সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 509

শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-২৩
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

বিকাশ অফিসে বসে সাধারণ ফাইলপত্র দেখছে। মনের ভিতর উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে নির্মলবাবুর। জংলী লজের মাধ্যে যে অপারেশন হয়েছিল তার কিছু প্রশাসনিক নথিপত্র নিয়ে আসবে। বিকাশের ইচ্ছা সব কাগজপত্র তথ্য আর একবার চেক্ করা। তাপস নিলয় এসে অভিবাদন করে দাঁড়ায়। 
- কী খবর নিলয়। 
- খবর ঠিক আছে স্যার। 
- গলাকাটার গাউরটার কোন খবর পেয়েছ, দলে মিশে গেছে, নাকি একা একা ঘুরছে। 
- ঝড়ে আর-টি যোগাযোগ নষ্ট হয়ে আছে। ওখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক  নেই। অ্যানিম্যাল মনিটরিং টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।    
- ঠিক আছে। চল নার্সারি ঘুরে দেখি।
উৎকন্ঠার সময় ফাইলপত্র দেখলে সময় কাটতে চায় না। বিকাশ ভাবে - অফিসে বসে বসে কাজ করার থেকে হেঁটে-চলে কাজ দেখলে সময়টা তাড়াতাড়ি কেটে যাবে। বিকাশ তাপস নিলয় সেন্ট্রাল নার্সারিতে ইন্সপেকশন পথ ধরে হাঁটে। নার্সারিতে গাছের চারা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। বিকাশ বায়ো কম্পোষ্ট চেম্বারের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। চোপারের ব্লেডে হাত দেয়।
- স্যার! সাবধানে হাত দেবেন। কালকে ধার দেওয়া হয়েছে। তাপস বলে।
- আচ্ছা। খালি কি বনমারা (ইউপোটরিয়াম)  দিয়ে কম্পোষ্ট (সার) বানাবে?
- না স্যার আরো কিছু আগাছা আনা হবে। 
- হুম। এই ড্রামে কি দিয়েছ?
- স্যার হরিতকি বীজ ট্রিটমেন্টে বসানো হয়েছে। 
- এখন কিন্তু বেশির ভাগ বীজ পাওয়া যাবে, কী কী বীজ সংগ্রহ কয়া হয়েছে?
- লালি, লসুনি, চালতা, বহেরা, মালাগিরি, সিন্দুরি, …
বিকাশ হাঁটতে একটা মাটির ঢিপির কাছে দাঁড়ায়। হাতে এক মুঠো মাটি তুলে নেয়। বলে-
মাটিটি বেশ ভালো। বেশ কালো। কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছ?
হাই ফরেস্টের টপ সয়েল, স্যার। 
মাদার বেড আর পটের মিক্সার তৈরি শুরু হয়েছি দেখছি।
হ্যাঁ স্যার। সঠিক অনুপাতে কম্পোষ্ট  টপ সয়েল বালি… সব দেওয়া হচ্ছে। 
ঠিক, পট মিক্সার ভালো হলে চারা ভালো হবে। 
এই মাদার বেডে যে বীজ গজানো শুরু হয়েছে…
স্যার, এটা আমলকি। বীজ আগে আসাতে আগেই বসিয়েছি। প্রথম বারে যে চারা গুলো গজাবে সেগুলো দিয়ে আমাদের টার্গেট পূর্ণ করে বাদ বাকি ফেলে দিয়ে এখানে আবার চালতা বসাব। চালতা বীজ অনেক দেরী করে গজায়। 
ঠিক।
বিকাশ হাঁটতে হাঁটতে একটা ইগ্লুর মতো চেম্বারে ঢোকে। থার্মোমিটার হাইগ্রোমিটার মিটার দেখে। তাপস বলে-
স্যার, গ্রীন হাউসটি মেরামত করতে হবে।
বিকাশ নার্সারি থেকে বেরিয়ে অফিসের দিকে রওনা দেয়। ভাবতে থাকে – জেনেটিক্সের সূক্ষ্ম তত্ত্ব বনের কর্মী কত সহজে আয়ত্ব করে রেখেছ। নার্সারির গ্রীন হাউস ঠিক করা তো হাতের মধ্যে কিন্তু পৃথিবীর গ্রীন হাউস ক্রিয়াকাণ্ড আয়ত্ব করা কত কঠিন। কত কঠিন এক একটা বন অপরাধের কিনারা করা। সেই কখন নির্মলবাবু গেলেন এখনো আসছেন না। বিকাশের মাথার মধ্যে কী যেন একটা পোকা ভন ভন করে…
বিকাশ কাবু সহ সবাইকে নিয়ে বন টহলে হাঁটছে। বসন্ত কাল, পর্ণমোচী গাছের ঝরে পড়া পাতা ঢেকে রেখেছে বনের রাস্তা। বনের সব ঘাস শুকিয়ে গেছে। এখন বনে বুনো তৃণভোজীদের খাদ্য  কিছু পর্ণমোচী গাছের বাকল আর চিরহরিৎ গাছের ডাল পাতা। পাখিদের প্রিয় খাদ্য গাছের গায়ের পোকা আর ফল। বিকাশ ভাবে এই বন নিজেকে প্রতিটি ঋতুতে কী সুন্দর ভবে মানিয়ে নেয় আর মানুষ … 
স্যার দেখুন সোনা বউ। কাবু বলে।  
কী, কই।
ঐ দেখুন ডুমুর গাছে। ডুমুর ফল খাচ্ছে। 
দারুণ তো। কাবু তুমি ডুমুর ফুল দেখেছ। 
কী বলেন স্যার, ডুমুরের কি ফুল হয়? ডুমুরের ফুল হয়না। 
বিকাশ গোল্ডেন অরিয়েল দেখে আর ভাবে- পৃথিবীর কত গতি প্রকৃতি, শালসিঁড়ির কত বিচিত্র কর্মকাণ্ড; সব কি সবাই জানে। বিকাশের নিজের মাথাটাকে ডুমুরের ফলের মতো মনে হয়। মাথার মধ্যে চিন্তাগুলো ডুমুর ফুলের পোকার মতো বির বির করে। চিন্তাগুলো কোথা থেকে যেন ডুমুরের ফলের পোকাটির মত ঢুকে পড়ে মাথার মধ্যে। একটা চিন্তা চলে যায়, একটা পোকা মরে যায়। একটা পোকা মরে যাবার সাথে সাথে জন্ম নেয় অনেক পোকা- অনেক চিন্তার মতো। বলে-
কাবু, ডুমুরের ফুল হয়। 
কি বলেন স্যার! 
হুম, কাঁঠাল আতা আনারস খেয়েছ।
হ্যাঁ স্যার। 
ডুমুর ফল ঠিক সেই রকমের ফল। ঠিক করে বললে, বলতে হয় আনেক ফলের সমষ্টি। 
স্যার তা হলে ফুল কোথায়?
আমরা যে ডুমুর ফল দেখি সেটা আসলে অনেক গুলো ফুলের আধার। সেই আধারের ভিতর ফুল থেকে ডুমুরের ফল হয়। 
কিন্তু স্যার, ঐ ফুল গুলোতে যে হাওয়া বাতাস লাগে না। তা হলে ফুল থেকে ফল হবে কী করে। 
সেটাই তো মজার ব্যপার। পরাগ সংযোগ শুধু বাতাসে করে তা কিন্তু নয়। প্রজাপতি বোলতা নানা কীট পতঙ্গ পাখিও পরাগ সংযোগ করে। 
কিন্তু এর ভিতর বাতাস ঢোকার জায়গা নেই, পোকা ঢুকবে কী করে? কাবু হাতে একটা কাঁচা ডুমুর ফল নিয়ে দেখায়। 
এই দেখ, বোঁটার উল্টো দিলে এই জায়গায় এক ধরণের বোলতা ফুটো করে ভিতরে ঢুকে, বোলতাদের মিলন হয় এই ডুমুরের আধারের ভিতরে । বোলতাদের মিলনের পর সেই ডুমুর আধার থেকে ডুমুর-বোলতা ডুমুর ফুলের পরাগ রেণু নিয়ে অন্য ডুমুর আধারে গিয়ে একই ভবে ঢুকে। স্ত্রী বোলতা দ্বিতীয় ডুমুর আধারে গিয়ে ডুমুর ফুলের পরাগ সংযোগ করিয়ে, ডিম পেড়ে নিজে মরে যায়। জন্ম দিয়ে যায় অনেক ডুমুর- বোলতার, ডুমুর ফলের। এই ভাবে সাইকেলের চাকার মত চলতে থাকে ডুমুরের এবং ডুমুর বোলতার জীবন চক্র। 
বাব্বা!!! 
কাবুরা সবাই অবাক হয়ে যায়। বিকাশ ভাবে – ডুমুর এক অনন্য সূক্ষ্ম অন্যোন্যজীবিতা (Symbiosis) । একটি গাছ না থাকলে একটি পতঙ্গ থাকবে না বা একটি পতঙ্গ না থাকলে একটি গাছ থাকবে না। ডুমুর ফলটি যেন পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ। মানুষ যেন বসে আছে এই রকম অনেক সূক্ষ্ম সম্পর্কের উপর। তবুও কেন যে মানুষ নিজের বাস্তুতন্ত্র ভেঙ্গে হেঁটে চলে নিজের ধ্বংসের পথে...  
বনে হাঁটতে হাঁটতে বিকাশ মাথার উপর দুই-হাত বোলায়। নিজের চুল নিজেই টানে। মাথাটাকে হাল্কা মনে হয়। ছোটবেলায় একবার অংশুকে নেড়া করা হয়েছিল। তখন অংশুর মাথায় হাত দিয়ে বুঝেছিল- শিশুটির মাথার ব্রহ্মতালুর চামড়া কেমন ধপ ধপ করে ওঠা-নামা করে। বিকাশের মাথা এখন পাকা নারকেলের মতো শক্ত। হয়ত অংশু ময়ূখেরও তাই হবে। তবুও এক একটা চিন্তা একটা ডুমুরের বোলতার মতো ঢুকে, মরে যাবার আগে জন্ম দিয়ে যায় আরো কত চিন্তার, আরো অনেক পোকার, অনেক ডুমুরের বীজের মতো কত অভিজ্ঞতা।  মাথার ভিতরের বা ডুমুর ফলের  ভিতরের জগৎ কেউ দেখে না বোঝে না। কথাগুলোকে, অভিজ্ঞতাগুলোকে বলে যেতে হয় মাথা থেকে বের করে। সেই কথাগুলো, অভিজ্ঞতার লেখাগুলো যারা জানবে পড়বে বুঝবে তারাই টিকে যাবে সূক্ষ্ম জটিল এই বাস্তুতন্ত্রে।  শালসিঁড়ি ধরে চলে আসা অভিজ্ঞতাগুলো মানুষ বুঝেছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল  বিছুটি শিয়ালকাঁটা ধুতুরা আকন্দ রক্তকরবী গাছের মতো কত শত বিষাক্ত গাছের ছোবল থেকে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির বহু আগেই মানুষ তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করে যায় কী খেতে হবে কী খাওয়া যাবে না। কোন গাছের কী কাজ। শালসিঁড়ির সৈনিকের কাছে বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধীয় সব কথাই গুরুত্বপূর্ণ। কাবু একটি গাছ দেখিয়ে বলে-      
- এই গাছটি দেখলেন স্যার।    
- হ্যাঁ। চাঁপ গাছ।  
- এই গাছ থেকে আমরা প্রতি বছর বীজ সংগ্রহ করি। 
- কেন? 
- এই গাছের বীজ থেকে বেশির ভাগ চারা খুব হৃষ্ট-পুষ্ট হয়। এই রকম আরো অনেক গাছ আছে আমাদের বনে।   
বিকাশ বনে ঘোরার সময় চাঁপ গাছের মতো আরো নানা ধরণের ভালো গাছ দেখে। গাছগুলোর গুঁড়ি সোজা, মোটামুটি  পেনসিলের মতো সোজা গোলাই, গাছের জগতে তুলনামূলক মসৃণ বাকল, চাঁদোয়া বা ক্যানোপি ছাড়া তেমন কোন শাখা প্রশাখা নেই। গাছগুলোকে দেখনেই জোরালো তেজী গাছ বলে মনে হয়, মনের মধ্যে গাছগুলোর জন্য একটা আলাদা ধরনের ভক্তি আসে। বিকাশ মনে মনে খুব খুশি হয়, প্রশিক্ষণের জ্ঞানকে কার্যক্ষেত্রে চাক্ষুস দেখতে পেয়ে। বলে – 
- জান কাবু, এই ধরনের গাছকে প্লাস ট্রি বলা হয়।  
কাবু একটা শাল প্লাস ট্রি জড়িয়ে ধরে। কাবুকে দেখে বিকাশও একটা চাঁপ প্লাস ট্রি জড়িয়ে ধরে বলে- 
- জান কাবু  প্লাস ট্রি প্রজননশাস্ত্র অনুযায়ী উন্নত হলেও সব বীজ থেকে সমান চারা হবে তেমন নিশ্চয়তা নাই। তাই এই গাছের বীজ ছড়ানো হলে প্রথম ধাক্কায় যে সকল বীজ গজায় সেই চারা গুলো ভালো গাছে পরিনত হয়- ভালো গাছ উৎপন্ন করে। এখন অবশ্য খারাপ গাছ চলে আসার প্রবণতাটা বন্ধ করার জন্য প্লাস-ট্রির কোষ থেকে ক্লোন করা হচ্ছে। তবে সেটা খুবই কম। তাই এখনো ভরসা তোমাদের দেখানো ভালো গাছ বা প্লাস-ট্রি…   কাবু এই গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হঠাৎ সোনা বৌয়ের মুখ থেকে একটা ডুমুর ফল বিকাশের মাথায় থপ্‌ করে পড়ে… অবচেতন মনে মাথায় হাত দিতেই বিকাশের কথা ঘুরে যায়-   
-  তাপস, প্লাস-ট্রি দেখে রেখেছ?  বিকাশ জিজ্ঞাসা করে। 
-  স্যার সব তো জানা ছিল। কিন্তু সেদিনের ঝড়ে সব গাছগুলো নষ্ট করে দিয়েছে।
- পুরো সীড স্ট্যান্ড নষ্ট হয়ে গেছে? বল কী? 
- হ্যাঁ স্যার। 
- সেকেন্ড লাইন অফ প্লাস ট্রি কী জানা আছে?
- জানা আছে, স্যার।  
- এক সপ্তাহে পুরো বন খুঁজে ভালো গাছ মার্ক করে রাখবে আমি চেক্ করব। বিকাশ ফাইল থেকে মুখ তুলে বলে। 
ঘড়িতে তখন বিকাল তিনটা। ফাইলে আর বনের নানা চিন্তায় জংলী লজের অপারেশনের খুঁটিনাটি কথা মনে করতে করতে কখন সময় চলে গেছে বুঝতে পারেনি। ডুবে ছিল ট্রাংকুইলাইজড গাউর, প্লাস ট্রি, বিকাশের এক্সিডেন্ট, জংলী লজের অপারেশনের কথায়।  ভুলে যায় অপরূপা মাধুরী ময়ূখের কথা। ভুলে যায় অপরূপাকে ফোন করতে। 
- আমরা আসি স্যার। তাপস বলে।
- ঠিক আছে। 
তাপস নিলয় চলে চলে যায়। বিকাশ লাঞ্চ সেরে নেয়।  ডুমুরের ফলের মত মাথা নিয়ে বসে থাকে বিকাশ- অফিসে। একটা প্লাস ট্রি চলে যাওয়া মানে অনেক ক্ষতি। আবার প্রজননের পর প্রজনন অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে। একটি প্লাস ট্রি আর এক জন নির্ভরতার মানুষ তো এক রকম। মথুরেশ স্যারের যা ছিল, তার আজ আর মাধুরীর কিছু নাই। মাধুরীর কত জ্ঞান জমে আছে মৌলের খনির মধ্যে আকরিকের মতো। অপূর্ব কোথায় কী করে রেখেছে তার কতটা কী জানে মাধুরী- কে জানে। বাবুই পাখির মত ঘর বানানোর একজন কারিগর কী জানে ব্যবসার। শালসিঁড়ির গাছেরা পড়ে যায় মরে যায় বাইরের ঝড়ে। গাছ মরলে গাছ  জন্মে যায় যদি না থাকে মানুষের লোভের আগুন। কিছু লোক জড়িয়ে যায় বাইরের আক্রমণে নিজের ভিতরের লোভের জন্য।         
- বিকাশ, আমি একটি মাইনর মিনারেল মাইনের লীজ নিয়েছি। তোর কলিগকে একটু বলে দিস্, যাতে অসুবিধা না হয়।
- অপূর্ব, ব্যবসা মানুষের মৌলিক অধিকার। নিয়ম নীতি মেনে চলবি কাউকে কিছু বলতে হবে না। 
- নিয়ম নীতি মানলে কি আর লাভ হবে?
- না হলে অন্য ব্যবসা কর্। যা করবি, করবি নিয়ম নীতি মেনে। জানিসতো বিগত চল্লিশ বছরে ইউরোপের সম আয়তনের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। যে হারে ধ্বংস চলছে, সেই হারকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অ্যামাজনের বিখ্যাত রেইন ফরেস্ট বেঁচে থাকবে আর মাত্র ঊনআশি বছর। আমরা যে ভাবে চলছি সেই ভাবে চললে আগামী পঞ্চাশ বছরে এখন যত প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে তার মাত্র দুই তৃতীয়াংশ  বেঁচে থাকবে।  
- দেখ্ তোর থেকে জ্ঞান শোনার জন্য তোকে ডাকিনি। সাহায্য করবি না, সে ঠিক আছে কিন্তু জ্ঞান দিস্ না। 
- কী হল। কী নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। দোলা মাসি আসছে চা-খাবার নিয়ে। 
- মাধুরী তোমার কী খুব চাহিদা। 
- আমার?  তুমি তো জান আমি গাছের মতো। আর ময়ূখ হয়েছে তোমার মতো। পাখিতে পাওয়া ছেলে বনে পাওয়া মানুষ। যখন সময় পায় ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে চিল দেখে। আর ময়ূখের চাওয়া বলতে  বনে যাওয়া…  
- তাহলে বলতে হয় আমি অডম্যান…আউট হয়ে যাই।
মাধুরী ক্যাস্পিয়ানের মতো চোখ করে তাকায় অপূর্বর দিকে। এই দৃষ্টি বনের মতো শুষে নেয় সব বিষ। শালসিঁড়ির মতো বাড়তে দেয় জীবনকে। বিকাশ মাধুরীর চোখে সবুজ দেখে আর অপূর্বর চোখে মরু ঝড়। মাধুরী আঁচল দিয়ে আড়াল করতে চায় অপূর্বকে। দোলা মাসি চা-খাবার নিয়ে আসে। বাইরে পাম গাছে ঝুলে থাকা বাদুড়ে যেন ঝুলে থাকে রাতের অন্ধকার। অপূর্বর লোভ এখন রাতের কাকের মতো চুপ করে বসে আছে ঘরের কার্নিশে…
 বিকাশের ফোন বেজে উঠে। ফাইলের শব্দ জালের ফাঁকে যে স্মৃতির সিঁড়ি গড়ে উঠেছিল তা মট্ মট্ করে ভেঙ্গে পড়ে। 
- হুম! অনেক দেরী করলেন যে নির্মলবাবু। 
-  এসে বলছি স্যার।
বিকাশের মন কদম কাটুসের ফলের কাঁটার মতো হয়ে উঠে। বিকাশ ভাবে কী খবর নিয়ে আসছে নির্মলবাবু…
- গেট খুলুন। এই সার্চ ওয়ারেন্ট। সই করুন। নির্মলবাবু বলে। 
- ভিতরে কেউ নেই স্যার।
- সেটা দেখা যাবে। আগে গেট খুলুন।
- দাঁড়ান, আমি  মালিককে ফোন করি।
-       যা করার, তাড়াতাড়ি করুন।  
এই ভাবে হৈ হল্লা করে আনেকটা সময় নষ্ট করে- নির্মলবাবুরা। নির্মলবাবু ঘড়ি দেখে, ভাবে- ভিতরে যদি সত্যি কোন ডিল  চলতে থাকে তাহলে এতক্ষণে সার্চের খবর চলে গেছে অপরাধীদের কাছে। অপরাধীরা সার্চের খবর পেয়ে যত ছট-ফট করবে তত স্যারের বিছানো জালে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। নির্মলবাবু চিন্তা করে, এখনো কেন স্যারের সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে না। স্যারের ব্লু প্রিন্ট তো কখনো ভুল হয় না। একটা উত্তেজনা টেনশন দলা পাকিয়ে গলা পর্যন্ত উঠে আসে। ফোন করতে গিয়ে ফোন করতে পারে না, আর টি-তে কল করতে গিয়ে কল করতে পারে না। যদি পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। ফুল প্রুফ পরিকল্পনায়  ধৈর্য নাকি একমাত্র শক্তি। নির্মলবাবু নিজেদের হায়নার মতো মনে করে। গেটম্যান এখন ওদের শিকার। ধমকে চমকে গেটে ধাক্কা মেরে, গেট লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গেটম্যানকে ব্যস্ত সন্ত্রস্ত করে রাখছে। বলতে বলতে অনেক লোক জমে গেল গেটের সামনে।    
পরে ইন্টারোগেশনে জানা যায়, ভুজঙ্গ বিহারী প্লান “এ” থেকে “বি” তে শিফট্ করে। প্লান “এ” ছিল, যদি গত বারের মতো বিকাশ একা আসে তবে তাকে ভিতরে গুম করে দেবে। কিন্তু এবার যে বিকাশ আসেইনি। তার  পরিবর্তে অনেক জানা অচেনা ফোর্স এসে হাজির হওয়াতে প্লান “বি”তে শিফট করে ভুজঙ্গ বিহারী। প্লান “বি” ছিল  তাড়াতাড়ি আগ্নেয়াস্ত্র লুকিয়ে রেখে মাল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া।      
সেই প্ল্যান অনুসারে ভুজঙ্গ বিহারী আরো দুই জনকে একটা মোটর বাইকে তুলে  পিছনের গেট দিয়ে বের হতেই নিলয় তাপস ওদের গেটের মুখেই ধরে নেয়। আড়াল থেকে বিকাশ এবং আরো অনেক ফোর্স বেরিয়ে এসে ঘিরে ফেলে ভুজঙ্গ  বিহারীদের। বামাল ধরা পড়ে ভুজঙ্গ একেবারে ভালো মানুষ হয়ে যায়। মোটর বাইকের বক্স থেকে সহজেই বের করে দেয় একটি তাজা প্যান্থারের চামড়া আর তার কিছু হাড্ডি। নির্মল বাবুরা ততক্ষণে  চলে আসে লজের সামনে। ভুজঙ্গ নিভে যাওয়া শাল কাঠের মতো ঠান্ডা। স্থির নিরুত্তাপ। অন্য দুই জন পাথরের মতো অচল অবুঝ। ভাষা বোঝে না। বিকাশ বুঝে নেয় এদের দেখতে এখন গো-বেচারা মনে হলেও, এরা কিন্তু ট্রেইন্ড ক্রিমিনাল। না হলে এত কুল থাকতে পারে না। ভুজঙ্গকে দেখে মনে হচ্ছে- ও চায় যত তাড়াতাড়ি লজটি ছেড়ে চলে যেতে। লজ ছাড়ার সুপ্ত ইচ্ছার গন্ধ বিকাশের  সন্দেহকে আরো গাঢ় করে। বিকাশ হঠাৎ চার্জ করে, “ভুজঙ্গ- বন্দুক কোথায় রেখেছ, বের কর”। “কী বলেন স্যার, আমার কাছে কোন বন্দুক নেই। চামড়াটা আমরা সুজনাই বাগান থেকে এনেছি’’।  বিকাশ বলে “ দেখ ভুজঙ্গ, আমরা যদি খুঁজে পাই তখন কিন্তু তোমার শাস্তি অনেক বেশি হবে’’।  বার বার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও ভুজঙ্গ কিছুতেই স্বীকার করে না যে ওর কাছে বন্দুক আছে। স্বেচ্ছায় সার্চ করাতে চায় সমস্ত লজ। সবাই সার্চ করতে উদ্যত হলে, নির্মলবাবু বলে- স্যার, দেখুন  মাঠের উপর ঐ বালির ঢিপি। এখানে তো কোন বালির কাজ হচ্ছে না। তাহলে বালির ঢিপিতে ঘাস উঠেনি কেন? তবে কেন বালির ঢিপির উপরে মানুষের পায়ের ছাপ?   বিকাশ বলে- সার্চ করুন। নির্মলবাবু বালির ঢিপির দিকে এগিয়ে যেতেই ভুজঙ্গ পড়ে যায় বিকাশের পায়ে। ক্ষমা করুন স্যার , আমি যাচ্ছি; আমি বের করে দিচ্ছি। বালির ঢিপি থেকে বের করে দেয় একটা বস্তা। সেই বস্তায় ভেঙ্গে রাখা আছে বন্দুক। কী তীক্ষ্ণ নিরীক্ষণ নির্মলবাবুর… তবে আজ কেন এত দেরি করছে। বলতে বলতে নির্মলবাবু এসে পৌঁছায়।  
- এই নিন স্যার, সব নথি। হেড অফিসের একটা নথির জন্য দেরি হয়ে গেল। 
বিকাশ সাথে সাথে সব কাগজপত্র খুলে বসে। দুই চোখ যেন স্ক্যানিং মেশিন। নির্মলবাবু দুই কাপ চা নিয়ে এসে বসে। 
- নির্মলবাবু সুজনাই বাগানের ছেলেটির কাগজটি কোথায়।
- ফাইলে আছে দিচ্ছি। 
বিকাশ সুজনাই বাগানের কাগজটি দেখে নির্মলবাবুর দিকে তাকায় এক রহস্যের সন্ধানে। বলে-
- বেইট-এর লোকেশন কোথায়? 
- বাড়িতে আছে।
- কাল সকালে একবার ডাকতে হবে। তবে ও যেন কোন সন্দেহ না করে। সমাজ সেবার ইসু করে ডাকলে ভালো হয়। 
- কেন, কোন ক্লু পেলেন  নাকি? 
- বলুন তো যে বাড়ির সামনে অপূর্ব এক্সিডেন্ট করল সেই বাড়ির মালিকের সাথে সুজনাই বাগানের লোকটির কী ভাবে যোগাযোগ থাকতে পারে। 
- সে তো সম্ভব নয় স্যার। 
- দেখুন এই দুটি তথ্য, এখানে একটা যোগ সূত্র আছে। 
- তাহলে ওকে তো তুলে নিতে হয়, বেশি দিন ছেড়ে রাখলে যদি পালিয়ে যায়। 
- কেন পালাবে। ওকে বুঝতেই দেবেন না যে ও ধরা পড়ে আছে।
- ঠিক আছে।
বিকাশের মাথায় একটি ডুমুরের বোলতা মারা যায় আর একটি ডুমুর বোলতার জন্ম হয়। অপরূপার ফোন আসে।
- অপূর্ব মাধুরীর খবর পেয়েছ? বিকাশ চুপ করে থাকে। অপরূপা বলে- 
- অপূর্বর জ্ঞান এখনো ফেরেনি। মাধুরী কাছে খবর এসেছে- যে বাড়ির পাশে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই বাড়ির মালিককে নাকি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri