নানা রঙের গানগুলি-২২/শৌভিক কুন্ডা
নানা রঙের গানগুলি (২২)
শৌভিক কুন্ডা
--------------------------------
বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ড হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়েছিলো, তখন আমার বয়স মাত্র ৫ দিন। সুতরাং, যা লিখছি, সেটা অবশ্যই পাঠের মাধ্যমে জানা। চিঠির তারিখ পেরিয়ে আরও পঁচিশ/তিরিশ বছর পরে জেনেছি। দুটো গান, রবীন্দ্রনাথের গান বিষয়ে। গায়ককে আবার করে গাইতে হবে, এই ফরমান দিয়ে। "এসেছিলে তবু আসো নাই" গানে যন্ত্রানুসঙ্গ বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে, "মেঘ বলেছে যাবো, যাবো" গানটির দোষ অতিরিক্ত নাটুকে উপস্থাপনা!
একই ধরনের অভিযোগ আবার ১৯৬৯এও। এবারের যন্ত্রপীড়িত(!) গানটি "পুষ্প দিয়ে মারো যারে"। আর " তোমার শেষের গানের রেশ" কেবল যন্ত্রানুসঙ্গেই নয়, টেম্পোর দ্রুততা এমনকি স্বরলিপিভ্রষ্টতার দোষে দুষ্ট।
হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেও বিশ্বভারতীর ব্রাত্য করে রাখা গায়কের নাম দেবব্রত বিশ্বাস। বাঙালির জর্জ বিশ্বাস। "পুষ্প দিয়ে মারো যারে" তাঁর গলায় শোনার সৌভাগ্য আমার হয় নি। বাকি তিনটি, যে কোনো সময়ে, যে কোনো সঙ্গীতশিল্পীর তুলনায়, জর্জ বিশ্বাসের গায়কীই শুনবো আমি।
তাঁর গাওয়া সব গানই কি আর শুনেছি? যা যা শুনতে পাই নি, আক্ষেপ রয়ে গেছে তাদের মধ্যে একটিকে নিয়ে। রেকর্ডে সে গানকে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এই ধারাবাহিকের কোনো একটা পর্বে লিখেওছিলাম সে কথা। সেদিন যেটা লিখি নি, সমকালীন শ্রোতাদের কাছে কিন্তু "অবাক পৃথিবী, অবাক করলে তুমি" গানটিকে পরিচিত এবং প্রিয় করে তুলেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসই প্রথম। তবে রেকর্ডের মাধ্যমে ঘরে ঘরে নয়। মাঠে ঘাটে। খোলা আকাশের নীচে, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গণনাট্য সংঘের সভায় সভায়। সলিল চৌধুরীর নাকি জর্জ বিশ্বাসকে দিয়েই গানটি রেকর্ড করানোর পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু, ঐ, টেকনিক্যালিটি, অন্য কোনো! "অবাক পৃথিবী" আর এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হেমন্তেরই চিরস্থায়ী হয়ে রইলো।
দেবব্রত বিশ্বাসের মতো লড়াই, বিশেষ করে রবীন্দ্র সঙ্গীতের জগতে, আর কোনো শিল্পীকে করতে হয়েছে? স্রেফ গান গাওয়ার ইচ্ছেতে? অহংকার ছিলো তাঁর। রুদ্ধদ্বার নিয়ন্ত্রকদের কাছে মাথা নীচু করবেন না। নাকি অভিমান? হয়তো একই সংবেদের দুই নাম। মাথা নীচু না করাতে যদি অহংকারের কথা আসে, তবে আমার অন্যতম প্রিয় আরেকটির ক্ষেত্রে, যে গান কেবল দেবব্রত বিশ্বাসই গাইতে পারতেন, গেয়েছেন, প্রতিটি উচ্চারণে, শ্বাসাঘাতে সেখানে অভিমান মিশে থাকেনি?
"ক্যারে হ্যারায় আমারে
গাইতায় দিলো না
আমি বুঝতাম পারলাম না
এই কথাডা ত
ব্যাবাগের আছে জানা
জাইন্যা হুইন্যাও কেউ কিছু
রা'ও করে না........"
এ অভিমানী কিন্নরের জন্ম তারিখ গেল দু'দিন আগে। তাঁকে প্রণাম।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴