সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

07-December,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 445

চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব-২২
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^

 'হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ'

-'এসান রাদিন হো কাকি...? ' (কোথায় গেলে গো কাকি)... গলার স্বর সুরে খেলিয়ে ডাক দেয় ন্যান্সি। কোনও সাড়া নেই। 

-' ভিত্রে রাদিন কা মাল্লা... ? '( ভেতরে আছো কি নেই গো,) এবারে আরেকটু স্বর চড়াতেই ভেতর থেকে যে বউটি বেরিয়ে আসে তার মুখটা বেশ চেনা। নামটা পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছিল না কিছুতেই সুবর্ণর। 

-ইজ্জু বারহা, ইবরার নিঙহা সাঙে কাথা মানো বেদ্দাস.... (এদিকে এসো, এরা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। ' ) 

বউটি তার ভেজা হাতদুটো আঁচলে মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে সুবর্ণর দিকে চোখ পড়তেই একগাল হাসে। মায়াবি কালো মুখের মিষ্টি আদলে ঝকঝকে সাদা দাঁতের ঝলক তুলে বলে 'এ-য়ে-য়ে আইজ তো গোদামবাবু হামার ঘরে মৈমান আয় যাহে... ' (গোদামবাবু তো  আজ দেখছি আমার বাড়িতে অতিথি এসেছেন) 

সুবর্ণ হাসি ফিরিয়ে দিয়ে বলে, ' আ-লো জুন। মৈমান মনকে বৈঠেক নি কহবা? '

(এলাম তো, অতিথিদের বসতেও বলবে না) ! শুনে ঝলমলে হাসি যেন সলজ্জ হয়। 

-' এক ছিন পঠরাবে বাবু, তোহিন লে কুর্শি লাইন দেথো।' একটু দাঁড়াও, তোমাদের জন্য চেয়ার এনে দিচ্ছি...বলে বউটি কাউকে ডাকে, ' জু-লি, জু-লি, এ- মাঈ.. ' ডাক শুনে বছর দশেকের ফ্রক পরা একটি মেয়ে ঘরের পেছন থেকে দৌড়ে আসে। সেখানে বাচ্চাদের শোরগোল। খেলছিল বোধহয়। বাচ্চাটাকে নিজেদের ভাষায় কিছু একটা নির্দেশ দিতেই সে ছুটে ঘরের ভেতরে চলে যায়। 

-এটা কোন ভাষা?' শ্রাবস্তী প্রশ্ন করে। 

-'কোনটা? যেটা আমি বললাম, না যেটা ন্যান্সি বলল? '

-' আপনি তো সাদোরিতে বলছিলেন... '

-' সাদোরি নয়, সাদ্রি। '

-' হ্যাঁ, সাদ্রি...এই ভাষাতে বিজনদাকেও একজনের সাথে কথা বলতে দেখলাম। সাদ্রি নাকি চা বাগানের আদিবাসীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ভাষা? বিজনদা বলছিলেন। 
আর যেটা ন্যান্সি বলছিল ওটা আমি জানি।'

-'আপনি জানেন!! ' সুবর্ণ বিস্মিত হয়, 'এত বছর চা-বাগানে থেকেও আমি কেবল ভাঙা ভাঙা দু চারটে বাক্য বলতে পারি। কিছু বুঝতেও পারি। কিন্তু আপনি কুরুখ শিখলেন কোথায়?'

-'ভুল বললাম... জানি বলতে, আমি শুনেছি। খুব ছোটবেলায়। জুজি বলত, ওর মায়ের সাথে। '

'জুজি কে?' সুবর্ণ কৌতূহলী হয়। ততক্ষণে মেয়েটা তিনটে চেয়ার এনে পেতে দিয়েছে উঠোনে। ন্যান্সি ডাক দেয়, 
-'আসুন স্যার। বসুন। ম্যাডাম, প্লিজ বসুন। আপনার হয়ত একটু অসুবিধে হবে। '

-'তোমাকে না বলেছি ন্যান্সি, আমাকে স্যার বলবে না। আঙ্কেল কিংবা কাকু বললে খুশি হব। ভিক্টরদা, তোমার বাবাকে আমি দাদা বলি।'

-'ওটা যে বের হয়ে যায় স্যার...সরি, ঠিক আছে আঙ্কেল-ই বলব এখন থেকে।' ন্যান্সি হাসে। 

-' বাঃ, উনি আঙ্কেল হয়ে গেলেন, আর আমি ম্যাডাম! দিজ ইজ টু মাচ আনফেয়ার ন্যান্সি। আমাকে দিদি বলতে পার সচ্ছন্দে।' শ্রাবস্তীর কথা শুনে লজ্জা মাখানো হাসি ফোটে ন্যান্সির ঠোঁটে। 

নীলপাহাড়ির অফিস বৈদার ভিক্টর টেটের ছোট মেয়ে ন্যান্সি। আই সি ডি এস কর্মী। পঞ্চায়েত মেম্বার। ভাল ফুটবল খেলত বাপের মতো। একটু ডাকবুকো টাইপ। একসময় ডুয়ার্সে ভিক্টর টেটেকে কে না চিনত। নীলপাহাড়িকে তিন তিনবার ইন্টার ডুয়ার্স ফুটবল চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে ভিক্টরের পা দুটোর অবদান আজও ভোলেনি নীলপাহাড়ির মানুষ। ডুয়ার্স ইলেভেনের অটোমেটিক চয়েস ছিল 'স্ট্রাইকার' ভিক্টর। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির ক্লাবগুলো গাড়ি পাঠাত তাকে নিয়ে যেতে। জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাবে ইস্টার্ন-রেল বনাম ডুয়ার্স ইলেভেনের খেলায় ভিক্টর টেটের খেলা দেখে পি. কে ব্যানার্জী নাকি অফার দিয়েছিলেন কলকাতায় যাওয়ার। সেখানে থাকা, খাওয়া, চাকরি সব করে দেবেন। রাজি হয়েও পরে পিছিয়ে আসে ভিক্টর। সুধাময় যে কারণে ভীষণ ক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। ভিক্টর ছিল সুধাময়ের ভাবশিষ্য। খেলার কথা উঠলে ভিক্টর সুবর্ণকে বলত, 'তোর বাবার মতন খালি পায়ে এত বিউটিফুল ড্রিবলিং কাউকে করতে দেখি নাই রে... কর্ণার কিক নিলে ঠিক এই রকম ধনুষের মতো বাঁইকে গোলে ঢুইকে যাইতো... ' বলে হাতের তালু বেঁকিয়ে দেখাত।  এখন ও বসে থাকে গোয়াবাড়ি লাইনের সামনে বড় রাস্তার ওপর। চোখে ভাল দেখে না। কানে কম শোনে। হাত কাঁপে। অতিরিক্ত মদ্যপান। যে আসক্তি তাকে সোনালী দিনের হাতছানি ভুলিয়ে টেনে নিয়েছিল অন্ধকারে, আজ অশক্ত, দুর্বল করে ফেলেছে তাকে।   

ন্যান্সিও দুবার জেলা মহিলা ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছে।  এখন খেলা ছেড়ে দিলেও স্কুল মাঠে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফুটবল কোচিং দেয়। নিজের টাকায় ফুটবল কেনে। বাচ্চাদের খাবার কিনে দেয়। মাল কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে এখন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ভোটে জিতে প্রধানের পদ পেয়েও নেয়নি।  চাকরি ছাড়তে হবে বলে। অত্যাচারিত মেয়েদের পাশে দাঁড়ায়। ওদের এককাট্টা করে লাইনের ঘরে ঘরে 'হাঁড়িয়া-দারু' বন্ধ করার অভিযানে নামে। কারো ঘরে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রম হলে তাকে অর্থ সাহায্য করে। বড় এক দিদি আর ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও নিজের বিয়ে নিয়ে আপাতত ভাবছে না। 

শ্রাবস্তী যে কাজে এসেছে সে কাজে ন্যান্সিকে প্রয়োজন। ন্যান্সি বাংলা, হিন্দি, সাদ্রি, কুরুখ,  নেপালি সব ভাষাই সমান ভাল বলে। তাছাড়া ও থাকলে মেয়েরা খুব সহজে অকপট হতে পারবে। সুবর্ণ বাগানের বাবু। বাবুদের সামনে কোনও মহিলা শ্রমিকই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেকে মেলে ধরতে চাইবে না। সংকোচ বোধ করবে। যেজন্য ন্যান্সিকে খবর দিয়েছিল সুবর্ণ। ন্যান্সি এলে তাকে সব বুঝিয়ে দিতেই ও বেশ আগ্রহ দেখিয়ে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল। 

শ্রাবস্তী মোবাইলের রেকর্ডার অন করার আগে ন্যান্সি ওর মাতৃভাষায় বউটিকে সব বুঝিয়ে দেয়। শ্রাবস্তী ওকে বিশদে বোঝায় সে কী জানতে চাইছে, কেন জানতে চাইছে, কী উদ্দেশ্য তার । মন দিয়ে শুনে ন্যান্সি সেই সহজ, অনিবার্য, ন্যায্য প্রশ্নটাই করেছিল, 

-'ম্যাডাম, একটা কথা বলব, মাইন্ড করবেন না প্লিজ। আসলে আমি একটু স্ট্রেটকাট কথা বলি। আপনার খারাপ লাগতে পারে শুনতে।'

-' না-না, তা কেন। মনে কোনও প্রশ্ন এলে নিশ্চয়ই বলবে। জানতে চাওয়া তো কোনও অপরাধ নয়।' শ্রাবস্তী বলে। 

-'এই যে আপনি এই কাজটা করবেন, চা-বাগানের মহিলা লেবারদের কথা লিখে প্রজেক্ট পেপার জমা দেবেন, আপনার তাতে নিশ্চয়ই লাভ আছে। কিন্তু ওদের কী তাতে কোনও উপকার হবে বলেন তো?'

একটু ভেবে নিয়ে মিষ্টি করে হেসে শ্রাবস্তী উত্তর দেয়, ' উপকার বলতে এক্ষেত্রে তুমি কি মিন করছ জানি না। তবে তাৎক্ষণিকভাবে  হয়ত কিছুই হবে না। মানে আমি লিখে কাগজ জমা দিলাম আর পরদিনই চা বাগানের মহিলাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। আমার আগে এ ধরনের কাজ আরও অনেকে হয়ত করেছে। আর এসব কাজের ওপর ভিত্তি করেই নানান সমীক্ষা হয়। সরকার যখন কোনও পরিকল্পনা তৈরি করতে গেলে কমিটি গঠন করে সেই কমিটি কিছু তথ্য খোঁজে। আর সেসব তথ্য তারা এ ধরনের কাজকর্ম ঘেঁটে জোগাড় করে নেয়।'

ন্যান্সি আর কথা বাড়ায় না। শ্রাবস্তী ইন্টারভিউ শুরু করে। তার আগে মোবাইলে বেশ কিছু ছবি তোলে। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ঘরটার। বউটাকে ঘরের দরজায় বসিয়ে। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। 

-'আপকা নাম?' শ্রাবস্তী প্রশ্ন করে। 

- আঞ্জেলা কুজুর।' শুনেই সুবর্ণর চট করে নামটা মনে পড়ে যায়। 
চাকরি জীবনের প্রথম দিকে কিছুদিন অফিসে কাজ করতে হয়েছিল। সেসময় কাঁচা পাতা ওজন করতে ফিল্ডে যেতে হত সুবর্ণকে।  অ্যাঞ্জেলাকে রোজ চোখে পড়ত তখন। পাতা ওজন করতে এসে 'ওজন-চিঠা'র কাগজটা হাতে নিয়ে মাথায় লটকানো  পাতা বোঝাই নাইলন-ব্যাগের হাতল দুটোর চাপে ঝুঁকে পড়া ঘাড় বেঁকিয়ে অ্যাঞ্জেলা লাজুক চোখে তাকাত। দুপুরের ওজনে ক্রেশ থেকে বাচ্চাকে নিয়ে বুকে বেঁধে যখন ওজন দিতে আসত, ওজন শেষে ট্রাক্টরের লিফ-ট্রলিতে পাতা ঢেলে দিয়েই ওরা ছুটত পানিওয়ালার কাছ থেকে তরল-চা নিতে। দুপুরে ওদের একঘন্টার 'লাঞ্চ-ব্রেক'। এ সময় কোম্পানি ওদের জন্য ফ্যাক্টরি থেকে ট্রাক্টরে চাপিয়ে বড় বড় ড্রামে তরল লাল-চা পাঠায়। আশপাশের অনেক বাগানে এই রীতি উঠে গেলেও নীলপাহাড়িতে আজও আছে। পানিওয়ালারা সেই চা ড্রাম থেকে ঢেলে দেয় ওদের স্টিলের 'সেলটিন' অথবা প্লাসিক বোতলে। সঙ্গে এক খাবলা নুন। ঝোপঝাড় থেকে ছেঁড়া ঘেঁটু কিংবা কচু পাতায় আলাদা করে ওরা সযত্নে নুনটা নেয়। মাথার ওপর নির্দয়ী রোদ যখন ড্রাকুলার মতো শুষে নিতে থাকে ওদের শরীরের জল, ঘামের সঙ্গে যখন বেরিয়ে যেতে থাকে ওদের যাবতীয় জীবনীশক্তি, তখন চায়ে নুন মিশিয়ে ওরা ফিরে পায় জীবন। তেমনি কখনও মরণকেও ডাক পাঠায় অজান্তেই। ক্রমাগত নুন-চা খেতে খেতে কখন যে ধমনী স্রোতে বয়ে চলা জীবনরস হঠাৎ বিদ্রোহ করে ওঠে টের পায় না। প্লাস্টিকের বোতল হয়েছে হালে। আগে চোখে পড়ত অরেঞ্জ স্কোয়াশ অথবা ভুটানী মদের কাঁচের বোতল। ছিপি হারানো বোতলের মুখগুলি আটকানো থাকত খেয়ে নিঃশেষিত পোড়ানো ভুট্টার 'ভূতি' কর্কের মত চেপে। গুদরি বাজারে হাঁড়িয়ার দোকানেও সাদা তরল ভর্তি এমন বোতল সারসার দাঁড়িয়ে থাকত 'ভূট্টা-ভূতি'র মুকুট মাথায় নিয়ে। 

স্টিলের ডাব্বা, যাকে ওরা বলে ' সিলটিন' যেটা স্টেনলেস স্টিলের অপভ্রংশ  কিনা আজও বোঝেনি সুবর্ণ, সেটা খুলে ওরা বের করে রুটি। কেউ কেউ ভাত। সঙ্গে ঝাঁঝালো রসুনের গন্ধযুক্ত মটরের ঘুগনি, শীতে রাইশাক ভাজা কখনও বা 'আলু-সবজি' ।  বাচ্চার ভেজা কাপড় পাল্টে কোলে নিয়ে অ্যাঞ্জেলা আড়াল খুঁজে বসত বুকের দুধ দিতে। সেই বাচ্চাটাই বোধহয় ঐ জুলি। 

-'উমর? '

বয়স বলতে গিয়ে হেসে ফেলে আঞ্জেলা, 'উ-ম-র, পঁয়তিশ, চালিশ হোগা। আধার কার্ড মে হ্যায়.. লা দেগা?'

-'নেহি চাহিয়ে' শ্রাবস্তী আস্বস্ত করে তাকে, 'আপকা জনম ইস হি গার্ডেন মে হুয়া থা?'

' নেহি, মেরা জনম কিলকোট বাগান। সাদি হোকে ইস বাগান মে আয়ি হুঁ।'

একটু্ একটু করে প্রশ্ন থেকে প্রশ্নান্তরে যেতে থাকে শ্রাবস্তী।  দূরে বসে সুবর্ণ লক্ষ্য করে অ্যাঞ্জেলার কথাগুলো শুনতে শুনতে নানা রঙের মেঘ ছায়া ফেলছে শ্রাবস্তীর গমরঙা মুখের পাতলা ত্বকে। চাপা প্রত্যয়ী ঠোঁট, ধারালো চিবুক ও দৃঢ় চোয়ালের ভাষা বারবার ফুটে উঠছে ঘন কালো চোখের তারায়। কখনও সেখানে বাদলমেঘের ছায়া, কখনও বৃষ্টি শেষের নীল বন্যার উচ্ছাস। আর সেই উচ্ছাস ঝলক দিচ্ছে তখনই যখন পাশ থেকে ন্যান্সি অ্যাঞ্জেলাদের সমবেত প্রতিবাদে অন্যায় রুখে দেয়ার দু একটা উদাহরণ তুলে ধরছে। 

মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি ভীষণ সজাগ। ওরা ঠিক বুঝতে পারে কে তাদের দিকে অপাঙ্গে চেয়ে আছে, কে সরাসরি। কার চোখে পাপ, কার দৃষ্টি সহজ। কিন্তু শ্রাবস্তী এই মুহূর্তে ইন্টারভিউয়ে নিজেকে এতটাই ডুবিয়ে দিয়েছে কোনও দিকে তার দৃষ্টি সরছে না। আবার এমনও হতে পারে সুবর্ণ যে তাকেই দেখছে সেটা বুঝেও আপাতত পাত্তা দিচ্ছে না মোটেই। মনে একটা অপরাধ বোধ মাথায় হাল্কা চাড়া দিলেও পুরুষের অপাঙ্গে 'মেয়েদেখা'-র সহজাত প্রবৃত্তিটা মোটেই দমন করতে পারে না সুবর্ণ। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করে, আচ্ছা এমন ভাবে একটা সুন্দরী মেয়েকে সে শেষ কবে নীরবে 'ঝারি' মেরেছে? মনে পড়ছে না। কলেজ জীবনের এই 'ঝারি-মারা' শব্দটাও চা-বাগানের মরুভূমি সদৃশ জীবনে আটকা পড়ে কেমন যেন ছ্যাতা পড়ে ন্যাতা মেরে গেছে। অথচ চিরকেলে মিতবাক, মেয়ে দেখলে কথা এলোমেলো হয়ে যাওয়া সুবর্ণর নীরব চোখের ভাষায় নাকি এমন কিছু একটা ছিল, যা তূর্ণার মত দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মেয়েকেও ঘায়েল করে ফেলেছিল। 

'তোমার এই নিরীহ মায়া মায়া চোখের গভীরে ঐ মারাত্মক চোরা ব্যাপারটা না থাকলে থোড়াই তোমার প্রেমে পড়তাম। ওটাই যে মেরে ফেলেছিল আমায়।'

-'ঐ মারাত্মক, চোরা ব্যাপারটা কী, জান্। একটু বল না শুনি।' বেশ একটু মোলায়েম আদুরে গলায় শুনতে চেয়েছিল সুবর্ণ। 

-' এখন আর নেই। হারিয়ে গেছে। সুতরাং শুনেও আর কাজ নেই।' বলেই সরে পড়তে যাচ্ছিল তূর্ণা। সুবর্ণ চট করে হাতটা চেপে ধরে। কাছে টেনে নিয়ে কপট কাঁদোকাঁদো গলায় বলে ওঠে, 

-'সে- কি! নেই! কী সাঙ্ঘাতিক! আমি কী তবে এই প্রেমের কুরুক্ষেত্রে শস্ত্রহীণ কৌরব, ইয়ে মানে পান্ডব, না-না পান্ডব কেন হবে ...দূচ্ছাই কে যেন...যুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল... এই...এইসব মাইথোলজিক্যাল ব্যাপারগুলো না তুমি ভাল জানো।  কে যেন...? বল না একটু জান্।' আদুরে আব্দারে গলায়  সুবর্ণ জানতে চায় । 

হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে ঘন চাহনি মেলে একদৃষ্টে তাকিয়ে তূর্ণা বলে, 'কৃষ্ণ। আর তুমি মোটেই সেই কৃষ্ণ নও। '

-' তাহলে আমি কি-ইইই! ' আর্ত মানুষের মতো শুনিয়েছিল সুবর্ণর গলাটা। 
-'তুমি আস্ত একটা ঘটোৎকচ।' বলেই হাসতে হাসতে সটকে পড়েছিল তূর্ণা। 

বৃষ্টি ভেজা সন্ধেয় খোলা জানালার বাইরে তাকিয়ে সেদিন সুবর্ণর মনে পড়ছিল সেই বৃষ্টি ভেজা সন্ধেটার কথা। হস্টেলের মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট লেগেছিল। সিনবোন ফুলে ঢোল। বোঝা যাচ্ছে না ভেঙেছে কিনা। রুমমেট তীর্থদা রিক্সায় বসিয়ে ছুটেছিল হাসপাতালে। রিক্সা থেকে পাঁজাকোলা করে নামিয়ে এমারজেন্সির বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে গেছিল ডাক্তারের খোঁজে। ঠিক সেই মুহুর্তে এক জন মাঝবয়েসি ভদ্রলোককে স্ট্রেচারে শুইয়ে ভেতরে ঢোকানো হল। পেছন পেছন উদভ্রান্তের মতো একটি মেয়ে। ভদ্রলোকের পায়ের কাছে অনেকটা রক্তের দাগ। থেতলে গুঁড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছিল। জ্ঞান নেই । মেয়েটি ঢুকেই পাগলের মতো ছুটে গেল 'ডাক্তার কোথায়, ডাক্তার কোথায়' বলতে বলতে। একটু বাদেই ডাক্তার এলেন। পরীক্ষা করে ভর্তি হতে বললেন। ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে। রক্তের প্রয়োজন। ব্লাড গ্রুপ জানতে চাওয়ায় মেয়েটি জানাল ও-পজেটিভ। জানা গেল স্কুটারে বাড়ি ফিরছিলেন। পেছন থেকে ম্যাটাডর ধাক্কা মেরে পায়ের ওপর দিয়ে চলে গেছে। ভদ্রলোককে ভর্তি করা হল। ততক্ষণে সুবর্ণর এক্স-রে হয়ে গেছিল। ভাঙেনি। ক্রেপ ব্যান্ডেজ  বাঁধতে বলে একটা পেন কিলার, অ্যান্টাসিড আর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট লিখে ছেড়ে দিলেন ডাক্তার। 

তীর্থদা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিল, 'চল্ এবার। কদিন বিছানায় লটকে  থাক্। ক্লাস-ফাস বন্ধ। অন্তত সাতদিন রেস্ট নে।'

সুবর্ণর মাথায় ঢুকছিল না কিছুই। মেয়েটির অসহায় মুখ চোখে ভাসছিল। হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, 'যাব? কিন্তু মেয়েটা..।'

-'কোন মেয়েটা? '
-'ওই যে যার বাবাকে এইমাত্র ভর্তি করল। অ্যাক্সিডেন্ট কেস। অপারেশন করতে ব্লাড লাগবে বলছিল...'
-'তাতে তোর কী। চল..' তীর্থদা অস্থির হয়। 
-'প্লিজ, তীর্থদা, দেখো না। মনে হল মেয়েটা একা। সঙ্গে কেউ নেই।'
কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে তীর্থদা বলেছিল, 'ওরে শালা, তোর আবার এক দেখাতেই দরদ উথলে উঠল দেখছি। দাঁড়া দেখে আসি।'

খানিক বাদে প্রায় নাড়িনক্ষত্র জেনে তীর্থদা ফিরেছিল। মেয়েটা সত্যিই একা। মা নেই। বাবা আর ছোট বোনকে নিয়ে আদরপাড়ায় থাকে। বাবার ছোটখাটো ব্যবসা। হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছে। বোন ক্লাস নাইনে। শহরে দু একজন আত্মীয় যারা আছে তাদের খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলেই রক্তের জোগাড় হবে। তীর্থদা তাড়া দিচ্ছিল, 'চল এবার, শুনলি তো সব। আত্মীয় স্বজন আছে। চলে আসবে একটু বাদেই। আমাদের এসবে না জড়ানোই ভাল।' বলে সুবর্ণর হাত ধরে টান দিয়ে বলে, ' চল...'

-'তীর্থদা, আমার ও-পজেটিভ...' সুবর্ণ যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিল। 
-'মানে!' অবাক চোখ গোল আলুর মতো করে তীর্থদা বলে, 'তুই ব্লাড দিবি! এই অবস্থায়! শালা, মেয়ে দেখেছ কী... '

-'ছিঃ কী বলছ এসব...একটা বাচ্চা মেয়ে, বিপদে পড়েছে.. আর তুমি বলছ...' বলতে বলতে নজরে পড়ে মেয়েটা ওপর তলা থেকে নেমে এসে গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। থেকে থেকে আঙুল মটকাচ্ছে। টেনসড দেখাচ্ছে ভীষণ। 

-'তীর্থদা, প্লিজ দেখো না।'
তীর্থদা চলে যায়। দূর থেকে সুবর্ণ দেখে মেয়েটার মুখে বিরক্তির ছাপ। খানিক বাদে অভিব্যক্তি কিছুটা নরম দেখায়। মেয়েটাকে সঙ্গে করে তীর্থদা ফেরে। সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা প্রশ্ন করে, 'আপনি রক্ত দেবেন? '
-'হ্যাঁ, '
-'কেন? ' কঠিন চোখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় মেয়েটা। 
'না, মা-মানে, শুনলাম ও-পজেটিভ, তাই আর কি...' কথা গুবলেট হয়ে  যাচ্ছিল সুবর্ণর। 
-'শুনলেন আর ঠিক করে ফেললেন দেবেন! আপনি কি আমাদের চেনেন, না সমাজ সেবক! দ্বিতীয়টা হলে অবশ্য অন্য কথা। তাছাড়া উপকার করার জন্য এত ছটফট করছেন কেন। দাদাদের খবর দেওয়া হয়েছে। ওরা গেছে ব্লাড জোগাড় করতে।'

হতভম্ব হয়ে হাঁ করে সেই 'মারাত্মক' শূণ্য দৃষ্টিটা মেলে মেয়েটার দিকে চেয়েছিল সুবর্ণ। মেয়েটা কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। কাব্য করে বলা যায় যেন 'নম্র নেত্রপাতে'। তারপর নিজের নিচের ঠোঁটে আলতো কামড় দিয়ে দ্রুত চোখ নামিয়ে চলে যায় গেটের দিকে। তীর্থদা মিটমিট করে হাসছিল। 

-'কি রে, হল তো, কেমন 'ঠাসি' টা খেলি। জায়গা বুঝে খাপ খুলো চাঁদ। কাঁচা বয়স তোমার।' বলে ফ্যা-ফ্যা করে হাসতে থাকে। 
'তুই বস, আমি রিক্সা ডেকে আনি।' বলে তীর্থদা চলে যায়। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। খানিক বাদে ফিরে এসে বলে, 'ক্যাচাল- কেস রে ভাই। হাসপাতালের সামনে জল থইথই। রিক্সা একটাও নাই। বৃষ্টি না থামা অবধি থাকো বসে এখন। চা খাবি?' মুড ছিল না চা খাবার। বাইরের দিকে তাকিয়ে মনটা আষাঢ় করে বসে ছিল সুবর্ণ। বিরক্তিকর মুহুর্তগুলো ঝরে যাচ্ছিল ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টির মতো। 

বৃষ্টিটা একটু ধরতেই তীর্থদা গেছিল রিক্সা আনতে। রিক্সা এনে সুবর্ণকে বলে, 'নে ওঠ, একটু হাঁটার চেষ্টা কর। পারবি তো? '
তীর্থদা র কাঁধে ভর দিয়ে দু'পা এগিয়েছে কি এগোয়নি, পেছন থেকে কেউ ডাকে, 'এই যে শুনছেন'। সেই মেয়েটি! 

-'আপনি ব্লাড দেবেন বলছিলেন না? '
সুবর্ণ মুখ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, 'হ্যাঁ, বলেছিলাম, কিন্তু মত পাল্টে ফেলেছি।'  তার বদলে মিনমিনে উত্তর বেরোয় ' হ্যাঁ, আমিই...কিন্তু...'

- দেখুন, ডাক্তার বলছে এক্ষুনি রক্তের প্রয়োজন। তাড়াতাড়ি অপারেশন না হলে পাটা অ্যাম্পুট করতে হতে পারে। '

- 'কেন আপনার দাদারা? তাদের কী হল, আসেনি?' তীর্থদা বেশ একটু রুক্ষ গলা চড়ায়। 

মেয়েটি একটু  দমে গেলেও হারে না, 'তাহলে কি আর বলতাম। এই বৃষ্টির মধ্যে হয়ত কোথাও আটকা পড়েছে। আসতে পারছে না। নেহাৎ আপনারা বলেছিলেন তাই.. নইলে...' বলে মায়া মায়া দৃষ্টিতে সুবর্ণকে বিদ্ধ করে। 

- 'তীর্থদা, আমি রক্ত দেব।' ঘায়েল সুবর্ণ যেন আর্তনাদ করে উঠেছিল। কথাটা শুনে মনে হল যেন মেঘ সরে গিয়ে রোদ ছড়াল মেয়েটির মুখে। 

তারপর রক্ত দিয়ে চলে আসা। এর মধ্যে তীর্থদা জেনে এসেছিল মেয়েটির বাবার অপারেশন ভাল হয়েছে। কদিন বাদেই ছেড়ে দেবে। পা সেরে ওঠার পর সাইকেল ঠেঙিয়ে একা একা ঠিকানা খুঁজে ওদের বাড়ি যাওয়া। কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে ক্রমশঃ গভীরতর হল আলাপ। আলাপ থেকে প্রেম। প্রেম থেকে বিয়ে অবধি গড়াতে আরো পাঁচটি বছর। মেয়েটি ততদিনে গ্র্যাজুয়েশন করে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াচ্ছে। আপাততঃ সব শেষে পনের বছর ধরে ঘর করছে তার সাথে। 

-চলুন আজ অনেক তথ্য জানা হল। আর যেন কোথায় নিয়ে যাবেন বলছিলেন?' টাইট ফেডেড জিন্সের ওপর কালো টপটা ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ায় শ্রাবস্তী। 

-'হ্যাঁ, সেটা কাল। পাশেই। স্বপ্নপুর  টি গার্ডেন। যেখানে আমার জন্ম। সেখানকার কিছু ইতিহাস আছে। দেখবেন কোথায় আমরা থাকতাম, এখন যেখানে ঝোপঝাড়ে ভরা ধূ-ধূ মাঠ ছাড়া কিছু নেই।'

-'সেই ভাল। তো এখন তবে কীভাবে ফিরব রিসর্টে? '

-'চিন্তা নেই। ন্যান্সি যেমন নিয়ে এসেছিল ও-ই ছেড়ে আসবে আপনাকে। আমিই যেতাম। কিন্তু আজ আবার ডিউটি আছে রাতে। বাই দি ওয়ে। কোনও অসুবিধে হয়নি তো রিসর্টে?'

-'নট অ্যাট অল। রিসর্ট-ম্যানেজার খুব অমায়িক মানুষ। কাল আপনাকে নিয়ে যাব। দুজনে চা খাব একসাথে। চা-টা যা বানায় না! দা-রু-ণ।' শ্রাবস্তী তর্জনী ও বুড়ো আঙুল গোল করে দেখায়। 

- ঠিক আছে যাব। ন্যান্সি তুমি তাহলে যাও। অসুবিধে হবে না তো?'
-না-না,আঙ্কেল নো প্রবলেম, আমি দিদিকে ছেড়ে আসব।'
ন্যান্সি স্কুটি স্টার্ট করে। শ্রাবস্তী উঠে বসে। 

- বা-ই' হাত নেড়ে ওরা চলে যায়। বাইকের কি-হোলে চাবি ঢুকিয়ে পেছন ফিরে সুবর্ণ দেখে অ্যাঞ্জেলা তখনও উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যায়। পশ্চিম দিগন্তে তখন শেষ বসন্তের অস্তরাগে সিঁদুর রাঙা হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি দিন।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri