সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-December,2022 - Wednesday ✍️ By- অমর চক্রবর্তী 480

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১৭

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/পর্ব:১৭
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^ 

কৌতূহলের শুরু কৌতূহল থেকেই। ১৯৮৪ শুরু হল আমার মেঘেদের কাছাকাছি বাড়ি নির্মাণ। আমার অন্তর বিশ্বকর্মা গড়ে তুলল অলীক প্রাসাদ। আকাঙ্ক্ষার রাখাল নদীকে নীড়, নীড়কে নীলাঞ্জনা বানাতে শুরু করল। যে স্বপ্ন ভেঙে টুকরো কাঁচের মতো পড়েছিল ধুলোতে তার ওপর এসে পড়ল সূর্যের অনিরুদ্ধ আলো, চন্দ্রের হীরকোজ্জল সুষমা।একেই বুঝি বলে সোনাঝরা দিন।
১৯৮৪ বি.এড রেজাল্ট এবং ফার্স্ট ক্লাস। ভাবতেও পারিনি প্রতিপক্ষ দুই মেথড পেপার নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পাব। আবার রেজাল্টের সঙ্গে সঙ্গেই একটা স্কুলে ইন্টারভিউ। সেই রাতেই লিখে ফেললাম 'অফুরন্ত উজ্জ্বলতা কাম্য আমার স্মৃতির মাঝে অহংকার/যন্ত্রণার শহরেও জ্যোৎস্না নিংড়ে/আমি প্রাচীর গড়ব ভালোবাসার।'
তুমি কাউকে জিজ্ঞেস করো তোমার জীবনের সেরা দিন কোন সময়ে অতিবাহিত করেছ? সবাই একবাক্যে বলবে স্কুল জীবনের দিনগুলি। না, আমি বলতে পারব না! আমি স্কুলে পড়েছি ফ্রি স্টুডেন্টশিপে, পুরোনো বই আর স্পেসিমেন কপি পেয়ে। সহপাঠীরা সবাই ধনী ঘরের ছেলে। তখন জেনকিন্স স্কুল মানে সরকারি বদলি উচ্চপদস্থ কর্মচারীর ছেলেদের ভিড়। পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলেও আমার মতো গরীব ঘরের ছেলেদের সংকোচ থেকে  পরিত্রাণ ছিল না। তখন তো পাঠ নিইনি 'সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান'। এই সংকোচ আর ভয়ে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। তাই বলে ক্লাসমেটদের ভুলিনি কিন্তু। এটাই স্কুল জীবনের মহার্ঘ যাপন। ভুলিনি ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে কৃষ্ণেন্দুকে। স্কুল ছুটি হলে  বৈরাগী দিঘির পশ্চিমে ওদের কোয়ার্টারে গাছে উঠে পেয়ারা খাওয়া। কৃষ্ণেন্দু আজ নিশ্চই বাবার মতো বড় পদে থেকে অবসর নিয়েছে! খুব মায়াময় ছিল আমার এই ক্লাসমেট। আর শুভজিৎ , ডাক্তারের ছেলে, রাসমেলার  মাঠের দক্ষিণে এখন যেখানে গজেন্দ্রনারায়ণ শিবমন্দির তার পাশেই ওদের ঘর ছিল। একসঙ্গে স্কুলে যাবার জন্য ওদের বাড়ি যেতেই ওর মা কিছু না কিছু খেতে দিতেন। শুভজিৎ নিশ্চই ডাক্তার হয়েছে। শুনেছি, ওর দাদা অমিতদা পুরুলিয়ায় লেপ্রসি নিয়ে গবেষণা করেছে।সন্দীপও বাইরে থেকে এসেছিল, গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল ওর সঙ্গে। কিন্তু স্থানীয় ক্লাসমেটদের সঙ্গে জমে ওঠেনি একমাত্র সুশান্ত মালাকার ছাড়া! সুশান্তের বাবা  ডি.ও। বাড়িতে টেলিফোন। কতদিন কেটেছে ওদের বাসায়। সুশান্ত টেলিফোন করে সিনেমা হলে টিকিট বুক করত। আমাকে সিনেমা দেখার ব্যাপারে মজিয়ে ছিল এই সুশান্ত। সুশান্ত হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেই বিয়ে করল। ক্রমেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সুশান্তর পরিণতি লিখতে হাত কাঁপছে। শুনেছি ওর আত্মহত্যার কথা। স্কুল জীবনের যে বন্ধুর সঙ্গে আজও যোগাযোগ আছে, সে হল শ্যামল বসাক। অঙ্কের জাহাজ এই বন্ধু আমার প্রতিবেশী আবার একই স্টেটাসের বলে মারামারি করেছি আবার বেঁধে বেঁধে চলেছি। শ্যামলের বৌ সংহিতা বিদেশে পড়াচ্ছে আর শ্যামল প্রেসিডেন্সি থেকে অবসর নিয়ে স্ত্রীকন্যা নিয়ে বিদেশে।পাটুলিতে বাড়ি করার কারণে বছরে একবার আসবেই এবং কোচবিহার। এসে খোঁজ নেবেই। তথাপি আমি স্কুল জীবন উপভোগ করতে পারিনি! আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক শৈলেন দত্ত ভারত খ্যাত। ওনার ছেলে মধু আমার বন্ধু ছিল। কোচবিহারে তখন ক্রিকেট বলতে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ একাদশ। আর সেই দলে জেনকিন্সের ছাত্ররাই। আমার স্বল্প স্মৃতি বলে ভারত একাদশ অজিত ওয়াদেকর, পতৌদির নবাব মনসুর আলী খান এখানে খেলেছেন। আমি তখন ছোট এবং রাজবাড়ি যাবার অবস্থায় ছিলাম না! তবে স্কুলে দেখেছি ডি.এস.এর খেলোয়াড়দের। টাট্টুদা হাবুলদা কত ক্রিকেটার তৈরি করেছেন মাস্টারমশাই শৈলেন দত্ত। ক্লাস অনুসারে আমিও প্রাকটিসের সুযোগ পেয়েছি কিন্তু ড্রেস কই!অতএব নিজেই বাদ দিয়ে স্বস্তি পেয়েছি।এন.সি.সিতেও তাই। অমিয়বাবুর ট্রুপে। ভুলের গাট্টা। ছোটখাটো বলে ক্যাম্পে জায়গা না পাওয়া। শুধু টিফিন আর মাসে দুটাকা পাওয়ার জন্য থেকে যাওয়া। আহা, অমিয়বাবুর স্নেহের ফল্গুধারায় অনেক পরে অবগাহন করেছি। তেমন প্রশান্তবাবু প্রশান্তদা, নিশীথবাবু‌ নিশীথদা, গোপেশদা, নীরেনদা। তবু স্কুলজীবন আমার কাছে তৃষ্ণার জল। আকন্ঠ পান হয়নি। স্কুল আমার কাছে যেন পাহাড়ের কোলে এক আশ্চর্য জায়গা যেখানে ছিল আশ্চর্য সব ফুল, ম্যাগপাই পাখি আর ধরতে চেয়েও পারিনি আর সবটাই দারিদ্রের কারণে। পড়া পারতাম বলে মাস্টারমশাইরা ফার্স্ট বেঞ্চে এনেছিলেন
 আমি পথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে (আসলে শেষ বেঞ্চে) দুমড়ে মুচড়ে দিতে চেয়েছি লজ্জার কাঁটাতার। পারিনি। তাই সবার কাছে স্কুলজীবন উন্মুক্ত আকাশ হলেও আমি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটা শিষ দেওয়া পাখি মাত্র। ধুম লাগেনি হৃদকমলে (এখন মস্তিষ্কে সর্বদা শঙ্খ ঘোষ)। সেদিন তো শহরের মিস্টি ব্যবসায়ী হোটেল ব্যবসায়ীর ছেলেরা খুব পাত্তা দেয়নি। একটু জায়গা পেয়েছি বলে আজ বলে! স্কুল আমার কাছে গঙ্গোত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে দেখা সুরভি ধারা। অতএব ঠিক করেছিলাম বি.এড প্র্যাকটিস ও ফাইনাল টিচিং ঐ জেনকিন্সেই করব।
মানুষের জীবনে কখনো না কখনো নদী পরিকল্পনার মতো আনন্দধারা মূলস্রোতে আসে। এইটি আমি পেলাম বি.এড পড়তে গিয়ে। মাস্টারমশাইদের মাঝে আমরা ক'জন ফ্রেশার। সেই আমাদের তুমুল হৈ হল্লা। এথেনা (অমিয়ভূষণ কন্যা) তপতী সন্দীপা গীতশ্রী দিলীপ দীপক সুজিত -- হৈ হুল্লোড় সংস্কৃতি সে এক তীব্র আবহসঙ্গীত। স্কুল জীবনে যা পাইনি, ছ'মাসেই অসমাপ্ত চাঁদ পূর্ণিমার স্বচ্ছলতা পেল। এতদিনের মার্কসবাদী সত্তা উড়ে গেল খ্যাপা বাতাসে। প্রফেসর পরিতোষ খাঁ, উষাকান্ত দত্ত, শুক্লাদি (ঘোষ) সবারই প্রিয় হতে পেরেছিলাম আজ ভাবতে অবাক লাগে! এই অবাক জলপানের কারণ সেই সময়ে বিএড কলেজে অধ্যাপকদের অম্লমধুর সম্পর্ক! তবে শিবির তৈরির ছাত্রছাত্রীরাও কখনোই বৈরী হইনি! বামপন্থা বিশ্বাসী এই আমি দাঁড়িয়েছিলাম (ম্যাগাজিন বিভাগে) কবি ইতিহাস সংকলক মাস্টারমশাই  বিশ্বনাথ দাসের বিপরীতে! সেও এক আদর্শে বিশ্বাসী থেকেও বিরুদ্ধ দলে! সেটা হয়েছে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার জন্যই। তবে বিশুদা ভুল বোঝেননি! আর  আমি, লিখেছিলাম বিষণ্ণ দিবসের কথকতা।পালক পড়ে আছে ধুলায়, অবহেলায়। নতুন করে লিখলাম তেপান্তর থেকে তুলে এনেছি তেজস্ক্রিয়তা।
স্কুলের নাম দিনহাটা সোনীদেবী হাই স্কুল।দুটাকা ভাড়ায় ট্রেলর বাসে চেপে পৌঁছলাম স্কুলে। দুটোয় ইন্টারভিউ। মাত্র ছজন ডাক পেয়েছি। ইন্টারভিউ শুরুর আগে সবাই বসে গল্প করছি। একজন জিজ্ঞেস করলেন আপনার কি কি আছে? সরল উত্তর দিলাম এম.এ বিএড। এখানেও ডাক পেলাম সব শেষে। শুনলাম চারজন চলে গেছে বিএড নেই বলে। দুজন ইন্টারভিউ দিলাম।কোরাম হল না। চাকরি হল না। ছয়জনের জন্য আনা মিষ্টির অনেকটাই খেলাম। হেডমাস্টারমশাই বললেন আমরা আবার তোমাকে ডাকব এবং তোমাকেই নেব। দুটো মিস্টি বার্তা নিয়ে ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে দেখলাম আরো একটি ইন্টারভিউ লেটার। স্কুলের নাম ওদলাবাড়ি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri