সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 376

সানিয়া-২/নীলাঞ্জন মিস্ত্রী

সানিয়া/পর্ব-দুই
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
~~~~~~~~~
বাথানের খোলামেলা রান্নাঘর। উনোনের আগুনে হাত-পা সেঁকছে মৈষাল কাকারা। কতরকম খোশগল্প তাদের। মাঝে মাঝেই তারা হো-হো হা-হা করে হেসে উঠছে। সেই উল্লাস এতটুকুও হাসি ফোটাতে পারে না শুকনো ফাটা-ফাটা দুটি ঠোটে। একেবারেই নির্লিপ্ত থাকে ছোট্ট সানিয়া। বয়স্ক মৈষালদের মাঝে সে যে বড্ড বেমানান। একাকী বসে রয়েছে ঘরের বাইরে। কনকনে ঠান্ডায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তার শরীর। কুয়াশা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে গায়ের ছেঁড়া জামা-কাপড়। চায়ের বাটিটাকে দুহাতে চেপে ধরে হাত সেঁকতে সেঁকতে চায়ে চুমুক দিয়ে চলে সানিয়া।
হিমশীতল হাওয়া বইছে চারপাশে। ডানে-বামে-সামনে-পেছনে মিটার বিশেক দেখা যায় শুধু। কাটছে না কুয়াশার ঘোর। থেমে থাকা কুয়াশারা এবার ছুটতে শুরু করেছে। সানিয়া এগিয়ে যায় মহিষদের কাছে। মহিষেরা দল বেঁধে শুয়ে রয়েছে খোলা আকাশের নীচে। ওদের দেখে হিংসে হয় খুব। ঠান্ডা-গরম-ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন ওরা তো থাকে পাশাপাশিই। পেটের তাগিদে তার মতো পারি দিতে হয়নি বেলাভূমির এই নির্জন উপত্যকায়। একটু সামনেই বাচ্চা মহিষদের (পরু) ঘর। বাথানে ওদের যত্নআত্তি একটু আলাদা। বড়রা রাতভর খোলা আকাশের নীচে থাকলেও পরুদের রাখা হয় ঘরের ভেতরই। ওদের খাবার জোগাড় করা, রাতে শুকনো ঘাস পেতে বিছানা করে দেওয়া, এদিক সেদিক ঘুরিয়ে এনে আনন্দ দেওয়া, এসবই তার গুরুদায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অবলা ছেলেমেয়েদের এই দায়িত্বগুলি সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই যে ক্ষিধের জ্বালায় পেট মোচড়াবে না তার।
ভাইটা কেমন আছে? বোনটাই বা কেমন আছে? বাবার শরীর কেমন আছে? এবছর জমিতে ভালো ধান হয়েছে তো? না হলে বাচ্চু-ফুলমণিরা কি খাবে? বড় মানুষের এসব দুঃখ দুঃখ চিন্তাভাবনাগুলি বছর বারোর কচি মাথাটাকে একলা পেয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। পেটের টানে স্বার্থপরের মত জলঢাকা ছেড়ে সে এসে পড়েছে তিস্তায়। তিস্তাকে সে জানতই না। নামও শোনেনি কোনদিন। তিস্তা নদীর কথা সে প্রথম শোনে জলঢাকার চরেই। বলেছিল মৈষালবন্ধু ভাঙ্গাবেড়া। তিস্তা তো জলঢাকার মতই একটি নদী। তবে এই নদীকে সবাই মা বলে কেন ? শিশুমনে ঘোরপাক খায় সহজ প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে হয়না সানিয়াকে। বিচ্ছিন্ন এই চরভূমিতে আছড়ে পরা প্রতিটি নতুন সকালে সে যেন অনুভব করে মায়ের স্পর্শ। তাই তো অভিমান হলেই ছুটে যায় ওই তিস্তারই কাছে। তিস্তা ছাড়া আর কেই বা আছে তার অভিযোগ শোনার?
-তিস্তা নদীর অনেক চর আছে। চরে চরে কত্ত মহিষ বাথান। সেখানে খাওয়ার কোন অভাব নাই রে। সব জায়গায় ঘাস আর ঘাস। ভইস চরাতে তোকে দূরে যেতে হবে না। এইখানের থেকে খাটুনীও অনেক কম।
ভাঙ্গাবেড়া মিথ্যা বলেনি মোটেও। এখানে খাবার দাবারের এলাহী ব্যাপার স্যাপার। গান-বাজনাও হয় খুব। হাসি ঠাট্টা তো লেগেই থাকে। সবাই কাজ করে আনন্দে। মালিক না থাকলেও আসে মাঝে মাঝে। আসবার সময় কত কিছু নিয়ে আসে। ব্যাঙ কাকা বলেছে তার জন্য এবার মালিক একটা লাল গামছা এনে দেবে।
কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। নদীর জল রাঙা হয়ে উঠছে। একটু দূরেই বালির চিকিমিকি দৃশ্যমান। ঘাসবন-নলবন থেকে পাখিরা একে একে বেরিয়ে পড়ছে খাদ্যের সন্ধানে। সদ্য ডিমফোটা বাচ্চারা কিচির মিচির করতে করতে মাকে অনেক আবদার জানিয়ে রাখছে। জলবেষ্টিত ছোট ছোট চরা থেকে পরিযায়ীরা উড়ে যাচ্ছে তাদের দ্বিতীয় ঠিকানায়। মৈষাল কাকারা মহিষদের পায়ের বেড়ি খোলবার জন্য একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। কুয়াশার আস্তরণ সরিয়ে নিভু-নিভু সূয্যিমামার সহাস্য উপস্থিতি। ভোরের আলো এসে পড়েছে পাড়ে বাঁধা নৌকাদুটির উপর। ওর একটি নিয়েই সানিয়াকে যেতে হবে নল বনের মাঝে। এক নৌকা ঘাস তাকে কেটে আনতেই হবে পরুদের জন্য। শুধু ঘাস কেটে আনা নয়, সেই ঘাসের ছোট ছোট গোছা বানাতে হবে তাকেই। পরুরা যে ঘর দুটিতে থাকে তার বেড়ায় সেই গোছা গুঁজে দিলে অথবা ঝুলিয়ে দিলেই পেট ভরবে পরুদের।
পরুদের ঘরের বেড়ায় গোঁজা রয়েছে ঘাস কাটবার কাচিটা। সেটা আনতে গেলেই পরুরা ঘিরে ধরে তাকে। কাজে যোগদানের অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পরুরা বেশ ভালোবেসে ফেলেছে তাকে। তাদের ভালোবাসায় সারা দিয়েছে ছোট্ট সানিয়াও। ওদের গলায় হাত বোলাতে বোলাতে মনে পড়ে তার বোনের কথা। মা মারা যাবার পর বোনকেও যে সে এভাবেই আগলে রাখত। বোন তো কেঁদে ভাসাত সারাক্ষণ। কিন্তু পরুরা কাঁদে না। ওরা ছোটাছুটি করতে চায়, খেলতে চায়, আদর পেতে চায়। কিন্তু এখন যে খেলবার সময় নয়, আদরের সময় নয়, এ যে কাজের সময়। ছোট মহিষের বাচ্চারা বুঝতে চায় না সেকথা। আগলে রাখতে চায় বন্ধু সানিয়াকে। কিন্তু কে বোঝাবে ওদের? ওদের পেট ভরাতেই যে সানিয়াকে সব ভয় উপেক্ষা করে ঢুকে যেতে হবে ওই নলবন আর হোগলা বনের জঙ্গলে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri