নানা রঙের গানগুলি-২৩/শৌভিক কুন্ডা
নানারঙের গানগুলি (২৩)
শৌভিক কুন্ডা
--------------------------------
মা গান গাইতে পারতেন না। তবু, কোলে আমার ছোট্ট মাথাটি শুইয়ে "ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি" গাইতেন, পিঠে আলতো চাপড় দিতে দিতে। ঘুমিয়ে পড়তাম।
আমার স্ত্রী গান শিখেছিলেন। তবে চর্চা করেন নি সেভাবে। গুনগুন যখন করেন, বুঝি, সুর আছে।
নিজে গান ভালোবাসি, কিন্তু নিতান্তই অ-সুর। তবু, আজ থেকে আড়াই দশক আগে, আমাদের একমাত্র মেয়ে যখন টলমল পায়ে, দুজনেই একটা সুর গুনগুনিয়ে ওকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতাম। কথা ছিলো না সে সুরে। নিতান্তই হুঁ হুঁ করে মনগড়া সুর। মেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। এখনো মাঝেমধ্যে সে সুরটি ফিরে আসে মনে, গলাতেও। দুজনে কখনো হুঁ হুঁ করতে করতে একে অন্যের দিকে তাকাই। হেসে ফেলি।
পৃথিবীতে নানা ভাষায় এ ধরনের ঘুমপাড়ানি গান, ছন্দ আছে। ইংরেজিতে বলে Lullaby. এত কথা মনে এলো ইউটিউব সার্চ করতে করতে খুব প্রিয় একটা গান খুঁজে পেয়ে। ১৯৮৯এর একটি সিনেমার গান। সুরজ সানিমের লেখা। রাজেশ রোশনের কম্পোজিশন। গেয়েছিলেন তালাত আজিজ। মহেশ ভাটের পরিচালনায় 'ড্যাডি' সিনেমাতে এ গানে লিপ ছিলো আনন্দ সারিন চরিত্রে অনুপম খেরের।
এতক্ষণে হয়তো অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে গানটির লিরিক -
"স্বপ্নোকি ঘরকে
ছাত পে হ্যায় তারে
টফিয়োঁকি দিবারো পে
লটকে গুবারে....
ঘরকে উজিয়ারে
শো যা রে
ড্যাডি তেরি জাগে
তু শো যা রে...."
অবিবাহিত সম্পর্কে জাত কন্যা। অনভ্যস্ত, গায়ক বাবা তাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোয় প্রয়াসী। সিনেমার আনন্দ সারিন মদ্যপ। এককালের বিখ্যাত গায়ক মদের নেশায় নিজেকে শেষ করে ফেলেছে। সুর তাকে ছেড়ে গেছে। ১৭ বছর পর বাবা-মেয়ের দেখা হয়। তখন থেকে মেয়ে (পূজা ভাট) পাখির চোখ করে নেয় বাবাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লড়াইটিকে। আর সে ফিরে আসার প্রথম প্রমাণ হিসেবে এই গানটিই দৃশ্যায়িত হয় পর্দায়। এবার মেয়ের কোলে মাথা এলিয়ে যায় বাবার।
অসাধারণ লিরিক, তেমনই সুর আর দৃশ্যায়ন, আর তালাত আজিজের মায়াবী গলা।
গতকাল, ইউটিউবে গানটি খুঁজে পেয়ে শুনতে শুনতে চোখ থেকে জল বের হয়ে এলো। বহুদিন পর কোনো গান শুনে এমনটা! আমার চাকরিরতা, এখন ভিনপ্রদেশের বাসিন্দা মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিলাম গানটা। কে জানে, তার ব্যস্ত জীবনে বাবাকে মনে ফিরলো নাকি ! এখনো মনের ভেতর বেজে যাচ্ছে কথাগুলো -
"ঘরকে উজিয়ারে
শো যা রে
ড্যাডি তেরি জাগে
তু শো যা রে........."
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
