সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-December,2022 - Friday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 410

বাগানিয়া জার্নাল-১৭

বাগানিয়া জার্নাল – তৃতীয় ভাগ
পর্ব।। এক।।
শিশির রায়নাথ
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

ভারতীয় চা-শিল্পের একেবারে শুরু থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বৃটিশরা চা-শিল্পে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল।কেন তারা ভারতবর্ষে চা-চাষে উৎসাহিত হয়ে পড়ল তা জানতে আমাদের একটু পিছনের দিকে যেতে হবে।
১৬০৬ সাল নাগাদ ডাচ ব্যাবসায়ীরা প্রথম চিনা চা-কে ইউরোপের বাজারে নিয়ে আসে।অচিরেই ইংরাজরা সেই চায়ের সবচেয়ে বড় ভোক্তা হয়ে পড়ে।১৬১৫ সালের এক লেখায় ইংল্যান্ডে চা-পানের কথা প্রথম পাওয়া যায়।
১৬৬০ সালে তখনকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সংস্থা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী চা-ব্যবসায় উৎসাহী হয়ে পড়ে এবং চিনাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করবে বলে ১৬৬৯ সালে চিনের ক্যান্টন ও এ্যাময় বন্দরে এসে উপস্থিত হয়।
একদম শুরুর দিকে চিনদেশের মতই ইংল্যান্ডেও চা-পান সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র রাজকীয় ও অভিজাত পরিবারের মধ্যে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যবিত্তদের মধ্যেও সামাজিক ‘চা-আসর’ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল।
আঠারো এবং উনিশ শতকে কৃষি-বিপ্লব ও শিল্প-বিপ্লবের কারণে ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষের জীবন-ধারনের মান অনেক উন্নত হয়ে উঠেছিল। সেসময়ে গেরস্থালী জীবনের মান নির্ধারণের একটা সূচক ছিল চা-পান (অর্থাৎ ঘরে নিয়মিত চা খাওয়া হয় কিনা)।
চা-পানের জনপ্রিয়তা সাধারণ সমাজে ক্রমশ যত বাড়তে লাগল তত বেশী চা আমদানী বাড়তে লাগল। উনিশ শতকের শুরুতে বৃটিশ-সমাজের প্রায় সর্বস্তরে চা-পানের অভ্যাস ভালভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর তখনও পর্যন্ত চিনদেশই ছিল চায়ের একমাত্র সরবরাহকারী।
কিন্তু চা-রপ্তানীর ক্ষেত্রে একমাত্র চিনের ওপর নির্ভর করে থাকার বিপদ তখন একটু একটু করে সামনে আসছে।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী চিনের সঙ্গে চা-বাণিজ্যে তিন রকমের বিপদের সামনে পড়তে লাগলঃ অনিয়মিত সরবরাহ, (চাহিদা বেশী হবার কারণে) যা-ইচ্ছা-তাই দাম এবং উৎপাদিত চায়ের গুণমান ক্রমাগত খারাপ হয়ে পড়া।
এছাড়া, চিনদেশে চা কেনা যেত একমাত্র ক্যান্টন বন্দরে এবং গোটা বন্দরটাই ছিল কিছু চিনা-ব্যাপারীর তৈরি এমন এক কোং-সু (Kong-soo: Guild)-র অধীনে যা পরিচালিত হত কিছু ক্ষমতাশালী চিনা-অফিসারের খামখেয়ালের ওপর। এতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে মাঝে মাঝেই খুব অপমানকর পরিস্থিতির সামনে পড়তে হত।ওই চিনা অফিসারদের খামখেয়ালে হঠাৎ হঠাৎ বাণিজ্য বাতিল করে দেওয়াটা অবস্থাকে বেশ ঘোরালো করে তুলছিল। এবং তা চরমে পৌঁছায় ১৮৩৩ সালে যখন চা-বাণিজ্যের যে একচেটিয়া অধিকার ১৭১৫ সাল থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভোগ করে আসছিল -তা চিন একতরফা ভাবে তুলে নেয়। সঙ্গে চিনের, বিশেষ করে হংকং-এর, বনিকরা তাদের চা-ব্যবসায়ে নিজেদের একচেটিয়াত্বর সুযোগ নিয়ে চায়ের দাম যা-ইচ্ছা-তাই বাড়িয়ে চলে।এতে ইংল্যান্ড এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় চায়ের দাম হু হু করে বেড়ে যায়।অন্যদিকে চিনা চায়ের গুণগত মান নেমে যায় তলানীতে।
এর সঙ্গে আরও যোগ হয় আমেরিকা-বনিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। আমেরিকায় চায়ের আমদানী-শুল্ক বৃটিশদের তুলনায় কম হওয়ায় আমেরিকা বৃটিশদের তুলনায় অনেক কমদামে বাজারে চা বিক্রী করতে শুরু করে। বৃটিশদের রপ্তানীতে শুল্ক কমানো নিয়ে ইতিমধ্যে (১৬ই ডিসেম্বর,১৭৭৩)ঘটে গিয়েছে ‘বস্টন টি পার্টি’র ভয়ঙ্কর গোলমাল যেখানে বস্টন বন্দরে ভেড়া এক বৃটিশ জাহাজ থেকে সমস্ত ( তিনশ বিয়াল্লিশটা) চায়ের পেটি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল।
এতগুলো ক্রমবর্ধমান সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ‘বিকল্প’ পথ খুঁজতে শুরু করে।ইংল্যান্ডের স্যাঁতসেতে জলবায়ু চা-চাষের পক্ষে উপযুক্ত নয় বলে তারা বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্ত ভারতবর্ষের ওপর চোখ রাখে।সেজন্য উদ্ভিদবিদ্যা, ক্রান্তীয় জলবায়ু ও কৃষি বিদ্যা, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মাটির জ্ঞান ইত্যাদি সম্পর্কে অভিহিত এমন মানুষজনদের ভারতে পাঠাতে থাকে যাতে এখানে চা-চাষ করে সস্তায় এবং অবিচ্ছিন্ন ভাবে চা-সরবরাহ বজায় রাখতে পারে।এর একমাত্র কারণই ছিল বিশ্বের বাজারে মুনাফা সমেত চা-বাণিজ্যের এতদিনের একচেটিয়া অধিকার ধরে রাখা।সঙ্গে চিনের চা-বাণিজ্যের একচেটিয়াত্ব খর্ব করা।বস্তুত তখন বিভিন্ন দেশেই একটা ‘চা-খোঁজ’ (Tea-hunt) চলছিল।
#
শুরুতে পশ্চিমের দেশগুলো চায়ের শুকনো পাতাই শুধু চিনতো- চাগাছ দীর্ঘদিন সে দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল।
যতদূর জানা যায় ইউরোপে প্রথম জীবিত চা-গাছ এনেছিলেন ১৭৪০ সালে জনৈক ক্যাপ্টেন গফ (Captain Goff)- যিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন ডিরেক্টর ছিলেন। কেউ বলেন যে তিনি তাঁর কমলাবাগানে দুটো চা-গাছ লাগিয়ে ছিলেন।কেউ বলেন গাছগুলো লাগানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের কিউ (Kew) বোটানিকাল গার্ডেনে। সেগুলো বড় হয়ে ফুলও দিয়েছিল।কিন্তু সেগুলোর বংশবৃদ্ধির কোন চেষ্টা করা হয়নি। কিছুদিন পরেই গাছগুলো মারা যায় এবং ইউরোপে চা-চাষের আর কোন উপায় হাতে থাকে না। ।
১৭৬৩ সালে সুইডিশ জাহাজ ইস্ট ইন্ডিয়াম্যান-এর ক্যাপ্টেন কার্ল গুস্তাভাস একেবার্গ (Carl Gustavus Ekebarg) জগৎ-বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস-কে [Carl Linnaeus – যিনি প্রাণী-উদ্ভিদ জগতে দ্বিপদী নামের (binomial nomenclature) প্রচলন করেন] চায়ের কিছু চারা উপহার দেন –যেগুলোকে তিনি চিন থেকে ফেরার পথে জাহাজের মধ্যেই বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম ঘটিয়েছিলেন।
ইংল্যান্ডে সফলভাবে চা-গাছের প্রথম পরিচয় করান এক বৃটিশ ব্যবসায়ী ও প্রকৃতিবিদ জন এলিস ১৭৬৮ সালে। জীবন্ত চা-চারাগাছের কথা আবার ইংল্যান্ডে পাওয়া গেল ১৭৭০ সালে এবং থমাস মার্টিন নথিভুক্ত করেছেন যে একই সময়ে জর্জিয়াতেও চা-চারাগাছের প্রবেশ ঘটেছিল। এ নথিও পাওয়া গ্যাছে যে ১৮০০ সাল নাগাদ মিশাউ (Michaux) নামে এক যুবক সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটন থেকে পনের মাইল দূরে মিডলটন বারোনি-তে তার বাগানের শোভা বাড়ানোর জন্য (ornamental use) চা গাছ লাগিয়ে ছিল।
ব্রাজিলে ১৮১০ সালে চায়ের প্রবেশ ঘটেছিল। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চা-চাষ করার জন্য দক্ষিণ ব্রাজিলে চিনা-কলোনিও বসানো হয়েছিল। ১৮৫০ সালে সে কলোনি ভেঙে যায়; কিন্তু ততদিনে চা-গাছ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
#
এসব ঘটনার ভিতরে ভারতেও চা-চাষের একটা চেষ্টা চলছিলই।
১৭৭৪ সাল নাগাদ ওয়ারেন হেস্টিংস ভুটানের তখনকার বৃটিশ রাষ্ট্রদূত জর্জ বোগলে (George Bogle)-কে কিছু বাছাই করা চিনা-চায়ের বীজ দিয়েছিলেন বপন করার জন্য। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় নি। ১৭৭৬ সালে খ্যাতনামা বৃটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যার জোসেপ ব্যাঙ্ক-কে ভারতে চা-চাষের ওপরে ‘নোট’ তৈরি করতে বলা হয় (এবং তার প্রস্তাবিত নিয়ম ধরেই ভারতবর্ষে পরে চা-চাষ শুরু হয়)।১৭৮০ সালে রবার্ট কিড (Robert Kyd) কলকাতায় তাঁর নিজের বাগানে (যা পরে শিবপুর বোটানিকাল গার্ডেনের অন্তর্ভূক্ত হয়) চিনা চা-বীজ নিয়েও নানা পরীক্ষা করেছিলেন।
১৭৯৫ সালে লর্ড ম্যাকার্টনি বোটানিকাল গার্ডেনে চায়ের বীজ এনে চা-গাছ বড় করার চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।কেননা সেসবই ছিল আসলে খুব শিথিল-উদ্যম (half-hearted)।
-------------------------------------------------------------
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri