সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-December,2022 - Wednesday ✍️ By- অমর চক্রবর্তী 491

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১৮

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/পর্ব:১৮
অমর চক্রবর্তী                                  
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

খামটায় ইংরেজীতে লেখা OOdlabari high(H.S) School, P.O. Manabari Dt. Jalpaiguri.
খামটা হাতে নিয়ে বসে রইলাম! এ আবার কোথায়? চাকরির জন্য ভুটান দৌড়েছি! কিন্তু এই জায়গা কোথায়? জলপাইগুড়ি সে তো ঠিক আছে! কিন্তু জলপাইগুড়ি তো অনেক বড় জেলা! ডুয়ার্স তো অনেকটাই জুড়ে। Dooars মানে দ্বার বা দরোজা। ভুটান থেকে কোচবিহার বা উঃ বঙ্গে আসার আটটি দরোজা। ইতিহাস পড়ে জেনেছিলাম ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ভোটিয়ারা বেহার (কোচবিহার) রাজধানীতে আসে। ভোটান রাজার নির্দেশে পেনসু-তোমা বেহার রাজধানীতে অবস্থান করে রাজকার্যের সকল বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ করে। ভোটিয়ারা বিনা বাঁধায় ক্রমে ক্রমে বেহার রাজ্যের জল্পেশ্বর, মন্দাস, লক্ষ্মীপুর, সন্তরাবাড়ি ভলকা গ্রাস করল।  ১৮৭২-৭৫এ মহারাজা ধরেন্দ্র নারায়ণের সময় পেন-সু তোমা ভোটানে ফিরে গিয়ে ভাগ্নে জিম্পকে পাঠান বেহার রাজ্য দখলের জন্য। বীজেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর জিম্পে রাজপ্রাসাদে সৈন্যদলসহ  অবস্থান নিলেন এবং রাজধানীকে সুরক্ষিত করতে গীতালদহ বালাডাঙা, মোয়ামারি, লক্ষ্মীপুরে দুর্গ নির্মাণ করে গোটা বেহার রাজ্যের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করলেন। তারপর অনেক কাহিনি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহায়তায়  দখলদারি মুক্তি। সে অনেক ইতিহাস-কথা! কিন্তু আমার তো কাজ হল না! ওদলাবাড়ি বা উদলাবাড়ি কোথায়! তবে একটু একটু  জানা গেল ডুয়ার্স  নামকরণ কেন! সে সময় এর বেশি পড়ার সময় ছিল না! আমাকে খুঁজে বের করতে হবে  স্কুলটা কোথায়! তবে ইতিহাসে একটু চোখ রেখেছিলাম  যদি ইন্টারভিউতে কাজে লাগে। 
১৯৮৫ সাল আশ্চর্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের সবাই বলতে পারলেন না! একজন যথার্থ হদিশ দিলেন। তুমি আমাদের বাসে গিয়ে নামবে ময়নাগুড়ি। ওখানে বাস বদলাতে হবে। ক্রান্তির বাস বা মালবাজার ওদলাবাড়ি বাগরাকোট হয়ে শিলিগুড়ির বাস। আর একটা রুট আছে ধূপগুড়ি নেমে জটেশ্বর হয়ে। তবে ময়নাগুড়ি দিয়ে যাও। উনি আমাকে পুরো মানচিত্র বুঝিয়ে দিলেন।দিন এসে গেল। কাগজপত্র গুছিয়ে একটা ঝোলা ব্যাগ সম্বল করে রওনা হলাম ওদলাবাড়ি। উর্দু কবি ইকবাল-এর কবিতা মাথায় ঘুরছে--'জীবনের পথ নিহিত আছে কাজের মধ্যেই/সৃষ্টিতে আনন্দ পাওয়াই হচ্ছে জীবনের ধর্ম/ওঠো, নতুন জগৎ সৃষ্টি করো।' সত্যি বলতে কি কলকাতায় চলে যেতাম নির্ভয়ে। শিলিগুড়ির ফার্স্ট বাসে চাপার পর একটু ভয় পেলাম। ঠিকঠাক যেতে পারব তো? নাকি সারাদিন ঘুরপাক খাব! শেষে ইন্টারভিউটাই দেওয়া হবে না! ইউনিভার্সিটি যাওয়াটা ঠিক ছিল। কিন্তু ডুয়ার্স সেই অর্থে যাওয়া হয়নি। হ্যাঁ কন্ট্রাকটরের চাকরি বা দেওচড়াই বাঁধের সময় বক্সাফোর্ট গিয়েছিলাম সে বহুকাল আগে। ময়নাগুড়ি বাইপাস হয়ে শিলিগুড়ি গেছি। এবার নামতে হল ময়নাগুড়িতেই। ক্রান্তি  বাসস্ট্যান্ডে নামার পর শুনতে পেলাম চালসা ডামডিম  ওদলাবাড়ি ক্রান্তি। কি গাড়ি না দেখেই উঠে বসলাম। দশটার কাছাকাছি। কি বাস রে বাবা, ইউরো টু ছাড়িয়ে গেছে! তবু জানালার কাছে একটু জায়গা পেলাম। এবার তো অজানা। দু'চোখ ভরে দেখতে হবে। দেখতে দেখতে ভিড় হয়ে গেল। বেশির ভাগ পোশাক আশাক দেখে বুঝে গেলাম কেউ ভুটিয়া নেপালি দুজন বৃদ্ধা মহিলা কানে বিশাল দুল যেন কান কেটে বেরিয়ে যাবে, মুখমন্ডলের ভাঁজ যেন কোনো দেশের মানচিত্র! আর সেই মুখের গন্ধ বুঝলাম হাড়িয়া জাতীয় কিছু খেয়ে এসেছে। আমি যতটা সম্ভব মুখটা বাইরে রেখে বসলাম। গাড়ি আর ছাড়ে না! আমার ইন্টারভিউ দুটোয়। কনডাক্টর যথারীতি সব জায়গার বেসরকারি বাসের মতোই। ড্রাইভার স্টার্ট দিয়ে এক পা এগোয় আর দু'পা পেছোয়। আর খালাসি চিৎকার করতে থাকে এই ক্রান্তি ক্রান্তি...। গাড়ি তবু ছাড়েনা! এগারোটা বেজে গেল। অবশেষে বাসের মাথায় দশজনের মতো ওঠার পর এক্সেলেটারে চাপ। গাড়ি চলল।
'তমসি তিষ্ঠন তমসো হন্তরো যং তম ন বেদ' তুমি যেমন অন্ধকারে আছ তেমনি আলোতে। তুমি সম্যক প্রকারে আপনাকে সর্বত্র প্রকাশ করছ। মনে মনে কেন এটা আওড়ালাম। এ তো আমার কথা নয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কথা। কিছুদিন আগেই এগুলো পড়ে এম.এ পাশ করেছি । ভুলিনি! কেন মনে এল কারণ আমি ততক্ষণে লাটাগুড়ি ফরেস্টে ঢুকেছি। গাড়ির সামনে দিয়ে কয়েকটা বাঁদর রাস্তা পার হল। দুপাশে গাছের সারি মাঝে পিচ রাস্তা। সূর্যকিরণ কখনো রাস্তা আলোকিত করছে আবার বনানীর আলুলায়িত কেশের গাঢ় অন্ধকার দেখাচ্ছে। আহা এই তবে ডুয়ার্স! নীরবতা আবার খান খান ভেঙে দিচ্ছে পাখির গানা ঝাপটানো। বাসের ভেতরে অজানা ভাষা, অচেনা মানুষ।কন্ডাকটর এল -- কাঁহা  যায়েঙ্গে ? বাংলায় বললাম-- ওদলাবাড়ি।
'নীরবতা যার ভাষা, সৌন্দর্য তার অঙ্গভূষণ, নৃত্যচপল জলধারা তার পায়ের নূপুর' (ডুয়ার্স বিচিত্রতা : ড.দিগ্বিজয় দে সরকার) আরে ঐ তো পাহাড়। নীল আবছা পাহাড় ক্রমে মূর্ত হচ্ছে।কনডাকটর চিৎকার করে উঠল চালসা চালসা। অনেকেই নেমে যাচ্ছে। ওপরে তাকিয়ে দেখি পাহাড়ের ওপরে বাস যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে? পাশে এসে বসেছেন পুরোপুরি একজন বাঙালি ভদ্রলোক। আমার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোতেই উনি বললেন মেটেলি সামসিং। পাহাড়ে বাস চলাচল এই দেখছি। শিশুর মতো হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল। এরপর কি আসবে দাদা? উনি বললেন মালবাজার।
আপনি কোথায় যাবেন? ভদ্রলোক জানতে চাইলেন। আচ্ছা আমি তো মালবাজারে ক্যালট্যাক্স মোড়ে নেমে যাব। আপনি এই বাসেই যাবেন ডামডিম তারপর ওদলাবাড়ি। নামবেন আগরওয়ালাদের বিল্ডিং-এর সামনে। তারপর ডানদিকের রাস্তা ধরে রেললাইন পার হয়ে এগোতে থাকবেন। ক্লাব পার হয়ে আরো এগোলেই মানাবাড়ি চা বাগান। পাশেই ওদলাবাড়ি হাইস্কুল। 
মালবাজার এসে গেল। ভদ্রলোক নেমে গেলেন। আমি বারবার ধন্যবাদ জানালাম।ঝমঝম শব্দে ডামডিম ব্রিজ পার হলাম।এখন আর সৌন্দর্য দেখার মন নেই! দেখতে পাচ্ছি চেল নদী। আর একটু গিয়েই গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। গাড়ি এবার বাঁ দিকে যাবে।ক্রান্তি রোড। ডান পাশে           আগরওয়ালাদের বিল্ডিং। নেমে পড়লাম।কাউকে কিছু না বলেই ডানদিকের রাস্তা ধরলাম। কিছুটা যাবার পর বাঁদিকে চোখে পড়লো শুনসান রেল স্টেশন। মনে হয় না এই স্টেশন থেকে কেউ যাতায়াত করেন! পরে শোনাব এই ভৌতিক কথা। একটা বাঁশের সাঁকো পেরোতেই চোখে পড়ল ছোট  একটা মুদি দোকান। পরে বলব সেই দোকান কথা। এবার নির্জনতায় সোজা হাঁটছি। দূরে একটা পাহাড় চোখে পড়ল। পাথরঝোরা পাহাড়। এবার চা বাগান শুরু এবং স্কুল বিল্ডিং।
সময়মতো পৌঁছে গেলাম। অনেক ক'জন এসেছে। আমার ডাক এখানেও শেষে। ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ইন্টারভিউয়ের সময় এক ভদ্রমহিলা, তিনি কাগজপত্র দিচ্ছিলেন, সম্ভবত ডি গ্রুপের কর্মী, তিনি দ্রুত বেরিয়ে এসে বললেন- দাদা আপনার হয়ে গেছে। আসবেন তো? শিপ্রাদি খুব মনে পড়ে। আমি আবার ফিরে স্টাফরুমে এলাম। এখানেই এলেন তরুণদা, রীণাদি টিচার-ইন-চার্জ দুলুদা অর্থাৎ প্রশান্ত শিকদার হরিদা হরিশঙ্কর সাহা। দুলুদা ইন্টারভিউ নিয়েছেন। খুব সিগারেট খান। একটা এগিয়ে দিয়ে বললেন খা। আর বল ঘুগনি কোন সমাস? আমি তাকিয়ে আছি প্রশান্ত শিকদারের মুখের দিকে। যাহ্ তোর চাকরি হল না।হাসতে লাগলেন এই বাম নেতা, ঘুগনি হল মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। যা বাড়ি গিয়ে গুছিয়ে নে।  কিছু দিনের মধ্যেই ডাক পাবি।এখানে কোয়ার্টার আছে। থাকার অসুবিধে নেই। তিনটে বাজে। আমাকে ফিরতে হবে। হাইওয়েতে এসে দাঁড়াতেই শিলিগুড়ি কোচবিহার গাড়ি পেয়ে গেলাম।

ছবি ঋণ : ডুয়ার্স বিচিত্রা

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri