সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-December,2022 - Friday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 505

বাগানিয়া জার্নাল-১৮

বাগানিয়া জার্নাল – তৃতীয় ভাগ
পর্ব।। দুই।।
শিশির রায়নাথ
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

১৮৩৩ সালে চিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে চা-রপ্তানীর যে একচেটিয়া চুক্তি ছিল তা আর নবীকরণ (renew) করল না। ফলে জাপান সমেত অন্য দেশগুলোও সরাসরি চিন থেকে চা আমদানীর সুযোগ পেয়ে গেল। ওদিকে ডাচরা ততদিনে (১৮৩০) ইন্দোনেশিয়াতে রীতিমতো বাণিজ্যিক ভাবে চা-চাষ শুরু করে দিয়েছিল।
সেবছরই বৃটিশ পার্লামেন্টের এক আইনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চিনাদ্রব্য তথা চা-বাণিজ্যের একচেটিয়াত্ব-আইন তুলে অন্যদেরও ব্যবসাবাণিজ্য করার অধিকার দিল।
এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের তখনকার গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ভারতে চা-চাষের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ডিরেক্টর-বোর্ডের কাছে জোরালো সওয়াল করেন।
বেন্টিঙ্ক-এর সেই সওয়ালের ফলশ্রুতিতে, ২৪ জানুয়ারী ১৮৩৪ সালে বারো সদস্যের এক ‘টি কমিটি’ তৈরি করা হয় – যার সেক্রেটারি করা হয় জর্জ জেমস গর্ডন-কে। এই বারো সদস্যর মধ্যে দশ জন ছিলেন ইউরোপীয় সাহেব আর দুই জন কলকাতার দুই বিখ্যাত বাঙালি - স্যার রাজা রাধাকান্ত দেব ও বাবু রামকমল সেন। সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ (Dr. Nathaniel Wallich)- যিনি তখন কলকাতা বোটানিকাল গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং সেসময়ে বৃটিশ-সাম্রাজ্যের উদ্ভিদবিদ্যার শেষ কথা।
কমিটি ফেব্রুয়ারী মাসে তাদের প্রথম মিটিং-এ ভারতে চা চাষের সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। ড.ওয়ালিচ ও অন্যান্যদের বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল যে চা একমাত্র চিনদেশের উপযুক্ত পরিবেশেই(মাটি,জলবায়ু ইত্যাদি) জন্মায়।
তা সত্ত্বেও কমিটি মার্চ মাসে (১৮৩৪) এক বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে চা-চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কেমন হওয়া দরকার জানিয়ে ভারতের কোথায় কোথায় এমন পরিবেশ আছে বা দেশী/জংলি চা প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায় সে সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। তারা লেখে ‘‘এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে কোম্পানী-অধীনস্থ বেশ কিছু জায়গায় এমন জলবায়ু ও ভুমি আছে যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সেখানে সফলভাবে চা-গাছ লাগানোর আশা জাগাতে পারে।‘
আসলে, আসামে যে চা-জাতীয় কিছু একটা পাওয়া যায় – সে খবরটা তখন অনেক দিন ধরেই আসছিল কিন্তু চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি থাকায় কেউ তাকে আমল দেয় নি। যেমন জনৈক কর্ণেল ল্যাটার ১৮১৫ সালেই শিবসাগর জেলার রংপুর বাজারে স্থানীয়ভাবে তৈরি চা (manufactured Tea) বিক্রী করতে দেখেছিলেন। সেখানকার স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে যে চা-জাতীয় কিছু একটা পান করার অভ্যাস আছে তা তিনি দেখেছিলেন।(কেউ কেউ ‘কর্ণেল ল্যাটার’-এর জায়গায় ‘কর্ণেল সল্টার’ লিখেছেন - কিন্তু আনুষঙ্গিক তথ্য ‘ল্যাটার’-কেই সমর্থন করছে।)
তার বছর তিনেক পর নেপালের বৃটিশ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড গার্ডনার ওয়ালিচ সাহেবকে পর পর তিন বছর ধরে নেপালে পাওয়া চায়ের ফুল ও পাকা ফল পাঠিয়েছিলেন – যা ওয়ালিচ সাহেব পরীক্ষা না করেই আরেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী জোসেপ ব্যাঙ্কসকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।১৮২২ সালে ড. জেরার্ড এবং অন্যান্যরা জানিয়েছিল যে ভারতে একের বেশী প্রজাতির দেশী-চায়ের গাছ আছে।কিন্তু সেসব ‘ক্যামেলিয়া’ কিনা – তা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা হয় নি।
প্রথম ইংগ-বর্মা যুদ্ধে (১৮২৪-১৮২৬) যে সমস্ত বৃটিশ অফিসারেরা আসামে ছিল তাদের অনেকেই আসামের জংলি চায়ের খবর জানতো।
কিন্তু আসামের জংলি চা নিয়ে যাদের কথা সবচেয়ে বেশী উঠে আসে তারা হলেন রবার্ট ব্রুস ও তার ভাই চার্লস আলেকজান্ডার ব্রুস।
#
রবার্ট ব্রুস ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আসামে নিয়োজিত বেঙ্গল আর্টিলারির এক মেজর এবং একজন এ্যাডভেঞ্চারিস্ট।
তিনি শেষ অবধি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন নাকি অবসর নিয়েছিলেন – তা জানা জানা যায় না। তবে ১৮২০ সাল নাগাদ তিনি আসামের জোগিঘোপাতে আস্তানা গেড়ে স্থানীয়দের সঙ্গে নানা রকম ব্যবসাবাণিজ্য করতেন। কেউ বলে সেখানে তার একটা ফ্যাকটরি ছিল।
সেসময়ে আসামে ক্ষমতা দখলের জন্য দুটো প্রধান দলের মধ্যে লড়াই জারী ছিল। একদিকে ছিল রাজা পুরন্দর সিংহ আর অন্যদিকে রাজা চন্দ্রকান্ত। সঙ্গে ছিল বর্মীদের সহায়তায় স্থানীয় সিংফো, নোরা, খামতি, ডাফলা, মিশমি, মোয়ামারিয়া ইত্যাদি উপজাতির অত্যাচার। রবার্ট ব্রুস প্রথমে পুরন্দর সিংহর পক্ষে ছিলেন। এমনকি তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য ডুয়ার্স অঞ্চল থেকে সৈন্যও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু সে যুদ্ধে (১৮২১) পুরন্দর সিংহ হেরে যায়। রবার্ট ব্রুস তখন চন্দ্রকান্তর পক্ষে চলে যান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অনুমতিক্রমে চন্দ্রকান্তর জন্য কলকাতা থেকে তিনশ গাদা বন্দুক ও নব্বই মণ বারুদ আমদানী করেছিলেন।
কথিত যে কলকাতায় কোন একটা আড্ডায় কয়েকজন বৃটিশ একদিন চিনা-চা নিয়ে আলোচনা করছিল। সে আলোচনা কানে আসে মনিরাম দত্ত বরভান্ডার বড়ুয়া নামে এক অসমীয়া ভদ্রলোকের। তিনি তখন তাদের জানান যে আসামের সাদিয়া অঞ্চলে সিংফো বলে একদল উপজাতি ‘ফালাপ’ বলে একরকমের গাছের পাতার পানীয় পান করে – যার স্বাদ ও কার্যকারিতা চায়ের মতই। সাদিয়াতে মনিরামের একটা বাড়ি থাকার সুবাদে তিনি সেই ‘ফালাপ’ পান করেছেন এবং গাছ দেখেছেন।
[ফালাপঃ দ্রষ্টব্য ‘বাগানিয়া জার্নাল –দ্বিতীয় ভাগঃপর্ব-এক]
এই আড্ডার সময় হয় রবার্ট ব্রুস নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন – নয়তো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অনুরোধে তিনি পরে মনিরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সে সময়ে সিংফোরা প্রধানত আসামের সাদিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করত। তারা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে নিজেদের গোত্রের স্বাধীনতা নিয়ে চলত এবং অন্য গোত্রের সঙ্গে সাধারণত মেলামেশা করত না বা জোট বাঁধত না। গোত্রের নাম হত গোত্রের সর্দাররের (=গাম –Guam) নাম অনুসারে যেমন বিসা গাম (Beesa/Bessa Guam), ডাফা গাম,লুট্টাও গাম, লুট্টোরা গাম ইত্যাদি। সম্ভবত সর্দারের নামে তাদের বাসস্থিত অঞ্চলের নাম বা অঞ্চলের নামে তাদের সর্দারের নাম হত। যেমন বিসা অঞ্চলের সর্দারের নাম ছিল বিসা গাম।
রবার্ট ব্রুস ১৮২৩ সালে মনিরামের সহায়তায় চা-গাছের খোঁজে সাদিয়ার কাছে বিসা অঞ্চলের সর্দার বিসা গাম-এর সঙ্গে দেখা করেন এবং সেখানে ‘ফালাপ’ পান করে নিঃসন্দেহ হন যে এটা ‘চা’-ই। তিনি বিসা গামের সঙ্গে একটা লিখিত চুক্তি করেন যে তার পরবর্তী সাক্ষাতের সময় বিসা গাম তাকে কিছু চায়ের চারা ও বীজ দেবে। এছাড়া তিনি বিসা গামকে একটা দামী ঝঙ্কার-তোলা- নস্যির-কৌটো (Musical Snuff-box) ভেট দিয়ে বিসার কাছ থেকে দুটো চায়ের চারাগাছও হস্তগত করেছিলেন।
রবার্ট ব্রুস তখন থেকেই সিংফোদের সঙ্গে এক দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের সূত্রপাত ঘটাবার চেষ্টা করছিলেন। তিনি
তার ভাই চার্লস আলেকজান্ডার ব্রুসকে, যে তখন আসামে এক কয়লাখনি স্থাপনা-কর্মে জড়িত, এসব কথা জানান।
দুর্ভাগ্য বশত তার পরের বছরই (১৮২৪) রবার্ট ব্রুস মারা যান (মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য জানা যায় না) এবং প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
-----------------------------------------------------------
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri