শূন্য আমি পূর্ণ আমি/পর্ব : ১৯
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
কে একজন, হয়তো অতি হিতৈষী আমাকে ফোনে শ্লেষের সাথে বললেন আমি কি জীবনস্মৃতি লিখছি! আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকার পর বললাম, না বন্ধু জীবন কথা আমার! অসম্পূর্ণ এই জীবনে বড় কিছু নেই।তবে এই আমি মাঠে ঘাটে বৃষ্টিতে কুয়াশায় রোদ্দুরে ঘুরেছি। দেখেছি হাসিখুশি রোদ, পেত্নীর মতো কুয়াশা, মাঠে ধানের শীষের নমন, পাখিদের একাডেমী, দু:খের জারে কাঁপা মানুষের বেদনা এবং কিছু মানুষের হাসিখুশির সূর্যোদয়। এরা আমাকে খেলার মাঝে ডেকেছে, কান্নার অশ্রু দেখাতে চেয়েছে। আমি শুধু হাত পেতে সেই অশ্রু ধরেছি, মাটিতে পড়তে দিইনি কেননা তাতে মাটি উর্বর হবে না বরং কথাসরিৎসাগরে এই জলকণা হারিয়ে যাবে! তবে শক্তি চট্টোপাধ্যায়-এর মতো আমিও হয়তো 'কোথাকার তরবারি কোথায় রেখেছি'র মতো অবস্থা করে ফেলেছি। লিখতে চাইছি চাঁদের প্রমা হয়ে যাচ্ছে মারীচের উপমা! কিম্বা গড়তে চাইছি শিব হয়ে যাচ্ছে বাঁদর! তাকে বললাম, মহাশয় এ জীবন কথা নয়, জীবন অনুষঙ্গ। আমি নয় আমাদের কথা। এ আমার জলরং-এ আঁকা নতজানু কথা। 'জীবনস্মৃতি' থেকে 'অটোবায়োগ্রাফি অফ এন আননোন ইন্ডিয়ান' যার মাথায়, সে শুধু শিশুর মতো হাততালি দিতে জানে আরণ্যক জ্যোৎস্নায়।তার হাতে কলম ওঠে, কল্পনা জ্ঞান হারায়। আমার সাধ্য কি বন্ধু!
পরমপ্রিয় কবিই লিখতে পারেন 'স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ যাহা কিছু ঘটিতেছে তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি অনুসারে কত কি বাদ দেয় কত কি রাখে! কত বড়কে ছোট করে কত ছোটকে বড় করিয়া তোলে।' আমি তো ঐ পথে হাঁটিনি।
আমি যে চে গুয়েভারার, আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরীকে অবশ্যপাঠ্য করেছিলাম। নিত্য পড়তাম ড.অশোক মিত্রের 'আপিলা চাপিলা'!তো জীবন কথা কি সেটা আমি উপলব্ধি করতাম। ডায়েরীতে কে কতটা সত্যের উপস্থাপন করেছেন জানি না! রবি ঠাকুরও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ মানুষের একটা সুবিধে এই তার তো সব হারানো কথা। আমি তো সেই দলে! ঐ যে প্রবাদ আছে ন্যাংটোর আর বাটপারের ভয় কি! তো গাল নাহয় খেলুম। সত্যটাই বলি!
বাড়ি ফেরার পর জানলাম আমার বিয়ে ঠিকঠাক। পাত্রী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। আমার পড়াশোনার বন্ধু। ও সুনীতি একাডেমী আমি জেনকিন্স। ও সায়েন্স আমি আর্টস তবু দু'জনে মিলে গ্রামার বই লিখেছিলাম যদিও সেই বই ছাপার মুখ দেখেনি। খুব ভালো বন্ধু আমার। ভালো গান গায় মীনাক্ষী। দুজনেই টিউশন করতাম আর কৈশোরের সুখ দুঃখ ভাগ করতাম। কিন্তু বিবাহ! কেউ প্রস্তুত নই, রাজি নই। তবু ঠিক হয়ে গেল। কারণ মীনাক্ষী ব্যাঙ্কে চাকরি পেল আর আমাদের বাড়িতে ভাইবোনের অভিভাবক দরকার। আমার বোঝার আগেই বাইশে ফেব্রুয়ারি আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। আরে বাপরে বিয়ের দিন পরদিন একে একে ইন্টারভিউ। বিয়েটা বোঝাই হল না। মীনাক্ষী মাথাভাঙ্গায় আর আমি ছুটছি ইন্টারভিউ দিতে। ৮৫র ফেব্রুয়ারি আমার বিয়ে আর ৫ই জুন আমি যোগ দিলাম ওদলাবাড়ি বাড়ি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। মীনাক্ষী ভালো বন্ধু ছিল কিন্তু আমি এখন সবচেয়ে বড় শত্রু। কুড়ি বছর ধরে ওর বদ্ধ ধারণা আমি ভুল ডাক্তারের কাছে নিয়ে ছেলেকে মেরে ফেলেছি। আমাদের ছিন্নভিন্ন সংসার। তবু মনে পড়ে বিবাহ অনুষ্ঠান বেশ মজার ছিল।এক প্যান্ডেলে দুই বাড়ির অনুষ্ঠান। এক সাজার জিনিসে দুজন সেজেছি। রাস্তার দুপাড়ে দুজনের শ্বশুরবাড়ি। কে জানত আমাদের বিনা মেঘে বজ্রপাতের কথা। কিভাবে যে ভেঙে গেল সব। শুধু হাহাকার। অলংকার কোথায় অলংকার! ...