নানা রঙের গানগুলি-১৭/শৌভিক কুন্ডা
নানা রঙের গানগুলি (১৭)
শৌভিক কুন্ডা
--------------------------------
সাল মনে নেই। তবে হাফপ্যান্টের জমানা, এটুকু মনে আছে। "সাউন্ড অফ মিউজিক" দেখি নি তখনও। যদি দেখেও থাকতাম, ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা হয় নি (এখনো খুব হয়েছে, এমন না)! সে ক্ল্যাসিকটির নামও শোনার আগে "জয়জয়ন্তী" নামের বাংলা সিনেমা অবশ্য দেখেছিলাম। কিচ্ছু মনে নেই, "কি হ'ল কারো যে মুখে কথা সরে না" ছাড়া। এরপর রূপশ্রীতে "পরিচয়"। কেন, কার সঙ্গে, সাতের দশকের মাঝামাঝি সে সিনেমা দেখতে যাওয়া, তা'ও জয়া ভাদুড়ি, জিতেন্দ্র, হিন্দি! এবং মফস্বলি, নিম্নমধ্যবিত্ত একটি কিশোর ! কথা কিছুই বুঝি নি, তবে দৃশ্যটা সেই সেদিন থেকে আজও মনে আছে। জয়া ভাদুড়ি, সঞ্জীব কুমার । গান। বিতি না বিতায়ি র্যয়না। লতা মঙ্গেশকরের নাম জানে না, এমন হাফপ্যান্টও অবশ্য ছিলো না সে পৃথিবীতে । কিন্তু না, লতার গলায় জয়ার লিপে গান শুরু হলেও আমাকে কেড়ে নিলো অসুস্থ বাবা সঞ্জীব কুমারের নড়ে ওঠা ঠোঁট, মেয়ের শুরু করা গানের মাঝপথে এন্ট্রি,
"ও চান্দ কি বিন্দিওয়ালি,
বিন্দিওয়ালি রাতিয়াঁ,
জাগি হুঁয়ি আঁখিওমে
রাত না আয়ি, র্যয়না"!
ম্যাজিক! ভূপিন্দরের গলার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। আজও আমার অন্যতম প্রিয় গান। না, অপরাধ নিলেও অবস্থান বদলাবো না, প্রিয় হয়ে উঠেছিলো, এখনো যে রয়ে গেছে, সেটা লতাজি'র জন্য নয়। ভূপি'র জন্য। আর হ্যাঁ, সাদা শাড়ির জয়া, কালো চাদরের সঞ্জীবকুমার। কাশির দমকে বাবার গান থেমে যাওয়া, জানালার ফ্রেমে হেলান দিয়ে বসা -
"যুগ আতে হ্যায়
অউর যুগ যায়ে
ছোটি ছোটি ইয়াদোঁকি
পল নহি যায়ে
ঝুঠ সে কালি লাগে
লাগে কালি রাতিয়াঁ....."
সাদা রুমালে রক্তের লাল! ক্লান্ত, অসহায় চোখের সঞ্জীবকুমার। নাহ্, কেবল হাফপ্যান্টবেলার সেই দেখা নয়। পরেও নিশ্চয়ই দেখেছি। যতবারই দেখি না কেন, "মুসাফির হুঁ ইয়ারো", জিতেন্দ্র-জয়ার হাল্কা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে যাওয়া প্রেম ছাড়িয়ে আজও জেগে থাকে ঐ গান। আর হ্যাঁ, লতা নয়, মাঝখানে একটু জায়গা নেওয়া ভূপিন্দরই।
বালখিল্যতার সময় পেরিয়ে আরেকটি গান। তখন কৈশোর। তখন প্রথম প্রেম ভেঙে যায়। তখন রক্তে বিষ মিশতে শুরু করে। তখন সকাল থেকে রাত পায়ের নীচে জলশহরের নানা রাস্তা বয়ে যায়। 'ঘরোন্দা'র অমোল পালেকরের সাথে আখ্যানে, চরিত্রে কোনো মিল নেই সে কৈশোরের। তবু সে দুঃখবিলাসে ধ্রুব তারা হয়ে থেকে যায় একটি গান। হ্যাঁ,
"এক আকেলা ইস শহরমে"।
গুলজারের লিরিকও এ ক্ষেত্রে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় কিশোরটিকে, কিন্তু হ্যাঁ, ভূপিন্দরই, আবারও।
"দিন খালি খালি বর্তন হ্যায়
অউর রাত হ্যায় য্যায়সে
অন্ধা কুঁয়া..."
বুকের ভেতর হু হু করে তোলা একাকীত্ব মিশে থাকে ঐ অলৌকিক স্বরে। অলৌকিক স্বর। কপি সিঙ্গারদের কথা তো জানি, কিন্তু ভুপিন্দরের গলা নকল করে গাইতে শুনি নি আমি অন্তত, কখনো কাউকে। ঐ গলাটি কানে ঢুকে এলে কবিতা জেগে ওঠে। গান হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴