সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-December,2022 - Wednesday ✍️ By- অমর চক্রবর্তী 345

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/২

শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব : ২
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

ব্যথা আমার কুল মানে না, বাঁধ মানে না। বামুনের সন্তান। দেশের বাড়িতে কত সম্মান! সেই বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক অনেক সম্পত্তি আগেই এপারে পাচার করেছেন এবার সপরিবারে এলেন। এসেই খুললেন সেই নামী বিড়ি ফ্যাক্টরি। ডায়মন্ড বিড়ি। ওপারে এটাই ব্র্যান্ড। আরো পড়শী এসেছে এপারে।  তারা সত্যেন্দ্র কুমারের খোঁজ খবর নিলেন। ওপারে অনেকেই তাঁত বোনার কাজ করতেন। এপারে তাঁত যন্ত্র কেনার অর্থ নেই। অগত্যা বিড়ি বাঁধার কাজ। সত্যেন্দ্র কুমার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে স্কুল জীবনে এই কাজটি শিখেছিলেন। এবার কাজে লাগল। ডায়মন্ড বিড়ি বাঁধার কাজ। টুকটাক পুজো আর বিড়ি বাঁধা। কিছু আয় বাড়ল। বড় দুই ছেলেকে  ভর্তি করালেন ইস্কুলে। তৃতীয় সন্তান তখনও মায়ের দুধ খেয়ে দৌড়ে পালায়। সেই দুই ছেলেকেও বিড়ির কাজে লাগিয়ে দিলেন। মা বিড়ির পাতা কাটেন, বাবা বাঁধেন আর দুই ছেলে বিড়ির মুখ গুঁজে দেয়। দিনে এক হাজার। মজুরি দেড় টাকা। একবেলা ভাত আর বেলা আটা ভেজে ছাতু বানিয়ে লঙ্কা লবনের মেখে খাওয়া।                                
সব বাঙালের ঘরে লক্ষ্মীর আসন বসে। রেখা দেবীর পাতির ঘরে লক্ষ্মী দেবী বসলেন। কোচবিহারে গান্ধী কলোনিতে একটা পাতি কোম্পানি ছিল। অনেকেই কাজ করতেন। একটু সস্তার প্লাই দিয়ে ঘর। মাটির ঘর। গোবর দিয়ে লেপা। মা লক্ষ্মী বসলেন কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র  আর বরুণ! তুষ্ট হলেন না! সত্যেন্দ্র কুমার মন্ত্র পড়লেন 'ইন্দ্রাদি-দশদিক- পালেভ্য নমহ'  কিন্তু কোথায় কি! কড়্ কড়্ কড়াৎ। ঘরের মধ্যে ইন্দ্রের অঙ্কুশ। ছোটটা মায়ের বুকে বড় দুই ভাই সমীর সমর মাকে জাপটে। কোথায় উড়ে গেলো পাতির ছাউনি। বৃষ্টির জল আর চোখের জলে বন্যা। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে কাঁঠাল কাঠের চৌকির ওপর রান্না। কুচবিহারে তখন মাসের পর মাস বৃষ্টি। চেরাপুঞ্জির পর কুচবিহার। তবে জল দাঁড়ায় না। রাজকীয় পরিকল্পনা। কত বড় বড় ড্রেন। উঠোন দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। আর উঠোনে খেলা করে কত ধরনের মাছ। ছেলেরা জলে নেমে মাছ ধরে।                                          
কিন্তু ঘরের জন্য টিন চাই। বিড়ির মজুরি বাড়ে না! কে দেবে ধার!  আর এক বিপদ বড় ছেলের দুবার নিউমোনিয়া একবার ধনুষ্টঙ্কার। প্রাণে বেঁচে গেল কিন্তু হারিয়ে ফেলল বোধশক্তি। ছোট বা তৃতীয় সন্তান তখন ইস্কুল যাবার উপযোগী। একজন বাড়িতে বসে সারাক্ষণ আপন মনে বিড়বিড় করে  আর ছোটজন  চুল আচড়ে ইজের প্যান্ট পড়ে মায়ের চুমু খেয়ে ইস্কুলে যায়।                                       
১৯৬৫ সাল। ছোট ছেলে ক্লাস ফোর। দুরন্ত ছেলে। মা ডাকে - ভাসা কোথায় গেলি? বন্যায় ভেসে যাচ্ছিল বলে মা ডাকে ভাসা বলে। কোথায় সেই ছেলে! পড়াশোনা শিকেয়। ছেলে চলে গেছে ঐ যে সন্ধ্যা হলে কাঁধে মই নিয়ে যে মানুষটি পৌরসভার আলো জ্বালতে আসে তার পেছনে। অপলক দেখছে-- কি সুন্দর চিমনি মুছে আলো জ্বেলে সন্ধ্যার অন্ধকার ভেঙে দিচ্ছে মানুষটি।ছেলেটি ভাবে আমি এই আলো জ্বালানোর কাজ নেব। সকাল হলে ভাবে না আমি বাবার মতো পুজো করব। নাড়ু মোয়া পায়েস খাব। বাবার কাছে মন্ত্র শিখে নেব। পুরুত মশাই হব। এই সময় রাস্তা দিয়ে এক ওঝা, সাপের ওঝা দৌড়াচ্ছে। মুখে ভিক্ষা দে মা জননী জীবন ভিক্ষা করি/কাল সাপে দংশিয়াছে মোর প্রাণেশ্বরি'। ছুটছেন সতীশ ওঝা। জল জঙ্গলে ভরা এই অঞ্চলে সাপের উপদ্রব। নবনির্মিত বাঁধের জঙ্গলে অনেক বিষধর সাপ। তখন একমাত্র ত্রাতা সতীশ ওঝা। ছেলেটিও পেছনে দৌড়। সাপ ধরা শিখতে হবে। পরে সেই ছেলেটি যখন শ্রীকান্ত পড়ে তখন মনে এসেছিল আরে আমি কি তখন ইন্দ্রনাথ হবার স্বপ্ন দেখেছিলাম আর সতীশ ওঝা কে শাহুজী। জীবনের পরিমাপ কে করবে! পেটে তখন তীব্র খিদে। ঘরে খাবার নেই আর তার মাথায় সাপ ধরা। আগে পেট ভরাতে হবে। তখনই দূর থেকে ভেসে আসা মাইকের ঘোষণা 'আমাদের অষ্টপ্রহর খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ হবে। সবাই লাইন দিয়ে বসুন।' ছেলেটি সেই আওয়াজ শুনে শুনে এগিয়ে চলেছে। খিদের ঘোরের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে যেখানে গিয়ে পৌঁছায় সেই জায়গার নাম পিলখানা। কুচবিহারের রাজাদের হাতি এখানে বাঁধা থাকত। কতদিন দেখেছে হাতির পিঠে কলাগাছ নিয়ে মাহুত চলেছে। কি উঁচু কি বড়। তবু ছেলেদের ভয় নেই! পেছন পেছন সুর করে বলেছে হাতি তোর পায়ের তলায় বড়ুই বিচি। সেই পিলখানার কাছাকাছি। তোর্সা এখান দিয়েও বয়ে চলেছে পাশেই শ্মশান। ছেলের ভয় কি! মা শিখিয়ে দিয়েছেন ভূত আমার পূত পেত্নী আমার ঝি। রাম লক্ষণ সাথে আছে করবে আমার কি! তারপর সেখানে পৌঁছে খাবার লাইনে বসে পড়ে ছেলেটি। একটা কলার ঢোঙ্গল পেল। এবং খিচুড়ি পাতে পড়ল। পাতের দুপাশ গড়িয়ে চলে গেল খিচুড়ি। নদীর চড়ার মতো জেগে রইল এক টুকরো আলু। খুব খিদে। বাড়ি ফেরার পর খাবার বদলে পিঠে পড়লো বাবার বইলা খড়মের কয়েক ঘা। এদিকে কত পরিবর্তন। যুক্তফ্রন্ট ভারত পাকিস্তান এর যুদ্ধ, ব্ল্যাক আউট, চাল, কেরোসিনের হাহাকার। এর মধ্যেই সত্যেন্দ্র কুমার সুখবর আনলেন। তাঁর চাকুরি হয়েছে। সরকারি চাকরি। কর্মক্ষেত্র সুনীতি একাডেমি স্কুল। অনেক বর্ষণের পর সূর্যের মুখ। দুই ছেলেকে ভর্তি করালেন দুই সরকারি বিদ্যালয়ে। বড় ভাই সমর  বাংলা স্কুল অর্থাৎ সদর গভর্মেন্ট আর ছোটোকে জেনকিন্স বিদ্যালয়। সেই ছেলেটি যে আলো জ্বালিয়ে হতে চেয়েছিল বাতিওয়ালা, হতে চেয়েছিল সাপের ওঝা। সেই ছেলেটি যার নাম অমর। অমর কুমার চক্রবর্তী।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri