সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

07-December,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 411

চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি/পর্ব :২৬
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^

 ' ...না-বলা বাণীর, ঘন যামিনীর মাঝে '
-------------------------------------------------------
"পাচার দু' ধরনের হয়। এক, প্রকৃত পাচার বা রিয়েল ট্রাফিকিং, অন্যটি মাইগ্রেশন অর্থাৎ স্বেচ্ছায় কাজের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া। প্রকৃত পাচার তখনই হয় যখন কাজের লোভ দেখিয়ে, ভালো মাইনে, ভালো থাকা খাওয়ার প্রলোভন দিয়ে মেয়েটিকে কেউ নিয়ে যায়। যে লোকটি নিয়ে যায় সে তার বাগানের প্রতিবেশী কেউ হতে পারে। অথবা কাছাকাছি কোনও গ্রামগঞ্জের মানুষ । সেক্ষেত্রে মানুষটি মেয়েটির পূর্ব পরিচিত হতেও পারে আবার না-ও পারে। হতে পারে অন্য কারো মারফৎ লোকটির সাথে মেয়েটির পরিচয় ঘটেছে। আর এই লোকটিই হল পুরো হিউম্যান ট্রাফিকিং-গ্যাং এর সবচেয়ে নিচুতলার এজেন্ট। এদের মূল পান্ডারা বসে থাকে দিল্লি, নয়ডা, গুরগাঁও এসব অঞ্চলে। সেখান থেকেই ওরা অপারেশন চালায়।" 

-" এই যে দালাল, যারা এভাবে নিয়ে যাচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই লিগাল ওয়েতে কাজটা করে না। মানে তারা যদি সত্যি কোনও লাইসেন্সড প্লেসমেন্ট ফার্মের এজেন্ট হয় তাহলে তো লোকাল থানায় সব জানিয়ে কাগজপত্র জমা করে যাবে। সেটা হয় কি? " 

-" না, নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট ক্ষেত্রে করে না। এটা পুরোপুরি আনসেফ মাইগ্রেশন। এজেন্ট বাড়িতে এসে মেয়েটির অভিভাবককে বড়জোর বলে কয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার নাও পারে। মেয়েটির বন্ধুরা যাচ্ছে দেখে সেও তাদের সঙ্গে চলে গেল। যেখানে গেল সেখানে গিয়ে সে কী কাজ পাবে তা সে নিজেও জানে না। এমন হতে পারে যে কাজের লোভ দেখিয়ে নেওয়া হয়েছিল সে কাজ সে পেলই না। তাকে এমন কোথাও নিযুক্ত করা হল .... বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডোমেস্টিক-হেল্প-এর কাজে... সেখানে হয়ত তাকে অমানুষিক খাটতে হচ্ছে। বিনিময়ে উপযুক্ত বেতন পাচ্ছে না। বহুক্ষেত্রে তারা শারীরিক নির্যাতন, যৌন হেনস্থা এসবের শিকার তো হয়েই থাকে। যা তাদের সহ্য করতে হয়। প্রতিবাদ করেও ফল হয় না। পালিয়ে যে আসবে সবসময় সেই সুযোগও হয় না।" - অসীম সোম কথা শেষ করতেই শ্রাবস্তী প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। 
-"বাড়ির লোকের সাথে যোগাযোগ থাকে না?"

-" প্রথম প্রথম থাকে। মাস গেলে টাকাও পাঠায় মেয়েটি তার বাড়ির লোককে। তারাও খুশি থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে দীর্ঘদিন যোগাযোগ বন্ধ না থাকলে তখন তাদের টনক নড়ে। সেসময় তারা পঞ্চায়েত, অথবা স্থানীয় থানাকে জানায়। অথবা অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষায় থেকে থেকে একসময় ধরে নেয় যে, সে হারিয়ে গেছে। অথবা মারা গেছে। কিন্তু সকলেই যে ফেরে না, তা তো হতে পারে না। কাজ করে টাকাপয়সা জমিয়ে ফিরেও আসে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে। ফিরে এসে তারা ঘর সারায়, আসবাবপত্র কেনে, ঘরের মানুষজনকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেয়। এমনকি বাবা মায়ের চিকিৎসাও করায়। করে, আবার তারা ফিরে যায় কাজের জায়গায়। তবে এখানে এমন একটি চা বাগান আছে - যেটা বহুদিন সিক-গার্ডেন ছিল, সেখান থেকে বহু ছেলেমেয়ে বাইরে কাজে গিয়ে নিখোঁজ। আজও ফেরেনি। "

-"আচ্ছা এরা যে নিখোঁজ তার পেছনে কারণগুলো কী কী থাকতে পারে বলে মনে হয়? "

-"দেখুন চা-বাগানের মানুষজন জন্ম থেকেই একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে। তাদের পৃথিবীটা ঐ চা বাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাইরের জগৎ তাদের কাছে একদম অচেনা। কিন্ত দিন ক্রমশ বদলেছে। এখন একবার যারা এই চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বাইরে যায় তারা বড় বড় শহরের জৌলুসের মোহে পড়ে যায়। তাদের মুখে শুনে আরো দশজন প্রভাবিত হয়। এরা কেউ কেউ আর ফিরতে চায় না এই বদ্ধ জীবনে। অন্য রাজ্যে বিশেষত কেরালা, দিল্লী, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এসব জায়গায় চা-বাগানের প্রচুর মেয়ে কাজ করে। তারা ভাল টাকা রোজগার করে। আমি এমন কয়েকজনকে জানি যারা মাসে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকার কম রোজগার করে না। "

-" তাই নাকি! দেন ইট ইজ অলমোস্ট ফাইভ টাইমস মোর দ্যান টি-গার্ডেন ওয়েজেস।" শ্রাবস্তী বলে। 

-" শুধু তাই নয়, আমি দেখেছি, যে মেয়েটি একসময় বাগানে পাতা তুলত, সে ফ্লাইটে যাতায়াত করছে। তাদের মালিকরা সেই খরচটা বহন করছে। ডোমেস্টিক হেল্প-এর এত ডিমান্ড সেখানে। সেখান থেকে আসার পর তাদের চেহারা,কথাবার্তা, চালচলন সব বদলে গেছে। টুকটাক ইংরেজি, চোস্ত হিন্দিও বলতে শিখে গেছে।"

-" আচ্ছা...!" শ্রাবস্তীর চাহনিতে হালকা বিস্ময়। 

" তবে যতই হোক, একটা সময় তাদেরও মোহ কাটে ।" সুবর্ণ ঢুকে পড়ে দুজনের কথার মাঝে, "আলটিমেটলি ওদের ফিরতেই হয় এই মাটির টানে। কেননা একটা কথা মনে রাখতেই হবে যে, চা-শ্রমিক বিশেষত আদিবাসী শ্রমিকরা হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান। এই আরণ্যক পরিবেশ, সবুজ চায়ের দেশ, নদী, ঝোরা এসব ছেড়ে বেশিদিন তারা বাইরে থাকতে পারে না। "

-" হ্যাঁ এটা অবশ্য ঠিক।" অসীম সায় দেয়। 

" তবু যে এত মানুষ আজও ফেরে নি...বহু দিন কোনও খোঁজ নেই, এটা কেন?"

-" এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। কিছু মানুষ প্রকৃতই হারিয়ে যায়। তারা পথ চিনে আর বাড়ি ফিরতে পারে না। তারা কারোর খপ্পরে পড়ে যায়। যে তাকে থাকা খাওয়ার বিনিময়ে কোথাও বাঁধা দাসের মতো জীবন বেছে নিতে বাধ্য করে। এরা অবস্থার পাকেচক্রে একরকম ফোর্সড-লেবার বলতে পারেন। কেউ কেউ আবার হিউম্যান-অরগান ট্রাফিকিংএরও শিকার হয়। সেক্ষেত্রে তাদের আর বাঁচার আশা থাকে না। কেউ কেউ বিশেষত মেয়েরা পাচার হয়ে যায় মিডল ইস্টে। তাদেরও আর ফেরা হয় না এই জীবনে। আর বাকি কিছু মানুষ দুর্ঘটনায় বা অসুখে মারা যেতেই পারে। যাদের খবর বাড়ির লোক কোনোদিনই পায় না। "

-" আচ্ছা, একটা কথা... মানছি চা বাগানের মজুরি কম, কিংবা লক-আউটের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় জব-সিকিওরিটিও থাকে না... তবু এখন যেমন পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজ, রাস্তা সারাইয়ের কাজ এসবও তো আছে। সরকারি রেশনও পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ বলতে চাইছি যে, অন্তত না খেয়ে মরবার মত পরিস্থিতি তো নেই, যতক্ষণ না বাগান বন্ধ হচ্ছে। তবু কেন ঝুঁকি নিয়ে লোক বাইরে চলে যায়। ইন দ্যাট কেস তাদের লো রেট অফ ওয়েজ টাই কী আসল ফ্যাক্টর..." 

শ্রাবস্তীর কথার ফাঁকে ধাবার ভেতর থেকে তিন গ্লাস ধোঁয়া ওঠা চা আর ভেজ-পকোড়া চলে আসে বাইরের গার্ডেন আম্ব্রেলার নিচের। সন্ধে নেমেছে খানিকক্ষণ হল। সামনের থার্টি-ওয়ান সি এন-এইচ ধরে আলো জ্বালিয়ে থেকে থেকে হুসহাস গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে দুদিকে। রাস্তা পেরিয়ে ধানক্ষেত। ধানক্ষেতের ওপারে বাড়িঘরগুলোয় আলো জ্বলে উঠেছে। দূরে ঝালং পাহাড়ের গায়ে ফুটে উঠেছে ঝলমলে আলোকমালা। সেদিকে থাকিয়ে কয়েক মুহুর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল সুবর্ণ।

"নিন...গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে কথা হোক", বলে প্যাকেটটা অসীমের দিকে এগিয়ে দিয়ে শ্রাবস্তী বলে... "সিগারেট চলে...?"

-" নো থ্যাংকস... চলে না।" সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে অসীম সোম। 

-" আপনি?" সুবর্ণর দিকে এগিয়ে দিতেই কিছুটা ইতস্তত করে একটা তুলে নিয়ে সুবর্ণ আধো-বিগলিত হাসি দিয়ে বলে, 
-" আমিও ঠিক হ্যাবিচুয়েটেড নই। সখের ধূমপায়ী বলতে পারেন!"

তারপর নিচু হয়ে লাইটার থেকে আগুনটা নিতে নিতে শ্রাবস্তীর উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই ফেলে, "তবে আপনি কিন্তু বেশ কড়া ব্র্যান্ড প্রেফার করেন দেখছি।"

আশি শতাংশ টেনে নেয়া ধোঁয়ার দশ শতাংশ বাতাসে বিলীন করে দিয়ে সিগারেট সমেত দু আঙুলে গ্লাসটা তুলে আলতো চুমুক দিয়ে শ্রাবস্তী একবার আড়চোখে সুবর্ণকে দেখে নেয়। তারপর গ্লাসটা নিঃশব্দে নামিয়ে ঠোঁটে অদ্ভুত একটা ঢেউ খেলিয়ে বলে ,   
-" কী করব বলুন, মানুষটাই যে আদতে কড়া। তিতকুটে তামাকের মতো। যদিও ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমি মোটেই কড়া-ব্র্যান্ড নই। দে কনসিডার মি নেক্সট টু দেয়ার ফ্রেন্ড। তবে মননে কড়া পড়েছিল বহু আগে। সেই আমার মেয়েবেলা থেকেই। আমার মেয়েবেলা, কথাটা কী একটু তসলিমা ঘেঁষা শোনাল..? " ধোঁয়ার রিংটা ছেড়ে চেয়ারের ব্যাকরেস্টে দুহাত ছড়িয়ে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে শ্রাবস্তী মৃদু হাসি ছড়ায়। 

-" তসলিমা পড়েন?" ধোঁয়ার সাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সুবর্ণ। 

-" হ্যাঁ, পড়ব না কেন? তবে গদ্যের চেয়ে ওর কবিতাগুলো বেশি ধারালো। গদ্যগুলো যেন বড্ড জোর করে সুড়সুড়ি দেওয়া বলে মনে হয় আমার। বাট, আই লাইক হার কারেজ।"

কথার ফাঁকে অসীমের ফোনটা বেজে ওঠে । কল রিসিভ করতে একটু দূরে যেতেই শ্রাবস্তী জিজ্ঞেস করে সুবর্ণকে, 
- "উনি কি লোকাল নিউজ পেপারের করেসপন্ডেন্ট ? "

-" হ্যাঁ,"

-" কদ্দিন আছেন উনি এ লাইনে? "

-" হিসেব করে বলতে পারব না। তবে দীর্ঘদিন হল। সাংবাদিক হিসেবে সুনাম আছে। বিশেষ করে চা-বাগানের ওপর ওর ফিচারধর্মী লেখাগুলো বেশ ভাল। "

-" তবে তো কিছু তথ্যও পেয়ে যেতে পারি ওঁর কাছে। "

-" দেখুন, জিজ্ঞেস করে।" কথা শেষ হতেই অসীম ফিরে আসে। 

-"কোনও জরুরি কল নাকি, অসীম?" সুবর্ণ জানতে চায়। 

-" না, তেমন জরুরি নয়।" চায়ে চুমুক দিয়ে অসীম বলে। 

-" আপনার কি খুব কি তাড়া আছে? নইলে আরও দু'একটা বিষয় জানার ছিল।" শ্রাবস্তী জিজ্ঞেস করে। 

-" বলুন না, কী জানতে চান,  এক্ষুণি কোনও তাড়া নেই। আসলে হয়েছে কি, ডিমানিটাইজেশনের পর থেকে কিছু বাগান ক্যাশলেস পেমেন্টের দিকে ঝুঁকেছে। কর্তৃপক্ষ চাইছে হান্ড্রেড পারসেন্ট শ্রমিকদের মজুরির টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে। যা নিয়ে পাশেই একটি বাগানে লেবার-আনরেস্ট হয়েছে।সেই খবরটা কভার করেছি সকালে। অফিস থেকে তাড়া দিচ্ছে পাঠানোর জন্য।  তোমাদের বাগানে লেবার পেমেন্ট কীভাবে হচ্ছে সুবর্ণদা?"

-" এখনও অবধি ক্যাশেই হচ্ছে, তবে ক্যাশলেস করার জন্য চাপ আসছে। কেন্দ্রীয় সরকার নাকি কর্পোরেট সেক্টরের জন্য বছরে টাকা তোলার একটা নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিয়েছে। ওয়ান ক্রোর বা কিছু। তার বেশি তুললেই ট্যাক্স দিতে হবে। তাই এই ব্যবস্থা। "

-" কিন্তু এতে মালিকদের সুবিধা যেমন আছে কিছু মানুষের কত অসুবিধাও হবে বলো। টাকা তুলতে কাজ বাদ দিয়ে ছুটতে হবে ব্যাংকে। যাদের অ্যাকাউন্ট নেই তাদের খাতা খুলতে হবে। অনেকের আধার কার্ড নেই। তারা কিভাবে অ্যাকাউন্ট খুলবে? কবে পারবে তার ঠিক নেই, তাদের কী হবে? সবচেয়ে বড় কথা ক্যাশে বেতন দিলে তলবের হাটে তারা সাপ্তাহিক বাজারটা সেরে নিতে পারে। ক্যাশলেস হলে  বাগানে বাগানে যে গুদরি-হাট বসত...সেগুলোও আর বসবে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গুদরি-হাট উঠে যাবে। কত লোকের রোজগার থাকবে না। " 

-" দিন কী আর যুগ যুগান্ত একভাবে চলে ভাই। পরিবর্তন তো আসবেই একটা সময়। তাকে মেনেও নিতে হয়। একসময় বাগানের মাঠে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখানো হত। এখন হয়..? "

-" ইয়েস...ইয়েস পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা...দ্যাটস রিয়েলি নস্টালজিক..." আচমকা উচ্ছসিত হয়ে ওঠে শ্রাবস্তী, "আমি দেখেছি... কিং-কং ভার্সেস গডজিলা...জুজি নিয়ে গেছিল কোলে করে.. মনে আছে।"-  শ্রাবস্তীর উচ্ছল আচরণ দেখে অসীম বেশ অবাক হয়।  মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে সুবর্ণর দিকে তাকিয়ে। সুবর্ণ ওর অস্বস্তি কাটাতে বলে, 

" অ্যাকচুয়ালি, উনিও চা বাগানের মেয়ে। উনার বাবা আসামের ম্যানেজার ছিলেন।"

" ও- আচ্ছা! কোন বাগান?" অবধারিত প্রশ্নটি বেরিয়ে পড়ে অসীমের মুখ থেকে। 

শ্রাবস্তী নামটা জানিয়ে বলে, "আমি ছোট থেকেই খুব জেদী ছিলাম। লেবারদের মাঝখানে বসে খোলা মাঠে ম্যানেজারের মেয়ে সিনেমা দেখবে... এটা হতেই পারে না। ওটা প্রোটোকল বিরুদ্ধ। তবু জেদ ছাড়িনি। আমার জেদের কাছে পরাস্ত হতে হল আমার গুরুগম্ভীর বাবাকে। শেষে জুজির সাথে গাড়ি দিয়ে পাঠালেন। শর্ত ছিল গাড়ির ভেতরে বসে দেখতে হবে। নামা চলবে না। আর আধঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে। কী আর করা। তবু গেলাম। গিয়ে দেখি সিনেমা সবে শুরু হয়েছে। গাড়িটা দূরে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার লুইস-ভাইয়া...সামনের লোকজনকে একটু সরে দাঁড়াতে বললেন। তারা সরে দাঁড়াল। গাড়ির উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে আমি আর জুজি দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে এত ইনভলভড হয়ে পড়েছিলাম আমরা...কখন যে দেড় ঘন্টা কেটে গেছে টেরই পাইনি। বাবা বাংলো থেকে চৌকিদার পাঠাতেই হুঁশ হল।"

শিশুর মতো তড়বড়  করে বলে যাচ্ছিল শ্রাবস্তী। নিজের অজান্তে  কখন যে তার অধ্যাপিকাসুলভ আবরণটা একটু একটু করে চাঙরের মতো খসে পড়ছিল প্রতিটি বাক্যবিন্যাসের সাথে সেটা  হয়ত সে টের পায় নি। একসময় নিজের ছেলেমানুষিটা বুঝতে পেরে চুপ করে যেতেই সুবর্ণ খেইটা ধরিয়ে দেয়। 

'-হ্যাঁ, কী যেন জানতে চাইছিলেন ওর কাছে?"

-" ও, হ্যাঁ...." নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে শ্রাবস্তী বলতে শুরু করে, "অ্যাকচুয়ালি আই গট আ লি'ল বিট ইমোশনাল। যা হোক, বলছিলাম কি, এই যে চা বাগানের নারী শ্রমিক, এদের ওপর যে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, ক্রাইম, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট, রেপ- এসব হয় তার একটা এরিয়া বেসড পরিসংখ্যান পাওয়া যেতে পারে? "

-" দেখুন, এভাবে হিসেবেটা পেতে হলে তো থানায় যেতে হয়। আর সব ক্রাইমগুলোই যে রেকর্ডেড হয় তাও নয়। অনেকেই বাড়ির ঘটনা বাইরে টেনে আনতে চায় না। তবে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সর শিকার মেয়েরা যে আকছার হচ্ছে চা-বাগানে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যার পেছনে নেশা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা এসব তো আছেই। রেপ ভিক্টিমের সংখ্যাটাও বাড়ছে। বেশ কয়েকবছর আগে বানারহাটের কাছে একটি চা বাগানে একজন মেয়ে গনধর্ষিত হয়। লাশ পাওয়া যায় চা বাগানের নালায়। এ নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। মন্ত্রী, আমলা অবধি গড়ায়। দোষী ধরাও পড়ে। নারী ধর্ষণ ছাড়াও চা -বাগানে প্রচুর শিশু ধর্ষণ হয় এটা  জানেন?"

-" শিশু ধর্ষণ!" শ্রাবস্তীর সাথে সাথে সুবর্ণও যেন অবাক হয়, 
-" কী বলছ!"
-" তাহলে আর বলছি কি সুবর্ণদা। তোমার বাগানেই হয়ত ঘটেছে তুমি জান না। শিশুরা ভিক্টিমাইজড হয় ধরো পাশের বাড়ির কাকু, দাদু, দাদা... এদের দ্বারা। চকলেটের লোভ দেখিয়ে কাজ হাসিল করেছে এমন ঘটনাও দেখেছি। যদিও ব্যাপারটা চেপে গেছিল বাড়ির লোক। এমনকি বাবাও মেয়েকে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট করে থাকে। এগুলো সামনে আসে না। তবে ইদানীং চা-বাগান অঞ্চলে টিন এজ গ্রুপের ছেলেরা সেক্সুয়াল ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে বেশি। এর পেছনে আছে স্মার্ট ফোনে পর্ণোগ্রাফিক সাইটগুলো। এটা কিন্তু চিন্তার।"

-" দ্যাটস আ পয়েন্ট। যদিও এই সামাজিক সমস্যাটা এখন  সর্বত্রই। খুব সহজেই  এভিল এলিমেন্টস গুলো এখন কমবয়সীদের হাতে চলে আসছে। আচ্ছা এদিক থেকে কতজন ছেলেমেয়ে বাইরে চলে গেছে তার একটা স্ট্যাটিসটিক্স কি পাওয়া যাবে ?"

-" ঠিক আছে...আমি চেষ্টা করব দিতে। কটা দিন সময় দিন। আমি তৈরি করে সুবর্ণদাকে দিয়ে দেব। তাহলে এখন উঠি?" 

" ওক্কে, থ্যাংক ইউ দাদা ... আপনার কো-অপারেশন মনে থাকবে" বলে উঠে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয় শ্রাবস্তী। হাত স্পর্শ করে অসীম বলে, 

-" ইটস ওকে...চলি তাহলে, চলি সুবর্ণদা...পরে কথা হবে" বলে অসীম সোম চলে যায়। শ্রাবস্তী ওয়েটারকে ডেকে বিল পেমেন্ট করে বাইকের সামনে এসে বলে, "দিন, চাবিটা দিন"।
-" মানে! " সুবর্ণ একটু অবাক হয়। 
-" আরে বাবা, চাবিটা দিয়ে পেছনে বসুন। রাস্তাটা দেখিয়ে দেবেন শুধু। কি সুন্দর রাস্তাটা! আইডিয়াল ফর আ লঙ-ড্রাইভ।"

বাইকে উঠতে উঠতে সুবর্ণ বলে, "বুঝেছি, পাছে কেটে পড়ি, তাই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাই তো। আচ্ছা, ডিনারটা কি করতেই হবে? এই তো বেশ চা খাওয়ালেন।"

-" বললাম যে, আজ আপনি আমার ভ্যালুয়েবল গেস্ট। না খাইয়ে ছাড়ব না। পড়েছেন যবনের হাতে... সো নো ওয়ে টু বি স্কেপড।" বলেই টপ গিয়ারে ফেলে হাওয়ার গতিতে স্পিড বাড়ায় শ্রাবস্তী। 

ঘড়ির কাঁটায় রাত গড়িয়ে গেছিল অনেকটাই। জলঢাকার জল ছুঁয়ে ছুটে আসা এলোমেলো হিমেল বাতাস চিনেলন্ঠনের মৃদু আলোয় টঙ-ঘরের চাতালে মুখোমুখি বসে থাকা দুটি অবয়বকে ছুঁয়ে হারিয়ে যাচ্ছিল অন্ধকারের দিকে।  রিসর্টের প্রান্তসীমায় সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে এই টঙ-ঘরে  উঠে এলে এখান থেকে অদূরে চোখে পড়ে জলঢাকা। শুক্লপক্ষে  চাঁদের আলোয় জলঢাকার কলস্রোতে  রূপো চমকায়। ওপারে জ্যোৎস্নাজলে ভিজে ওঠা রহস্যময়ী অরণ্যের আঁচল ছাপিয়ে শরীরী ভাঁজগুলো যখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে নদীর দমকা বাতাস তখন চঞ্চল হয়।  ঝাঁপিয়ে পড়ে অরণ্যের বুকে। নিজেকে উন্মুক্ত করে বুভুক্ষু বনানী মেতে ওঠে শরীরী খেলায়, উন্মত্ত হাওয়ার সাথে। 

রাতের নিস্তব্ধতায় টঙঘরের ওপর থেকে মৃদুস্বরে কিছু এলোমেলো সংলাপ চুঁইয়ে নামছিল বাতাসের শরীর বেয়ে, 

-"  সেদিন ওরা  আমাদের বাংলো অ্যাটাক করল...আমি আর মা ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম স্টোর রুমে... বাবা সামহাও বুঝতে পেরেছিলেন, থানায় ফোনও করেছিলেন... কিন্তু পুলিশ আসার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল। " 

নারীকন্ঠের সংলাপ স্তব্ধ হতেই পুরুষকন্ঠ শোনা যায়, "কেন এমন হল? "

-" সামান্য ঘটনা...একজন ফিমেল ওয়ার্কার রেগুলার দেরিতে কাজে আসত। তার হাজব্যান্ড আবার ছিল লোকাল ইউনিয়নের ছোটখাটো লিডর...পাস্ট ক্রিমিনাল রেকর্ডও ছিল তার। বাবার অ্যাসিস্ট্যান্ট মহিলাটিকে একদিন ফিরিয়ে দেয় কাজ থেকে। সে বাড়ি ফিরে তার হাজব্যান্ডকে জানায়। সে দলবল নিয়ে এসে সেই অ্যাসিস্ট্যান্টকে ঘিরে ধরে। ঘিরে যখন অ্যাসাল্ট করছিল  সেই মুহূর্তে বাবার গাড়ি সেখানে পৌঁছয়। গাড়ি থেকে নেমে বাবা ওদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। ওরা অ্যাকিউস করতে থাকে সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট  নাকি মহিলাটির গায়ে হাত দিয়েছে। বাবা স্ট্রংলি প্রোটেস্ট করেন। এতে ওরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখনকার মতো থ্রেট দিতে দিতে ফিরে যায়। "

-" তারপর?"

-" সন্ধে নাগাদ ওরা ফিরে এল... ছ'জন ছিল... আর্মড... দেখলাম মুহুর্তের মধ্যে ওরা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল। বাবার লাইসেন্সড রিভলবারটা কয়েকদিন আগেই কি কারণে জানি থানায় জমা দিতে হয়েছিল। ওটা থাকলে হয়ত...ইচ্ছে করলেই পেছনের দরজা দিয়ে বাবা পালাতেও পারতেন আমাদের নিয়ে...গাড়িও ছিল গ্যারেজে.. কিন্তু সেটা তিনি করেননি। বাবার বিশ্বাস ছিল পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত উনি কোনও ভাবে ট্যাকল করে নেবেন...বাট হি হ্যাড টু পে দ্য আলটিমেট প্রাইস ফর দ্যাট মিসটেক...."স্বর বুজে আসে। স্তব্ধতার ভেতর শুধু অদূরে নদীর স্রোতের  ক্ষীণ শব্দ ভেসে আসতে থাকে।

-"  সেদিন জুজিও ছিল না বাংলোয়। কিন্তু ও কীভাবে যেন খবর পেয়ে যায়।  অন্ধকারে একা বাগানের ভেতর দিয়ে ছুটতে ছুটতে  বাংলোয় আসে। ব্যাকইয়ার্ডের কিচেনের দরজা দিয়ে ঢুকে সুইপার এন্ট্রান্সটা খুলে দিয়ে আমাকে আর মাকে পালানোর জায়গা করে দিয়েছিল। কিন্তু মা যায়নি। আমাকে ওর হাতে তুলে দিয়ে বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যায়। জুজি আমাকে নিয়ে পেছনের চায়ের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। ওরা মাকেও মারে। মা অজ্ঞান হয়ে যেতেই ওরা বাবাকে টেনে নিয়ে গিয়ে সোর্ড, প্রুণিং নাইফ, অ্যাক্স দিয়ে জাস্ট ব্রূটালি... ওফ্...আজও সেই দৃশ্য ভুলতে পারি না..."  গলার স্বর অস্পষ্ট হয়ে যায়। নদীর কলস্বর ফের বয়ে যেতে থাকে অন্তহীন বেদনার মতো। অনেকক্ষণ কোন কথা শোনা যায় না।  নিস্তব্ধতা ভেঙে একসময় নারীকন্ঠ উচ্চকিত হয়ে ওঠে, 

-" এনিওয়ে... লিভ ইট...নিন তো ফিনিশ করুন...আরেকটা খুলব...এত স্লো নিলে চলবে... এখনও তো একটাই শেষ করতে পারলেন না। আমার সেকেন্ড বটল চলছে। ফিনিশ করুন, এরপর ডিনার করবেন তো। "

-" না, আসলে.. আমি একটু আস্তেই খাই। তাড়াতাড়ি নিতে পারি না। "- পুরুষকন্ঠ শোনা যায়। 

-" ধুসসস। এটা কি হার্ড ড্রিংকস মারছেন নাকি....অন রক! রেলিশ করে সিপ নিচ্ছেন...জাস্ট ওপেন দ্য কর্ক এন্ গাল্প দ্য ব্লাডি ড্রিংক ম্যান অ্যাট ওয়ান গো...এটাই তো বিয়র  খাওয়ার আলটিমেট ফান্ডা...আচ্ছা আপনাদের এখানে ক্যান-বিয়র পাওয়া যায় না? " নারীকন্ঠ ঈষৎ জড়ানো। 

-" হ্যাঁ, কেন যাবে না! "

" যায়...! দেখুন তো ম্যানেজারকে বলেছিলাম ক্যান্ দিতে, বলে কিনা নট অ্যাভেইলেবল ম্যাম...আই প্রেফার ক্যান্। কতদিন পর একটু রিল্যাক্স করছি জানেন। এই যে অখন্ড অবসর এটাই পাইনা কোথাও জানেন। যেখানেই যাই কেবল যান্ত্রিকতা। মাকে নিয়ে একবার দার্জিলিং গেছিলাম।  কটা দিন সেবার খুব আনন্দে কেটেছিল। অ্যান্ড থ্রু আউট দ্যাট ট্রিপ আই হ্যাড স্পেন্ট আ সিরিজ অব গোল্ডেন মোমেন্টস উইথ মাই মাদার। অ্যান্ড দ্যাট ওয়াজ দ্য লাস্ট...!  কান্নাভেজা নারীকন্ঠ ফের রুদ্ধ হয়ে আসে।সেই অবকাশে স্তব্ধতার ঘেরাটোপ ভেঙে জোনাক-জ্বলা ঝোপের ভেতর থেকে ঝিঁঝিপোকারা চিল চিৎকার মাতে। 

-" আপনার মা...? "

" নেই... এই জুলাইয়ে তিনবছর হবে... ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট... ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন। আমি তখন ভুবনেশ্বরে। একটি প্রাইভেট কলেজে অনারারি লেকাচারার হিসেবে কিছুদিনের কন্ট্রাক্টে গেছি। খবর পেয়ে ফিরে আসি। আর যাইনি।"

-" কলকাতায় কোথায় যেন থাকেন আপনারা? " 

-" মা মারা যাওয়ার আগ  পর্যন্ত বালিগঞ্জে... বাবার পৈতৃক বাড়িতে... দাদু করে গেছিলেন বাড়িটা....বাবারা তিন ভাই... মা বেঁচে থাকতেই শরিকি ঝামেলা শুরু হয়েছিল... মা চলে যেতেই ওরা আমাকে নানাভাবে জাস্ট থ্রেট দিতে লাগল বাড়িটা ছেড়ে দেবার জন্য। আমার চালচলন নাকি ওদের পছন্দ নয়। ওখানে থাকতে গেলে ওদের পছন্দমত আমাকে থাকতে হবে। আমি একা। আত্মীয়স্বজন কেউ আমার পাশে দাঁড়ালো না।  ওদের সাথে পেরে উঠব না জেনে আর জেদ ধরে থাকলাম না। ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম উষসীর ফ্ল্যাটে। "

-" কে উষসী? " 

-" সব কি একবারেই শুনবেন? বলব বলব, সব বলব.... ঝাঁপি উল্টেছি যখন, সব উজাড় করে দেব আজ রাতে। তবে ওয়ান কন্ডিশন...বাকি দুটো বটল কিন্তু শেষ করতে হবে...। "

-" পাগল...! একটাই তো শেষ করি আগে... "

-"  এই...এই যে...পুরুষদের এই লালুভুলু ভাব, এই যে একটু গুডি-গুডি ইমেজ এটা না আমি দা-রু-ণ এনজয় করি। উ-প-ভো-গ করি, যাকে বলে। বাট আই ডেডলি হেট দোজ ব্লান্ট, সিক্স প্যাকস ডাব্বা টাইপ গুড ফর নাথিং গাইজ। মাসল ছাড়া ওদের আর কিছু নেই।" নারীকন্ঠ রীতিমত জড়িয়ে লাট খেতে থাকে। 

- "আপনার হাজব্যান্ডটি তবে কেমন....!" পুরুষকন্ঠটি  এবারে সরাসরি জিজ্ঞাসু হয়। 

প্রশ্ন শুনে নারীকন্ঠে কয়েক মুহুর্তের  নীরবতা নেমে আসে । তারপর হঠাৎ কুলকুল স্রোতের মতো হাসি নিম্নগ্রামে খেলা করতে করতে এক সময় সশব্দে ফেটে পড়ে ফোয়ারার মত উচ্চকিত হয়ে। রাতের স্তব্ধতা ভেঙে তীব্র কৌতূকমাখা হাসি যেন বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারপাশে। হাসির শব্দে টঙঘরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গামার গাছ থেকে রাতচরা পাখিটা উড়ে যায় অন্ধকারের ভেতর। এরপর হাসি থামলে ঘনীভূত কুয়াশার মত নারীকন্ঠ যেন হঠাৎ খাদে নেমে আসে। আচ্ছন্ন রহস্যময়তায় মোড়া  মৃদু সংলাপগুলো ধীরে ধীরে গল্পের বাকি রেশটুকু খুঁজে নিতে থাকে, 

-" হা-জ-বে-ন্ড। মানে একটি পুরুষ! অর্থাৎ একটি অনিবার্য শৃঙ্খল। তাই তো! নেই...আয়্যাম এলোন। তবে হ্যাঁ,কলেজ লাইফে, ইউনিভারসিটিতে অনেক পুরুষ বন্ধু ছিল আমার। এই আপনার মতো গুডি-গুডি থেকে শুরু করে ম্যাচো, দুষ্টু-মিষ্টি, ছোঁকছোঁকে, লিচেস টাইপ, অ্যাগ্রেসিভ... আই হ্যাভ স্পেন্ট বিউটিফুল ডেজ উইথ দেম...একসাথে ওদের সাথে কত ঘুরেছি..এই যেমন আপনার সাথে বাইকে চেপে ঘুরলাম দুদিন... জয়পুরে গেছি এক্সকারশনে। নালন্দায়। ভুপালে। ঐ জয়পুরেই একদিন, আমি আর উষসী ঘুরতে বেরিয়েছি, দুটো স্ট্রিট লুম্পেন পেছনে লেগেছিল। জাস্ট একা টিট করেছিলাম দুটোকে। আই হ্যাড আ লট অফ চয়েস... কিন্তু এক উষসী ছাড়া জানেন, কাউকেই রিয়েল বন্ধু বলে মনে হয়নি কখনও। আরে কী মুস্কিল...হাজব্যান্ড হতে গেলে আ্যট লিস্ট ভাল বন্ধু হতে হবে তো, না-কি ! "

-" সে তো ঠিকই..." পুরুষটি আলতো গলায় বলে। 

-" বাট, নো... নোবডি ওয়াজ লাইক দ্যাট... মোস্ট অফ দেম ওয়ার ব্লাডি ধান্দাবাজ ...দে ডিডন্ট নো হাউ টু লাভ...নর হাও টু মেক-লাভ অলসো... কা-উ-কে মনে ধরে নি ওদের।"

-" কাউকে নয়...!" 

-" নো। তবে টাচ- উড, আপনাকে যদি আগে দেখতাম, হয়তো প্রপোজ করেও ফেলতাম...হাঃ হাঃ হাঃ..." কুয়াশা জড়ানো মোহময়ী স্বর অদ্ভুত ভাবে ফের ফেটে পড়ে হাসিতে," জোক- অ্যাপার্ট ... ডোন্ট বি সিরিয়াস..আয়্যাম জাস্ট ইন আ কিডিং  মুড ...আই..আয়্যাম..." কথা ফুরোয় না। চেয়ারে শরীর এলিয়ে পড়ে, " -পুরুষটি ডাকে, " ম্যাম্... শুনছেন... ম্যাম.. উঠুন ...আপনার নেশা হয়ে গেছে... ঘরে চলুন... অনেক রাত হয়েছে...চলুন ঘরে চলুন... "

কোনও সাড়া নেই। পুরুষটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে দাঁড়ায়। কাছে এসে আবারও ডাকে, "ম্যাম"। কোন উত্তর নেই। কাঁধে হাত রেখে মৃদু ঝাঁকায়। নারীটির একটু যেন ঘোর কাটে। 

" ম্যাম্, নিচে চলুন। উঠুন..হাঁটতে পারবেন তো। "  পুরুষকন্ঠে চোখ মেলে তাকায় নারীটি। জড়ানো গলায় বলে ওঠে, "ডোন্ সে ম্যাম...উই আর নাও ফ্রেন্ড..। "

-" ঠিক আছে... এবারে উঠুন। উঠতে পারবেন তো? "

পুরুষটি হাত ধরে ওঠায় । একটু টলে উঠে পুরুষটির কাঁধে এলিয়ে পড়ে নারীটি। কোমর জড়িয়ে নিজেকে সামলে নেয় কোনোমতে। তারপর এলোমেলো পা ফেলে এগোতে থাকে। 

" নামতে পারবেন তো...." পুরুষটি জিজ্ঞেস করে। 

" পা-র-ব" । 

টঙঘর থেকে পুরুষটির শরীরে ভর দিয়ে নারীটি নেমে আসে টালমাটাল পায়ে। ধরে ধরে বিছানায় এনে পুরুষটি নারীটিকে আলতো করে শুইয়ে দেয় বিছানায়। মাথার নিচ থেকে হাতটা সরিয়ে মাথাটা বালিশে রাখে। স্নিকার খুলে পা দুটো বিছানায় তুলে দেয়। নারী আচ্ছন্নের মতো চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। একবার ঘরের চারপাশটা দেখে নিয়ে পুরুষটি ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবে। হাতঘড়ির দিকে তাকায়। তারপর রুম সার্ভিসকে ডাকতে কংলিবেলের সুইচটা টেপে। বেল কাজ করে না। এভাবে দরজা খোলা রেখে চলে যাওয়া কি ঠিক হবে! ভাবতে ভাবতে ম্যানেজারের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই নারীটি চোখ খুলে তাকায়। 

" চলে যাচ্ছেন, সুবর্ণবাবু!" গলার স্বর কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ম্রিয়মান শোনায়। 

সুবর্ণ চকিতে ঘুরে তাকায়- " হ্যাঁ "

-" ডিনার করবেন না? '
-" খাওয়ার ইচ্ছে নেই। দরজাটা বন্ধ করে দিন। আমি যাই। কাল কথা হবে। "

-"একটু কাছে আসবেন, প্লিজ। " শ্রাবস্তীর গলার স্বরের মাদকতা। 
সুবর্ণ কী যেন ভাবে। তারপর কাছে এসে বলে, " বলুন, কী বলবেন "
-" কথা যে শেষ হয়নি সুবর্ণ বাবু..." । "

-" আবার কোন কথা", সুবর্ণর গলায় এবার উষ্মা ঝরে পড়ে। 

  "-যেটা জানতে চেয়েছিলেন, সেটাই তো শুনলেন না, চেয়ারটা টেনে বসুন। বেশি সময় নেব না। " বলেই হাতে ভর দিয়ে বিছানায় উঠে বসে শ্রাবস্তী। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখে। কাঁপাকাঁপা হাতে লাইটারে চাপ দিতেই লাফিয়ে ওঠা নীলচে আলো স্পর্শ পেতে চায় গোলাপি নরম ঠোঁটের । 

-" উষসী কে, জানতে চেয়েছিলেন না? উষসী, আই লাভড হার মোর দ্যান মাই লাইফ... শি উভ অলসো ম্যাডলি লাভ মি... আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারতাম না। ভাবতেও পারতাম না আলাদা থাকতে পারব কোনোদিন।  কখন দুটো মেয়ে একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারে না...কখন তারা একসাথে জীবন কাটায়, আত্মীয় পরিজন সবাইকে ছেড়ে...নাউ আই থিংক, ইউ  গট ইট...ইয়েস আই অ্যাম আ লেসবি... ইয়েস আয়্যাম...কনফেস করতে বিন্দুমাত্র হেজিটেশান নেই আমার। কোনও পুরুষ আমায় জাগাতে পারে নি কোনও দিন, যা উষসী পেরেছিল, পেরেছিল সত্যিকার ভালোবাসতে। "

সুবর্ণর মনে হল এই প্রথম মাথাটা তার টলে উঠল। স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে শ্রাবস্তীর দিকে। শ্রাবস্তী বলে যায়, 

" বাট অ্যাকচুয়ালি শি ওয়াজ আ ব্লাডি বাই-সেক্সুয়াল...সেটা বুঝিনি। বুঝলাম সেদিন যেদিন ও আর ফিরলো না। টেক্সট করে জানালো শি গট ম্যারি টু আ ম্যান... শিট্....সেদিন থেকে জানেন সুবর্ণবাবু আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা এই পৃথিবীতে। নো ওয়ান। আমি একা... সম্পুর্ন একা...আমার আর কোনও বন্ধু নেই...। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি একটু একটু করে, বন্ধুহীন বেঁচে থাকা বড় কষ্টের, ভেরি মাচ পেইনফুল। একা থাকতে থাকতে যেন হাঁপিয়ে উঠেছি। কিন্তু কেন জানিনা, আপনাকে দেখে খুব রিলায়েবল মনে হয়েছে আমার...আমার বন্ধু হবেন সুবর্ণ? আ রিয়াল গুড ফ্রেন্ড। বলুন না, হবেন...প্লিইজ... " কাতর আর্তি ঝরে শ্রাবস্তীর গলায়। 

-"ঠিক আছে। এ ব্যাপারে কাল কথা হবে, অনেক রাত হয়েছে...আজ যাই...দরজাটা বন্ধ  করে দিন।" 

বলেই সুবর্ণ আর দাঁড়ায় না। বেরিয়ে আসে বাইরে। মোবাইলের আলোয় ঘড়ি দেখে। রাত দুটো।  এতক্ষণ ফ্লাইট মোডে রাখা মোবাইলটা নর্মাল মোডে ফেলতেই মিসকল নোটিফিকেশন ঢোকে। টু মিসকল ফ্রম তূর্ণা। একটা রাত নটায়। পরেরটা দশটা নাগাদ। মোবাইল ফের সুইচ-অফ করে পকেটে রেখে বাইকে ওঠে। ইগনিশান সুইচে হাত না দিয়ে কিক মারে সুবর্ণ। কিকটা মারতে ভালো লাগে। কেমন যেন দৃপ্ত অনুভূতি হয় বুকের ভেতর।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri