাক্ষাৎকার সময় উপরওয়ালা কাছ থেকে  ছিনিয়ে নিয়েছে সকাল সকাল। বিকাশের মনে হয়- ওদের সকাল মধ্যাহ্নে হয় বলেই বিষ ঢালে মনে ও জনে।      
- ঠিক আছে, নিয়ে আসুন। তবে তিন জনকে ভিতরে আনবেন।  
শিবু ঘোষ, মানিক মিত্র, ভীম ওঁড়াও চেম্বারে ঢুকে চেয়ার টেনে বসে।  বসা’টা যেন ওদের সহজাত অধিকার। ওদের বসার ভঙ্গি বিকাশকে শিখিয়ে দেয় সিংহাসন আর আসনের তফাৎ। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় রাজা মহারাজারা সিংহাসনে বসে পায়ের উপর পা দিয়ে। এই মোড়ল বসে আসনে পায়ের পাতা তুলে। মনে করে চেয়ারে পায়ের পাতা তুলে বসার মধ্যে বিজয়ীর অহংকার আছে। শরীরী ভাষা - যেন বটগাছের থাম মূল। ডালপালার কত ভার বহন করে জীবন পণ করে… বিকাশ বলে-  
- আপনি। 
- হ্যাঁ। মানিক মিত্র, সবাই মাস্টারদা বলে চেনে। আপনি ওনার সমস্যার সমাধান করেননি এখনও। 
- আর ভীম, আপনি? 
- আপনি ওকে কেন শুধু শুধু ফাঁসাচ্ছেন? - শিবু ঘোষ বলে। 
- জাল যে আপনি গোটাচ্ছেন, শিবু বাবু (?)। বলুন তো জালটা কে ফেলেছে? 
- আপনি কি মস্করা করছেন?
- আরে না না … চা নিন অল্প … লাল চা… নির্মলবাবু চা পাঠান।  
- দেখুন আপনি যে ভুল করেছেন, সেটা চা দিয়ে মিটবে না। সব ঘটনার রিপোর্ট আমরা অনেক দূর পাঠিয়েছি। 
- সে ঠিক আছে। চাটা আমার সৌজন্যবোধের প্রকাশ।   
- আপনার সৌজন্যবোধ থাকলে পাঁচ পাঁচটা গাড়ি এত দিন ধরে আটকে রাখতেন না। কত অনুরোধ করলাম, ফাইন করে ছেড়ে দিন। এই কয় দিনে গাড়ির জন্য কত ডেমারেজ দিতে হবে আপনি জানেন? 
- সেটা আপনার বিষয়। আপনাকে তিরিশ দিন সময় দেওয়া আছে। যেদিন কাগজ দেখাতে পারবেন, ছেড়ে দেব। তিরিশ দিন শেষ হলে কাঠ যাবে সাথে লরিও যাবে।    
- যাবে বললে হবে? কাগজ কোথায় পাব। ফাইন নিয়ে কাগজ তো আপনি করে দেবেন। 
- কি…
- কেন এর আগে দুলালবাবু, রতিবাবু, অরও অনেক বাবুরা আমাদের ফাইন করে কাগজ তৈরি করে দিত। আপনি আইন দেখাচ্ছেন?
বিকাশ মাথা নামিয়ে ফাইলের পাতা উল্টায়। ওলটপালট হয়ে যার কত নীতি নৈতিকতা। হাতিদের বাঁশ ঝাড় উল্টে ফেলে দেওয়ার মতো। হাতি বাঁশ ঝাড় উল্টে ফেলে দেয় বাঁশ খেতে ভালোবাসে বলে। কিন্তু দুলালবাবু… জংলী লজে অপারেশন শেষ করতে না করতে খবর পাঠায়। সেই খবরে কাজ করার পর সবাই কেমন যেন জাল ফেলে বিকাশকে করতে চাইছে আবদ্ধ। বিকাশের সিক্সথ সেন্স অনেক কিছু জানান দেয়। মুখে বলে না কিছু।  বলে- 
- দেখুন শিবুবাবু, আপনি নিজেই বললেন এর আগে অনেকে ফাইন করে গাড়ি ছেড়ে দিত। তাহলে এটা তো ঠিক যে আমদের কাজে বৈষম্য নেই। যখন পারা যায় তখন আইন মেনে, গাড়ি ছাড়াও হয়। যখন যে রকম অপরাধ সেই রকম কাজ। আগে যখন গাড়ি ছাড়া হয়েছে তখন নিশ্চয় ছাড়ার মতো কেস ছিল। তবে এটা ছাড়ার মতো কেস নয়- যতক্ষণ না আপনি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।    
- দেখুন আপনি সব বিষয়ে বেশি বেশি করেন। গত বারের গাড়িগুলো দেখুন এখনো অফিসের সামনে পচছে। আপনি ছাড়েননি। আজও যদি আমার ভাগ্নের গাড়িগুলো না ছাড়েন, একটা হেস্ত-নেস্ত করে ছাড়ব।  
- সে তো গত বারও করেছিলেন। কর্মচারীদের অফিসের ভিতরে মলত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন… জল খেতে দেন নি… সারা কম্পাউন্ডে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন। কিছু লাভ হয়েছে কি? হয়নি, এবারও হবে না। 
- দেখলেন মাস্টারদা … কী বলে। এই লোকটি পনের বছর আগেও জ্বালিয়েছিল এখনো জ্বালাচ্ছে। 
- দেখুন বিকাশবাবু, আপনি সাবিত্রীর ক্ষতিপূরণের টাকা হারান মণ্ডলের ব্যাঙ্কে সরাসরি দিয়ে দিলেন, কিন্তু কতগুলো ছেলে সারা দিন আপনার বাইসন…
বিকাশ বাধা দিয়ে বলে-  
- না, আমার নয়। বলুন দেশের। 
- ঐ হল, দেশের জন্তুটা…
বিকাশ আবার বাধা দিয়ে বলে- 
- না জন্তু নয় বলুন বন্যপ্রাণ। আচ্ছা আপনাকে জন্তু বললে কেমন লাগবে?
মানিক মিত্র চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে ওঠে। রাগে পাথর ভাঙ্গার মেশিনের মতো রাগে গর্ গর্ করে বলে-
- আপনি আমাকে জন্তু বললেন। আমাকে…
- কেন কী হল। আমাদের যেমন প্রাণ আছে ওদেরও তেমন প্রাণ আছে। আমরা যেমন আবাসস্থলে বসবাস করি বুনোরাও তো আবাসস্থলে বাস করে। আমাদের আবাস স্থলকে আমরা ক্ষতি করি, নোংরা করি দূষিত করি। যতটুকু খেতে পারি তার থেকে বেশি সঞ্চয় করি। আইন তৈরি করি কিন্তু আইন মানি না। সামাজিক শৃঙ্খলা নীতি গঠন করি কিন্তু তা না মেনে চলা বা লঙ্ঘন করাকে ক্ষমতা বলে মনে করি। যৌনতাকে বিনোদন মনে করি। কিন্তু বুনোরা ওদের আবাসস্থলকে ক্ষতি করে না দূষিত করে না। যতটুকু খায় ততটুকু যোগাড় করে, নষ্ট করে না।   সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জীবন দেয় , নিয়ম ভাঙ্গে না। ওদের যৌনতা বিনোদন নয় একটি বস্তুতান্ত্রিক অনিবার্য প্রয়োজন। কিন্তু জন্তু বলতে আমাদের মনে কী ধারণার জন্ম হয়? মনে হয় একটা বিশৃঙ্খল উন্মাদ যৌনকাতর কীট।  তাহলে বলুন, জন্তু পশু এই শব্দগুলো শুনলে গুণগতভাবে কাদের মুখ ভেসে আসে। আমার তো আমার চেনা জানা অনেক দ্বিপদীর মুখ ভেসে আসে।    
- অফিসার… মানিক মিত্র চিৎকার করে ওঠে। 
- অফিসার, আপনি মাস্টার হলে পারতেন। শিবু ঘোষ পাথরের মতো ভারি গলায় বলে। কথাটার মধ্যে একটা যেন ভয়ের বার্তা আছে। 
- ঠিক বলেছেন। শালসিঁড়ির প্রতিটি সৈনিক শিক্ষক হলেই শালসিঁড়ি সুরক্ষিত থাকবে। তবে আক্ষেপের কথা হল, এখন কামের মাস্টার পাওয়া যায় না। শুধু নামের মাস্টার হম্বিতম্বি করে। 
- অফিসার আপনি আমাকে অপমান করছেন। মাস্টারদা আবার চিৎকার করে ওঠে। 
- না না আপনাকে অপমান করছি না। বাস্তব সত্যটা বলছি। বিকাশ চাপ ফুলের মতো হেসে, তর্জনী ওদের দিকে তাক করে বলে -  পরিবেশ ম্যানেজমেন্ট-এর আসল চাবিকাঠি হল ম্যান ম্যানেজমেন্ট। 
- আর আমাদের উন্নতির টার্গেট ঠিক রাখতে হলে ম্যানেজমেন্ট করতে হয় আপনাদের মতো লোকদের। করলার মতো মুখ করে বলে মাস্টারদা। 
- ঠিক আছে। আপনি মাস্টারদার কথাটা শুনুন। -শিবু ঘোষ বলে।
- বলুন।
- বাইসন যে ঘর-বাড়ি ফসলের ক্ষয় ক্ষতি করেছে তার ক্ষতিপূরণ এখনো দেননি কেন?
- গাউরের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির ক্ষতিপূরণ পাবে সঠিক আবেদন করলে। সেটা তো করানো যায়নি।  
- আর আমার শ্যালকের বোল্ডারের ট্রাক দুটি কবে ছাড়বেন। 
- সেটা ছাড়া হবে না, যা করার কোর্ট করবে। 
- আপনি কী ভাবে ভীমকে বন্যপ্রাণ শিকারি বলে ধরতে চাইছেন? মানিক মিত্র বলে।  
বিকাশ দেখতে পায় কে যেন নদীতে জাল ছোঁড়ে। সীসার গুলিগুলো প্রথমে ভুর ভুর করে ডুবে যাচ্ছে জলের গভীরে। তারপর জালের সুতোগুলো মিশে যাচ্ছে জলের সাথে ডুবে যাচ্ছে জলের গভীরে। যে জাল ছোঁড়ে আর যে জাল ছোঁড়া দেখে তারা কেউ জানে না কী মাছ ধরা পড়বে। নাকি খালি জাল উঠে আসবে।  বিকাশ বলে- 
- ভীম তুমি কি বন্যপ্রাণ শিকার করেছ?
- না স্যার।
- তাহলে মানিকবাবু কী সব বলছে। আমি তো কোনো দিন তোমাকে এই বিষয়ে কিছু বলি নাই। তুমি তো ভাল ছেলে। কত ভালো কাজ কর তোমার বাগানের গরীব লোকের জন্য।  
- তাই তো স্যার। 
বেইট আর টার্গেট অতি আপন হয়। খুব গোপন করে রাখতে হয়। গোপনীয়তা ভাঙলে বেইট ও টার্গেট পচে যায়। অনেক প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যায়। শুরু করতে হয় আবার প্রথম থেকে। ঝর্ণার মতো হাসতে হাসতে বিকাশ বলে- 
- হাসালেন, মানিকবাবু হাসালেন। যে ছেলেটা বাগানের গরীবদের সেবা করে তাকে আপনাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ সিদ্ধি করতে বন্যপ্রাণ শিকারি বানিয়ে দিচ্ছেন। আপনাদের আসল উদ্দেশ্য কী বলুন তো? 
- ট্রাকগুলো ছাড়বেন না?
- না। নমস্কার।
- ব্যাপারটা ভাল করলেন না। ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে। 
- আমি কাজ করি। ফল সরকার দেয়…
কে যেন স্যার… স্যার… বলে চিৎকার করে পিছন থেকে। ফিরে দেখে নির্মলবাবুরা ছুটে আসছে। বিকাশ দাঁড়িয়ে পড়ে। নির্মলবাবু বলে-
- স্যার কী করছেন। আপনার আজ কী হয়েছে। কাশ বন থেকে বের হয়ে এত জোরে হাঁটতে শুরু করলেন যে আমরা আপনাকে ফলো করতে পারছি না… একি আপনার কলারের নিচে যে বড় বিছুটি পাতা লাগে আছে… নির্মলবাবু সতর্ক ভাবে বিছুটি পাতাটি ফেলে দেয়। 
- তাই বলি কিসের জন্য এত জ্বালা করছে। বলুন আপনারা কেন এত চিৎকার করছিলেন।   
- আপনি গাড়ি চলার রাস্তায় হাঁটছিলেন। তারপর কখন হঠাৎ বাঁদিকের পাকদণ্ডীতে ঢুকে গেলেন, আমরা খেয়াল করতে পারিনি। যখন খেয়াল করলাম তখন দেখলাম, আপনারা পায়ের ছাপ হাতির পায়ের ছাপের উপরে, বাঁদিকের এই পাকদণ্ডীতে। আপনাকে আজ বড় অচেনা লাগছে স্যার।  দেখুন, পাশের সিন্দুরি গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে আছে। ওই বড় গোঁয়েণলু গাছটিকে উল্টে ফেলে দিয়েছে।  
বিকাশ দেখে ও নিজে একটা বড় হাতির পায়ের ছাপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। পাশে পড়ে আছে অর্ধেক খাওয়া সিন্দুরি গাছের ডাল। দূরে উল্টে পড়ে আছে বড় একটা গোঁয়েনলু গাছ।  পায়ের ছাপ আর আধা খাওয়া সিন্দুরি গাছের ডাল একদম টাটকা। বুঝতে অসুবিধা হয়না যে হাতিটি খুব কাছাকাছি আছে। নাকে লাগে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। 
- নির্মলবাবু গন্ধ পাচ্ছেন?
- হ্যাঁ স্যার। এ-যে হাতির মস্তির গন্ধ! তাড়াতাড়ি ব্যাক করি স্যার।   
- দেখুন তো গন্ধটি কোন দিক থেকে আসছে। 
নির্মলবাবুরা অনেকটা অফিসের স্নিফার ডগের মতো নাক ফুলিয়ে গন্ধ নিতে থাকে। নির্মলবাবু একটা পাতা তুলে উপর থেকে নিচে ফেলে হাওয়া কোন দিকে বইছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করে। হাওয়ার দিক বোঝা যায়না।  মনে হয় তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ ওদের ঘিরে ফেলেছে। কচি অপরাহ্ণে ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো জেগে উঠেছে। ঝিঁঝিঁপোকার কর্কশ শব্দ ভয়ের বল্লম হয়ে বিঁধছে মন।  নির্মলবাবু জানে- মনের ভিতর যতই ভয়ের তীক্ষ্ণ বরফ ফলা ঝরুক, বলা যাবে না কিছুতেই।  মুখে উষ্ণতা এনে বলে –
- স্যার বুঝতে পারছি না। 
- হাতির মস্তির গন্ধ কোথায় থেকে আসে জানেন? 
- স্যার, চোখের পিছনের অস্থায়ী গ্রন্থি ( Temporal Gland) থেকে যে রস বের হয় তার গন্ধ। 
- হ্যাঁ, সবাই তাই জানে। তবে সেটা কিন্তু ঠিক নয়। 
- তাহলে কিসের গন্ধ স্যার?
- হাতির দণ্ডীটি নিচু হয়ে দেখুন তো। 
নির্মল বাবুরা হাতির পায়ের ছাপের সাথে সাথে পুরো হাতির দণ্ডী  দ্যাখে। গন্ধ নেয়। নির্মলবাবু হাতির পায়ের ছাপ দেখে বলে- বুঝলে নিলয়, হাতিটি বেশ বড় হবে। মনে হয় নয় ফুটের বেশী উঁচু হবে। তারপর বলে – নিলয় মনে হয় গন্ধটি মাটি থেকে আসছে। নির্মলবাবুদের মনের ভয় হঠাৎ উড়ে যায় চঞ্চল বাঁশপাতি পাখির মতো। হাসি মুখে বলে- 
- স্যার মাটির গন্ধ। আপনার দারুণ চোখ… হে হে, হাতিটির মস্তি হয়নি। 
- না হাতিটি পুরো মস্তিতেই আছে… বিকাশ গম্ভীর হয়ে বলে। 
নিলয় বলে ওঠে -  স্যার, ঐ গাছের গায়ে দেখুন, রক্তের দাগ…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri