বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-১৮/রূপন সরকার
বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং
পর্ব-১৮
ড. রূপন সরকার
শহর গড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্ব থেকেই দার্জিলিং ইউরোপীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে পরিণত হতে থাকে। দার্জিলিং ইংরেজদের হস্তগত হওয়ার (১-লা ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৫) ঠিক পরের দিনই (২রা ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৫) মেকলে সাহেবের শিক্ষানীতি প্রকাশিত হয়, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পরে ঔপনিবেশিক ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। প্রাথমিকভাবে এই শিক্ষানীতির মূল বক্তব্যই ছিল কিছু ইংরেজি জানা দোভাষী তৈরি করা, যারা ভারতীয় জনসাধারণ এবং ইউরোপীয়ানদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে। পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে এদের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি একটা সমর্থনও তৈরি হবে। এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিরুদ্ধে যেকোন ধরনের অসন্তোষ তৈরি হলে এরা ব্রিটিশ শাসকের হয়ে কথা বলবে। সেই কথা মাথায় রেখেই উক্ত শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল, "..we must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and the millions whome we govern, - a class of persons Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect." অর্থাৎ, প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে থেকে ইংরেজি জানা একদল নাগরিক তৈরি করা, যারা দেখতে ভারতীয় হবেন কিন্তু আচার আচরণে ইউরোপীয়। এদের কাজ হবে একদিকে ইউরোপীয় এবং ভারতীয়দের মাঝে দোভাষীর কাজ করা এবং অন্যদিকে ব্রিটিশ বিরোধী যে কোন অসন্তোষকে স্তিমিত করা। অর্থাৎ ভারতীয়দের ইংরেজিকরণ করাই ছিলো কোম্পানির শিক্ষানীতির প্রাথমিক লক্ষ্য এবং একাজে কোম্পানি সফলও হয়েছিল।
সময়ের সাথে সাথে প্রশানসিক উচ্চপদের চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই উচ্চপদের জন্য ইংলেন্ড থেকে সাদা চামরার সাহেব এনে প্রশাসনিক কাজ চালানো ব্যববহুল মনে হওয়ায় কোম্পানি তার শিক্ষানীতি খানিকটা পরিবর্তণ করে ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের সুপারিশ কার্যকরি করে। এতে বলা হয় এখন থেকে কোম্পনির শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে ভারতীয়দের থেকে সরকারি কর্মী ও আমলা তৈরি করা এবং তদনুযায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশ পাঠানো হয়। তৎকালিক যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি উক্ত নীতিকে বাস্তবায়িত করেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে সমসাময়িক কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনিরা উক্ত ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির ফসল, যার ফলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নানারকম (রায় সাহেব, রায় বাহাদুর) পদবি প্রাপ্ত হয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখেছেন। এই ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির অংশ হিসেবেই মিশনারিরা দার্জিলিং শহরে একের পর এক কনভেন্ট স্কুল চালু করে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল লরেট কনভেন্ট, সেন্ট পলস স্কুল, দার্জিলিং গার্লস স্কুল, কার্শিয়ং ভিক্টোরীয় স্কুল, সেন্ট হেলেন্স গার্লস স্কুল এন্ড কনভেন্ট ইত্যাদি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴