সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
14-April,2025 - Monday ✍️ By- শুভ্রজ্যোতি দাস 51

লে পাঙ্গা-১/শুভ্রজ্যোতি দাস

লে পাঙ্গা/২
শুভ্রজ্যোতি দাস

রাখে হরি মারে কে

খেলা শুরু হয়ে গেল। লাল আর সবুজ জার্সি মাঠময় ছুটে বেড়াচ্ছে। লাল ভবনের টিম দেখে মিহিরের গলাটা একটু শুকোল। ওদের গোলকিপার সুকান্ত আর ডিফেন্স গোবিন্দ আর হরিশংকর। তিনটারই ষাঁড়ের মতো চেহারা। বল ওদের এরিয়ায় ঢুকলে এমনভাবে তাড়া করছে- সবুজ ভবনের স্ট্রাইকারেরা পারলে বল ছেড়ে পালিয়ে বাঁচে। সবুজ ভবনের মাঝমাঠে বিকাশ দারুণ খেলছে। ওর দু’পায়ে সুন্দর ডজ আছে। স্কুলে সবাই ওকে মেসি বলে ডাকে। ওর পায়ে বল পড়লেই গোটা মাঠ "মেসি মেসি"  চিৎকার করছে। কিন্তু ছেলেটা চেহারায় মার খেয়ে গেছে। এবারও লাল ভবনের হেড কোচ শুভাশিসদা। আজকে শুভাশিসদার টার্গেট বিকাশ।  -"ওরে ওটা মেসি না, ওটা ভুষি। গোবিন্দ, ওটা বেশি কায়দা মারছে। কাছে এলে দিস তো একটা শুঁটিয়ে। "দর্শক এসবেরই প্রতিক্ষায় থাকে। সাথে সাথে গোটা মাঠ হাসিতে ফেটে পড়ল। হেডস্যার চেয়ারে বসে হাসছেন। মলিন বিব্রত কাষ্ঠ হাসি। শুভাশিসদাকে নিয়ে বেশ আশঙ্কায় আছেন বোঝা যাচ্ছে। -"ও শুভাশিসদা, আরে একটু আস্তে। আপনার গলা ভেঙে যাবে তো।" হেডস্যারের কথায় নিষেধ না প্রশ্রয় কী ছিল শুভাশিসদাই জানেন। কিন্তু শুভাশিসদার গলার আওয়াজ এবার আকাশ ফাটিয়ে দিল। বিকাশ  হতভম্ব হয়ে বল ছেড়ে শুভাশিসদার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। দীপ্তেশবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে গা এলিয়ে বিড় বিড় করে বললেন-"এরই নাম খেলা! বুড়ো মানুষকে শিশু করে দেয় আর শিশুকে মানুষ।"

খেলা বেশিরভাগ সময় সবুজ ভবনের বক্সের আশেপাশেই চলছে। গোল এখনো হয়নি। লাল ভবনের স্ট্রাইকাররা সব গোলকানা। ক্ষেপে গিয়ে শুভাশিসদা বিকাশকে ছেড়ে নিজের টিমের স্ট্রাইকারদেরই টার্গেট করেছে। লাল ভবনের বক্সে গোলকিপার সুকান্ত আর গোবিন্দ পা ছড়িয়ে বসে গল্প করছে। হঠাৎ শুভাশিসদা মিহিরের কাছে এসে কনুই দিয়ে পেটে খোঁচা মেরে বলল - "আমার গোলকিপারকে দ্যাখ।" মিহির চেয়ে দেখে সুকান্ত গোলপোস্টের নীচে নাই? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, গোলপোস্টের পিছনে দর্শকদের মধ্যে কী যেন করছে? ভ্রু কুঁচকে শুভাশিসদার দিকে তাকাল মিহির। শুভাশিসদা মিটি মিটি হাসছে। তারপর নিচের ঠোঁট বাঁ হাতের দুই আঙুলে চেপে ধরে ডান হাতের দুটো আঙ্গুল ঠোঁটের ওপর রেখে চোখ নাচাল। মিহির বুঝল ব্যাপারটা -"ডোপিং? রেফারিকে বলে দিই আপনার প্লেয়ার ডোপ করে খেলছে। লাল কার্ড দেখাবে কিন্তু।" শুভাশিসদা হাসতে হাসতে বলল -"জানিস, ও জমিতে ট্রাক্টর চালায়। বাঁধের কাজে বড় বড় পাথর মাথায় বয়ে নিয়ে যায়। ডোপিং না করে ও থাকতে পারবে? সেদিন তো দেখি আমার ক্লাসেও খৈনি খাচ্ছে। কিছু বলিনি বুঝলি। ও ছেলে মানুষ হয়ে গেছে।"

প্রথম খেলা গোলশূন্য ভাবে শেষ হল। কাল নীল ভবনের সাথে দেবজিতদের খেলা। নিতাই মিহিরের পাশে বসে খেলা দেখছিল।

-"কি বুঝলে নিতাই?"

নিতাই চিন্তিত ভাবে উত্তর দিল -"আর কী। সবুজকে হারাতে হবে। লালের সাথে ড্র আর দেবজিতদের সাথে যতটা পারো কম গোল খাও। সোজা হিসাব।"

দেবজিতদের সাথে নীল ভবনের খেলা চলছে। পুরো খেলাটাই নীল ভবনের হাফে হচ্ছে। অপূর্ব খেলছে দেবজিত। উত্তরপাড়ায় খেলে এসে ওর খেলার ধার আরো বেড়েছে সাথে গেম সেন্স ও তৈরি হয়েছে। কি দারুণ দারুণ সব বল বানাচ্ছে! ফার্স্ট হাফ প্রায় শেষের দিকে। এখনো গোল খায়নি নীল ভবন। নিতাই সাইড লাইন থেকে প্লেয়ারদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। নীল ভবনের ডিফেন্সে গৌরাঙ্গ আর শাজাহান কিন্তু বাঘের মতো লড়ছে। সারাক্ষণ বন্যার স্রোতের মতো এই আক্রমণের বিরুদ্ধে মাথা ঠান্ডা রেখে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া মুখের কথা না। একটাও ভুল এখনো পর্যন্ত করেনি। এবারের স্কুল টিমে এই দুজন নির্ঘাত চান্স পাবে। তবে অবাক করার মতো খেলছে শুভঙ্কর! ফুটবল খেলাটা ও সত্যিই জানে না। কিন্তু কী অসম্ভব পরিশ্রম করে যাচ্ছে ছেলেটা! যেখানে বল, সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছে। দেবজিতদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখছে। ওর জন্য দেবজিত খেলা তৈরির জায়গা পাচ্ছে না। এই খেলাটাই যদি ক্রিকেট হত, ওর এই পরিশ্রম কোনো দাম পেত না। কিন্তু ফুটবল এমন একটা খেলা- যেখানে একজন এথলিট এর প্রতিটা গুণ কিছু না কিছু দাম পায়। ছেলেটা লং জাম্পে ডিস্ট্রিক্ট খেলে এসেছে অথচ স্কুলে কেউ সেভাবে ওকে চেনেই না। মিহিরের কেন জানি মনে হচ্ছিল - শুভঙ্কর আসলে প্রতিষ্ঠা চায়। দেবজিত, রফিক, বিকাশের মতো গোটা স্কুল ওকে চিনবে, ওকে মাথায় করে রাখবে - এই খিদেতেই কি শুভঙ্কর এত মরিয়া হয়ে প্রায় প্রাণ বাজি রেখে খেলছে? হাফ টাইমের বাঁশি পড়তে মিহিরের ভাবনায় ছেদ পড়ল।

যেন বাঁশি বাজারই অপেক্ষা সবাই করছিল। এই চাঁদি ফাটা রোদে ত্রিশ মিনিট খেলা, মুখের কথা না। প্লেয়াররা আমগাছের ছায়ায় এসে সব শুয়ে পড়েছে। ভলান্টিয়াররা ওদের জল আর গ্লুকোজ খাওয়াচ্ছে। মিহির আর নিতাই প্লেয়ারদের কাছে এগিয়ে গেল। নিতাই সবার খোঁজ নিচ্ছে - কার চোট লেগেছে, কার দম ফুরিয়েছে। মিহির সবার পিঠ চাপড়ে দিল -"তোরা দারুণ লড়াই করছিস। এই লড়াইটাই আরো আধ ঘন্টা দিতে হবে। রেজাল্ট নিয়ে ভাবিস না। লড়ে যা।" দুজন প্লেয়ার আর টানতে পারছে না। ওদের চেঞ্জ করা হল।

সেকেন্ড হাফের খেলা মিনিট পনের মতো গড়িয়েছে। এখনো গোল করতে পারেনি দেবজিৎরা। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে খক নড়তেই চাইছে না। এইসময় বক্সের একটু বাইরে ফাউল করল গৌরাঙ্গ। ফ্রী কিক। বক্সের ডান দিকে বল বসান হয়েছে। দেবজিত ফ্রি কিক নিবে। ও নিচু হয়ে এঙ্কলেট ঠিক করছে। তারপর সোজা হয়ে পা ফাঁক করে কোমরে দু’হাত দিয়ে দাঁড়াল - রোনাল্ডোর মতো। ওর চোখ ওয়াল এর একদম বাঁ দিকের ছেলেটার মাথায়। নিতাইয়ের বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে। রেফারি বাঁশি দিতেই তিন পা দৌড়ে ডান পায়ের ইনস্টেপ দিয়ে বলের ডান পাশে পা টা রোল করাল। বলটা ঘুরতে ঘুরতে ওয়ালের বাঁ দিকের ছেলেটার মাথার পাশ ঘেঁষে পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাবার মুখেই বাঁক খেয়ে ক্রস বারের ঠিক নিচ দিয়ে জালে জড়িয়ে গেল। বিশ্বমানের গোল! গোটা মাঠ উল্লাসে ফেটে পড়ল। নিতাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে। নিজের অজান্তেই মিহির হাততালি দিয়ে বলে ফেলল -"সাবাশ দেবজিত!"

ওই গোলটার পরে নীল ভবনের খেলা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেল। শেষ দশ মিনিটে আরো দুটো গোল খেল। একটা দেবজিত করল আর একটা করালো।

কিন্তু রাখে হরি মারে কে? গ্রুপলিগের খেলা শেষ। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে দেবজিতদের সাথে নীল ভবনকেই খেলতে হবে। দুটো ম্যাচ ড্র করে আর একটি ম্যাচ হেরে, তিনটি ম্যাচে একটিও গোল না করেই ফাইনালে! গোটা টুর্নামেন্ট এ একমাত্র হলুদ ভবন গোল করেছে -এগারটা! দেবজিত একাই ছয়টা। কী খেলছে ছেলেটা! চোখ জুড়িয়ে যায়। নীল ভবনের অপরাধ ওরা কম গোল খেয়েছে- তাই ফাইনালে আবার  মিহিরদের দেবজিতের কাছে বেইজ্জত হতে হবে। এই বছর মিহির একেবারেই চায়নি ফাইনালে উঠতে। কী বিশ্রী একপেশে একটা ফাইনাল হবে- ভাবলেই মিহিরের কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। লাল ভবন ফাইনাল খেললে তাও হয়ত একটা লড়াই হত।

শেষ ম্যাচটা লাল ভবনের সাথে হলুদ ভবনের ছিল। ইতিমধ্যে লাল ভবন তিন গোল খেয়ে গেছে। শুভাশিসদা চুপচাপ খেলা দেখছে! আর একটা গোল খেলেই নীল ভবন ফাইনালে! খেলা শেষের দু’মিনিট আগে সেই গোলটাও দেবজিত করে ফেলল। শুভাশিসদার মুখের দিকে তাকাল মিহির। মনে হল শুভাশিসদা স্বস্তি পেয়েছেন। পাশে বসা নিতাইয়ের দিকে তাকাল এবার - স্টপ গ্যাপে অংকের ক্লাসে পাঠানো হলে নিতাইয়ের মুখটা ঠিক এরকম থাকে। ওর কাঁধে হাত রেখে মিহির বলল -"তাহলে নিতাই, পনেরই আগস্ট ফাইনালে।" খেলা দেখতে দেখতে নিতাই বলল -"ওইদিন আমি স্কুলেই আসবো না। কী করবে তুমি বোঝো।" বলতে বলতেই খেলা শেষের বাঁশি বাজল। শুভাশিসদা তিনদিনের বাসি পায়খানা পরিষ্কার হওয়ার মতো মুখ নিয়ে নিতাইয়ের কাছে এসে বলল -"বেস্ট অফ লাক ফর দি ফাইনাল।" নিতাই চোখ বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল -"শুভাশিসদা ফাইনালে আমাদের হয়ে দেবজিতকে স্লেজিং করতে হবে কিন্তু।" মিহির মনে মনে ভাবল- হ্যাঁ, স্লেজিং, রেফারিং এখন এগুলোই ভরসা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri