স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/পর্ব : ২৩
রণজিৎ কুমার মিত্র
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
"স্মৃতি দিয়ে ঘেরা" প্রতিটি পর্বে মনে হয়েছে আসলে প্রতিটি
গ্রন্থাগার প্রকৃতপক্ষে সব মানুষের স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। মানুষের দীর্ঘ
যাত্রাপথের কত সঞ্চয়, কত স্মৃতি ধরে রেখেছে গ্রন্থাগার। সেই কবেকার তিন
হাজার বছর আগেকার মৃত্তিকা ফলক, ভেলাম, পার্চমেন্ট, প্যাপিরাস রোল, তাল
পাতা ইত্যাদিতে মনের কথা লিখতে লিখতেই সেই সবকিছু মুদ্রিত গ্রন্থ উত্তীর্ণ
হয়েছে। তার পরে এসে গেল নতুন প্রযুক্তির ই-বুক। এখন তো বিশ্বের যে কোনো
জায়গায় যে কোনো লাইব্রেরি থেকে আগ্রহী পড়ুয়াকে তথ্য পাঠানো যেতে পারে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার এই আধুনিকতার দরজায় পৌঁছেছে
তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে। পঠন পাঠনের প্রক্রিয়ার গুণগত মান
অনেক উন্নত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে তিরিশ বছরেরও বেশি কাজ করবার সময়
গ্রন্থাগারকর্মী হিসেবে নিজেও সমৃদ্ধ হয়েছি নানাভাবে । আমার সবচেয়ে ভালো
লাগত গবেষকদের সঙ্গে কাজ করতে। বিভিন্ন গবেষকের গবেষণার চরিত্র অনুসারে
বইপত্র নানা ধরনের রেফারেন্স দিতে, গ্রন্থপঞ্জি করে দিতেও খুব উৎসাহ বোধ
করতাম। তিন ধরণের গবেষকরা লাইব্রেরিতে আসতেন। এক : বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপকরা যাঁরা নিজেদের পূর্বের গবেষণা বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে,
স্বাধীনভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে নতুন কোনো লেখা, সেমিনার
পেপার , পত্র পত্রিকায় প্রকাশ বা নতুন কোনো গ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনা
করতেন। দ্বিতীয় গোষ্ঠীতে ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজগুলি
থেকে আসা অধ্যাপক গবেষকরা, যারা নির্দিষ্ট প্রকল্পে কাজ করে আবার কলেজে
ফিরে যেতেন।তৃতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ গবেষক গোষ্ঠী
যাঁরা ফেলোশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের জন্য গবেষণা করবার জন্য নিযুক্ত
হতেন, এদেরকে গ্রন্থাগারের কাজে সহায়তা করতে আমার সবথেকে বেশি ভালো লাগত।
একটা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট রিসার্চ স্কলাররাও অনেকে ছিলেন যাঁরা
কোনো ফেলোশিপ বা প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিলেন না এরা পার্টটাইম রিসার্চ
স্কলার নামে পরিচিত ছিলেন, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসতেন গবেষণা
করে নিজেদের বৌদ্ধিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য। অনেকের গ্রন্থপঞ্জি,
পত্রিকাপঞ্জি সংকলনের কাজও করে দিয়েছি গবেষকদের চাহিদা অনুসারে
পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য খুঁজে দিয়েছি। এভাবে অনেকের সাথেই সম্পর্ক গড়ে
উঠেছিল। লাইব্রেরিতে দীর্ঘক্ষণের পাঠকদের কখনো কখনো চা পানের জন্য আহ্বান
করেছি। গ্রন্থাগার পরিষেবা দেবার আকুতি প্রতিটি গ্রন্থাগারকর্মীর ছিল, খুব
আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিল লাইব্রেরিতে।আমার পূজনীয় শিক্ষক
অশ্রুকুমার সিকদার ভারী সুন্দর করে লিখেছিলেন তাঁর সময়কার কথা, "নিজের
বিভাগের পড়ানোর কাজ বা অন্যান্য কাজকর্ম সেরে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। যাবার পথে হয়তো দু দন্ড গল্প করে যেতাম
রেজিস্ট্রার সুরসিক বিমল কুমার বাজপেয়ীর সঙ্গে, ডেপুটি রেজিস্ট্রার
রতনবাবুর সঙ্গে বা পরীক্ষার নিমায়ক অশোক ঘোষের সঙ্গে বা কলেজ পরিদর্শক
ডক্টর সিনহার সঙ্গে। এইসব সুজনের কথা মনে পড়লে মন ভালো হয়ে যায়। বিশেষত
শীতকালে এই হেঁটে হেঁটে যাওয়াটা ছিল মনোরম সুখপ্রদ অভিজ্ঞতা।গ্রন্থাগারে
আড্ডা জমত প্রধান গ্রন্থাগারিক চিত্রভানু সেনের ঘরে। চমৎকার ছিল এই আড্ডার
আকর্ষণ। এই আড্ডায় যারা জড়ো হতেন লাইব্রেরিয়ান দিলীপবাবু , জ্যোতির্ময়
বা ল্যাডলি বা লাইব্রেরির বাইরে যারা ছিলেন সবাই ছিলেন গ্রন্থপ্রেমিক।
লাইব্রেরির কর্মীরা খুব সৌজন্যের সঙ্গে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
দিতেন, তপন-তনয়া দম্পতি ছাড়া ঘোষবাবু, ভূষণ ফলেন সবাই। এদের কথা আমি কখনো
ভুলব না। এখনো লাইব্রেরি গেলে রণজিৎ মিত্র তো সাহায্য করে। চিত্রভানুবাবুর
সৌজন্যে আমি অনেক বিরল বই ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস থেকে পড়তে
পেরেছি।"
চিত্রভানু সেনের ঘরের ওই ধ্রুপদী আড্ডা আমাদের নাগালের বাইরে ছিল। আমাদের
আড্ডা জমত প্রসেসিং রুমে। সেই ঘরের প্রবেশ পথের গেটে তালা লাগানো থাকত,
অনুমতি নিয়ে বাইরের লোকদের ঢুকতে হত। ওটা ছিল জ্যোতির্ময়বাবুর এলাকা। ওই
ঘরের মুখোমুখি ঘরে আমি বিজয় ছেত্রী, রমেশ লাহিড়ী কখনো শিশির লাহিড়ী
বসতাম, পাশেই বাইন্ডিং সেকশন।পাশের ঘরে সুজাতা, শ্যামলদা, মনোজদা, তনয়াদি
বসতেন। প্রসেসিং রুমে নতুন বই থরেথরে সাজানো থাকত। ওখানে যাতায়াত
নিয়ন্ত্রিত ছিল, শুধু টিফিনের সময় আমরা চুটিয়ে আড্ডা দিতাম। দোতলার অফিস
থেকে আসত অসীমদা আর চঞ্চল, আমাদের নিজস্ব টি-ক্লাব ছিল, যার পরিচালনার
দায়িত্ব ছিল মানিকদার হাতে।মাত্র কয়েক দিন হল মানিকদাকে আমরা হারিয়েছি।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানিকদা চলে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী-সমিতি,
পরিচালন সমিতির সদস্য ছিলেন। অনেক গুরত্বপূর্ণ কাজকর্মের সঙ্গে মানিকদা
জড়িত ছিলেন। কিন্তু লাইব্রেরির কাজ সবসময়ই তার কাছে ছিল মুখ্য।
সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ছিল সবসময় আন্তরিক সংযোগ। সকলের সঙ্গে মিশতে
পারতেন সবাইকে ভালোবাসতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কত পরিচিত মানুষ চলে গেলেন।
শুধু স্মৃতিকথা রয়ে গেল, থেকে গেল তাঁদের কথা, তাঁদের ছবি, সেখানে কোনো
বিচ্ছেদ নেই।
গ্রন্থাগারের অ্যাকুইজিশন বিভাগে আমি বহুদিন কাজ করেছি, সারা দিনে অন্তত
দুবার করে গ্রন্থাগারিক চিত্রভানু সেনের মুখোমুখি হতে হত। তাঁর কাছ থেকেই
বলা যেতে পারে গ্রন্থাগারের এই কাজ শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। এই কাজের
সুবাদে আমার সাথে কলকাতা ও দিল্লির বহু প্রকাশকের প্রতিনিধিদের সাথে
যোগাযোগ হত। তারা নতুন বইপত্র ক্যাটালগ ইত্যাদি নিয়ে আসতেন। একটা
নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এই কাজগুলি করতে হত। Oxford University
Press-এর প্রসেনজিৎ, নয়া প্রকাশের অরুণ গোস্বামী, দিল্লির মিস্টার
মোটোয়ানী-দের কথা মনে আছে। এই তিরিশ বছরে দেখলাম, যেটা খুব কষ্ট দেয় তা হল
কলকাতার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রকাশনা স্তিমিত হয়ে যাওয়া, Firma
KLM, A. K. Mukherji, সুবর্ণরেখা, কে. পি, বাগচী, মতো প্রকাশকরা কলকাতার
বিখ্যাত বাঙালি পুস্তক পরিবেশকরা অনেকেই পিছু হটছেন। সেই সময়ে লাইব্রেরিতে
বই নির্বাচন নিয়ে খুব কড়াকড়ি ছিল। বিভাগীয় প্রধানরা সুপারিশ করলেই বই
নেওয়া হবে এমনটা ছিল না।
গ্রন্থাগারিক চিত্রভানু সেন বইটির উপযোগিতা ও মান যাচাই
করে লাইব্রেরিতে স্থান দিতেন। চিত্রভানু সেন যে সব নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলা
পদ্ধতি প্রচলন করেছিলেন তা কবেই শিথিল হয়ে গেছে। লাইব্রেরি ক্রমশ বইয়ের
গোডাউনএ পরিণত হয়েছে। বুক সিলেকসানএর ধ্রুপদী ধ্যানধারণাগুলোকে পরিত্যাগ
করা হয়েছে। এতে লাইব্রেরির মান বৃদ্ধি না হলেও পুস্তক পরিবেশকরা মুনাফা
করেছেন ইদানিংকার কোনো কোনো কর্তা ব্যক্তিদের প্রশ্রয়ে ।
লাইব্রেরিতে
গবেষকদের আনাগোনা আর আগের মতো নেই । সবচেয়ে কষ্ট হয় গবেষকদের কুম্ভিলক
(plagiarism ) বৃত্তি ঠেকাবার জন্য লাইব্রেরিতে নতুন সফটওয়ার আনা হয়েছে ।
থিসিস কতটা নিজস্ব আর কতটা পরস্ব তা পরীক্ষা করে দেখার পরেই থিসিস জমা
দেবার অনুমতি মিলবে ।
লাইব্রেরী থেকে কত রকমের পাঠক যে দেখেছি! বই চুরির নানা ধরণধারণ
দেখেছি । একবার এক ছাত্রী জানালা দিয়ে বই ফেলে বাইরে দাঁড়ানো বন্ধুর কাছে
বই পাচার করছিলেন। নির্দিষ্ট স্থান থেকে বই অন্যত্র সরিয়ে রাখা, বইএর পাতা
কাঁটা, বিচিত্র পাঠক এবং তাঁদের বিচিত্র মনস্তত্ত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের
গ্রন্থাগারে নানা ধরণের পাঠকেরা আসতেন। তারা কেন আসতেন ? খুব সহজ করে বললে
কেউ আসেন বইপত্রের মাধ্যমে জ্ঞান বা তথ্য সংগ্রহ করতে, কেউ আসেন চিত্ত
বিনোদনের জন্য পড়াশোনা করতে, আবার কেউ নিছক মেলামেশার উদ্দেশ্যে।
সংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উচ্চ
শিক্ষিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নিচ্ছে এক নতুন সামাজিক চেতনা। সেই
চেতনাও যে সবসময় প্রগতি সহায়ক হয় কিনা তা নিয়েও কখনও সংশয়-প্রশ্ন মনে
জেগেছে। খুব মনে পড়ে কমার্সের বিশিষ্ট অধ্যাপক কালিপদ দেব-এর কথা। এত ভালো
গ্রন্থাগার ব্যবহার খুব কম দেখেছি। নিয়মিত আসতেন, গ্রন্থাগারের সব উপাদান
ক্যাটালগ, রেফারেন্স বই, গ্রন্থপঞ্জী, এবস্ট্রাক্ট ইনডেক্স জার্নালগুলি
ব্যবহারে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। গ্রন্থাগারেই বেশি সময় কাটাতেন। মাঝে মাঝে
দেখতাম টানা লাইব্রেরিতে বসে কাজ করছেন, তার কিছুদিন পরেই একটি করে বই
প্রকাশ হত। সহাস্যে এসে তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি উপহার দিতেন গ্রন্থাগারের
জন্য। সে সময় লাইব্রেরির পত্র-পত্রিকা বিভাগে অধ্যাপকদের বসবার জায়গাটি
যথেষ্ট ছিল না। অধ্যাপক দেব শিক্ষকরা লাইব্রেরিতে বসে যাতে কাজ করতে পারেন
তার জন্য চেয়ার টেবিল কেনবার প্রয়জনে এক লাখ টাকা দিতে চান বলে উপাচার্যের
কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক দেবের এই আর্থিক সাহায্য
বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করবে না বলে পরিচালন সমিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরেকজন অধ্যাপক অধ্যাপক দেব-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন - তিনি নাকি কোনো
একটি ছাত্রীর সাথে অশোভন আচরণ করেছেন, সুতরাং ওই অভিযুক্ত অধ্যাপকের কাছ
থেকে লাইব্রেরির জন্য অনুদান গ্রহণ করা অনুচিত। মানুষটি হতাশায় লজ্জায়
কেমন যেন ম্রিয়মান হয়ে গিয়েছিলেন। লাইব্রেরি ছিল তাঁর ভরসার একমাত্র স্থল।
এরপর যতদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন লাইব্রেরিতে নিয়মিত আসতেন, মাঝে মাঝে
সুবিচারের আশায় সহস্তে লিখিত প্রতিবাদপত্র কার্বন কপি করে কখনো বইএর মধ্যে
ঢুকিয়ে বা কখনও আমাদের হাতে দিতেন। অস্ফুট স্বরে বলতেন “পড়ে দেখবেন।“
বিশ্ববিদ্যালয়ের
আলো আর অন্ধকার নিয়ে কতজনের কত রকমের অভিজ্ঞতা যে জমা হয়ে আছে ! কোচবিহার
জেলার দিনহাটা কলেজের অধ্যাপক হিতেন নাগের স্মৃতিকথা থেকে সামান্য একটু অংশ
তুলে দিচ্ছি – “বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ সদস্য হিসেবে বহু বিচিত্র
অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসেছি। দেখেছি
উচ্চ শিক্ষা ও খ্যাতির আড়ালে খ্যাতনামা ব্যাক্তিদের আরেকটি রূপ। একটা
অন্ধকার দিক যা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। ব্যক্তিত্বের সংঘাত, আর্থিক
লাভ লোকসানের চুলচেরা হিসেব, পরকীয়া প্রেমের নিরাবরন লীলা খেলা,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে গুঞ্জরিত করে রাখত। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে গেস্ট
হাউসে উঠতাম পাচক বেনেডিক্ট আমাকে ডাকত ‘ছিনেতবাবু‘ বলে । সন্ধ্যা নামলেই
বেনেডিক্টের মুখে খই ফুটত। আসলে ওই সময়ে ওর পেটে পড়ত রঙিন পানীয়। তা যাই
হোক ওর রান্নার হাতটা ছিল চমৎকার। একদিন গেস্ট হাউস থেকে সকাল বেলায়
বেরোচ্ছি, বেনেডিক্ট বলল স্যার এনকোয়ারিতে চললেন? তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাসে হাজারো গণ্ডগোল-সমস্যা লেগে থাকত, কোনো কোনো সমস্যা ছিল
একেবারেই পারিবারিক। সেসব ঘটনায় অনেক বিস্ফোরক পদার্থ থাকত। স্মৃতিচারণে
সেসবের উল্লেখ না থাকাই ভাল ।“
বিশ্ববিদ্যালয়ের
আলোকিত অংশের সাথে এসব অন্ধকার আজো আছে , বেনেডিক্টের সূত্রে মনে পড়ল তাঁর
ছেলে রতনের কথা। লাইব্রেরিতে কাজ পেয়েছিল সহায়ক পদে, হাসিখুশি স্বাস্থ্যবান
ছেলেটি চাকরির বাইরের সময়ে ড্রাইভারি করত। হঠাৎ একদিন সেই হাসিখুশি
স্বাস্থ্যবান ছেলেটি এক পথ দুর্ঘটনায় হারিয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতির
ভাণ্ডার উজাড় করে সবকিছু লেখা সম্ভব নয়, একথা অধ্যাপক হিতেন নাগের । তাঁর
কথা দিয়েই এই পর্ব শেষ করি – “বহু কিছু লেখার ছিল। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের
মতো (শ্রীকান্ত প্রথম পর্ব ) বলতে ইচ্ছে করে – ‘আজ জীবনের অপরাহ্নে বসিয়া
কত কথাই না মনে পড়িতেছে‘ সব কথা উজাড় করে দেওয়া কোনো মতেই সম্ভব নয়।