সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

07-December,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 398

চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব-১৯
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^

স্মৃতি গুলো কিছুতেই .... 

দরজার ওপর কাঠের নেমপ্লেটে বড় বড় অক্ষরে তাঁর নাম লেখা। রাস্তা থেকে নামটা যদিও বা চোখে পড়ে তাঁকে তেমন পড়ে না।  বিকেলের দিকে কচিৎ লাঠিতে ভর করে সন্তর্পণে তিনি বাইরের বারান্দায় এসে বসেন।  ইদানিং ওটুকুই তাঁর বহির্জগতের সাথে  যোগাযোগ। এখন আর তাঁর খোঁজ নিতে কেউ আসে না। 

মিষ্টি একটা  পাখি ছিল রোজ যে এসে খোঁজ নিয়ে যেত দু'বেলা। নানান কথায় ভরিয়ে দিয়ে যেত নিঃসঙ্গ বিষাদযাপন, সে-ও আর আসে না। সে ভাসিয়েছে পানসিডানা অচিন কোনও মেঘমুলুকে।   প্রিয়মুখগুলি এক এক করে উড়াল দিতেই তাকেও কি গ্রাস করেছিল বিষণ্নতা! ঘোলাটে দৃষ্টি মেলে অসহায় বৃদ্ধ তাই বুকের ভেতর সেই মেঘমুলুকে তাকে যেন আতিপাতি করে খোঁজে। যেখানে ওরা সকলেই আড়াল নিয়েছে চুপিসারে। আজও টিনের সদর গেটটা খোলার শব্দ হলে অজান্তেই তাঁর বুকে কেঁপে ওঠে। মনে হয় ঐ বুঝি সে এল। পরক্ষণেই মন বলে, সে তো আর আসবে না....বৃদ্ধের ওপর তার যে বড় অভিমান! উড়ে এসে ডালে বসলেই বুড়ো বাপ যে তাকে কপট শাসন করে বলত, 'শরীরের প্রতি বড্ড অবহেলা তোর ।  একটুও খেয়াল রাখিস না শরীরের। এই বয়সেই নানান অসুখ বাঁধিয়ে বসেছিস। সময়মতো ওষুধটাও খাস না।  বড় দুশ্চিন্তা হয় রে আমার তোকে নিয়ে।  আমার খোঁজ নিতে রোজ আসতে হবে না তোকে,  তুই শুধু নিজের শরীরের প্রতি একটু লক্ষ্য রাখ , তাহলেই হবে।' 

শুনে সে হাসত। বলত, 'কিচ্ছু হবে না তোমার মেয়ের, বাবা। তুমি মিছিমিছিই দুশ্চিন্তা কর আমার জন্য। '

অথচ এই মিছিমিছি দুশ্চিন্তাগুলোই কেন যে জীবনে বারবার সত্যি হয়ে ওঠে, ভাবলে বড় আশ্চর্য মনে হয় সত্যপ্রিয়র। অনেক, অনেকগুলো সকাল,  দুপুর, সন্ধে পেরিয়ে গেছে। সে আর আসে না।  প্রাজ্ঞ সত্যপ্রিয় সেই অনন্ত আড়ালকে একসময় মেনে নেন জীবনের আরেকটি নির্মম সত্য বলে জেনে। মেনে না নিলে জীবনের চাকাই যে ঘুরবে না। 'চক্রবৎ পরিবর্ততে'-র শ্লোকও যে বড় মিথ্যে হয়ে যাবে! 

নিঝুম দুপুরে সাইকেলের বেল বাজিয়ে ডাকওয়ালাও আর আসে না । খবরের কাগজ পৌঁছে দেওয়ার পাট তার চুকে গেছে বহু আগেই ।  হলুদ ডানায় ভেসে এখন আর উড়েও আসে না বেনেবৌ-পোস্টকার্ড।  নীলডানার ইনল্যান্ড কিংবা শ্বেতকপোত-খামে ভরা নানা বর্ণময় কথামালা। চিঠি-আসা  অপেক্ষার দুপুরগুলো, সে তো কবেই হারিয়ে গেছে।  শেষ যে টেলিগ্রামটা তার-বিভাগের পিওন এসে পৌঁছে দিয়ে গেছিল আজ থেকে প্রায় বছর চল্লিশেক আগে, সত্যপ্রিয়র মনে আছে সেটা ছিল ছোটমাসিমার মৃত্যুসংবাদ । বাংলাদেশের রাজবাড়ী স্টেশন থেকে মাসতুতো ভাইএর পাঠানো বার্তা, 'মাদার ইজ নো মোর।'  সেই টেলিগ্রাম পরিষেবাও আর বেঁচে নেই। দেহ রেখেছে শেষ বার্তাটি পৌঁছে দিয়ে।  

প্রায় বছর তিরিশেক আগে কাঞ্চনপুরের এই কোয়ার্টারে যখন মধ্যবিত্তের 'ইচ্ছেপূরণ-ল্যান্ডফোন'টা বসিয়ে দিয়ে গেছিল  এক্সচেঞ্জের  দুজন কর্মী, বাড়িতে সেদিন যেন খুশির ঢেউ আছড়ে পড়েছিল।  সত্যপ্রিয় সেসময় পুরোদস্তুর চাকুরে।  ইউনিয়নের এক্সিকিউটিভ মেম্বার।  পত্রিকার সম্পাদক।  চেরি-রঙা চারকোনা যন্ত্রটা তখন দিনরাত ব্যস্ত থাকত।  কত মানুষ কত রকম কাজে যে খোঁজ করত সত্যপ্রিয়র তার ঠিক নেই।   নিজেকেও ফোন করতে হত বিভিন্ন প্রয়োজনে।  ছেলেমেয়েরা তাদের বন্ধুবান্ধবদের ফোন করত ।  দুপুরে কাবেরী তার আপনজনদের সাথে কথা বলত। অচিরেই টেলিফোনটা ভীষণ আপন হয়ে উঠেছিল সকলের কাছে । আশপাশের কোয়ার্টারের থেকেও কেউ কেউ প্রয়োজনে আসতেন ফোন করতে।  কালের বিবর্তনে ওটারও প্রয়োজন ফুরোল একদিন। পড়ে রইল আবর্জনার স্তূপে।  হাতে এল মুঠোফোন।  সেই থেকে বোতামটেপা ছোট্ট যন্ত্রটি এখন সত্যপ্রিয়র  নিত্যসঙ্গী।  যদিও বোতাম টিপে ফোন করতে খুব অসুবিধে হয়। চোখের খুব কাছে এনে নম্বর খুঁজে পেতে হয়।  ফোন এলে কানে নিয়ে জিজ্ঞেস না করলে বোঝা যায় না কে কল করছে। 

মাসখানেক আগে ক্যুরিয়রে ছোট্ট একটি পার্শেল এসে পৌঁছেছিল সত্যপ্রিয়র ঠিকানায়। তার আগে দীপাঞ্জন অবশ্য ফোন করে জানিয়েছিল একটি প্যাকেট পাঠাচ্ছে ।  দীপাঞ্জন চৌধুরী,  কর্মসূত্রে যার সাথে পরিচয় হয়েছিল বহুকাল আগে। কেন্দ্রীয় আবগারী দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক দীপাঞ্জন এসেছিল কাঞ্চনপুরের চা-কারখানা পরিদর্শনে। প্রথম আলাপেই সত্যপ্রিয়কে ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে গভীর থেকে গভীরতর হয় সম্পর্ক।  বদলি হয়ে সে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরেও সম্পর্ক আজও অটূট রয়ে গেছে।  যে  দু'একজন এখনও নিয়ম করে সত্যপ্রিয়র খোঁজ নেয় দীপাঞ্জন তাঁদের অন্যতম।  ফোন করে বলেছিল,  

-'সত্যবাবু, আপনার জন্য একটি সামান্য উপহার পাঠাতে চাই।  আশাকরি আপনি আপত্তি করবেন না। '

কী উপহার, কেনই বা হঠাৎ করে উপহার প্রশ্ন জেগেছিল সত্যপ্রিয়র মনে। জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, 'সেটা না হয় নাই বা বললাম।  পেলে শুধু একটু জানিয়ে দেবেন।' কোনও আপত্তি সেদিন শোনেনি  দীপাঞ্জন।  মোড়ক খুলতেই একটি স্মার্ট ফোন বেরিয়ে আসে।  হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করেও যখন বুঝে ওঠা যাচ্ছিল না ব্যাপারটা তখনই দীপাঞ্জনের ফোন আসে, 

-'পেয়েছেন প্যাকেটটা? '

-' পেয়েছি, তবে এটা কেন! '- বিস্মিত সত্যপ্রিয় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। 

-' ওটা আপনি ব্যবহার করবেন। এ আমার অনুরোধ। দু একদিন একটু দেখে নিলেই সড়গড় হয়ে উঠবেন। খুব সহজ। একবার শিখে নিলে আপনাকে আর বোতাম টিপে কল করতে হবে না। '
কী বলবে বুঝে উঠতে পারেনি সেদিন সত্যপ্রিয় । দীপাঞ্জনের আন্তরিক অনুরোধ ফেলতেও পারেনি।  অস্ফূট উচ্চারণে শুধু বলতে পেরেছিল, 'আচ্ছা'।  যদিও সেই স্মার্ট যন্ত্রটার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি সত্যপ্রিয়। ক্ষীণ দৃষ্টি  অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার যন্ত্রটাকে বুঝে ওঠবার পথে। 

বোতামটেপা সহজবোধ্য মোবাইলটাই তাই এখন ভরসা। কলকাতা থেকে ছোট মেয়ে ঐ মোবাইলেই ফোন করে খোঁজ নেয় বাবার। টুকিটাকি নানান কথা হয় তার সাথে। ভাল কিছু পড়লে সে বাবাকেও পড়ে শোনায়। মনটা কিছুক্ষণের জন্য ভালো হয়ে যায়।  এছাড়া প্রায় রোজই ফোন করে অতীন আর শর্বরী।   অভিন্নহৃদয় বন্ধু অতীন। ছয় দশকের যে বন্ধুত্ব একসময় বদলে গেছিল আত্মীয়তায়। কাবেরীর ছোট বোন শর্বরীকে বিয়ে করেছিল অতীন। তখন নতুন গড়ে ওঠা বীরপাড়া হাইস্কুলে বেশ কিছু তরুণ শিক্ষক শিক্ষকতার কাজে যোগদান করেছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামাদাসবাবু ছিলেন একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি।  পরিচালন  সমিতির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন  চা-শিল্পপতি সত্যেন্দ্রনাথ প্রসাদ রায়। তাঁর এক আত্মীয় স্কুলের পরিচালন সমিতির শীর্ষ স্থানে ছিলেন।  স্কুলে শিক্ষাদানের মানোন্নয়নের উদ্যেশ্যে তাঁরা অভিভাবক মন্ডলীর সাথে মিটিং করে স্থির করেন যে উপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক প্রয়োজন।  আর ভাল শিক্ষক আনতে হলে বেতন বাড়ানো দরকার। পরিচালন মন্ডলীর তরফে অভিভাবকদের  কাছ থেকে ডেভেলপমেন্ট ফিজ বাবদ অতিরিক্ত তিন টাকা বাড়ানোর আবেদন করা হয়। অভিভাবকরা রাজি হলেন। বাড়ানো হল বেতন যা তৎকালীন কলেজ শিক্ষকদের প্রাপ্য বেতনের চাইতেও ছিল বেশি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে  বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল জলপাইগুড়ি তথা ডুয়ার্সের কোনও স্কুলে চাকরিরত কেউ এই স্কুলে আবেদন করতে পারবে না। যে কারণে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বেশ কিছু শিক্ষিত তরুণ যোগদান করল স্কুলে। ঠিক সেই সময় হুগলি জেলার দেবানন্দ পুরের ছেলে অতীন স্কুলে যোগদান করে।  শরৎচন্দ্রের পাড়ার ছেলে বলে যার প্রচ্ছন্ন গর্ব ছিল । বীরপাড়া যাতায়াতের সূত্রে অতীনের সাথে আলাপ ঘটে সত্যপ্রিয়র।  আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। যদিও কয়েকবছর স্কুলে চাকরি করার পরেই কলেজে চাকরি পেয়ে শহরে চলে যায় অতীন। 

রোজ দুপুর কিংবা রাতে সময় করে ফোন করে অতীন কিংবা শর্বরী। আজ যেমন ফোন এসেছিল অতীনের। নানা বিষয়ে কথা হয় ওঁর সাথে। রাজনীতি অর্থনীতি থেকে বর্তমান সমাজ, অতীত স্মৃতিচারণ কোনোকিছুই বাদ যায় না। অতীন রিটায়ার করেছে অনেকদিন হল। জেলা শহরে নিজস্ব বাড়ি। এক মেয়ে এক ছেলে। কর্মসূত্রে ছেলে কলকাতায়। মেয়ে কাছাকাছিই থাকে। অতএব বাড়িটায় ওরা স্বামী-স্ত্রী দু'জন। বয়সে সামান্য ছোট হলেও এখনও বেশ কর্মক্ষম রয়েছে অতীন। রিক্সা করে বাজার হাট করতেও বেরিয়ে পড়ে মাঝে সাঝে। বাকিটা সময় কাটে নিজের লাইব্রেরিতে  পড়াশোনা, লেখালেখি নিয়ে।  যদিও চোখের সমস্যা তারও রয়েছে। সম্প্রতি অপারেশন করায় লেখালেখি বন্ধ রেখেছে আপাতত । পড়াশোনা ও সাহিত্য জগতের মানুষ অতীনের  ছাত্র-ছাত্রী, গুণমুগ্ধদের সংখ্যা প্রচুর। অধ্যাপনা ছাড়াও প্রচুর গবেষণামূলক প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস লিখেছে অতীন। গ্রন্থ সমালোচনা কিংবা সাহিত্যের আড্ডার প্রত্যাশায় তাঁর কাছে বই নিয়ে প্রায় প্রতিদিন উপস্থিত হয় উত্তরের কোনও না কোনও কবি সাহিত্যিক।  তাদের সাথে আলাপ আলোচনায় সময় কাটে ওঁর। শর্বরীর সময় কাটে  সাংসারিক কাজকর্ম, অতীনের দেখাশোনা, অবসরে বই পড়ে, টিভি দেখে ।  তবু তার ফাঁকেই ওঁরা খোঁজ নেন সত্যপ্রিয়র। 

কথায় কথায় অতীনকে স্মার্টফোনের কথাটা জানিয়েছিল সত্যপ্রিয়।  কথার সূত্র ধরে ফিরে আসে সেই পঞ্চাশের দশকের ডুয়ার্সের টেলিফোন পরিষেবার কথা। এক্সচেঞ্জ অপারেটর পরেশ সরকারের কথা। বীরপাড়া চা-বাগানের জমিতে গড়ে ওঠা পোস্ট অফিস আর সংলগ্ন টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কথা। অতীনের স্কুল লাগোয়া কোয়ার্টারে আড্ডার কথা।  যে আড্ডায় স্কুলের শিক্ষকরা ছাড়াও আসতেন আশপাশের চা বাগানে কিছু সমমনস্ক মানুষজন।  কথার ফাঁকে ফাঁকে আরো অনেক কথা ভিড় করতে থাকে সত্যপ্রিয়র স্মৃতির ভেতর। মনে পড়ে  আড্ডার বিকেলগুলো । বিকেল গড়িয়ে রাত।  অনেক রাতে সাইকেল করে বাড়ি ফেরা। 

হঠাৎ করে অতীন সেদিন এমন একজনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিল যাকে প্রায় ভুলেই গেছিল সত্যপ্রিয়।

-' সতু, তোমার প্যাট্রিককে মনে আছে ?'-  অতীনের স্থিতধী,  পরিশীলিত উচ্চারণে একধরনের মজলিসি মাদকতা আছে। গল্পে কথায়, নানান প্রসঙ্গাবতারণা করে আড্ডাকে বহুদূর পর্যন্ত টেনে নিতে পারার দক্ষতা আজও একইরকম রয়েছে অতীনের। সেই সঙ্গে রয়েছে অসামান্য স্মৃতি শক্তি। স্মৃতি সত্যপ্রিয়র যদিও প্রখর তবু কেন মনে পড়ল না প্যাট্রিককে! 

-' কে প্যাট্রিক... মনে পড়ছে না তো!' সত্যপ্রিয় বলেন। 

-' সেই যে ব্রিটিশ যুবক, নাংডালা চা বাগানে চাকরি নিয়ে এসেছিল মিঃ কার চলে যাওয়ার পর...'

কার সাহেবের কথা যদিও মনে আছে সত্যপ্রিয়র। ভদ্রলোকের নিজস্ব ছোট্ট একটা এরোপ্লেন ছিল। সেই প্লেনে চেপে তিনি পাড়ি দিতেন কলকাতা, আসাম বিভিন্ন জায়গায়। বাংলোর পাশে এয়ারফিল্ড তৈরী করেছিলেন। পরবর্তীতে  সেই পরিত্যাক্ত এয়ারফিল্ডে ক্রিকেট খেলা হত। 

অতীন বলে যেতে থাকে, 'আরে সেই যে ছেলেটি...সুন্দর চেহারা। ভাল ক্রিকেট খেলত। যার একজন সুন্দরী প্রেমিকা ছিল ইংল্যান্ডের কোথায় যেন... মনে নেই ? আমাদের একদিন ছবি দেখিয়ে বলেছিল প্রেমিকার সাথে একদিনও কথা না বলে সে থাকতে পারে না। মাঝরাতে এসে বসে থাকত এক্সচেঞ্জে, কখন লাইন পাওয়া যাবে সেই আশায়... '

-' হ্যাঁ-হ্যাঁ, মনে পড়েছে এবারে...সেই ছেলেটি তো বেশি দিন থাকতেই পারলই না ইন্ডিয়াতে। প্রেমিকার টানেই তো আবার ফিরে গেল  নিজের দেশে। অমন হোমসিক ইউরোপিয়ান কিন্তু দুটো দেখিনি...' বলতে বলতে সত্যপ্রিয় খানিক যেন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। 

সত্যপ্রিয়র মনে পড়ে তখন সে সবে স্কুলের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কাজলিডাঙার ফ্যাক্টরিতে গুদামবাবু হিসেবে জয়েন করেছে। সে সময় স্কুলের চাকরির চাইতে চা-বাগানের চাকরিতে বেতন ও সুযোগ সুবিধে দুটোই ছিল বেশি।  যে কারনে ফ্যাক্টরি তে একজন অবসর নিতেই ম্যানেজারের কাছে গিয়ে সরাসরি আবেদন জানিয়েছিল সত্যপ্রিয়। তার উপদেশ মতোই জলপাইগুড়ি ডি.আই অফিসে গিয়ে ইস্তফা পত্র জমা দিয়ে রিলিজ অর্ডার নিয়ে এসে জমা দিতেই বড়বাবু নিয়োগপত্র হাতে তুলে দেন। চাকরি পাওয়ার কিছুদিন বাদেই বাবার পুরনো কোয়ার্টার ছেড়ে নতুন কোয়ার্টারে চলে আসতে হয়েছিল। 

অফিস ছুটি হতেই সাত কিলোমিটার সাইকেলে চেপে বীরপাড়ায় চলে যেত সত্যপ্রিয়। সেখানে গেলে দেখ হত বন্ধুবান্ধবদের সাথে। এমনই একদিন টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভেতরে বসে আড্ডা চলছে। রাত তখন প্রায় আটটা। উঠি উঠি করেও ওঠা হচ্ছে না । এটা সেটা নানান প্রসঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে বারবার। ওদিকে পরেশ হেডফোন লাগিয়ে বসে আছে প্যানেল বোর্ডের সামনে। আড্ডার ফাঁকে মাঝে মাঝে দু একটা করে কল ঢুকছে। রাতের দিকে ব্যস্ততা কমে যায়। চা-বাগানের অফিস ছুটি হতেই এক বাগান থেকে অন্য বাগানে লোকাল কল  সচরাচর হয় না। মাঝে-সাঝে দু একটা ট্রাংক কল রিকোয়েস্ট ঢোকে। কল ঢুকলেই প্যানেলের নম্বর লেখা পয়েন্টে বাতি জ্বলে উঠে লিডটা পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সকেটে জ্যাক ঢুকিয়ে কল রিসিভ করে নেয় পরেশ। সামনে পড়ে থাকা কাগজে খসখস করে প্রার্থিত নম্বরটা লিখে সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কাছাকাছি হলে কল কানেক্ট হতে খুব একটা দেরি হয় না। দূরের কল-এ রিলে পদ্ধতিতে কল এক্সচেঞ্জ হতে অনেক সময় লেগে যায়। সেদিন হঠাৎ একটা কল এসেছিল। জ্যাক ঢুকিয়ে পরেশ রিসিভ করে, 

-' হ্যালো , এক্সচেঞ্জ... ' 

ওদিকে থেকে কে কী বলল বোঝা গেল না। পরেশকে বলতে শোনা গেল, ' ইয়েস স্যার... নাউ ইটস আ পিক আওয়ার...ওভারসিজ কল কুড নট বি কানেক্টটেড স্যার... বেটার ইফ ইউ ট্রাই আফটার  ইলেভেন পি.এম স্যার... ও. কে... অলরাইট... থ্যাংক য়্যু.... '

হেডফোনটা নামিয়ে রেখে পরেশ বলে, 'এই হয়েছে এক জ্বালা... '

-' কি হেতু জ্বালা বৎস...? ' শশিভূষণ পাল, ইতিহাসের শিক্ষক প্রশ্নটা ছোঁড়ে। 

-' আরে আর বোলো না... নাংডালায় এক ছোকরা সাহেব এসেছেন... নাম ড্যানিয়েল প্যাট্রিক... সে ব্যাটার রোজ রাতে ইয়র্কশায়ারে তার বান্ধবীর সাথে কথা বলা চাই। জোয়ান ছেলে। বে-থা করেনি। রাতে প্রেমালাপ না করলে তার নাকি ঘুম আসে না। কল বুক করে জেগে বসে থাকবে বাংলোয়। তারপর সারারাত জ্বালাবে 'ডু সামথিং, ডু সামথিং প্লিজ' করে। যোগাযোগ না হলে রাত দেড়টা দুটোয় গাড়ি চালিয়ে চলে আসবে এখানে। এসে হত্যে দিয়ে বসে থাকবে। ঘাড়ে বসে জ্বালাতন করে মারবে... আরে, ওভারসিজ কল কানেক্ট করানো কি চাট্টিখানি কথা... সাহেব সেসব বুঝবে না। বলে কিনা মেয়েটির সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কথা না বলতে পারলে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যাবে। আর বিয়ে ভেঙে গেলে সে নাকি পাগল হয়ে যাবে। জেদাজেদি থেকে একেক দিন কি বলব ভাই, হাতে-পায়ে ধরে  কান্নাকাটি পর্যন্ত শুরু করে দেয় ... '

-' আহা, এ তো প্রেমময়  শ্রীকৃষ্ণের সেই...মম শিরসি মন্ডনং দেহিপদপল্লবমুদারং...! ' বাংলার শিক্ষক অতীনের কথায় সকলে হেসে ওঠে। 

-' তা যা বলেছ... তা ইংলন্ডেশ্বরী রাধিকাদেবীর মানভঞ্জনের জন্য আমার পদপল্লব ধরে টানাটানি কেন রে বাবা...রোজ এক নাটক। তবে একবার যদি কল কানেক্ট হয়ে গেল তো সেদিন তার ফূর্তি দেখে কে! আমাকে বাংলোয়  নিয়ে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করাবেই । নাছোড়বান্দা। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তবে রেহাই পাই। '

-' তাহলে তো তুমি গর্ব করতেই পার পরেশ, ব্রিটিশ সূর্য তোমার পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে,কী বলো।' শশীভূষণ টিপ্পনি কাটে। 

-'  তবে ছেলেটি কিন্তু বেশ জলি।' অতীনের কথা শুনে ভ্রূ কোঁচকায় শশীভূষণ, 'তুমি জানলে কী করে? '

-' খেলার সূত্রে। কারসাহেবের ঐ এয়ারফিল্ডে প্যাট্রিক প্রায়ই বাগানের বাবুদের নিয়ে নেমে পড়ে ক্রিকেট খেলতে। ইন্টার গার্ডেন টূর্ণামেন্টে ছেলেটা নাংডালার হয়ে ভালই খেলেছিল সেদিন।'

' তুমি ওর খেলা দেখলে কবে, কীভাবে ? ' 

- 'সে তোমরা জান না। ্একদিন যেতে হয়েছিল নাংডালায়। স্কুলটিমের খেলায় ওরা আমার আম্পায়ারিং দেখেছিল বোধহয়। আমাকে নিয়ে গেছিল সেই টুর্নামেন্টে আম্পায়ারিং করতে। ব্রিটিশ হওয়া সত্ত্বেও ছেলেটার খেলা ও সৌজন্যবোধ দুটোই আমাকে মুগ্ধ করেছিল ...'  অতীন কথাটা শেষও পারে না,  উত্তেজিত হয়ে শশীভূষণ বলে ওঠে , 

-' আরে রাখো তো ওদের সৌজন্যবোধ। এটা স্বাধীন ভারত। এখন বেশি টেন্ডাই-মেন্ডাই করলে স্রেফ ধোলাই খেয়ে যাবে। সেই ভয়েই ব্যাটারা জড়োসড়ো থাকে। '

- এটা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক নয় শশী,' - অতীন বলে -
'আমি উল্টোটাও দেখেছি কদিন আগেই । ডিমডিমা মাঠে খেলা হচ্ছে, দেখতে গেছি। এক ইংরেজ ম্যানেজার দেখছি বারবার পর্যূদস্ত হচ্ছে একজন আদিবাসী শ্রমিকের পা থেকে বল কেড়ে নিতে। শ্রমিকটির খালি পা। সাহেবের পায়ে বুট। শেষমেশ না পেরে সাহেব তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাউল করে ফেলে দিল। শুধু ফেললই  না, উপর্যুপরি বুট সমেত পিঠে লাথি কষালো জোরে। রেফারি ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজালে সে উল্টে হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়ে বলতে লাগল শ্রমিকটিই নাকি তাকে গুঁতো মেরেছে কনুই দিয়ে। '

তর্কবিতর্কে রাত বেড়ে চলে। ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁতেই হুঁশ হয় সত্যপ্রিয়র। 

-' না-হে, আমি উঠি এবার। অতটা পথ যেতে হবে...' উঠে পড়তেই পরেশ জিজ্ঞেস করে, ' এই যে রাতবিরেতে তুমি রোজ আসা যাওয়া কর ভয় করে না তোমার। '

সত্যপ্রিয় বলে, ' কিসের ভয়? '

-' না, মানে রাস্তাঘাটে কত বিপদই তো ওৎ পেতে থাকে। জন্তু জানোয়ার, চোর-ডাকাত, ঝোপঝাড়ে ভূত-প্রেত কত কিছুই তো থাকতে পারে। ' পরেশকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখায়। 

-' ভূত-প্রেত বিশ্বাস করি না। চোর ডাকাতও আমার মত কপর্দকশূন্য মানুষকে ছোঁবে না। হ্যাঁ, জন্তু জানোয়ারের দেখা অবশ্য মিলতে পারে। তা আজ অবধি দুটো বেজি, একটা শেয়াল আর একটি বনবেড়াল ছাড়া এ পথে আর কোনও বন্য জন্তুর দেখা পাইনি। ' সত্যপ্রিয় জানায়। 

-বাঘের দেখা পাওনি কোনোদিন? 

-'একবার নয় তিন তিনবার। তবে এ পথে নয়, অন্য কোনোখানে।' 

-' তাই নাকি, শুনি তাহলে তোমার ব্যাঘ্রদর্শণের কাহিনি। ' সকলে বেশ নড়েচড়ে বসে। সত্যপ্রিয়র তখন ফেরার তাড়া। যতক্ষণ না বাড়ি ফিরবে সুনয়নী বসে থাকবে খাবার নিয়ে। 

-' আজ নয় অন্য কোনোদিন । ' বলে বাড়ি দিকে পা বাড়িয়েছিল সেদিন সত্যপ্রিয়। 

দিনগুলো কত দ্রুত হারিয়ে গেল। মনে হয় এই যেন সেদিনের কথা। যৌবনের সেই টগবগে দিনগুলো আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সত্যপ্রিয়র। কী অসম্ভব প্রাণশক্তি ছিল তখন। এমনও হয়েছে সারাদিন কাজ করে আবার রাতে যেতে হত ফ্যাক্টরিতে। তবু আড্ডা বাদ যায়নি। আড্ডা থেকে ফিরেই আবার ছুটতে হয়েছে ডিউটিতে। তারই ফাঁকে ফাঁকে নানান বিষয়ের বইপত্র যোগাড় করে পড়াশোনা। অল্পবিস্তর লেখালেখি। সেসময় অতীন আরো একজনের সাথে মিলে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করত। 'নতুন দিগন্ত'। ডুয়ার্স অঞ্চলের প্রথম সাহিত্য বিষয়ক ছোট পত্রিকা। তাতে লিখেছিল সত্যপ্রিয়। লেখা যোগাড় করতে নানা জায়গায় ছুটত অতীন। বহুবার তার সঙ্গী হতে হয়েছে। আশপাশের চা বাগান থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি কোথায় না যেতে হয়েছে। তেমনি অতীনও তার সঙ্গী হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কাজে সত্যপ্রিয়কে যেতে হতো বিভিন্ন চা বাগানে। তখন প্রায়শঃই সে অতীনকে ডেকে নিত। সেখানে বাবুদের মিটিংএ বসে সে মন দিয়ে চুপচাপ শুনতো তাদের সমস্যার কথা। এভাবেই সে একদিন লিখে ফেলেছিল চা-বাবুদের জীবন নিয়ে উপন্যাস ' সবুজ চায়ের দ্বীপে।'

কখনও ছুটির দিনে সকাল থেকে তাসের আসর বসত বাড়িতে। সেখানে বাবুরা অনেকেই আসতেন। আর আসতেন দলগাঁও ফরেস্ট বিটের বিট অফিসার রমেণবাবু। মেদিনীপুরের মানুষ। একা থাকতেন অরণ্যের শেষপ্রান্তে ফরেস্ট কোয়ার্টারে। তাসের নেশা তাকেও সেখান থেকে টেনে আনত। খেলতে খেলতে বেলা গড়িয়ে গেলে সুনয়নী তাকে না খাইয়ে ছাড়তেন না। খেয়েদেয়ে আরো কয়েক হাত খেলে সন্ধে নাগাদ বিটবাবু ফিরে যেতেন শালবনের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা সরু পথ বেয়ে সাইকেলে চেপে তার শূণ্য ডেরায়। একেকদিন বাবুদের ছেলেমেয়েরা তার কাছে অংক বুঝে নিতে, ইংরেজি শিখতে আসত। তাদের অনেকেই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। যাদের খবর পেলে মনটা ভাল হয়ে যায়। 

-'বাবু, চায় পিবেন? '  ভুটকুর ডাকে ঘোর কাটে সত্যপ্রিয়র। মাসখানেক হল ছেলেটাকে রাখা হয়েছে। আদিবাসী হলেও চলনসই বাংলাটা জানে। সারাদিন কাছে কাছে থাকে। এটা ওটা এগিয়ে দেয়। স্নান করতে সাহায্য করে। ধরে ধরে বাথরুমে নিয়ে যায়। রাতে যদিও থাকে না। বাড়ি চলে যায়।  তবে যাওয়ার  আগে ঘরের ভেতর সব গুছিয়ে রেখে দিয়ে যায়। ইউরিন-পট, টর্চ, জলের বোতল, ঘড়ি। যাওয়ার সময় রোজ বলে যায়,' রাইতে বাহারে যাইবেন না বাবু।' আসলে একবার মাঝরাতে উঠে বাথরুমে যেতে পড়ে গিয়ে বিপত্তি বেধেছিল। ভাগ্য ভাল হাত পা ভেঙে পড়ে থাকতে হয় নি বিছানায়। তবে কুঁচকিতে টান লেগে বড্ড ভুগতে হয়েছিল সেসময়। তখনই এই ছেলেটিকে রাখা হয়। বৌমাকে অফিস করতে হয়। নাতনী তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এই অচেনা ভুটকু আর তার মেয়েই এখন সত্যপ্রিয়র অষ্টপ্রহরের যষ্টি। 

-'দিবি? দে তাহলে। ' সত্যপ্রিয় আপত্তি করেন না। একটা সময় ছিল কাবেরী বেঁচে থাকতে দিনে দশ বারো কাপ চা হয়ে যেত। ডিউটিতে থাকলে আরো বেশি। এখন দিনে দু কাপ বরাদ্দ। কচিৎ বাড়তি এক। আজ যেমন জুটে গেল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri