স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/ষোড়শ পর্ব
রণজিৎ কুমার মিত্র
+++++++++++++++++++
ইতিহাসের রাজা বাদশাদের উত্থান-পতনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ে
উপাচার্যদের আগমন নির্গমন চলতে থাকে।যখন ছাত্র ছিলাম তখন উপাচার্য ছিলেন
অধ্যাপক অম্লান দত্ত, তারপরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন
অধ্যাপক প্রসাদ ঘোষ, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক
ছিলেন, তাঁর আমলেই গ্রন্থাগারকর্মী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আবার এলাম।
তারিখটা মনে আছে ১৯৮২র ১৩ই এপ্রিল, নিয়োগপত্র স্বাক্ষর ছিল ডেপুটি
রেজিস্ট্রার রতন কুমার ঘোষের। এই স্মৃতিকথা পর্বে রতনবাবুর কথা একটু বলা
যাক, সেসময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীদের কাজের বিষয় ও আনুষঙ্গিক
সবকিছু, যেমন ছুটি পদোন্নতি সার্ভিস বুক, অনেক বিষয়ই ডেপুটি রেজিস্টারের
দপ্তরের অধীনে ছিল। রতনবাবু বিশ্ববিদ্যালয় আসবার আগে শুনেছি, জুডিশিয়ারি
সার্ভিসে ছিলেন। সুভদ্র মানুষ, গ্রন্থাগারের সাথে আন্তরিক যোগাযোগ ও খুবই
নৈকট্য ছিল। টিফিনের সময় প্রতিদিন লাইব্রেরীতে জ্যোতির্ময়বাবুর ঘরে
আসতেন। চা, পান সহযোগে আধঘন্টা ওদের একটি জমাটি আড্ডা ছিল সেই আড্ডায়
মুখ্যত থাকতেন জ্যোতির্ময়বাবুর সাথে লাইব্রেরীর ল্যাডলি রায়, দিলীপ
চৌধুরী। অনেকেই সেই সময়টায় লাইব্রেরীতে আসতেন। লাইব্রেরীর চা খুব বিখ্যাত
ছিল । বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের আধিকারিকরা, অধ্যাপকরা সেই চা-এর
আড্ডাতে হাজির থাকতে ভালোবাসতেন। জ্যোতির্ময়বাবুর উল্টোদিকের ঘরে আমরা
বসতাম। আসা যাওয়ার পথে কখনো রতনবাবুর সঙ্গে দেখা হলে স্মিত হাসি হেসে
কুশল জিজ্ঞাসা করতেন, কখনো প্রয়োজন হলে ডেকে পাঠাতেন। ওনাই স্ত্রী
মঞ্জুলিকা ঘোষ গ্রন্থাগারের সুপরিচিত পাঠিকা, দর্শন বিভাগের ডাকসাইটে
অধ্যাপিকা রতনবাবুর মতো নিরীহ ও নির্বিরোধী ছিলেন না, বরং তিনি স্রোতের
বিপরীতে হাঁটতেন। ক্লাস নেওয়ার সময়টুকু বাদ দিয়ে মঞ্জুলিকাদি
লাইব্রেরীতে নিয়মিত আসতেন। পত্র-পত্রিকা বিভাগে, পরে যখন রেফারেন্সসহ
গবেষণাপত্র বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম, প্রায়ই দেখা হত, দরকার হলে
সাহায্যের জন্য ডাকতেন। গোছা গোছা পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠা জেরক্স করাতেন।
কখনো দেখেছি লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যাবার শেষ মুহূর্তে দৌড়তে দৌড়তে আসছেন
নানা কাজ নিয়ে, একটু বিরক্ত হলেও তাকে কখনো লাইব্রেরীর পরিষেবা দিতে কেউ
বিরক্ত হত না।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের
লাইব্রেরীতে বসেই সব শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়ে যেত। গবেষকরাও নানা
প্রয়োজনে আসতেন। লাইব্রেরী সরগরম থাকত সারাদিন। এখন আর তেমনটা হয় না,
লাইব্রেরির সাথে প্রতিটি বিভাগের আন্তর্জাল সংযোগ রয়েছে, তবে প্রতিদিন
লাইব্রেরীতে আগমন নির্গমনের রেজিস্টারে শিক্ষকদের সংখ্যা ইদানিং খুব কমে
গেছ। মুদ্রিত বই পাঠে অনীহার কথা কারো কারো কাছে শুনতে পাই, তবে তা কতটা
সঠিক জানি না। সার্বিক ভাবে বলা যায় লাইব্রেরীতে রিডারের সংখ্যা
ক্রমহ্রাসমান।
কোনো উপাচার্যের কার্যকালই
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরবিচ্ছিন্নভাবে সুখের বা শান্তি-স্বস্তির হয় না। কোনো
কোনো সিদ্ধান্ত বা বিশেষ কোন বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়
উপাচার্যদের। অধ্যাপক অম্লান দত্তের আমলেও তেমন বহু ঘটনা ঘটেছিল।
উত্তরবঙ্গ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সূচনালগ্ন থেকেই ছিল লড়াকু, ন্যায়
সঙ্গত দাবিতে এই সমিতি কখনো পিছুপা হয়নি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই
কর্মচারী সমিতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল, এই সমিতিতে দীর্ঘকাল কোনো বিশেষ
দলের রাজনীতির রং বা আনুগত্য ছিল না। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ সমিতির
সদস্যদের মধ্যে থাকলেও সমিতির কাজে তার প্রভাব পড়ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ে
যোগ দেবার পরই এই কর্মচারী সমিতির সদস্য হয়েছিলাম। সেই সময়ে সমিতির
অবস্থান ধর্মঘট ইত্যাদিতে জনপ্রিয় স্লোগান ছিল
ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী-গবেষক -ঐক্য- জিন্দাবাদ। ধীরে ধীরে এই স্লোগানটিকে
অবলুপ্ত হতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় বড় হতে হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য
শ্রেণির সমিতি নিজস্ব শ্রেণি কেন্দ্রিক হতে থাকে। পুরনো দিনের সমস্ত
কর্মীদের নিয়ে যে ঐক্য ভাবনা তাও ক্রমাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমিতি
নানা শ্রেণির নানা দল-উপদলের অনুগত হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
কর্মচারী সমিতির সাথে উপাচার্যদের সংঘর্ষ ও সমন্বয়ের অনেক গল্প শুনেছি।
এই কর্মচারী সমিতির স্থাপিত হয় ১৯৬৬তে, তখন উপাচার্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার
উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায়, তিনি নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন, এই সমিতি
যেন কোনো ভাবেই গড়ে উঠতে না পারে। শিক্ষক সমিতি গড়ে উঠবার আগেই কর্মচারী
সমিতি গড়ে উঠেছিল, ক্যাম্পাসে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ক্ষেত্রে কর্মচারী সমিতি
হয়েছিল শিক্ষক সমিতির ভরসার স্থল। পুলিনবাবু তার 'স্মৃতি জাগানিয়া'তে
সেসব কথা লিখেছেন- "বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শাল কুঞ্জ অতীব লোভনীয় স্থান,
সমাবর্তন সহ সব অনুষ্ঠানে হয়, ওইখানে শালের ছায়া মাটির ঘরে পাঠশালা
ছিল, নাম 'বাল্মিকী আশ্রম', অফিস কর্মীরা একদিন ওইখানে জমায়েত হয়ে গড়ে
তুললেন কর্মচারী সমিতি। আদি শ্লোকের মতোই রচিত হল, প্রথম সঙ্ঘবদ্ধ সংস্থা,
উৎসাহিত হলেন শিক্ষকেরা, বিশেষ করে শিক্ষক সংগঠনের অভাব যারা অনুভব করতেন।
শিক্ষক সংগঠন গড়ে তুলবার প্রয়াস করলেন তারা।
২০০২তে
কর্মচারী সমিতির মুখপত্র 'সংহতি ' পাতায় আমার অনুজপ্রতিম গ্রন্থাগারের
কর্মী শ্রী অজয় মিশ্র, যিনি বর্তমানে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি
লাইব্রেরিয়ান। অজয় সেই সংখ্যাটিতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির
সূচনা লগ্ন থেকে তার সময় পর্যন্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিদের একটি
তালিকা প্রকাশ করেছলেন, সেই তালিকা এখানে উদ্ধৃত করছি।
প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক
1:শ্রী দিলীপ চৌধুরী
2; শ্রী প্রণব কুমার গুপ্ত ভায়া।
3. শ্রী ল্যাডলী রায়
4. শ্রী প্রশান্ত কুমার সেন
5. শ্রী রতিকান্ত দে
6. শ্রী শান্তি রঞ্জন চক্রবর্তী
7. শ্রী রনজিত কুমার ঘোষ
8. শ্রী পল্লব কুমার ঘোষ
9. শ্রী নিবারণ চন্দ্র নাগ
10. শ্রী সুনীল কুমার ধর
11. শ্রী প্রণবানন্দ ভট্টাচার্য
12. শ্রী ভাসান চন্দ্র দাস
13. শ্রী গনেশ চন্দ্র সরকার
14. শ্রী নিরোদ সিংহ
15. শ্রী শ্যামল গুহ
প্রাক্তন সভাপতি
1.শ্রী রমেন্দ্রনাথ মুন্সি
2. শ্রী অশোক কান্তি ঘোষ
3. শ্রী সুনীল ঘোষ
4. শ্রী অমিতাভ চৌধুরী
5. শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস
6. শ্রী সুশীল চন্দ্র নিয়োগী
7. শ্রী শিয়া চরণ মল্লিক
.8. শ্রী পল্লব কুমার ঘোষ
9. শ্রী সুরেন্দ্রনাথ কর্মকার
10. শ্রী পাঁচুকুমার কর
11. শ্রী বিমল বিহারী চৌধুরী
12. শিশিরকুমার লাহিড়ী
13. শ্রীপ্রদীপ কুমার গাঙ্গুলী
14. শ্রী নারায়ন চন্দ্র দাস রায়
15. শ্রী মানিক রাহা
16. নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ
এই নামের তালিকার অনেকাংশই শ্রীহীন হয়ে গেছে, প্রয়াত হয়েছেন অনেকেই।
আমার সৌভাগ্য এদের প্রায় সবাইকেই দেখেছি। কর্মচারি সমিতির সম্পাদক,
সভাপতিদের অনেকেই পরবর্তীকালে আধিকারিক হয়েছেন, আধিকারিক সমিতির সাথে
যুক্ত হয়েছেন, তবে কর্মচারী সমিতির সাথে তাদের যে মৈত্রীর সম্পর্ক ছিল তা
কখনো ছিন্ন হয়নি। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে
চলার ঐক্য ভাবনা সব সময় ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি বর্তমানে
একাধিক। সেই ঐক্যতান একটি সমিতির এক পতাকাতলে থাকার ঐতিহ্যের অবসান
হয়েছে।
কর্মচারী সমিতির উপরে আঘাত কম আসেনি
ল্যাডলিদার কাছে গল্প শুনেছি, উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায় কর্মচারী সমিতির
ইউনিয়ন ভেঙে দেবার জন্য জলপাইগুড়ি থেকে গুন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, যাতে তারা উপাচার্যের দালালি করে
ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার কাজে ষড়যন্ত্র করে। সময়ের প্রগতিতে সব বাধা বিপত্তি
কাটিয়ে সমিতি এগিয়ে গেছে, কিন্তু সেই অগ্রসরমানতায় এখন অনেক বাধা,
নেপথ্যে অনেক অন্ধকার জমছে, হয়তো-
"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে, এ পৃথিবীতে আজ।
অন্ধ যারা, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা।"
রেজিস্টার বিমলকুমার বাজপেয়ী ১৯৮৭তে অবসর নেন। কর্মচারী সমিতির মুখপত্র
'সংহতির' ১৯৯০-এর শুভেচ্ছাবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি মেদুরতা নিয়ে
লিখেছিলেন "ব্যক্তিকে নিয়ে সমাজ, কিন্তু ব্যক্তিত্বের প্রকাশ যদি
বাধা পায় তবে সমাজের ,সমিতির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য কে স্বীকৃতি দিয়ে সংকল্পে স্থির থেকে ,যুথবদ্ধ
অগ্রগমন লক্ষ হওয়াই শ্রেয়, তবে সংকল্প যেন সার্বিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য
হয়। রাজা রামমোহন পুর একটি গ্রাম নাম মাত্র নয়, ইট-কাঠ-লোহা-সিমেন্টের
আড়ালে উচ্চশিক্ষার যে শিশুটি দিনে দিনে বেড়ে উঠেছে, তাকে মহীরুহ করার
দায়িত্ব সকলের, আর সেই জন্য প্রয়োজন সংহতির।"
এই সমিতির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সংহতির পাতাতেই সমিতির দীর্ঘদিনের
সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত কুমার ঘোষ লিখেছিলেন - "সুদীর্ঘ 38 বছর চাকুরি করার
পর আমার অবসর নেওয়ার সময় যখন আসন্ন, তখন কেন জানি আমার ফেলে আসা অতীত
দিনগুলির কথা ভাবতে গিয়ে প্রথমে কর্মচারী সমিতির নেতৃত্বের কথাই বেশি মনে
পড়েছে। আমার নেতৃত্বকালীন স্মরণীয় কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছে
হচ্ছে, অধ্যাপক পূর্ণ চন্দ্র মুখার্জী তখন আমাদের মাননীয় উপাচার্য। ১৫
টাকা অন্তর্বর্তী ভাতার জন্য আমরা বাধ্য হয়ে, সেবার প্রথম অনশন কর্মসূচি
নেই। স্থান - উপাচার্য মহাশয়-এর বাসভবনের সামনে। রাত প্রায় পৌনে বারোটায়
আমরা যখন সবেমাত্র খেতে বসেছি, তখন উপাচার্য মহোদয়ের পিয়ন
লক্ষণ
শর্মা এসে আমাকে বললেন, মাননীয় উপাচার্য মহাশয় আমাকে ডাকছেন। আমি ও
সভাপতি সুনীল ঘোষ সেই রাতে গিয়ে জানতে পারি যে উপাচার্য মহাশয়-এর
বাসভবনের সামনে থেকে অনশন কর্মসূচির স্থান পাল্টানোর হুকুম এসেছে।
অন্তর্বর্তী ভাতা ১৫ টাকা করে দেওয়া যাবে না। আমরা উত্তরে বললাম, এত
রাত্রিতে আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন কি মাছের দর করবার জন্য? বকেয়া ১৫ মাসের
না দিলে আমাদের নির্ধারিত অনশন কর্মসূচি সূচি চলবে, তবে অনশনের স্থান আমরা
পাল্টে নিচ্ছি। সমিতির ইতিহাসে সেই ছিল প্রথম অনশন কর্মসূচি,
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে নেন, ১৫ মাসের অন্তর্বর্তী
ভাতা দিতে বাধ্য হন। এটা সম্ভব হয়েছিল কর্মচারী বন্ধুদের ঐক্যবদ্ধ
সংগ্রামের জন্য।
অধ্যাপক
অম্লান দত্ত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তখনও আমরা বেশ কয়েকটি
গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছিলাম। ৩০ এপ্রিল ১৯৭৫ ,
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হবে, সেই সমাবর্তনে আসবেন রাজ্যপাল
তথা আচার্য এ.এল , ডায়াস। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, আমাদের কোনো
কর্মী বন্ধু সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কোনো কাজ করবেন না, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ
দেবেন না। এর ফলে যখন সমাবর্তন অনুষ্ঠান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে,
তখন রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুরোধ করেছিলেন, ৩০শে এপ্রিলের অবস্থান ধর্মঘট তুলে নেবার জন্য। আমরা
সেদিন রাজি হইনি এমনকি স্থানীয় এক রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা রাত
বারোটার সময় দূত মারফত চিঠি দিয়ে আমাদের অনুরোধ করেন, যাতে আমরা ঐ দিনের
কর্মসূচি স্থগিত রাখি এবং আশ্বাস দেন যে তিনি মানুদাকে (তদানীন্তন
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে) বলবেন, যাতে আমাদের দাবি নিয়ে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আমরা কিন্তু কর্মচারী ঐক্যকে সম্বল করে
কোনো রাজনৈতিক দলের কথা শুনিনি। আমার নেতৃত্বে একটানা ৩৫ দিনের ধর্মঘট পালন
করা হয় যেটা ঐতিহাসিক। সারা রাজ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী
সমিতি ছিল একমাত্র একটি অরাজনৈতিক সংস্থা, যাকে কোনো রাজনৈতিক রঙ স্পর্শ
করতে পারেনি।" রঞ্জিত ঘোষদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির নেতা আজ
আর নেই। আজ তাদের উত্তরসূরিরা সমিতির স্বার্থ থেকে ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে
বেশি উৎসাহী। হয়তো এসব গল্পর মতো শোনাচ্ছে তবুও এরকম সমিতি, সমিতির
নেতৃবৃন্দ এমনই ছিলেন। ছিল শরতের সোনা রোদ্দুরের মতো কলুষহীন আবহাওয়া,
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত স্তরের কর্মীদের স্বার্থ ও ঐক্য ভাবনা শুধু
কোন একটি বিশেষ সমিতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সমগ্র ক্যাম্পাসে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐক্য ভাবনাই কেন্দ্রীভূত ছিল।