লালপরি-২/মধুপর্ণা রায়
লালপরী
মধুপর্ণা রায়
এই মেয়েটা ফর্সা নয়। রঙে একটা সবজে ভাব আছে। নরম পাতার মতো মুখ। শাক্য বলল-- একটু তাকিয়ে থাক।
মানে?!
ব্যস। আর নড়বে না। সবুজ রঙে তুলি ডুবিয়ে দ্রুত হাত চালাল শাক্য।
এসব ছাড়ুন তো। যত্তসব বাড়াবাড়ি।
শাক্যর ভেতরে চাবুক পড়ল। মধুমন্তীকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা ওকে পড়ে শোনানোর পর এক্কেবারে এমনি করেই বলেছিল-- ন্যাকামি রাখ। যত্তসব বাড়াবাড়ি।
শাক্য তখন চাকরি ছেড়েছে মধুমন্তীর ভরসায়। শুধু লিখছে আর লিখছে। বুকের ভেতর অব্যক্ত অনর্থক যন্ত্রণার চাপ। মনে হচ্ছিল.... সে কারো চাকর নয়। কারো আদেশ পালন করতেও সে বাধ্য নয়। সে রাজা। মাথা নোয়ানোর জন্যে জন্ম নয় তার। কোনো নামী- দামী কোম্পানি তার মতো স্রষ্টাকে কিনে রাখতে পারে না। মাথা নোয়ালো শাক্য। শাক্য সিনহা। প্রতিষ্ঠানের কাছে। পাবলিকেশনের কাছে। নামী এবং দামী পাবলিকেশন। শ্বাস উঠে এল শাক্যর। সে তুলি ফেলে দিল। মল্লিকা কেমন থতমত হয়ে গিয়ে বলল-- এ্যাই, সত্যি সত্যি আঁকবেন না নাকি?! আমি তো এমনিই.... মানে....
শাক্য তাকাল। মেয়েটার ধারাল দৃষ্টি একটু বিভ্রান্ত হয়ে আছে। বেচারি! বলল-- আর ইচ্ছে করছে না। তুমি ছবি ভালবাসো?
নাহ। ওইসব আমি বুঝি না। কী আঁকছিলেন?
শাক্য বলল-- একটা মেয়েকে।
কী লাভ হবে তাতে? মল্লিকা তাকিয়ে আছে। খুব হতাশায় মাথা নাড়ল শাক্য সিনহা-- নাহ। লাভ কিছুই নেই! চল, একটু লনে গিয়ে বসি।
বিস্তৃত লনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দীর্ঘ সব গাছ। পাতায় পাতায় হাওয়া খেলছে। অল্প শব্দে বেজে যাচ্ছে পাতা। সন্ধ্যার ধূসরতা। আকাশে চাঁদ স্পষ্ট। লনে পাতা চেয়ারে বসল শাক্য। তার কিছুই ঠিক ভালো লাগছে না। দীর্ঘ বছর পর উত্তরবঙ্গে আসা। রঞ্জাবতী সঙ্গে আসতে চেয়েছিল। জঙ্গল - পাহাড় ঘুরতে খুব ইচ্ছে তার। শাক্যর সঙ্গে প্রকৃতির নির্জনতায় থাকতেও হয়ত ইচ্ছে হয়েছিল। শাক্য রাজী হয়নি। বলেছিল-- রঞ্জা, আমাকে বাঁধতে চেয়ো না। তাতে লাভ হবে না।
রঞ্জাবতী অবাক- আহত চোখে তাকিয়েছিল কয়েক সেকেন্ড। আর কিছু বলেনি তারপর।
শাক্যর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় সবচেয়ে এগিয়ে রঞ্জাবতী। বহ্নি বোসকে টপকে ফেলেছে। রঞ্জাবতী এক না শেষ হওয়া চিঠির মতো মেয়ে। এস এম এসের যুগে সে এক দীর্ঘ চিঠি। চিঠি জুড়ে এক খেয়া পারাপার।
আপনি বিয়ে করেননি?
শাক্য চমকে তাকাল। মল্লিকার কমলা শাড়িতে ওগুলো কি জোনাকি?! টিপটিপ করছে অন্ধকার আভাসে।
-- তোমার শাড়িতে ওগুলো কি জোনাকি?
মল্লিকা উচ্চকিত হাসল। লুটিয়ে পড়ছিল। খুলে যাচ্ছিল আঁচল। শাক্য দেখল, উচ্চ বৈভব। টপ করে খসল একটা পাতা। শাক্যর মনে হল, আটকে গেল ঐ বৈভবের খাঁজে।
-- আপনি মাইরি একটা লোক! চুমকি.... চুমকি...। অন্ধকারে চিকমিক করে।
কিন্তু জোনাকি তো আছে?
কী? ভ্রু কুঁচকে তাকাল মল্লিকা।
-- জোনাকি? নেই?
আদাড়েবাদাড়ে থাকে। ঝোপঝাড়ে। কী করবেন জোনাকি দিয়ে? চচ্চড়ি খাবেন?
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴