সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 442

শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি ২৫
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

- দাদা তুমি ঠিক হয়ে যবে- অপরূপা বলে। 
অপূর্ব মাধুরীর হাত ছেড়ে দেয়। অপূর্ব উঠে বসার চেষ্টা করে না। গোপন চেষ্টায় বুঝে গেছে, উঠে বসা আর সম্ভব নয়।   ডাক্তারি রিপোর্ট কী বলছে সেটা বিস্তারিত না জানলেও, বুঝতে পারছে- তার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। আস্তে আস্তে গলার স্বর কমে আসছে। ক্রমশ সারা শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে। মাধুরী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।  অপূর্ব দুই হাত কাঁপাতে কাঁপাতে তুলে নিয়ে জোড় করে নমস্কার জানায় অপরূপাকে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। অপরূপার চোখের কোণে জল জমে যায়। ধরা গলায় বলে- আমাকে কেন নমস্কার করছ দাদা! আমি তোমার বোন। অপূর্বর গলার স্বর এতটা ক্ষীণ যে স্পষ্ট বোঝা গেল না ও কী বলতে চায়। মাধুরী অপূর্বর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে- বিচলিত হয়ো না, শান্ত হও। আমি অপরূপাকে ছেড়ে আসি।   
- মাধুরী তুই এত শান্ত কী করে আছিস।  
- এটা অনেক দিনের প্রস্তুতির ফল। 
- কি বললি? 
- খুব সহজ কথা বললাম তো।
- কী প্রস্তুতির কথা বলছিস।  
- অপূর্ব যে ভাবে চলছিল, এই দিন যে একদিন আমার আসবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম।  
- মাধুরী!!!  
- অবাক হচ্ছিস। আমি কবেই গাছ হয়ে গেছি। আমার সবটুকু দিয়ে রক্ষা করে চলেছি। কিন্তু অপূর্ব তো মাটিই খুঁড়ে নিল। আমার এখন পড়ে যাবার সময় এসে গেল।
- কী বলিস। অপরূপা মাধুরীকে ধরে নেয়। 
- না না অমি এই পড়ে যাবার কথা বলছিনা। 
- তবে?
- কী আর বলি। সব কথা তো বলা যায় না। আত্মসম্মান বলে একটা কথা আছে। তবে এখন আর আত্মসম্মানের কথা ভেবে কী লাভ। সব তো শেষ হতে চলল।  
- কিছু হবে না, মাধুরী। সব ঠিক হয়ে যাবে। 
মাধুরী সুন্দরী গাছের মতো শ্বাস নেয়। এতদিনে মাধুরী শিখে নিয়েছে ম্যানগ্রোভের মতো বাঁচার কৌশল। ময়নাডাঙ্গা, ময়নাডাঙ্গার বাড়ি, মথুরেশ স্যার, সুখী গৃহকোণের বাসিন্দা মা- সুরমা, সবার সাথে চলে গেছে যৌবনের জৌলুশ ময়ূখের জন্মের সাথে পূর্ণিমার ছাদের মতো। এখন তো ঘোর অমাবস্যা। বিকাশের উন্নতির আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কের মাটিকে এমন জীবনহীন নোনতা করে দেয় যে বাঁচার জন্য মাধুরীকে বিশেষ দক্ষতা আয়ত্ত করতে হয় সুন্দরী গাছের মতো। পাহাড়ের মতো স্থির মাধুরী বলে-  
- আর কিছু ঠিক হবার নয় রে… 
- কেন।
- ডাক্তার বলেছে স্পাইনাল কর্ডে যে মাল্টিপল ইনজুরি হয়ে ছিল তা প্রথমে বুঝতে পারেনি। এখনতো পাঁচ ছয় দিন হয়ে গেল। আর কিছু করার নেই। আস্তে আস্তে ও নিস্তেজ হয়ে যাবে।
- মাধুরী… অপরূপা মাধুরীকে জাপটে ধরে। 
- ভয় পাস না আমার কিছু হবে না।
 মাধুরী নিজেকে ছড়িয়ে নেয়- ঝড়ে ঝরে যাওয়া শাল ফলের মতো। মাধুরীর মনে পড়ে একদিন বাবা মাকে বলছিল- সরমা তুমি চিন্তা করো না, তোমার মেয়ে কিন্তু আর দশটা মেয়ের মতো নয়। ও নিজের কথা ভুলে অন্যের কথা বেশি ভাবে। তাহলে আমাদের কী চিন্তা। অন্য মানুষকে যখন ভুলতে পারে না আমাদের ভুলবে কী করে। তোমার মনে আছে সরমা, মাধুরীর সেই ছোট্ট বেলার ঘটনা। মাধুরী রুটি খাচ্ছিল। তখন পাশের বাড়ির, কি যেন নাম মেয়েটির, হ্যাঁ, ছায়া। ছায়া এসে বলল- মাধুরী রুটি দে খাব। মাধুরী রুটি ছিঁড়ে বেশির ভাগ ছায়াকে দিয়ে দেয় আর নিজে ছোট এক টুকরো রাখে। আর সেই দিন, বাড়িতে বিকাশের সাথে অপরূপাকে নিয়ে চলে এল। বিকাশের সাথে বেড়ে উঠল- বট অশ্বত্থ গাছের মতো কিন্তু যখন জড়িয়ে যাবার সময় এল তখন ওকে ছেড়ে দিল। সরমা বলে- এই জন্যেই তো আমার চিন্তা হয় আমার এই পরোপকারী মেয়ের কপালে কী আছে…          
- অপরূপা তোর মনে আছে, একবার অপূর্ব পরীক্ষায় নকল করার সময় ধরা পড়েছিল এক্সটারনাল এক্‌জামিনারের হাতে।  
- তোর কী হয়েছে মাধুরী! এখন এই সব কথা বলার কী অর্থ।    
- এই অপূর্বর জন্য আমি তিরস্কৃত হয়ে ছিলাম… তোরা বললি এই সব ছোট ঘটনা দিয়ে চরিত্র চেনা ঠিক নয়। কিন্তু সেই অভ্যাস ও কখনো ছাড়েনি। 
- কী বলিস!
- ক্ষমতা থেকে আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকলে মানুষ নকল করে, মিথ্যা কথা বলে, অন্যায় করে। 
- চুপ কর মাধুরী।
- না অপরূপা আমাকে বলতে দে। আমি আর এই কথাগুলোর ভার নিতে পারছি না। আর তোকে না বললে কাকে বলব?  
অপরূপা নার্সিংহোমের সামনের লনে সাইক্যাডের আড়ালে বসে পড়ে। অপরূপা বুঝতে পারে এই কয়দিনে মাধুরী কেমন যেন পাথরের মতো হয়ে গেছে। ময়ূখের কথাও তেমন করে বলে না। অপূর্বর কিছু হয়ে গেলে ময়ূখের সব দায়িত্ব তো মাধুরীকে নিতে হবে। পাথরে যে গাছ হয় না। মাধুরীর মনকে আবার মাটির মতো নরম করতে হবে। কথার স্রোত যদি মনের ভিতর জমে থাকা পাথরকে টুকরো টুকরো করে দেয়, খারাপ কী। মাধুরীর মন হালকা হবে। বয়ে চলুক কথা-নদী, তার খরস্রোতে ধাক্কা খেতে খেতে পাথর পলি হয়ে মাটি হয়ে যাক। মাটি না থাকলে ময়ূখ মা পাবে কী করে!   
- বল মাধুরী সব খুলে বল।  
- কত করে বলতাম, যে ব্যবসাটা কর সেটা মন দিয়ে কর। দক্ষতা নিয়ে করো। না একটার পর একটা ব্যবসা চেঞ্জ করতে থাকে। কোন কিছুতে থিতু হতে পারে না। সাথে জুটল রাতের পার্টি। পার্টি মানে মদ। মদ কি শক্তি বাড়ায়, বুদ্ধি বাড়ায়, ব্যবসা বাড়ায় - আমি বুঝতে পারিনা। 
- কি বলিস?
- আমার মনে হয় রাতের পার্টি আর মদ শক্তি কমায়। শক্তি কমায় বলেই সম্পর্ক ছিঁড়ে যায়- এক ছাদের তলায় এক বিছানায় থাকলেও, কেউ বুঝতে পারে না।     
- মাধুরী!
- তোরা বুঝবি না অপরূপা। স্বাভিমান মনের সম্পর্কে রিফু করে রাখে- প্রিয় শাড়ির মতো। একটু ভালো করে দেখলে  ঠিক বুঝতে পারতি অনেক আগে। তোরা তো ভালোবাসা আর বিশ্বাসে অন্ধ, দেখবি কি। 
- এখন কী করত অপূর্ব?  
- ন্যাচারাল প্রোডাক্টের এক্সপোর্ট। 
- সেটা আবার কী।
- বালি পাথর মিনারেলস থেকে কাঠ সব। 
- ক্ষতি কী, সে তো অনেকেই করে।  
- ক্ষতির তেমন কিছু নেই। ক্ষতির কারণ হল লোভ আর নৈতিকতার অভাব… মাধুরীর ফোন বেজে উঠে। অপরূপা তুই একটু বস। আমাকে ভিতরে ডাকল… অপরূপা সাইক্যাডের আড়ালে মনের জানালা খুলে দেয়…
অপরূপা ভাবতে থাকে- তা হলে অপূর্ব কি কোন দুষ্ট চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। মাধুরী কী আগের থেকে কিছু বুঝতে পেরেছিল! এখন মাধুরী ডুয়ার্সের উত্তরের ভুটান পাহাড়। বুকে কত ধসের দগদগে দাগ। শ্যামলিমাময় মাধুরী এখন যেন মরুর কারণ। কথার স্রোতে ছেড়ে দেয় রুক্ষ বালি বজরী পাথর। ময়ূখের নির্ভরতার শিকড় কি এই ধস বেঁধে দিতে পারবে? ধসের তো অনেক কারণ… একদিন বিকাশ বলছিল- মানুষ প্রকৃতির সন্তান। মা সন্তানের কাছে সব সময় অবারিত। তাই মানুষকে নিজের সীমানা নিজেকে ঠিক করে নিতে হয়। হাতি থেকে ফড়িং সবাই নিজের সীমাবদ্ধতা ঠিক করে নেয়। কিন্তু মানুষ এই অবারিত দ্বারের সুযোগ নেয়। মায়ের সবুজ আঁচল ছিঁড়ে নেয়, উন্মুক্ত করে দেয় বক্ষ- পাহাড়ের ধসের মতো, নেড়া বনের মতো। তারপর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলত- এই বিশাল জনসমুদ্রে, অসংখ্য আগ্রাসী মুখের সামনে আমরা তো সংখ্যায় নগণ্য শালসিঁড়ি রক্ষায়। তবে কী অপূর্ব… অপরূপার মনে হয়, নার্সিং হোমের পরিবেশটা কেমন গুমট হয়ে উঠছে, ঝড় আসবে একটু পরে। ফিঙে পাখি ইতিউতি উড়ে আবার ফিরে আসে ভরসার ডালে, ওদের চেনা গাছে। অপরূপার মনে পড়ে বিকাশের বলা নানা কথা। একদিন বিকাশ বলছিল-
-       অপরূপা আজ প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু হাসতে পারছি না। আনন্দের সাথে আশঙ্কাও ধাক্কা মারছে মনে।  
- আবার কী হলো।    
- অপরূপা আজ আবার ব্রিটিশরা পরাজিত হল। নৈতিকতায়, মানুষের জীবন রক্ষায়, জাতীয়তায় এবং জৈববৈচিত্র রক্ষায় শালসিঁড়ি জয় লাভ করল।     
- স্বাধীনতার সত্তর বছর পর আবার ব্রিটিশ এল কোথা থেকে। 
- আসে, একটু চোখ কান খোলা রাখলে বুঝতে পারা যায়। 
- আমি অতশত বুঝি না আর বোঝার সময় কোথায় তোমার সংসারে। খুলে বল তো কী বলতে চাও। 
- কতগুলো মানুষ তাদের জীবনযাত্রা, সংসার, একজোট হয়ে বাঁচিয়ে রাখল। পরাধীন হতে হতে নিজেদের স্বাধীনতা সংসার বুকে আগলে রাখতে পারল।  
- কারা এরা।  
-  ডোংরিয়া কোন্ধ জনজাতি (Dongria Kondh tribes)।  
- কী করেছে ওরা? 
- রক্তকরবীর গল্পটা মনে আছে?  
- মকর রাজার রাজ্য।
- ঠিক সেই মকর রাজার রাজ্যে নন্দিনী আর রঞ্জন হারিয়ে যায়, এখানে কিন্তু লাকসা এবং লডু জিতেছে।   
- কী!  
- হ্যাঁ। রক্তকরবীতে রাজ্য ছিল যক্ষপুরী আর এখানে রাজ্যের নাম- নিয়ামগীরি পর্বতপুঞ্জ (Niyamgiri Hills)। 
- বাঃ বেশ ইন্টারেস্টিং তো।  
- এই নিয়ামগীরি পর্বতপুঞ্জে লাকসা লডুদের পূর্ব পুরুষেরা হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। হাজার হাজার বছর ধরে এই পর্বত থেকে পেয়ে আসছে খাদ্য জল বাসস্থান। জান ডোংরি অর্থ কি? 
- না।
- পাহাড়। ওরা নিজেদের পাহাড়ের সন্তান মনে করে। 
- কিন্তু ওরা যে আদিম ও অনুন্নত রয়ে গেল।  
- কী ভাবে। 
- শিক্ষা নেই স্বাস্থ্য নেই এন্টারটেইনমেন্ট নেই…  
- দ্যাখ এটা তোমার উপলব্ধি। আসলে শিক্ষা চেতনা বাড়ায়, চেতনা থেকে মানুষ নিজের সংস্কৃতির স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করে, ধ্বংস ডেকে আনে না। সুস্বাস্থ্য আসে খাদ্যের বৈচিত্র্যতায়। বল তো শিক্ষিত সমাজ দৈনিক কত ধরণের খাদ্য খায়?  
- এক দুই… দশ।
- কোন্ধ’রা কত ধরণের খাদ্য খায় এই পাহাড় থেকে জান?  
- কত?
- এই পাহাড় ওদের প্রায় দুই শত (২০০) ধরণের খাদ্য দেয়। এক দিন দুই দিন নয় - যোগান দিচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে।  
- বল কী, ওরা তো তাহলে খুব শক্ত সমর্থ হবে।
- একদম তাই, বল তো পৃথিবীর সেরা বিনোদন কী? 
- আমি জানি না, তুমি বল। আমার তো শহরে থাকতে থাকতে ভালো না লাগলে বনে চলে যাই তোমার কাছে। বনেই আমার বেশি আনন্দ হয়।
- ঠিক। সব থেকে সেরা বিনোদন মায়ের হাসি আর স্নেহ স্পর্শ। প্রাণের মা প্রকৃতি। মানুষ যে প্রকৃতির সেরা সন্তান। তাই লাকসা লডুরা সব থেকে বেশী আনন্দে থাকে। বল তো দিনের শেষে আসল সুখ কী ?
-  শান্তিতে ঘুম। অপরূপা বিকাশকে জড়িয়ে বলে- লাকসা কি মেয়ে, না ছেলে। 
- মেয়ে আর লডু হল ছেলে… 
- কী সুন্দর নাম গুলো।
- নাম নয় ওদের বাসস্থানও খুব সুন্দর। নিয়ামগীরি পর্বতপুঞ্জ খুব সুন্দর জায়গা। নিয়ামগীরি’র জীব-বৈচিত্র্য খুব রিচ। এখানে যে গোল্ডেন গেকো পাওয়া যায় সেটা শালসিঁড়ির থার্মোমিটার। এই গোল্ডেন গেকোর উপস্থিতি আমাদের বোঝায় এই নিয়ামগীরির বাস্তুতন্ত্র খুব ভালো। বাস্তুতন্ত্র ভালো অর্থ মানুষের জন্য খুব ভালো বাসস্থান।  
- তাহলে অসুবিধা কোথায়।  
- অসুবিধা হলো… বোঝার ভুল। ঐ যে তুমি বলছিলে উন্নয়ন- আসলে উন্নয়নের সংজ্ঞা সবার জন্য সমান হতে পারে না।  
- কেন?
- উন্নয়নের লক্ষ্য যদি শিক্ষা স্বাস্থ্য সুখ হয় তা হলে সর্দারদের মতো শুধু খোদাই করার লোভ কেন হবে মানুষের। উন্নত মানুষ কেন ভুলে যায় –মানুষ বাসস্থান বাধিত জীব। বাসস্থান (Habitat)  না থাকলে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে শুধু শুধু খোদাই করে চলেছে এবং খুঁড়ছে নিজের কবর।   
- তার সাথে লাকসা লডুর কী সম্পর্ক। 
- সম্পর্ক হলো ওদের বাসস্থান ঐ নিয়ামগীরি পাহাড়। ওরা এই পাহাড়কে পাহাড় বলে না। বলে নিয়াম রাজা। ওদের দেবতা। ভগবান। 
- লাকসা লডুরা পাহাড়কে রাজা বলে, দেবতা বলে? 
- কেন বলবে না। তোমার দেবতা তোমাকে কি দেয়? তুমি তো পুজো কর রোজ। 
- কিছু তো দেয় না। বিশ্বাসে পুজো করি। কিছু না দিক,  যা আছে তা যেন থাকে। তাই পুজো করি- বুঝলে।  
- তোমাকে কিছু দেয় না, তাও তুমি পুজো কর। আর নিয়ামগীরি লাকসা লডুদের দুই হাত ভরে খাদ্য দেয়, ঔষধ দেয়, স্বাস্থ্য দেয়,  নিজের এলাকার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়, জ্ঞান দেয়। তা হলে কেন পুজো করবে না – বল।   
- একশ বার পুজো করবে। কে বাধা দিতে আসছে বলো।   
- ব্রিটিশদের বেদান্ত রি-সোর্সেস (Vedanta Resources)। সর্দারের মতো খুঁড়ে নিতে চায় সব পাহাড় গুলোকে। কারণ ঐ বন ও জীব বৈচিত্র্য যে মাটি ধরে রেখেছে সেটা ওদের উন্নতির চাবি। ঐ মাটি নাকি পুরোটাই বক্সাইট, যা থেকে অ্যালুমিনিয়াম উৎপন্ন হবে, উন্নতি হবে ওদের।
- লাকসা লডুদের ঘরদোর সংসার জীবন সব জবর দখল করে- উন্নতি!    
- তাইতো হয়। একমুখী মূর্খ উন্নয়নপন্থীরা মাকড়সার মতো। ভাবে ওদের জালটাই শ্রেষ্ঠ। অবজ্ঞা করে শালসিঁড়িকে। এই রকম চলতে থাকলে  শুধু লাকসা লডু কেন,  কোন্ধ জনজাতির মতো  নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে- মানুষ।  জানতো, সারা পৃথিবীতে এই ডোংরিয়া কোন্ধ জাতি আছে মাত্র আট হাজার। ওরা এই পৃথিবীতে এক মাত্র আদিম জনজাতি এই পাহাড়ে থাকে- অনন্যজীবির মতো। এই পাহাড় না থাকলে ওরা বেঁচে থাকতে পারবে না। আবার ডংরিয়ারা না থাকলে নিয়ামগীরির বাস্তুতন্ত্র থাকবে না। এই বাস্তুতন্ত্র না থাকলে শুধু কোন্ধদের আবাস্থল নষ্ট হবে তেমন নয়, আবাস্থল নষ্ট হবে পার্শ্ববর্তী  লক্ষ মানুষের। কারণ ভামসাধারা ও নাগাভাল্লি নদী দুটি শুকিয়ে যাবে।  
- কী ভাবে ওরা রক্ষা করল ওদের ঈশ্বরকে?
- সব কোন্ধ গ্রামগুলো এক হয়ে যায়, আন্দোলন শুরু করে। রাজাকে বাঁচাতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়। দেশ বিদেশের বহু মানুষ কোন্ধদের আন্দোলনকে সমর্থন করে এবং সাহায্য করে। সরকার বাহাদুর এবং সর্ব উচ্চ আদালত রায় দিয়ে দেয়- এই নিয়ামগীরিতে মকর রাজা রাজত্ব করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করবে ডোংরিয়া কোন্ধদের   সহমতের উপরে। আজকের দিনটি সেই দিন- যখন সব ডোংরিয়া কোন্ধ সিদ্ধান্ত নেয় ওরা নিয়ামগীরিতে কোন খনন করার অনুমতি দেবে না। 
- তা হলে আর কী চিন্তা। কেউ কি নিজের ঈশ্বর উচ্ছেদ করার জন্য একতা ভাঙ্গবে।  
- কী করে বলা যায়। লাঞ্জিগড়ে যে হা করে বসে আছে মানুষখেকোর দল। ওরা যে মানুষের একতা ভাঙ্গতে ওস্তাদ।  
- লাঞ্জিগড় সেটা কি?
- লাঞ্জিগড় নিয়ামগীরির পাদদেশে একটি ছোট শহর। ওখানেই তো গড়ে উঠেছে অ্যালুমিনিয়াম কারখানা।     
- তাহলে ? 
- তাহলে আর কী। লোভের আগুন জ্বলছে অনবরত। সেই লোভে ঝাঁপ দিচ্ছে কত লোক। সুড়ঙ্গ-খোদাইকর বালকের মতো। কতো সর্দার ঘুরছে ফিরছে ঝোলা গোঁসাইদের সাথে নিয়ে। ওরা চায় ডোংরিয়া কোন্ধদের একতা ভেঙ্গে মকর রাজার  রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। এখানেও শালসিঁড়ির সৈনিকদের কত সজাগ থাকতে হয় জবর দখল বন্ধ রাখতে।  
- আমাকে নিয়ে যাবে একবার লাকসাদের দেশে।   
- হ্যাঁ, চল একবার তোমার সাথে লাকসার দেখা করিয়ে আনব। তবে এখানে ব্রিটিশরা একটা ভুল করেছিল। 
- কী।
- ওরা পরাধীন ভারতের রাজত্ব কালের দম্ভ দেখিয়ে ভুল করল।
- তা না হলে কী করত?
- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিঁপড়ে কী করে একটা আস্ত পাউরুটি খেয়ে নেয়- কখন দেখেছ? 
- বাবা তোমার চোখ আছে বটে।
- একা থাকলে ঐ রকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়- বুঝলে। 
- তার সাথে লাকসাদের কি সম্পর্ক?   
- লডুদের ভাগ্য ভালো যে ওর পিঁপড়ের আক্রমণে পড়েনি। তাহলে ওদের রাজাকে বাঁচাতে পারত না। 
- সে কি ভাবে? 
- এখনকার সর্দাররা মকর রাজার ভয় দেখিয়ে রাজ্য দখল করে না। ওরা এখন হাজার হাজার পিঁপড়ে ছেড়ে দেয়। পিঁপড়েগুলো কুরে কুরে খেয়ে নেয় গোল্ডেন গেকো, সাগুপাম, বুনো ধান গম এবং সবুজ বন। ধীরে ধীরে বন যায় জল যায় জীবন চলে যায়। রাজা নিঃস্ব হয়ে যায়- হাড় মাংসের মতো উন্নতি গিলে নেয় মাটি । চোখের জলে লডুরা মৌমাছির মত অন্য রানী খোঁজে … খোঁজে  মাটি …শুধু মরে বেঁচে থকার জন্য।     
অপরূপা ভাবে তাহলে অপূর্ব কি সুড়ঙ্গ-খোদাইকর বালকের মতো… না কি পিঁপড়ের মতো … অপরূপা কিছু বুঝে উঠতে পারে না। শুধু মনে হয় বিকাশের কথা- শালসিঁড়ি ভেঙ্গে গেলে বেঁচে থাকা দায়, রাজা প্রজা সর্দার-সবার। সাইক্যাডের পুষ্প মঞ্জরীতে একটা ভিমরুল ভোঁ ভোঁ করে উড়ে। অপরূপা কেঁপে ওঠে…  ভয়ে…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri