সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-December,2022 - Friday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 508

বাগানিয়া জার্নাল-২১

বাগানিয়া জার্নাল – তৃতীয় ভাগ
পর্ব।। পাঁচ।।
শিশির রায়নাথ
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সে সময়ে উচ্চ-আসামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের সংক্ষেপে একটু জেনে নিতে হবে।
ব্রহ্মপুত্র (তিব্বতীদের Tsangpo –চিনাদের Yarlung Zangbo) বর্তমান অরুনাচলের পাসিঘাট-এ পাহাড় ছেড়ে নামে সমতলে। স্থানীয়ভাষায় সে নদীর নাম তখন ডিহং (Dihong)। তার ডান হাতে ডিবাং (Dibang) নদিও পাহাড় ছেড়ে নামে।[ছবিঃ১] তারও ডানদিকে,প্রায় নব্বই ডিগ্রি কোণ করে, ‘পরশুরাম কুন্ড’ পার করে আসে লৌহিত্য বা লোহিত।‘পরশুরাম কুন্ড’-র কথা মনে আছে তো।পরশুরাম তার বাবা ঋষি জমদগ্নির আদেশে নিজের কুড়ুল দিয়ে মা সুরমার মুন্ডচ্ছেদ করেছিলেন। সেই পাপে তার রক্তমাখা হাতে কুড়ুল আটকে যায়।পাপমুক্তির জন্য পরশুরাম এখানে এসে নদীর জলে হাত ধুলে জল লাল হয়ে যায়।তাই এর নাম লৌহিত্য/লোহিত। আর সেই কুড়ুল তখন হাত থেকে খসে পাহাড়কে দু টুকরো করে দেয়...আজও তাই লোহিত এখানে সেই পাহাড়টুকরোর দুপাশ দিয়ে বইছে।[ছবিঃ২,৩]
ডিবাং এবং লোহিত একসঙ্গে মিলেমিশে সামান্য একটু এগিয়ে ডিহং-এর সঙ্গে মিশে হল ব্রহ্মপুত্র বা ‘বুড়া লুই’।(ডিমাসা ভাষায় ‘ডিলাওঃDilao)। এই ডিবাং এবং লোহিত যে জায়গায় মিশেছে (Confluence) সে জায়গার নাম সাদিয়া (Sadiya)। সাদিয়ার একটু পূবে ওপর দিক থেকে কুন্দিল নদী আর তারও সামান্য পূবে নীচের দিক থেকে নোয়া-ডিংহি নদী এসে পড়েছে লোহিতে।
আসামে বহু জনজাতির বাস – ডিমাসা,দাফলা, মিরি,অবর,মিশমি,খামতি,সিংফো,মোরান বা মাটক, নাগা,মিকির,কাছারি,গারো ইত্যাদি ইত্যাদি। সাদিয়া থেকে উত্তরে ছিল খামতি এবং মিশমিরা। সাদিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে, নোয়া ডিহিং-এর ডানদিকে টেংগাপানি ( এখানকার ‘গোল্ডেন প্যাগোডা’ বিখ্যাত।ছবিঃ ৪) থেকে নীচের দিকে বুড়ি ডিহিং-এর পাটকাই পাহাড় পর্যন্ত ছিল সিংফোদের দেশ। সাদিয়ার উল্টোদিকে ধোলা (Dhola) থেকে নোয়া ডিহিংকে ডান হাতে রেখে বুড়ি ডিহিং পর্যন্ত ছিল মোরান বা মাটকদের দেশ যার মধ্যে পড়ে ডিব্রুগড়। মাটকদের প্রধানের নাম বরসেনাপতি এবং রাজধানী ছিল ব্যাঙমারা (এখনকার তিনসুকিয়া- প্রাচীন চ্যাঙমাই পাথার)।
বুড়িডিহাং-এর দক্ষিণ তীর থেকে নিচের দিক ছিল অসম রাজার অধীনে – যেখানে রাজবংশের অন্তর্কলহ লেগেই ছিল।তাদের তখনকার রাজধানী ছিল শিবসাগর জেলার রঙপুর। জোড়হাট ও তার কাছে গাব্রু পর্বত ছিল আসামরাজের অধীনে ।
আসামের রাজাদের অন্তর্কলহ, মাটক-বিদ্রোহ (প্রথমে তারা অহম রাজের অধীনে ছিল) এবং অন্যান্য জনজাতি ও বর্মীদের ক্রমাগত আক্রমণে পর্যুদস্ত অহমরাজারা ইংরেজদের সাহায্য চাওয়ায় ইংরেজরা বাণিজ্যের পাশাপাশি ঢুকে পড়ে আসামের রাজনীতিতে। এবং ১৮২৪ সালে বর্মীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে বর্মীদের তাড়িয়ে ২৪.২.১৮২৬-এ ইয়ান্ডাবু চুক্তির (Yandaboo Treaty) ভিতর দিয়ে তারা উচ্চ-আসাম কবজা করে।
কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা একটা অঞ্চল এবং বিদেশী শাসনের প্রতি স্থানীয় জনজাতির অসন্তোষ আঁচ করে তারা ১৯৩৩ সালে রাজা পুরন্দর সিংকে সিংহাসনে বসায়।তা সত্ত্বেও আসামের জনজাতিদের নিজেদের মধ্যে যেমন পারস্পরিক ঝগড়া-লড়াই-লুটতরাজ-গণহত্যা লেগেছিল তেমনি তাদের অসন্তোষের আগুন বৃটিশদেরও মাঝে মাঝেই পোয়াতে হয়েছে বড়সড় লুঠপাট,অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ভিতর দিয়ে – যা চলেছিল পরবর্তী বেশ কয়েক দশক ধরে।
#
১৮২৪ সালের আগে বৃটিশদের দৌড় ছিল এই সাদিয়া পর্যন্ত।[এখানেই এখন ভারতের দীর্ঘতম ব্রীজ-ছবিঃ৫]
সাদিয়ার উত্তরে, যা ছিল তখন বর্মীদের অধীনে, কোন ইউরোপীয়ানের পা পড়েনি তখনও – একমাত্র রবার্ট ব্রুস ছাড়া।রবার্ট তখন নানারকম ব্যবসা করে। বর্মী এবং স্থানীয় জনজাতিদের সঙ্গে তার খুব ভাল সম্পর্ক।ফলে, মনিরাম দত্তবড়ুয়ার সূত্র ধরে, ফালাপ খুঁজতে রবার্ট সহজেই পৌঁছতে পেরেছিল বিসা গামের কাছে।
এই পশ্চাদপটে ১৮৩৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় চা-গাছের স্বীকৃতি এবং ১৮৩৬ সালে শুরুতে টি কমিটির বৈজ্ঞানিকদলের আসামে আগমন। তারা ৫ই জানুয়ারী থেকে ৯ই মার্চ পর্যন্ত চার্লস ব্রুসের সঙ্গে পাঁচটি চা-অঞ্চল ঘুরে দ্যাখেন- কুজু (সিংফোদেশ),নিগ্রু (সিংফোদেশ),নুদ্দুয়া (মাটকদেশ), টেংরিয়া (মাটকদেশ) ও গাব্রুপর্বত (রাজা পুরন্দরসিং-এর রাজ্য)।
ড.গ্রিফিথ রিপোর্ট করেন যে চা-গাছগুলো অসম্ভব প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যবান। চারা থেকে বয়স্ক – সবরকমের চা-গাছ আছে সেখানে।লম্বায় তারা বারো ফুট থেকে কুড়ি ফুট। ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ণবয়স্ক গাছগুলো চা-বীজে ভর্তি ; এমনকি কিছু কিছু গাছে তখনও ফুল ফুটে ছিল।গাছের পুরনো পাতাগুলো খুব বড় এবং সুন্দর সবুজরঙা।
যদিও বৈজ্ঞানিকদলের সবাই আসামে জংলি চা-গাছের প্রাচুর্য, স্বাস্থ্য, বাড়বাড়ন্ত ইত্যাদি দেখে খুব সন্তুষ্ট – তবু ঠিক কোথায় পরীক্ষামূলক চা বাগান শুরু করা হবে তা নিয়ে একমত হতে পারল না। মতভেদ তো আগেই শুরু হয়েছিল। প্রথমে চিনা-চা না আসাম-চা তা নিয়ে।আসাম চা আবিষ্কার হবার পর ড.ওয়ালিচ ছিলেন আসাম চায়ের পক্ষে, ড. গ্রিফিথ চিনা-চায়ের পক্ষে। শেষে কমিটি চিনা-চায়ের পক্ষেই মত দেয়। এবার স্থান নির্বাচন নিয়ে। ড.ওয়ালিচ হিমালয় অঞ্চলের পক্ষে; ড.গ্রিফিথ ও ড.ম্যাকক্লিল্যান্ড-এর মতে হিমালয়ের চেয়ে আসাম চা-চাষের পক্ষে অনেক উপযুক্ত।
যা হোক, শেষে হিমালয়ের সঙ্গে আসামেও পরীক্ষামূলক চা বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।এবং ১৪ই এপ্রিল ১৮৩৬ সালে চার্লস ব্রুসকে আসামের চা বাগান দেখাশুনা করার জন্য মাসিক চারশ টাকায় ‘সুপারিন্‌টেন্ডেন্ট অফ টি কালচার’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সঙ্গে, তার চাহিদা মত দুজন সহকারী নিয়োগ ও দুটো হাতি কেনার অনুমতিও দেওয়া হয়।তবে, তাকে গানবোটের কম্যান্ডান্টের চাকরী থেকে পদত্যাগ করে পুরোপুরি চায়ে মনোনিবেশ করার শর্তও আরোপ করা হয় – যা চার্লস আনন্দের সঙ্গে মেনে নেয়।
চার্লস ব্রুসের এই নিয়োগ নিয়েও বৈজ্ঞানিকদলের মধ্যে তীব্র মতভেদ হয় (কে বলে সবকিছুতে মতভেদ শুধু বাঙালিদেরই চরিত্র !!!)। সে গল্প সামনের পর্বে...
------------------------------------------------------------
ছবিঃ শিশির রায়নাথ

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri