সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23-June,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 543

টুপটাপ উত্তর-২/শুক্লা রায়

টুপটাপ উত্তর-২/শুক্লা রায়

গাছবুড়ি
শুক্লা রায়

শনশন করে একটা হাওয়া ছুঁয়ে গেল। বুড়িটার সাদা ধবধবে চুল আলগোছে নাড়িয়ে দিয়ে গেল যেন। গাছটার পাতাগুলো কথা বলে ফিসফিস। বুড়োটাই হয়ত বা। বুড়ি মন পেতে দেয় গাছের ডালে, ঝুপসী পাতায়। এই জারুল গাছটা লাগিয়েছিল বুড়ো। বুড়ো মরতেই বুড়ির যত মায়া পড়ল গাছটার উপর। নাকি গাছটাই বুড়ির কাছে ডাক পাঠালো কে জানে! বুড়ো প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার ছিল। মরে যেতে বুড়ি পেনশন পাচ্ছে। যতদিন বুড়ো ছিল, কতবার মনে হয়েছে নিজে দু পয়সা ইনকাম করতে পারলে বুড়োকে বুঝিয়ে দিত এই বিন্দুবালাও কিছু কম নয়। কিন্তু কী আর হবে! ছেলে-মেয়ে মানুষ করতে করতে দিন শেষ। তা মানুষ আর কী হল! মেয়েটা তো  পালিয়ে বিয়ে করল। বাপ তো কিছুতেই মানবে না! ছেলে কিছুই করে না। বাপের টাকায় ফুটানি। সে এক ঝড় গেছে পরিবারের উপর দিয়ে। কিন্তু সেও বিন্দুবালা। বাপকে রাজী করিয়েই ছেড়েছে। এখন মাঝে মাঝে ভাবে, হয়ত বা ভুলই করেছে। কিন্তু না করেই বা কি করত! জামাইকে কিছু একটা কাজ ধরানোর অনেক চেষ্টা করেছিল মানুষটা। যতদিন বেঁচে ছিল মনে যা-ই থাক, ব্যবসা করার টাকা, মায় একটা ছোট্ট দোকানঘর পযর্ন্ত করে দিয়েছে। দেখা গেল সব টাকা উড়িয়ে দিয়ে শ্বশুরের টাকায় বসে বসে খেতেই তার পছন্দ বেশি। হঠাৎ বিন্দুবালার রাগ হল খুব। গাছটার দিকে তাকিয়ে খুব করে বকে দিল। গাছ কী বুঝল কে জানে! কিছু বলে না। অল্প হাওয়ায় মাথা ঝাঁকিয়ে হাসল শুধু। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল অমলের মা, হাতে ছাগলের দড়ি, মাঠ থেকে এনে বাড়ির কাছাকাছি কোথাও বেঁধে রাখবে। একেবারে সন্ধ্যায় ঘরে তুলবে। কান্ড দেখে ঠোঁট টিপে হাসল।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে এক কাপ চা না হলে চলেই না বিন্দুবালার। বিন্দুবালা বড্ড সেকেলে নাম। কিন্তু মানুষটা বড়ই আধুনিক তিনি। সেজন্য জীবন-যাপনেও তার ছাপ স্পষ্ট। ছেলের বিয়ের আগে একা হাতে সংসারের সব কাজ সামলেও খুব পরিপাটি থাকতেন। সেরকমই কাটছিল ভালোই। বৌও ঈশ্বরের কৃপায় ভালোই হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি। একদিক না পেলেও একদিক ভালো পেয়েছেন ভেবে মনে মনে শান্তি পান। ছেলে সেরকম কিছুই করে না। মানে স্থায়ী কাজ কিছু নয়। নেতাদের সাথে ওঠবোস করে কন্ট্রাকচুয়াল কাজ কিছু করে, দুয়ারে সরকারেও কী সব লেখালেখির কাজ পায়, ওই আর কি। পড়েছে ভূগোলে এম এ, বি. এড। কিন্তু চাকরি পায়নি। চাকরি না পেলে সে বিদ্যারই বা লোকের কাছে কী দাম?
ছন্দপতনটা টের পেলেন মানুষটা চলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরে। বুকটা হু হু করলেও আস্তে ধীরে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সবে। পেনশনও চালু হয়ে গেছে। টাকাটা ছেলেই তুলে আনে। তিনি শুধু সই করেন। ওনার হাতে কিছু দিয়ে ছেলেই পুরো টাকাটা রাখে। লাগবেই। এতদিন তো বাবাই সব করেছে। বিন্দুবালা অবশেষে পুজোপাঠে মন দিলেন। কিন্তু মন কী আর বসে! তারপরেই একদিন অনুভব করলেন কোথাও যেন তাল কেটে গেছে। প্রথম প্রথম ধরতে পারলেন না, নাকি নিজের ভাবনাকেই বিশ্বাস করলেন না। অবশেষে বুঝলেন। সকালের চাটা পেতে দেরি হচ্ছে। বৌমার গলার মা ডাকটায় সেই প্রাণের টানটায় যেন ফাঁকি পরে যাচ্ছে। বিন্দুবালা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এরপর কথায় কথায় শাশুড়ির কড়া গলায় সমালোচনাও শুরু হল। বিন্দুবালা কখনোই জোর গলায় কারো সঙ্গে ঝগড়া করেননি। এখনও করলেন না। সরে গেলেন সবকিছু থেকে।
ক্রমশ জারুল গাছটার ছায়া টানতে লাগল তাকে। যখন তখন গাছটার নিচে গিয়ে বসেন। মনে মনে কথা বলেন। ক্রমে তা উচ্চারিত হতে লাগল। বাড়ির লোকও শান্তি পেল। বাড়িতে থাকলেই বুড়ির নানারকম আব্দার। তার চেয়ে এই ভালো। আসলে মনের যত অভিমান, কষ্ট সব তিনি বুড়োকে শোনান। বুড়ো হাসে। সে হাসিতে ধীরে ধীরে তিনিও নিভে যান। শান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।

একটা অস্ফুট সকাল। সেদিন যেন আলো নামতেই চাইছে না উঠোনে। অপরিচিত একজন কেউ কথা বলছে বসে। শেষ কথাটা শুনে তিনি চমকে উঠলেন। মোটা টাকার বিনিময়ে ছেলে গাছটা বিক্রি করে দিচ্ছে। তিনি এই প্রথমবার চিৎকার করে উঠলেন। প্রায় পাগলের মতো প্রতিবাদ করলেন ছেলের কাছে। হাল ধরতে বৌমা এগিয়ে এল। নাতির একটা গিয়ার লাগানো সাইকেল চাই। তো এটুকু আব্দার তো সব ঠাকুমাই কম-বেশি মেটায় নাতি-নাতনিদের! বিন্দুবালার বুকটা হু হু করে উঠল। ঝামেলা দেখে লোকটাও মানে মানে উঠে পড়ল। তবে যাওয়ার আগে টাকা কিছু অ্যাডভান্স করে বাইক স্টার্ট দিল। আকারে-ইঙ্গিতে কথা হল কালকেই গাছ কাটার মজুর চলে আসবে। বিন্দুবালা বুঝলেন, কিছু বললেন না, ঘরে গিয়ে দরজা দিলেন। পরদিন সেই ঘর থেকেই একেবারে বের হলেন শ্মশাণে যাওয়ার জন্য।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri