বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-২০/রূপন সরকার
বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং
পর্ব-২০
ড. রূপন সরকার
১৮৭৭ সালে বর্তমান সানি ব্যাঙ্কের স্থলে মাত্র ১২ জন ছাত্র নিয়ে আরেকটি স্কুল স্থাপিত হয়েছিল শহর দার্জিলিংয়ে। ১৮৭৯ সালে নতুন ভবনে আসার পর স্কুলটির নাম হয় সেন্ট জোসেফ সেমিনারি স্কুল। এই সময় এই স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব লাভ করেন ফাদার জোসেফ পিকক্। তিনি ছাড়াও ছিলেন পাঁচজন সহকারি শিক্ষক। ১৮৮১ সালে আরো সাতজন সহ শিক্ষক নিয়োগে স্কুলটি পুনরায় প্রসারিত হয়। ইতিমধ্যে স্কুলটি ব্যাচেলার্স অফ্ আর্টস পড়াবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। অবশেষে কোলকাতার আর্চবিশপ Mgr. Geothals - এর অনুপ্রেরণায় ফাদার বিবর্তনের Henry Delpalchin -এর উদ্যোগে ১৮৮৮ সালের ২৩-শে ফেব্রুয়ারি সেন্ট জোসেফ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি ১৪ তারিখ থেকে ১৮ আবাসিক এবং ৭ জন ডেস্কলার নিয়ে কলেজের ক্লাস শুরু হয়। বছরের শেষে কলেজের ছাত্রসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। ১৮৯৭ সালে স্কুলটি নর্থ পয়েন্টের নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়। রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় গবেষণাগার, সিনেমা হল, সুন্দর খেলার মাঠ সহ নতুন ভবনটিতে ঐ একই বছর ১৮-ই ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়। কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইন্টার্মিডিয়েট আর্টস এবং ইন্টার্মিডিয়েট সাইন্স উভয় বিষয়ের জন্য অনুমোদন লাভ করে। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন প্রার্থীকে প্রথম অথবা দ্বিতীয় বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করা আবশ্যিক ছিল। ১৯৪৪ সালের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৩৯০ এবং সেন্ট জোসেফ কলেজের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৩০ জন।
মাউন্ট হারমন স্কুল নামে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। বিভিন্ন মিশনারি সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি পরিচালনা সমিতি এই স্কুলটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ইউরোপীয় নাগরিকদের ছেলেমেয়েদের খ্রীষ্টান ধর্মীয় অনুশাসনে শারীরিক, মানুষিক এবং ধর্মীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করাই ছিল এই স্কুলের উদ্দেশ্য। এটাই ছিল দার্জিলিং শহরের প্রথম স্কুল যেখানে ছেলে মেয়ে একসাথে শিক্ষা লাভ করতে পারতো। স্কুলটির ব্যয়ভার এবং শিক্ষকদের মাইনে বাবদ খরচ সরকার বহন করতো। সেকেন্ডারি এই স্কুলের সিলেবাস এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট অফ ইউরোপীয়ান স্কুল, ব্যঙ্গলের ধাঁচে তৈরি করা হয়েছিল। পঠন পাঠনের সাথে সাথে গান, ডোমেস্টিক সাইন্স ও খেলাধুলো চর্চা করা হতো এই স্কুলে। ১৯৪৪ সালের ৩১-শে মার্চের হিসেব অনুযায়ী স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৩২জন ছেলে এবং ১১৬জন মেয়ে সহ মোট ২৪৮জন। স্কুলের মূল ভবন কুইন্স হলটি ছিল তৎকালিক ভারতের সবচেয়ে সুন্দর শিক্ষা ভবন।
১৮৮৬ সালে বিশপ মিলমান (Bishop Milman) দার্জিলিং গার্লস স্কুল নামে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কুইন্স হিলস গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতে বসবাসকারী ইউরোপীয় নাগরিকদের সন্তানদের শিক্ষার চাহিদা মেটাবার জন্য ১৯৪০ সালে নিউ স্কুলটি প্রথমে কোলকাতা এবং পরে ১৯৪১ সালে এটি দার্জিলিংয়ে স্থানান্তরিত হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴