সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 473

শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-২০ 
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

মাধুরী বিকাশকে জিজ্ঞাসা করে 
- পৃথিবীর মোট জমির পরিমাণ অনুযায়ী তোমার জন্য গড়ে কতটা বাসযোগ্য জমি আছে, জান বিকাশ?
- না। 
- পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮ (আট) বিলিয়ন ধরলে মোটামুটি মাথাপিছু গড় বাসযোগ্য জমির পরিমাণ ৪.৭৮১ বিঘা বা ৯৫.৬২ কাঠা।
- পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের গড় কৃষিজমি কত? 
- জানি না।
- ১.০৩১ বিঘা বা ২০.৬২ কাঠা।
- গড় পশু চারণভূমি?
- বিকাশ নেতিবাচক ভাবে মাথা নাড়ে।
- ৩.৭৫ বিঘা বা ৭৫ কাঠা। 
- পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য গড় পেয় জলের আয়তন কত? 
- জানি না। 
- মাত্র ১৮৭.৫ বর্গ মিটার। গড় মাথাপিছু বনভূমি?
- জানি না।
- ৩.৬৫৬ বিঘা বা ৭২.১২ কাঠা। 
বিকাশ প্রশ্নগুলো শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে যায় - ঝড়ে ঝরা পাতার মতো। মিলিয়ন বিলিয়ন নয় - তথ্য তুলে ধরছে বিঘায় বা কাঠায়! এত সহজে!! মা’র কোলের শিশুকে ঝিনুক দিয়ে দুধ খাওয়ানোর মতো আন্তরিক ও সৎ। এই জলশহরের মাধুরী আর ময়নাডাঙ্গার মাধুরী কী অদ্ভুত ভাবে এত বছর পরেও এক! বিকাশ অপলক চোখে মাধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। বিকাশ মাধুরীর চোখে বিশ্ব দ্যাখে শালসিঁড়ি দ্যাখে। বিকাশ যেন হারিয়ে যায় মনের অ্যামাজনে …  
- তোমার হাতে ওটা কী ফুল।
- জানি না, ময়না ঝোরার ওপারের ওরা বলল - লালভান্ডি…  
- আর সাদা ফুলগুলো ? 
- হি হি এটাও জাননা? বাবা বলেন - বন জুঁই। ওরা বলল - ঘেঁটু।   
লাল ফ্রক পরিহিতা মাধুরীর পা হাঁটু পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়েছে ময়না ঝোরার জল। ভেজা পায়ের ছাপ পড়ছিল মাটির রাস্তার ধুলোর উপর। সেই পায়ের ছাপ ধরে বিকাশও পৌঁছে যায় মাধুরীর বাড়িতে। মথুরেশ স্যার বিকাশকে একটু বেশী স্নেহ করেন ও প্রশ্রয় দেন। বিকাশের এ্যাড্‌ভান্টেজ হল ও পড়াশুনায় ভালো মেধাবী আর শৃঙ্খলাপরায়ণ।   
- বিকাশ কী খবর। প্রশ্নটি করে মথুরেশ স্যার এমন ভাবে তাকালেন যেন বললেন- শূন্যস্থান পূর্ণ কর।  
- ভালো আছি স্যার। মাধুরী ময়না ঝোরার ওপার থেকে ফিরছিল। আমিও ওর পিছু পিছু চলে এলাম আপনার সাথে দেখা করতে।  
বিকাশ ময়না ঝোরার কথা বলতেই মাধুরী দৌড়ে ঘরের পিছনে চলে যায়। মথুরেশ স্যার বলে- 
- ও ময়না ঝোরার ওপারেও রাজ্য বিস্তার করেছে। আর পারিনা বুঝলে বিকাশ। আর কয়েকটি দিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হবে এখনো গাছের চারা নিয়ে আসা, সেটার পরিচর্যা করা থামায়নি। দেখ উঠোনের চারপাশে বাড়ির চারদিকে গাছ লাগিয়েছে- কত সুন্দর।  এটি ঘাঘরা এটি দাঁতমর্দন এটি দাঁতরাঙ্গা এটি হাতিশুঁড় এটি ভুঁইওকড়া এটি জলমরিচ তারপর বাড়ির গেটের কাছে এসে বলেন- এটি কুঞ্জলতা বা চারুলতা… 
- ওকে কী চেনাচ্ছ? ও কিছুই মনে রাখতে পারবে না। শুধু শুধু ওকে তুমি বেশী পছন্দ কর। জীবন বিজ্ঞানে আমিই সব সময় বেশী নম্বর পাই।     
- কিন্তু বিকাশ ফার্স্ট হয়। 
- সে হোক। ওকি এত গাছ চেনে, এত গাছ যত্ন করে…

বিকাশ ভাবে - ময়নাডাঙ্গাতে আমার উত্তর ছিল -না, কয়েক দশক পরে জলশহরেও আমার উত্তর- না। মাধুরী সময়ের সাথে নিজেকে কত পরিবর্তন করেছে, কত উন্নত করেছে। মাধুরী যখন ভাঁট গাছ চিনত তখন আমি তো জানতাম না ভাঁটগাছ শালগাছের সূচক। যেখানে ভাঁটগাছ বেশী হবে সেখানে শালগাছের প্ল্যান্টেশন ভালো হবে। মাধুরী কি জানত!  মাধুরী কি নিজে জানে ও নিজের শিক্ষা পঠনপাঠনের মধ্যে দিয়ে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নিজেই শালসিঁড়ি হয়ে উঠেছে- একটা আস্ত বন হয়ে উঠেছে। মা মারা গেলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত বাতাস বন্ধ হল, বিয়ে হল - ময়না ঝোরার ওপারের মাঠ হারিয়ে গেল; বাবা মারা গেলেন - ময়নাডাঙ্গা গ্রাম গেল- সব নিয়ে। তবুও ও কী করে নিজের মনকে রেখেছে নদীর মতো। সব সময় কথা বলে বসুন্ধরা’র, কথা বলে বনের, কথা বলে জলের কল-কল করে। জলঢাকা নদীর জাম্পুইয়ের মতো নিজের বুক বেঁধে বসন্ত গ্রীষ্মে জল দেয় ভাঁটির জলহীন জমিতে। ফসলে ভরে যায় জমি। বিকাশ ভাবে মাধুরীর অবস্থান কত উজানে- কত তার জল কত তার স্রোত!  যে মানুষ লালভান্ডি চিনতো না সে কী করে হয়ে গেল চিপকো নারী- গোরা দেবী, সুরক্ষা দেবী, সুদেশা দেবী-দের মতো। অপরূপা এক মাধুরী অনেক… অপরূপা বুকের গোলাপ মাধুরী বট… কত কী থাকে এই গাছের মায়ার… কত মানুষ বাঁচে শীতল ছায়ায়… শালসিঁড়ির কোলে…  
- বুঝলে বিকাশ, তোমাদের সমস্যা খুব গভীরে। মাধুরী বলে- এই পৃথিবীর পার্থিব সম্পদের ওপর গড়ে সবার সমান অধিকার, কথাটি - তাত্ত্বিক। বাস্তবে পেশীশক্তি  বা মেধাশক্তি কুক্ষিগত করে রেখেছে পৃথিবীর বেশীরভাগ সম্পদ।  এই সঞ্চিত সম্পদের মালিক ব্যক্তি বা সরকার উভয়ে হতে পারে। আবার  সরকারের অধীনে সম্পত্তি সাধারণের সম্পত্তি, যেমন - বন জল বাতাস। তাই সমাজ পরিবেশবিদ্যায় প্রকৃত শিক্ষিত না হলে তোমাদের লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতম হবে। এটা সব সময় মানতে হবে যে বাঁচতে গেলে মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন খাদ্য জল ও আবাস্থল। তাই সম্পদহীন জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে চাপ সাধারণ সম্পদের উপর এবং তোমাদের উপর এবং যারা এর প্রতিবাদ করছে তাদের উপর।  
জানা কথা গুলো মাধুরীর মুখে শুনে বিকাশের বেশ লাগে। বিকাশের মনে হয় মাধুরী যেন বলে- সাথী সাথে আছি, চল এগিয়ে চলি।  অপরূপা নকল কাশি কাশে- বিকাশ পাকা বেলের মত ধুপ করে ঝরে পড়ে। ফাটেও না ভাঙ্গেও না। 
- কী এমন দেখছ মাধুরীর মুখে – ডমুরের ফলের মত চোখ করে… 
- জানিস তো, আমি বিকাশকে কত গুলো প্রশ্ন করেছিলাম একটারও উত্তর দিতে পারেনি। ডাহা ফেল!- মাধুরী বলে। 
- বাবা! কী তোর এমন প্রশ্ন যে উত্তর দিতে পারল না।  
- অংশুদের খাওয়া হল- মাধুরী গতি পরিবর্তন করে রায়ডাক নদীর মতো। 
- আর বলিস না। কত যে গল্প করছে। খাবে কী… মিঠুকে থাকতে বলে এলাম। অপূর্ব ফোন করল? 
- না। ও এই রকমই। ঘর থেকে বের হলে ফোন করেনা। ওর সময় হলে চলে আসবে। 
- বিকাশ কে কী বলেছিলি? 
- না, দেখলাম আমার সম্পর্কে কতটা খবর রাখে।
অপরূপা দুষ্টুমি করে হাসে- সূর্যমুখীর মতো। বিকাশ আবার চমকে ওঠে মাধুরীর কথা শুনে। মা আর মেদিনী কী এক! মাধুরী কত কঠিন কথা কত সহজ করে বলে দিল। ওর তথ্যগুলো কত সহজ করে বলে দিল মানুষের বাসযোগ্য স্থানের ক্ষতির কারণ কী। বনের ক্ষতির কারণ কী। জলের কষ্ট কথা কেন গলায় গোল পাকায় না, জল নষ্ট করে। এই সকল কারণের মূল কোথায়। ভেসে ওঠে গলাকাটার মাস্টারদার  মুখ। মাধুরী কয়েকটা তথ্য দিয়ে কী সুন্দর বুঝিয়ে দিল নারী ও শিশু অপহরণের মতো গাছ চারা গাছ লোপাটের গূঢ় কারণ, নদীর মরে যাবার সহজ পাঠ, হাতির চলার রাস্তা দখল হবার কারণ। বিকাশের মনে হয় এযে সমাজে থেকে সমাজের সাথে লড়াই- জলে কুমিরের সাথে লড়াই করার মতো।  বিকাশ ভাবে শালসিঁড়ির সৈনিকেরা কী মহাকাব্যের অভিমন্যুর মতো। এই জন্যই কী মাধুরীর বিকাশের প্রতি এত মায়া…  
- তাই বুঝি? অপরূপা বলে। 
- আচ্ছা, তোর যে সেই মেয়েটি… হিরামতি… সে এখন কোথায়। তার কি সেই ছেলেটির সাথে বিয়ে হয়ে ছিল? মাধুরী জিজ্ঞাসা করে। 
- আর বলিস না সে আর এক কান্ড। হিরামতি না থাকলে তো বিকাশকে বাঁচানো যেত না।
- সেকি! কোন দিন বলিসনি তো… মাধুরী হরিণ চোখে দেখে। 
- আর বলিস না। ওদের কথা বললে সারা রাত শেষ হয়ে যাবে। থ্যাঙ্কস লেস জব! 
- না, সে রকম বলিস না। বল না হিরামতির কী হয়েছিল? এই বিকাশ বলনা কী হয়েছিল। 
- হিরামতির ওর প্রেমিকের সাথে বিয়ে হয়নি- অপরূপা বলে।
- কেন? 
- শুক্রা মারা যায় – কারণ হাতি।
- মানে!  
- হ্যাঁরে! আমারও শুনে খুব কষ্ট হয়ে ছিল। অংশুর জন্ম দিন ছিল। বিকালে হিরামতি অনেক দেরি করে এল। আমি কিছু বললাম না। তারপর রাতে বাড়ি ফিরে যায়। জন্মদিন পর্ব শেষ হলে আমরা শুতে যাবো। তখন বিকাশকে  কে যেন খবর দেয় – চাবাগানের বস্তিতে কাউকে হাতিতে আহত করেছে। বিকাশ তখন সামনে যে কয়জন স্টাফ ছিল তাদের নিয়ে তাড়াতাড়ি সেই চা বাগানের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়- কী যেন নাম। কী নাম গো…  
- সুজনাই… বিকাশ মনে করিয়ে দেয়। 
- মানুষটি ঘরের বাইরে তালা দিয়ে চলে গেল রাতে আর ফিরল না। আমি অংশুর পাশে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। ততদিনে আস্তে আস্তে বন্য জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছি-  গুলঞ্চ লতার মত। তারপরের ঘটনা বিকাশের কাছে শোন।
- বিকাশ বলনা … ঠিক কী হয়েছিল।  
- আমি যথা সামান্য স্টাফ নিয়ে তাড়াতাড়ি চাবাগানে গিয়েছিলাম আহত লোকটিকে যেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো যায়। তখন তো এখনকার মতো গ্রামে, চাবাগানে গাড়ি ছিলোনা। সরকারী দপ্তর বলতে ছিল থানা বিডিও অফিস আর রেঞ্জ অফিস। বাঘমারি হাটে ছিল একটা মাত্র সাদা এ্যাম্বাসাডার। তারের টেলিফোন। এ্যাম্বুলেন্স হল খেজুরের ফুল। দেখা যায় ধরা যায় না- যতক্ষণ না ঝরে পড়ে। চাবাগানের যে জায়গায় পৌঁছালাম সেই জায়গায় এক বছর আগেও গ্রাম ছিল না। হঠাৎ করে গ্রাম গজিয়ে উঠল কী করে।  প্রায় ১৫-২০ ঘরের গ্রাম। ঘর বলতে যে ধারণা জন্মাবে সেটা এখানে মিলবে না। বাঁশের খুঁটি পাটকাঠির বেড়া আর খড়ের ছাউনি। তাপস বলে- এই গ্রামটি তো হাতির চলার রাস্তার উপর গড়ে উঠেছে। শুনলাম ছেলেটি সেই রাস্তা ধরেই ঘরে ফিরে আসছিল। হাঁটতে হাঁটতে কখন হাতির সামনে চলে আসে বুঝতেই পারেনি।   কখন হাতি আঘাত করে গ্রামের কেউ জানতে পারেনি। পরে অন্য কোন গ্রামবাসী ঘরে ফেরার সময় ছেলেটিকে দেখতে পায়। তারপর যা হয়- এককান দুইকান হতে হতে গ্রামে রাতের ঘুম চলে যায়। ভীড় ঠেলে গিয়ে দেখি একটি যুবক ছেলে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। 
- কী করে বুঝলে, ওকে হাতিতেই মেরেছে? কেউতো দেখেনি।
- যেখানে ছেলেটি পড়ে ছিল, সেখানে হাতির পায়ের ছাপ ছিল। রাতের অন্ধকারে বোঝা যায়নি টাটকা না পুরানো। তার উপর পড়ে হাজার হাজার লোকের পায়ের ছাপ। 
- তারপর?
-  চারপশে কত লোক আছে জানা ছিলোনা। হ্যালোজেন সার্চ লাইটের আলোতে যা বোঝা গেল, অনেক লোক  ঘিরে রয়েছে আমাকে। আমি ছেলেটির গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম- ছেলেটির শরীর গরম। মনে হল তখন প্রাণের স্পন্দন আছে। ছেলেটিকে তুলে কোলে নিলাম। স্বজন হারনোর আশঙ্কায় চিৎকার করে বললাম- গাড়িটা নিয়ে এস; ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, ওকে বাঁচাতে হবে।    
- তুমি তখন শুক্রাকে চিনতে না? মাধুরী জিজ্ঞাসা করে। 
- কী করে চিনবো। শুক্রা তো কখনো আমাদের বাড়িতে আসেনি। এসে থাকলেও হয়তো আমি বাড়ি ছিলাম না। আর আমি কখনো হিরামতি অপরূপার গল্পের মধ্যেও ছিলাম না।
- তা ঠিক, তারপর। 
- ছেলেটির মাথা আমার কোলে। শরীর ছেড়ে দিয়েছে। হাত দুটি দুপাশে ঝুলে পড়েছে। নিলয় তাপস আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ছেলেটিকে গাড়িতে তুলতে যাবো; তক্ষনি লোক গুলো হৈ হৈ করে উঠল- পাগলের মত। কেউ বলে- কিঁউ হাতি বাগানমে ঘুষা হ্যাঁয়। কেউ বলে – হাতি কিনো বাগানমা পসেকো। কেউ বলে- হাতি বাগানমে কালে ঘুঁইসে। কেউ বলে – হাতি কেনে বাগানত্‌ সন্ধাইল্‌।  কেউ বলে – হাতি কেন  বাগানে ঢুকেছে। এ যেন প্রশ্ন নয়- কামানের গোলা।  পুরো গ্রাম পুরো দেশ হয়ে উঠে এসেছে- এক প্রশ্ন নিয়ে। আমি চারদিকে ঘুরে দেখি। মাঝে মধ্যে কিছু লোকের হাতের চা গাছ ছাঁটার চপার ( তরোয়াল) গুলো সার্চ লাইটের আলোয় চিক্‌ চিক্‌ করে ওঠে। সব চিৎকার চেঁচামেচির একটা অর্থ – হাতি কেন গ্রামে বাগানে ঢুকছে। হাতি কেন মানুষে আহত করবে।  হাতিকে কেন বনের মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছেনা। লিখে দিতে হবে – হাতি আর বাগানে ঢুকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি…। আমি বললাম- সে সব হবে। আগে ছেলেটিকে চিকিৎসা করাতে দাও। ওকে নিয়ে যেতে হবে তাড়াতাড়ি- হাসপাতালে। সাথে সাথে সবাই আবার চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। কেউ বলে – ছেলেটিতো মরেই গেছে। এখন রাতের অন্ধকারে লাশ নিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে জনরোষ যেন ফেটে পড়ে। ওদের সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করার জন্য এই মারে কী সেই মারে। এই ভিড়ে যেন সবাই নেতা। তারপর  ক্রমশ বাড়ছে মদ-মাতালের সংখ্যা। ক্রমশ বাড়ছে চপারের চমকানি আর ধমকানি। 
- সে কী! এযে ভয়ানক পরিস্থিতি। বাঁচলে কী ভাবে! 
- ছেলেটিকে তো বাঁচাতে পারলাম না- কিছু মূর্খের জন্য। 
- তারপর বল।
- আর কী। কতগুলো ক্ষ্যাপা লোকের মাঝখানে বসে থাকলাম। ছেলেটির শরীর আমার কোলে আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে গেল। ওর মৃত্যু যেন আমার মৃত্যুভয় শুষে নেয়, আমাকে করে যায় দীর্ঘায়ু। ছেলেটির শেষ অস্পষ্ট স্বরে যেন বলে যায় ওদের ক্ষমা কর- যীশুর মতো।  সারা রাত বসে থাকলাম একটা তাজা লাশ নিয়ে। 
- পুলিশ আসেনি। 
- এসেছিল সূর্যের আলোর সাথে থানার একটি মাত্র পুরোনো গাড়ী নিয়ে- হেড লাইট জ্বালিয়ে। 
- তারপর। 
- দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে লোকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। গুটিকতক সরকারি কর্মী খড়কুটোর কত ভাসতে থাকি জনসমুদ্রে। দুটি গাড়ির স্টার্ট বন্ধ পুলিশের গাড়ির আর টি বন্ধ। সবার একটাই প্রশ্ন- হাতি কেন গ্রামে ঢুকবে হাতি কেন চা বাগানে ঢুকবে… এর মধ্যেই একটি মেয়ে এসে ছেলেটির লাশের উপর পড়ে বিলাপ করতে থাকে। আমি দেখে অবাক হয়ে যাই। এ-যে হিরামতি। হিরামতি বিলাপ করতে থাকে- মঁই কাইল  তোরসে কালে নি ভাগলো… আমি কেন কালকে তোর সাথে ভাগলাম না। তব তোর এসান হালাৎ নি  হোতাক - তাহলে তোর আজ এই অবস্থা হতনা। তোর বাত শুইনকে ভাইগ জানেসে আইজ হামনি এক সঙ্গে রহেক সাকতাব - তোর কথা শুনে ভেগে গেলে আজকে আমরা এক সাথে থাকতে পারতাম। আইজ তুই কাঁহা চইল গেলে রে…- আজ তুই কোথায় চলে গেলি-রে। হিরামতির বিলাপের সাথে সাথে কিছু লোক তেড়ে আসে আমাকে মারতে। আমি ভাবলাম, আমার যদি মরে যাবারই হতো তবে ওল্ড ল্যান্ড বীটে চাকুরীর প্রথম মাসে রেশন কার্ড বন্ধ হয়ে যেত।      
- সে-কী! বিকাশ তুমি না! -অপরূপা বলে।     
- সত্যি বলছি। যে ভাবে লোকগুলো লাঠি তরোয়াল নিয়ে আসছিল, আমার বাঁচার কথা নয়। ঠিক তখনই হিরামতি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।  
- স্যারের কী দোষ। স্যারকে কেন মারতে আসছিস। স্যার কী হাতিকে বলে পাঠিয়েছে ওকে মারার জন্যে। হাতি কী গোয়ালের গরু যে বেঁধে রাখবে। আমার মরদ মরেছে আমি বুঝবো।    
গ্রামের চাবাগানের সবাই জানে বাবা-মা হীন শুক্রা এবং হিরামতির মন দেওয়া নেওয়ার কথা। হিরামতির বাড়ি থেকেও কোন বাধা ছিল না। প্রথা অনুযায়ী পালিয়ে যাবার কথা। তারপর ওদের সমাজে বিয়ে হবার কথা ছিল। গতকাল শুক্রা হিরামতিকে বলেছিল পালানোর কথা। হিরামতি রাজি হয়নি অংশুর জন্ম দিন ছিল বলে। ততক্ষণে সদর থেকে চলে আসে আরো এক বাস পুলিশ। হিরামতির রুদ্র মূর্তি আর পুলিশের আক্রমনাত্মক মনোভাব দেখে জমা হওয়া জনতা সরে যায় আস্তে আস্তে। বিকাশ হিরামতিকে বলে- 
- শুক্রার জন্য সরকারি ভাবে যা যা করনীয় সব করা হবে। দেখা হবে ময়না তদন্ত করে।  
হিরামতি তখন যেন হলুদের গেড়ঁ। মৃত না জীবিত বোঝা যায় না। বিকাশ বলে –
- কোয়ার্টারে এসো। বৌদি চিন্তা করবে। তোমারও ভালো লাগবে।
- অপরূপা ও এসেছিল? মাধুরী জিজ্ঞাসা করে। 
- হ্যাঁ, শেষ বিকালে। সারারাত কেঁদেছিল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri