সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 420

শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-২২
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

অপূর্ব শহরের একটি নামী নার্সিং হোমে সি সি ইউতে শুয়ে আছে। বাইরে বসে আছে মাধুরী ও বিকাশ। মাধুরী যেন  কালবৈশাখী ঝড়ে সমূলে উপড়ে পড়া শালগাছ। পাতা ডালপালা গুড়ি মূল মাটি সব আছে  কিন্তু সে এখন গাছ নয় আর। ঝড়ের পরে সবাই হৈ হৈ হায় হায় করে বলছে- এই গাছ এখন সি. ডি. (Cyclone damage)। বিকাশ জানে ঝড়ে পড়া গাছ রক্ষা করা কত কঠিন। ঝড়ে পড়া গাছ দেখলেই লোভী লোকের জিভ লক লক করে ওঠে। কারো লোভ ডালপালাতে, কারো লোভ গুঁড়িতে; কারো লোভ ছিন্নমূল কুঁদাতে। অনেকেই ভাবে সি ডি মানেই বারোয়ারি। কাবু  বলে- আর  বলবেন না স্যার। শহরের মানুষগুলো বোঝে না  বসন্তে আমাদের জীবনে কত কী ধরণের বসন্ত আসে। এই বসন্তে আমাদের কাজ করতে করতে জীবন শেষ হবার উপক্রম হয়। এই আগুন লাগলো বনে - আগুন নিভাতে চল, এই কালবৈশাখী ঝড়ে কত গাছ সি ডি হয়ে গেল – দল বেঁধে লোক ধেয়ে আসছে লুঠ করতে - লুঠ প্রতিরোধ কর; হোলিতে দলে দলে লোক শিকারে নেমে পড়েছে - তাদের প্রতিহত কর।    
গহন বনের ভিতর সরকারি বনবাসীদের বৈকালিক আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল। সবুজের সমুদ্রে সরকারি আবাসস্থলটি যেন পৃথিবীর সব থেকে ক্ষুদ্র ধূসর দ্বীপ। এই দ্বীপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আগুন ঝরাচ্ছে একটি রুদ্রপলাশ গাছ। কোন বিদেশি সাহেব এই গাছটিকে কোন শখে এই সবুজের সমারোহের মধ্যে লাগিয়েছিল, সেটা এই আবাসিকদের কেউ জানে না। বিকাশ প্রথম প্রথম চেষ্টা করে তল খুঁজে পায়নি।  সবুজের দেশে রুদ্রপলাশের আগুন লাল ফুল কাবুদের জানিয়ে দেয় - বসন্ত এসে গেছে। সাধু সাবধান! তাই এই আবাসিকদের সবার প্রিয় এই রুদ্রপলাশ গাছটি।  কাবু বলে - স্যার, বায়ু কোণ দেখুন।  কেমন কালো হয়ে আছে।  এক্ষুনি ঝড়  আসবে। বলতে বলতে ঝরা পাতাগুলো বাতাসে পাক খেতে খেতে উপরে ওঠে যেতে লাগল। মুহূর্তে যেন চারদিক রাতের শেওড়াতলার মতো কালো অন্ধকার হয়ে গেল। বলতে বলতে বজ্র বিদ্যুত সহ তীব্র তুফান আর ভীষণ বৃষ্টি। প্রথম ধাক্কায় রুদ্রপলাশ গাছটি পড়ে গেল ধুপধাপ করে। কাবুরা হায় হায় করে উঠল। পরদিন সকালে যথাসম্ভব  সি ডি গাছকে বাঁচিয়ে সবাই লেগে পড়ল রুদ্রপলাশ গাছটির ডাল-পালা কাটতে। বললাম কী করছ - গাছটাকে ঐ ভাবে রেখে দাও, কত কুঁড়ি এসেছে- ফুল ফুটবে। কাবু বলে- মাটিতে পড়ে থাকলে গাছকে গাছ মনে হয় না। গাছ হল উদ্ভিদ। মাটির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে- খাড়া। বললাম – মাটিতে উপড়ে পড়ে যাওয়া গাছ আবার খাড়া হয়ে দাঁড়াবে? বল কি! কাবুরা সবাই মিলে গাছটির ডাল-পালা মাথা ছেটে দেয়। বিকাশের খুব কষ্ট হয়- মনে হয় যেন হাত-পা-হীন একটা মানুষের নিথর ধড় পড়ে আছে। এখন শহরে বা বড় রাস্তার পাশে এই রকম ডাল-পালা হীন, মুন্ডহীন গাছ দেখা যায়- বিকাশের মন খারাপ করে। রাগ হয়। শিকারে ব্যর্থ বাঘের মতো হাঁপায়। জীবনে কত না পারা কাজ উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে ঝেড়ে ফেলে বেঁচে থাকে কত মানুষ। কাবুরা যে অন্য রকম। ওরা সাইকোসোমেটিক - কাজ করে মন কষ্টের মধ্যে আনন্দ করে নেয়। বলতে বলতে পাতা ডাল-পালা মুন্ডহীন- ভারহীন রুদ্রপলাশ গাছটি সট করে দাঁড়িয়ে পড়ে। বিকাশ অবাক হয়ে যায়। ভাবে এটাও সম্ভব! কাবু বলে - স্যার- দেখলেন মূলের টান। কত জোর। গাছটি আবার নিজের থেকে  দাঁড়িয়ে পড়ল। পরের বসন্তে দেখবেন গাছটি আবার নতুন গাছের মতো ফুল ফোটাবে- আগুন ঝরাবে।    
এই রকম নানা ভাবনায় কত সময় কেটে গেছে বিকাশ বুঝতে পারেনি। নার্সিং হোমে এসে প্রাথমিক কাজ কর্ম সেরে করিডোরে মুখোমুখি বসে আছে মধ্য বসন্তের দুই নর নারী। বনে গভীর রাত কত মোহময়ী হয় রাতচরা পাখির ডাকে। শহরে রাতের গভীরতা বোঝা যায়  নিস্তব্ধতায়। নার্সিং হোমের করিডোর এখন একদম ফাঁকা। একটি পিন পড়লেও যেন বোঝা যাবে। নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে না কারো। মনে হয় ফুসফুসেরা গেছে শীত ঘুমে- সালামান্ডারের মতো। করিডরের এল-ই-ডি লাইটগুলো যেন আলো নয় সাপের শীতলতা ঢালছে শিরদাঁড়ায়। পৃথিবী যেন  থমকে গেছে- হঠাৎ। এ যেন প্রাক্ ব্রহ্মমুহূর্ত। রাতের গভীরতাকে পাথর থেকেও ভারী মনে হয়। ভারী মনে অপেক্ষা করে ডাক্তার বাবুর- কখন অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসে। ভারী মনে বিকাশ যেন এক যুগ পরে মাধুরীকে দেখে। মাধুরী এখন বৈশাখীর শিলাবৃষ্টি ঝড়ে ছিন্ন কলাপাতা। সন্ধ্যায় সুন্দর খোঁপা করা লম্বা চুল যেন ঝড়ে উড়ে যাওয়া খড়কুটোর মত ছড়িয়ে আছে মুখে বুকে পিঠে। সখের সুন্দর শাড়ি যেন ব্যাথা নদী- জড়িয়ে আছে শরীর মন।  এই প্রথম করিডরের দেয়াল ঘড়িটি কথা বলে ওঠে- এখন রাত্রি তিনটা… মাধুরী মুখ তুলে তাকায়। বিকাশের মনে হয় মাধুরীর  চোখ দুটি যেন রুদ্রপলাশ ফুল। লাল। বিকাশ বুঝতে পারে না এই রঙ কিসের- অভিমানের রাগের না কি ক্ষোভের। বিকাশ চোখ ফেরায় অপারেশন থিয়েটেরের দিকে। বিকাশ উঠে গিয়ে মাধুরীকে ছুঁতে চায়, পারে না এক অজানা সংকোচে- পাথর সংস্কারে গুটিয়ে যায় শামুকের মতো। বলে - মাধুরী দেখ সবুজ আলো জ্বলল। অপারেশন শেষ হল মনে হচ্ছে। এক্ষুনি ডাক্তারবাবু বের হবে। অপারেশন থিয়েটারে বাইরে মাধুরী বিকাশ দাঁড়িয়ে থাকে পর্ণমোচী গাছ মেহগিনি মাদারের মতো।      
- অপূর্বকে কেমন দেখলেন ডাক্তারবাবু? বিকাশ জিজ্ঞাসা করে।
- অপারেশন ঠিকমতো হল। বাহাত্তর ঘন্টা আগে কিছু বলা যাবে না। তবে অপূর্ব বাবুর ভাগ্য খুব ভালো যে পুলিশ যথা সময়ে ওনাকে এনে এখানে ভর্তি করিয়েছে। আর কিছুক্ষণ দেরি হলে বাঁচানো যেতো না। এখনো সন্দেহ আছে নিম্নাঙ্গে সম্পূর্ণ সেনসেশন আসে কিনা।  
মাধুরী সাদা চোখে তাকিয়ে থাকে ডাক্তারের দিকে- ঝড়ে ভেজা নীলকণ্ঠ পাখির মত। বিকাশের গভীর দৃষ্টি চায় মাধুরীর সাদা চোখের মনি উজ্জ্বল করতে, ডাক্তারবাবুর আত্মবিশ্বাসকে আরো গাঢ় করতে। 
- ডাক্তার বাবু, আপনার যা যা করার সব করুন। আমাদের একটাই চাওয়া, অপূর্ব যেন আগের মতো হয়ে যায়। 
- আপনি?
- আমি অপূর্বর বন্ধু- বিকাশ।
- হ্যাঁ, আপনার নাম প্রায় নিউজ পেপারে দেখি।
- উনি? 
- অপূর্বর স্ত্রী- মাধুরী।    
ডাক্তার বাবুর দৃষ্টি যেন হারিয়ে যায় উইন্ডো গ্লাসের ভিতর দিয়ে রাতের অন্ধকারে দিকচক্রবালে। দুই চোখ দিয়ে যেন খুঁজে চলে হিপ্পোক্রাটসকে। মাধুরী হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে বিকাশের বুকে। বিকাশের দুই কলিজায় দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝখানে মুখ রেখে কেঁদে উঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। বিকাশ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে খেজুরগাছের মতো চেরা বুকে অপরূপা নামক হাড়ি বেঁধে। বিকাশ ভাবে- মাধুরী কত নিষ্পাপ সরল নিঃসঙ্কোচ সূর্যমুখী ফুলের মতো। আলোর সাথে ফুলের রঙের নিষ্পাপ নিঃস্বার্থ ভালবাসা। এই ছোঁয়া শরীরে জোয়ার আনে না- ভাঁটার টানে মিশে যেতে চায় মহাসমুদ্রে। ডাক্তার বাবু বলে-  
- এখনো ভেঙ্গে পড়ার মতো কিছু হয়নি, ম্যাডাম। বাহাত্তর ঘন্টা যেতে দিন দেখি কী করতে পারি।  
মাধুরী বিকাশের বুক থেকে মুখ তুলে, মুখ চোখ পুঁছে নেয় শাড়ির আঁচল দিয়ে। মাধুরী এখন যেন ঝড়ের পরে জেগে ওঠা ঘাস। চোখে করাতের মতো ধার। অনুবর্তনে আবার শুরু করতে হবে এখান থেকে আবার।  ডাক্তার বাবু বলে-
- রাত প্রায় শেষ হতে চলল। এখানে থেকে কোন লাভ নেই। বরং বাড়িতে ফিরে যান। হ্যাঁ, আর একটা কথা। কালকে একবার থানাতে দেখা করবেন- এটা পুলিশের অফিসার বলে গেছে।ও.কে।  
ডাক্তার চলে যায় ভাবনাগুলো জেগে থাকে। জেগে থাকে অপরূপা। বিকাশ মাধুরী ঘরে ঢোকে। উঠোনের আম গাছে পাখির  ডাকে ঊষা উঁকি মারে।  বিকাশ বলে-
- জেগে আছ।
- অপূর্ব কেমন আছে?
- অবস্থা খুব ভাল নয়। বাহাত্তর ঘণ্টা আগে কিছু বলা যাবে না।    
অপরূপা মাধুরীকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। ভোরের সূর্য ওঠে কিন্তু আজ আলো ঢোকে না ঘরে। বিকাশ ভরসা করে মূলের টানে। অপূর্বর যে অনেক ভার কমাতে হবে উঠে দাঁড়াতে- রুদ্রপলাশের মতো। কত কী শাখা-প্রশাখা ছাঁটতে হবে মাধুরীকে। এখানে কাবুর মত কেউ নেই মাধুরীর। এই লড়াই মাধুরীর একার লড়াই। মাধুরীর লড়াই এখন অবনমিত বনের মতো… জমি আছে দামী গাছ নাই প্রাণী নাই। এই নাই এর কারণ সবার জানা তবুও কারণের মরণ নাই। কারণ খুঁজতে কোথায় যেন ঢুকে পড়ে বিকাশ- এ যে অন্ধকার গুহার মতো। চারদিকে কত অপরিচিত লোক।  উল্টো দিক থেকে নেমে আসছে তীব্র গোল আলোক রশ্মি সার্কাসের সার্চ লাইটের মতো। হঠাৎ একটা মানুষ উদভ্রান্তের মতো ছুটছে আলোর দিকে, তাকে পিছন থেকে তাড়া করছে কতগুলো লোক। সবার হাতে লাটি সোটা তরবারি পিস্তল।  মানুষটি বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে। পিছনের লোকগুলো এই মারে মারে করছে কিন্ত মারতে পারছে না। মানুষটি ছুটতে গিয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছে। মানুষটির পিছন দেখে বিকাশের মনে হয়- ওকি অপূর্ব। ও চিৎকার করছে আর  ছুটছে… বাঁচাও বাঁচাও… বিকাশ চিৎকার করতে চায়, পারে না। বিকাশের গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। ওকে যেন বোবায় ধরেছে। হঠাৎ করে আলো নিভে যায়। ঘরটি আবার অন্ধকারে ডুবে যায়…
 ইস… কাবু ১৯৫৭ সাল সেগুনের প্লেনটেশনটিকে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ড ভণ্ড করে দিল। ইস গাছগুলো এমন উল্টো পাল্টা ভাবে পড়েছে যে হাঁটা যাচ্ছে না। হাঁটতে গিয়ে কাবুরা বার বার পড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বিকাশ চিৎকার করে বলতে চায়- নির্মল বাবু তাপস নিলয়, ছোটো ছোটো আরো জোরে ছোটো, সি ডি গুলো লুট হয়ে গেল। ছুটতে গিয়ে  কুঁদা খোঁড়ার গর্তে পড়ে যায় বার বার। ঘিরে ধরে শত শত ছিন্নবস্ত্রা নারী। কোমরে গোঁজা ধারলো দাঁ আর মাথায় কেটে রাখা চারাগাছের লাকড়ির বোঝা। অন্তর্বাসহীন বস্ত্রের ফাঁকে দেখা যায় অপুষ্টির শরীর। সবাই ঝপাঝপ ফেলতে থাকে লাকড়ির বোঝা নির্মল বাবুদের গায়ে। নির্মল বাবু ঘুরে উঠে দাঁড়ায়, বলে- কী ভেবেছ, মেরে  ফেলবে। তবে মার। ভাববো এক মায়ে জন্ম দিয়েছে তো শত মায়ের হাতে মরব… যেই নির্মল বাবু এগিয়ে গেল, মহিলারা সবাই কোথায় যেন মিলে মিশে গেল। মায়েরা বোধ হয় এমনই হয় – এক সন্তানের মরণ বাঁচাতে আর এক সন্তানের ক্ষুধা ভুলে যায়। মা আর শালসিঁড়ি কত কী সয়। বিকাশ ঠোঁটে ঠোঁটে হাসে। 
অপরূপা মৃদু ধাক্কা মারে বিকাশকে। বিকাশ বুঝতে পারেনি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সোফাতে। সোফাতে আড়মোড়া ভাঙ্গে।  
- তুমি এই সময়ে হাসতে পারছ!  
- কী?
- হ্যাঁ গো। তুমি ঠোঁটে ঠোঁটে হাসছিলে। 
- এই রকম হয় হয়তো। দুর্বল মুহূর্তে অবচেতন মন জাগ্রত হয়ে উঠে। কি সব স্বপ্ন দেখছিলাম। মাধুরী কী  করছে।
- এখন ঘুমাচ্ছে। একদম ভেঙ্গে পড়েছে। 
- উঠলে বলবে, এক বার থানায় যেতে হবে।   
খবরের কাগজের স্থানীয় পাতায় গতকালের অপূর্বর ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে খবর বেরিয়েছে।  বিকাশের বন্ধুরা  সব খবর নিচ্ছে। যে যার মত সাহায্যের কথা বলছে। এর মধ্যে দুলালবাবুর ফোন আসে। 
- বল দুলাল কী খবর। তোমাদের এলাকার খবর সব ঠিক আছে?
- স্যার, একটা ভালো লীড পাওয়া গেছে। রেইড করতে হবে। আপনি থাকলে ভালো হয়। উপর থেকে আপনার সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। আপনার কাছে খবর যাবে।  
- হুম। ঠিক আছে। লীডকে ক্রস করে রেখো…
অপরূপা জানালা খুলে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়। শালসিঁড়ি আছে বলেই তো বিশুদ্ধ বাতাস আসে। ভাবে- শালসিঁড়ির সৈনিকের বৌ হয়ে সে কী করে বাতাস বাঁধে। ভালোবাসাকে মুক্তি দিয়েছে শালসিঁড়ির দেশে গাছে গাছে। সেদিনের গাউরের জন্য গলাভাত তারপর থেকে জীবন বয়ে চলে জলে, পড়ে থাকে সুস্বাদু খাবার সব আর বসন্ত বিলাস; বসন্ত বাতাস গায়ে লাগে না কত কাল কজের জ্যাকেটের কড়াকড়ির জন্য - মন কাঁদলেও অপরূপা হাসি মুখে বলে-    
- রেডি হয়ে নাও, চা দিতে বলছি। 
মাধুরী থানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সই করে। ইনস্যুরেন্স এজেন্ট কথা বলে নেয়। মাধুরী অপূর্বর মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপের খোঁজ করে। অফিসার বলে- 
- দুর্ঘটনার পর আমরা যখন পৌঁছাই, সেখানে অনেক লোকজন ছিল। ওখানে কোন কিছু পাওয়া যায়নি।
- আফিসার, ঘটনাটি সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন? বিকাশ জিজ্ঞাসা করে।
- ঘটনাটি যেখনে ঘটেছে সেখানে রাস্তার বাঁ পাশে ইটের একটা স্তূপ ছিল। সেইখানে রাস্তার পাশে একটা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেই বাড়ির মালিক রাস্তায় বিকট শব্দ শুনে বের হয়। ততক্ষণে আশে পাশের আরো কিছু লোকজন এসে যায়। কেউ বলে সামনে থেকে একটা ট্রাক ধাক্কা মেরেছে কেউ বলে পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছে। আসলে কেউ দেখেনি কী ঘটেছিল। যে যার মত ভেবে বলছে। গ্রামের লোকজন প্রথমে অপূর্বকে টেনে টেনে বার করার চেষ্টা করে ছিল। কিন্ত এমন ভেবে চেপে ছিল যে কেউ সাহস করে বার করতে পারেনি। সবাই  ভেবে ছিল অপূর্ববাবু আর নেই। তারপর ঐ বাড়ির মালিক থানায় ফোন করে, আমরা গিয়ে ওনাকে উদ্ধার করি।  
- কিন্তু অফিসার, অপূর্বর মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ কোথায় গেল। যদি নিছক দুর্ঘটনা হবে, তবে তো এই গ্যজেটগুলো ওখানে পড়ে থাকত। 
- বিকাশ বাবু! এখন মানুষ আর মানুষ নেই। গ্যাজেট কী, শবের পকেট থেকে টাকা ছিনতাই করে নেয়। আপনাদের ভাগ্য ভাল যে অপূর্ববাবুর পার্স এবং টাকা মনে হয় সব ঠিক আছে। অফিসার অপূর্বর পার্সটি এগিয়ে দেয় মাধুরীকে। 
বিকাশ অপূর্বর পার্স নিয়ে নিজের কাছে রাখে। এটা যেন শুধু পার্স নয়, একটা জীবনের দায়িত্ব তুলে নেয় নিজের থেকে। এই পার্সে টাকার মূল্য থেকে বেশি মূল্যবান হলো – বিশ্বাস। বিকাশ খোঁজে প্রধান মূল – রুদ্রপলাশের মতো। অপূর্বর  জীবনের যা কিছু আছে গচ্ছিত, যা কিছু আছে আভরণ সব ত্যাগ করে তার পরিবর্তে আসুক তীব্র টান- মূলের। বিকাশ আবার মাটি চায় পাতা চায় ফুল চায়, চায় বসন্ত- মাধুরীর জীবনে। শালসিঁড়ির সৈনিকদের কাজ তো এই। মাটি ধরো জল ভরো গাছ তোল ফুল ফোটাও ফল ফলাও। বিকাশ বলে-  
- অফিসার সে সব ঠিক আছে, কিন্তু অপূর্বর মোবাইল এবং ল্যাপটপ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
- কেন আপনারা কী কিছু সন্দেহ করছেন? 
- না, সে রকম কিছু নয়। তবে কিছু দিন ধরে অপূর্ব খুব অস্থির ছিল। মাঝে মধ্যে বলত “ আমাকে সরানোর ব্লু-প্রিন্ট হচ্ছে” মাধুরী বলে। 
- তাই? 
- হ্যাঁ অফিসার। তাই বলছিলাম অপূর্বর মোবাইল ও ল্যাপটপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
- ঠিক আছে, তদন্তে যাচ্ছে আমার অফিসার। বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখা হবে। 
- আর একটি কথা অফিসার- বিকাশ বলে।
- বলুন।  
- যে গ্রামবাসিটি প্রথম ফোন করেছিল তার নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে যদি সাহায্য করেন। 
- নাম এখনও জানা যায় নি। আমার অফিসার তদন্তে গেলে সব বেরিয়ে আসবে।  
- ফোন নম্বর। 
- কল লিস্ট দেখে বলছি। 
বিকাশ মাধুরী ফোন নম্বর নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। অপরূপা অংশু ময়ূখ সবার চোখে প্রশ্ন ভাসে। বিকাশ অংশু ময়ূখকে বুকে টেনে নিয়ে চুলে বিলুনি কেটে দেয়। মাধুরী গাছের মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে ঘরের উৎকন্ঠার উত্তাপ আত্তীকরণ করে স্বাভাবিক করে দেয় ঘরের পরিবেশ। বলে- অংশু ময়ূখ তোমরা খেয়েছ? অংশু বিকাশের বুক থেকে ছুটে যায় মাধুরী বুকে- যেন পাখি এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে গিয়ে বসে… মা… বাবা কবে বাড়ি আসবে?

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri