বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২০
বাংড়ি তিতি ও হাউড়ি শেষে
পর্ব-২০
মিশা ঘোষাল
**************
টোটোপাড়া ও কালিখোলা ঝোরার কাহিনি (২)
টোটোপাড়ার
পূজাগাঁও এ নিজেদের দেংসাতে (টোটো ঘর) বাস করত উমেশ টোটো ও কল্পনা টোটো।
উপরে ঝোরার জলের পথে তাদের আরও একটি আস্তানা ছিল। ভূট্টা (মেম্বে),
মারুয়া, সুপারি ও এলাচ চাষ করত পাহাড়ের ঢাল কেটে, ঝুম চাষ প্রক্রিয়ায়।
পাশাপাশি জঙ্গলে ছিল শিমুল আলুর চাষ। মুরগি ও শূকরের খোয়াড়ও ছিল তাদের।
ভুটান পাহাড় টপকিয়ে নিত্য যাতায়াত ছিল ভুটানের একটি গ্রামে তাদের। বৌদ্ধ
সন্নিবেশে কিছু মন্ত্র জানত তারা।
বাড়িতে 'ইউ' (টোটোদের তৈরি একপ্রকার মদ্য) তৈরি করে সেই 'ইউ'-এর হাড়ি মাথায় করে নিয়ে যেত পূজারী বৌদ্ধ একজন সন্নাসীকে ভেট করতে।
একটি
গাছবাড়িও (টুঙ) দুজনের। পূজাগাঁও-এর পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামা ওঠা করতে গিয়ে
সন্তানসম্ভবা কল্পনার গর্ভপাত হয়ে যায় একসময়। তারপর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত
হবার পরও কল্পনা যখন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে অক্ষম হয়ে পড়েছেল তখন এক ভুটান
সীমান্ত বসবাসকারী এক বৌদ্ধ সন্নাসীর কাছে গিয়ে মনস্কামনা সিদ্ধির জন্য
পৌঁছে যায় কল্পনা ও উমেশ।
ঐ বৌদ্ধ সন্নাসী তখন
ধ্যানরত। রাতের আঁধারিতে ঐ প্রচন্ড বর্ষার রাতে পাহাড়ের গুহায় অপেক্ষায়
রত এক দম্পতিকে ভোর হতেই চোখ খুলে দেখতে পায় ঐ সন্নাসী। টোটো দম্পতি তাদের
মনের কথা জানিয়ে পায়ের কাছে বসে থাকেন।
তারপর কালিখোলার গভীর জঙ্গলে তাঁদের নিয়ে আসেন।
এক
রাতের অন্ধকারে সন্তান প্রাপ্তির প্রার্থনা নিয়ে কালিখোলার গভীর জঙ্গলে
এসে ঝোরার জলে পূজা দিতে আসে তাঁরা। শূকর বলি দিয়ে শূকরের রক্ত অর্পণের পর
ফলমূল (মূলত লেবু জাতীয় ফল, কমলা ইত্যাদি) দিয়ে ভাকাল (দেবতার উদ্দেশ্যে
অর্পণ) করে তাঁরা। আর তারপরই ঘটে বিপত্তি।
দম্পতিকে
নিয়ে সন্নাসী আসেন কালিখোলার ঝরনার জলে পূজা দিতে দিতেই হঠাৎই সেই সময়ই
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়। জলের তোড়ে ভেসে যায় বৌদ্ধ সন্নাসী সহ ঐ টোটো
দম্পতি। হড়পা বানে ওরা ভেসে যায়। ওদের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় তোর্ষার
পাড়ে। কোনোক্রমে বেঁচে যায় ঐ সন্নাসী। অস্থিমজ্জ্বা ক্ষতবিক্ষত দেহে পড়ে
থাকে টোটোপাড়ার কালিখোলার ঐ পূজার স্থল পার করে। জলস্রোত আর পাথরের ধাক্কায়
আরও নীচে নেমে যায় চৈতন্যহীন ঐ পূজারী। উমেশও জলে ভেসে যায় বহুদূর। একটি
গাছের ডালে আটকে থাকে হাউড়ির কিনারে। জলস্তর কমে গেলে ফিরে আসে উমেশ,
কিন্তু কল্পনা ফেরে না। তাঁর দেহও খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপর থেকেই টোটো
মেয়েদের কালিখোলার এই ঝোরার কাছে আসা ও পূজা দেওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴