সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
103.চায়ের নিলাম ব্যবস্থার বিধি সরলীকরণ হোক/গৌতম চক্রবর্তী

103.চায়ের নিলাম ব্যবস্থার বিধি সরলীকরণ হোক/গৌতম চক্রবর্তী

102.এখনো মনে দোলা দেয় চা বলয়ের ফুটবল খেলা/গৌতম চক্রবর্তী

102.এখনো মনে দোলা দেয় চা বলয়ের ফুটবল খেলা/গৌতম চক্রবর্তী

101.বাগিচার প্রান্তিক জনপদগুলির সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা/গৌতম চক্রবর্তী

101.বাগিচার প্রান্তিক জনপদগুলির সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা/গৌতম চক্রবর্তী

100.আদিবাসী জনজীবনের সংস্কৃতিচর্চা (দ্বিতীয় পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী

100.আদিবাসী জনজীবনের সংস্কৃতিচর্চা (দ্বিতীয় পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী

99.আদিবাসী জনজীবনের সংস্কৃতি চর্চা (প্রথম পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী

99.আদিবাসী জনজীবনের সংস্কৃতি চর্চা (প্রথম পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী

98.চা বাগিচাতে গ্রুপ হাসপাতাল একান্তই জরুরি/গৌতম চক্রবর্তী

98.চা বাগিচাতে গ্রুপ হাসপাতাল একান্তই জরুরি/গৌতম চক্রবর্তী

29-November,2022 - Tuesday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 435

নিদামঝোরা টি এস্টেট/গৌতম চক্রবর্তী

নিদামঝোরা টি এস্টেট
গৌতম চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^
মালবাজার থেকে হায়হায়পাথার চা বাগান যার বর্তমান নাম রাজা টি গার্ডেন হয়ে নিদাম ফ্যাক্টরি রোড ধরে নিদাম চা বাগান মাত্র ছয় কিলোমিটার। গাড়িতে সময় লাগল মাত্র ২০ মিনিটের মত। গাড়িতে যেতে যেতে পুরোনো ইতিহাস ঝালাই করে নিচ্ছিলাম মনে মনে। ১৮৪০ সালের ভারতবর্ষ তখন উপনিবেশের খাতায় নাম তুলেছে। ঠিক সেই সময়ে দার্জিলিংয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে চা-গাছ রোপণ করেন ক্যাম্বেল সাহেব। তাই চা নিয়ে চাপান-উতোরের মাঝে বঙ্গসমাজ আজও এই মানুষটির কাছে আন্তরিকভাবে কৃতার্থ। অল্প দিনেই চা গাছ বড় হল। সাহেবরা বুঝলেন পাহাড়েও চা উৎপাদন সম্ভব। উত্তরবাংলার দার্জিলিং হয়ে উঠলো চা আবাদের ক্ষেত্রভূমি। রাতারাতি শ’য়ে শ’য়ে চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হল। ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দের পর দার্জিলিং পাহাড়ে চা-বাগিচার জন্য আর জায়গা রইল না। অগত্যা সাহেবরা নেমে এলেন তরাই-এর মত রুখাশুখা অঞ্চলে যা কিনা তখন ছিল প্লেগ, মহামারীর পীঠস্থান আর হিংস্র শ্বাপদে পরিপূর্ণ অরণ্যভূমি। তরাইয়ের তিমিরাচ্ছন্ন বনভূমি একের পর এক ধ্বংস করে চা-বাগিচা গড়ে উঠল। একটানা চা-বাগান গড়ার লক্ষ্যপূরণের পর ইংরেজরা ডুয়ার্সের দিকে চোখ ফেরালেন। ১৮৭৪-এ ডুয়ার্স পেল প্রথম চা-বাগান। এবং আজও ডুয়ার্সের মতো বড় বাগান দার্জিলিংয়ে নেই, আগেও ছিল না। সে সময় একদিকে পরাধীনতার ঔপনিবেশিক অত্যাচার, অন্য দিকে পুঁজির অপ্রতুলতা বাঙালিদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসার পথে এগিয়ে আসতে প্রতিবন্ধক ছিল। তবুও সাহেবদের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের কারণ হয়েছিলেন সেকালের ক’জন বাঙালি। সে সময় ইংরেজদের একচেটিয়া বাগান বানানোর স্বপ্নকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দেন ক’জন বাঙালি।
আজ যাচ্ছি একটি অত্যন্ত পুরনো শতাব্দীপ্রাচীন চা বাগিচাতে। জলপাইগুড়ির উকিলরাই চা-বাগান নির্মাণে এগিয়ে আসেন। ডুয়ার্সে যে দু’জন বাঙালি প্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে চা-চাষ শুরু করেন তাঁরা হলেন মোহম্মদ রহিমবক্স ও বিহারীলাল। ঊনবিংশ শতকে ডুয়ার্সে বাঙালি উদ্যোগে তৈরি হল মোগলকাটা বাগান ও নিদাম চা-বাগান। ইংরেজরা ওয়েস্ট ল্যান্ড পেয়ে সেখানে চা-রোপণ করে। এই জমিগুলি চা-চাষের পক্ষে উপযুক্ত ছিল। তা ছাড়া এগুলো কম দামে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যেত। কিন্তু এতে বাঙালিরা সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়ে জোতজমি অর্থাৎ আবাদি ভূমিতে বাধ্য হয়ে চা-চাষ শুরু করে। সব মিলিয়ে বাঙালিরা সেকালে স্বদেশি চা-বাগান গড়ার মধ্য দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে প্রয়াসী হন। পরবর্তীতে চামুর্চি, কাঁঠালগুড়ি, রামঝোরা চা-বাগানও বাঙালি প্রয়াসের ফসল। ডুয়ার্সের রহিমপুর, ফতিমাবাদ বাগান তৈরি করলেন মোশারফ হোসেন। ১৯১১-তে প্রতিষ্ঠিত হল গোপালপুর চা-বাগান। একশো বছর আগে বাঙালিরা যে শ্রম, অধ্যবসায়, বিচক্ষণতায় চা-শিল্পের মেরুদণ্ড সোজা রেখেছিলেন তা নিতান্তই অদূরদর্শীতা, অবহেলা, হঠকারীতায় বাঙালিদের হাতের বাইরে চলে গেল। স্বাধীনতার বেশ কিছু বছর পরে শুরু হল বাগান বিক্রির উপক্রম। দেখতে দেখতে বাগানগুলি উত্তরাধিকার সূত্রে অবাঙালিদের হাতে চলে গেল। বাঙালিদের ক’জন শেয়ার কিনে শিল্পটাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেও তা এই শিল্পের পুনরুত্থানে যথেষ্ট ছিল না। হাজার আন্দোলন, ব্রিটিশদের উন্নাসিকতা, সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ, স্বদেশি সংগ্রামের পরেও যে বরেণ্য চা-করেরা উত্তরবাংলার চা-শিল্পকে বেহাত হতে দেননি, সেই বাঙালিরই বংশধরেরা চা-শিল্পকে আতসকাচের তলাতে এনে ফেলে দিয়েছেন। সেই ঘষা কাচে উত্তরবাংলাতে কটা বাঙালী মালিকানাতে পরিচালিত চা বাগিচা আছে তা খুঁজতে গেলে লজ্জা হয়।
হায়! কত চেষ্টা করছি। কিন্তু এই বাগানগুলির সুপ্রাচীন ইতিহাস জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। ব্রিটিশদের তথ্য আকরের অভাব নেই, অভাব আমাদের ভারতীয়দের সেইগুলি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্বশীলতার অভাব। হায়! যদি ডিবিআইটিএ বা আইটিপিএ এর লাইব্রেরিতে যে আকরগ্রন্থ বা বিভিন্ন সময়ের রিপোর্টগুলি ডিজিটালি পাওয়া যেত তাহলে এনসাইক্লোপিডিয়া তৈরি করে দিতে পারতাম। কি আর করা। তাই চা এর টানে আর ডুয়ার্সের প্রতি ভালোবাসায় আর হতভাগ্য সহজ সরল মানুষগুলির যারা সবুজ গালিচাকে তাদের আস্তানা বানিয়েছে সেই উনবিংশ শতক থেকে তাদের অভাব অভিযোগ, সমস্যা জানার তাগিদেই এই চরৈবেতি। তবে তার আগে বাগিচা সমীক্ষার মূল নির্যাসটুকু তুলে ধরা জরুরী। এককালীন বাঙ্গালী মালিকানায় পরিচালিত নিদাম চা বাগিচার বর্তমান ম্যানেজমেন্ট মারোয়ারি ব্যাবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বাগান পরিচালনা করছেন। নর্দান বেঙ্গল টি কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিরেক্টররা হলেন আনন্দ আগরওয়াল। তিনি এবং বিমল আগরওয়াল ২০০৫ সাল থেকে, মীরা দেবী আগরওয়ালা এবং মতিলাল আগরওয়ালা ২০০৬ সাল থেকে কোম্পাণীর দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৭ সালে সঞ্জয় এবং মনোজ মিত্রুকা এবং ২০১৮ সালে নীরজ মিত্তাল ডিরেক্টর হিসাবে যোগদান করেন। নর্দান বেঙ্গল টি কর্পোরেশন লিমিটেড কোম্পানির অফিস শিলিগুড়ির সেভক রোডে। তবে নিদাম টি কোম্পাণীর মূল অফিস হিসাবে নর্দান বেঙ্গল টি কর্পোরেশন লিমিটেডের অপর একটি ঠিকানা হল আটিয়াবাড়ি বিল্ডিং, কদমতলা।
উদ্ভাবনশক্তি, গবেষণা এবং জ্ঞানভান্ডারকে কাজে লাগিয়ে পণ্য ও পরিষেবার গুণমানে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মান এনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দক্ষ চা উৎপাদনকারী এস্টেট হিসাবে চা উৎপাদন এবং রপ্তানিতে প্রশংসা অর্জন করেছে মালবাজার মহকুমার নিদাম টি এস্টেট। নিদাম টি এস্টেটের মিশন এবং লক্ষ্য হল একটি গুণমানসম্পন্ন বাগানে পরিণত হয়ে চায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জন করা এবং তারা সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই গুণগত মানের চায়ের চাষাবাদ এবং উৎপাদন কার্যক্রমে সম্ভাব্য সকলপ্রকার উন্নতি আনার পর নিদামের পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচী হল ২০ একর জমিতে পুরানো চায়ের ঝোপ উপড়ে ফেলা। যে সকল গাছগুলির বয়স ৭৫ বছরের বেশি হওয়ার কারণে অনুৎপাদনশীল সেগুলিতে নতুন করে রিপ্ল্যান্টেশনের কাজ চলছে। এর ফলে রোপণ করা নতুন চা ঝোপ থেকে সবুজ পাতার আরও ফলন সহ উন্নত মানের চা উৎপাদন হবে। ১৮৮৪ সালে পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে এই এস্টেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ২০০৩ সালে বর্তমান মালিকদের দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং তখন থেকে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আশু লক্ষ্য পুরানো চায়ের গুল্মগুলি ব্যাপকভাবে উপড়ে ফেলে ৫০ হেক্টর এলাকায় নতুন চা গাছ লাগানো যাতে বাগান থেকে সঠিক মানের চা ফলন পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সমস্ত পুরোনো মেশিনারিগুলি বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন আধুনিক মেশিনারি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে উন্নত মানের চা উৎপাদন এবং চা প্লাকিং থেকে প্যাকিং এবং পাঠানো পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়েছে।
মালবাজার মহকুমার নর্দার্ণ বেঙ্গল টি কর্পোরেশনের নিদামঝোরা চা বাগিচার ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৬ জন। বাগানের পরিসংখ্যানগত তথ্য খুব একটা বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে পরিসংখ্যান পরিবর্তিত হতেই পারে। কংগ্রেস প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুর নিদাম চা বাগান ইউনিট সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বললেন বাগানে ট্রেড ইউনিয়নের বাড়াবাড়ি নেই। দাবি আছে ন্যূনতম মজুরির। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের নিদাম ইউনিট সম্পাদক দুর্গা মুণ্ডারার দাবিও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী। সিটুর ইউনিট সম্পাদক সুনীল ওঁরাও এর কাছ থেকে জানলাম ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা আগে ছিল চারটি। এগুলির মধ্যে প্রধান হল সিবিএমইউ, টিডিপিডব্লিউইউ এবং পিটিডব্লিউইউ। তাঁর দাবি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের শাসকদলের মিথ্যা প্রলোভনে তারা বিগত লোকসভাতে ভুল করে সিটু ছাড়লেও মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে তারা আবার জয়েন্ট ফোরামের পতাকাতলে সংগঠিত হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরাই ডুয়ার্স প্লানটেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ইউনিট সম্পাদক রাম খেরিয়া বলেন, জানালেন রেশন, বোনাস, পি এফ, গ্র্যাচুয়িটি সংক্রান্ত প্রশ্নে একেবারেই যে আন্দোলন হয় না তা নয়, কিন্তু আপস মীমাংসার মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সেগুলি সমাধান করে। বাগানের সহকারি ম্যানেজার আয়ুব আলির সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানলাম বাগিচার গ্রস এরিয়া ৩৫৫.৭৩ হেক্টর এবং গ্র্যান্ট এরিয়াও তাই। আপরুটেড এরিয়া ৩০.২৬ হেক্টর। ২৮.৮৪ হেক্টর জমি নতুন করে বপন করা হচ্ছিল। ক্ষেত্রসমীক্ষার সময়ে সেচযুক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হেক্টর এবং প্ল্যান্টেশন এরিয়া ছিল ২২৫ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমি থেকে গড়ে ১৮৩৯ কেজির মতো কাঁচা চা পাতা ফ্যাক্টরিতে আসে প্রসেসিং এর জন্য। নিজস্ব কাঁচা চা পাতা উৎপাদনের গড় ২০ লাখ কেজি। মোট বাৎসরিক নিজস্ব উৎপাদিত চা ৫ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহীত কাঁচা চা পাতা ১০ লাখ কেজি। চা এর গ্রেড অনুযায়ী ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা তৈরি হয়। ফ্যাক্টরিতে কেনা চা পাতায় উৎপাদিত চা প্রায় ২.৫ - ৩ লাখ কেজি গড়ে। মোট চা উৎপাদনের পরিমাণ ৬ লাখ কেজি।
চা বাগানের লিজ হোল্ডার নর্দার্ণ বেঙ্গল টি কর্পোরেশন। নিদামঝোরা চা বাগিচার সাব স্টাফ ৫৫ জন। করণিকের সংখ্যা বড়বাবুকে ধরে ৬ জন। ক্ল্যারিক্যাল বা টেকনিক্যাল স্টাফ ৬ জন। বাগিচায় শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৪৪৫। মোট জনসংখ্যা ২৬৩০। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিযুক্ত শ্রমিক সংখ্যা ৭৭৬। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত কর্মী এবং স্টাফের সংখ্যা ৭৪। মোট শ্রমিক ৬৮৮ এবং শ্রমিক পরিবারগুলির উপর নির্ভরশীল অশ্রমিক ১৯৪২ জন। সাম্প্রতিককালে এই পরিসংখ্যান কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। নিদামঝোরা চা বাগিচার বাগিচাতে ছোট হাসপাতাল আছে। বাগিচাতে ডাক্তার আছে। ট্রেন্ড নার্স ২ জন, কম্পাউন্ডার ১ জন, হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট ১ জন, মিড ওয়াইভস ১ জন। হাসপাতালে মেল ওয়ার্ড ৩ টা, ফিমেল ওয়ার্ড ৩ টা, আইসোলেশন ওয়ার্ড ৪ টি, মেটারনিটি ওয়ার্ড ১ টি, অপারেশন থিয়েটার নেই। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। অ্যাম্বুলেন্স আছে। কিন্তু ভাঙাচোরা। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। ভ্রাম্যমান ক্রেশের সংখ্যা ১ টি। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা এবং শৌচালয় আছে। ক্রেশের শিশুদের দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় বলে দাবি থাকলেও বাস্তব ভিন্নধর্মী। তবে ক্ৰেশে শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থাও করা হত কোনও এক সময়ে। শিশুদের পোশাক সরবরাহ করা হয় না নিয়মিত। শিশুদের পোশাক বা গরম পোশাকের ব্যবস্থাও নেই। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হলেও তা কতটা শুদ্ধ তা নিয়ে সংশয় আছে। ক্রেশে মোট অ্যাটেন্ডেন্ট ২ জন। বাগিচায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় নেই। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা হিসাবে একটা ট্রাক আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব এবং খেলার মাঠ আছে। প্রভিডেন্ড ফান্ড খাতে নিয়মিত অর্থ জমা পড়ে না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। বোনাসের পরিমাণ ২০ শতাংশ হলেও মালিকপক্ষ বোনাসের সময় ন্যায্য টাকা দিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। বকেয়া পিএফ এর মোট অর্থ জানা যায়নি। তবে মোটামুটি আপডেট থাকে। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়।
সবশেষে যেটা বলি ভারতবর্ষের অন্যতম চা উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক অঞ্চল আমাদের এই উত্তরবঙ্গ। বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট এবং অন্যান্য ফিল্ড এনকোয়ারি থেকে যেটা বোঝা যায় যে বর্তমানে বাগিচা শিল্পে মালিকেরা বা ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কারণে প্রায় প্রতি বছর নানাপ্রকার চাপের মধ্যে থাকলেও শিল্পে লোকসানের কথা শোনা যায় না বললেই চলে। ফলে এই শিল্পের ভেতরের ছবিটা দেখে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত ছিল। কারণ লোকসান থাকে খাতায় কলমে। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়াতে খায়। অন্যান্য কৃষি পণ্যের মতই চায়ের ক্ষেত্রেও উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়গুলিতে চায়ের মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়তে থাকে এবং সেই কারণেই এই পর্যায়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসেসিংয়ের প্রতিটি পর্যায়ে যেমন ব্লেন্ডিং, প্যাকেজিং, মার্কেটিং সবকিছুতেই মূল্যযোগের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ফলে এই ধাপগুলো অত্যন্ত লোভনীয় এবং এগুলি মূলত ক্রেতা দেশগুলির চা কোম্পানিগুলি করে থাকে। এখান থেকেই বড় কর্পোরেট মুনাফা শুরু হয়। বিশ্বের মোট চায়ের বাজারের ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটা মাত্র বহুজাতিক কোম্পানি। ফলে চা শিল্পে মার্কেটিং দক্ষতা এবং প্রভাব সহজেই অনুমান করা যায়। এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে প্রভুত্ব করছে চারটি কর্পোরেশন। লিপটন এবং পিজিটি প্রস্তুতকারক ইউনি লিভার, টেটলি প্রস্তুতকারক টাটা টি, একটি চা ট্রেডিং কোম্পানি ভ্যান রিস এবং একটি চা প্যাকিং কোম্পানি জেমস ফিনলে।
দূরদর্শিতার অভাব, সুষ্ঠু আর্থিক এবং প্রশাসনিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক বাগান রুগ্ন হয়ে রয়েছে সামগ্রিক অব্যবস্থার ফল স্বরূপ। ফলে কর্পোরেট দুনিয়াতে তাদের চা ভালো দাম পায় না মধ্যস্বত্ত্বভোগী এবং দালালদের যোগসাজসে। কিন্তু এদের কাউকেই প্রকৃত অর্থে রুগ্ন বলা চলে না। তার সঙ্গে প্রচারের ঘাটতি এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য দায়ী। সমস্যা তৈরি হয় কোন বাগান জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চা এর দাম ভালো না পেলে। এর পেছনে বহুবিধ কারণ থাকে যেগুলির সঙ্গে শ্রমিকদের সরাসরি কোন সম্পর্ক থাকে না। অথচ যেসব মানুষগুলির জীবনযাত্রা এই বাগানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় তাদের উপর এই ঘটনাগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং তখনি শুরু হয় মজুরী, বোনাস, পি এফ, গ্র্যাচুইটি নিয়ে সঙ্ঘাত। বেশ কিছু ‘বেনিয়া বেওসায়ী’ ইচ্ছাকৃতভাবে বাগান লোকসানে চলছে বলে দিনের পর দিন বাগান বন্ধ করে রাখেন। উদাহরণস্বরূপ রায়পুর, মানাবাড়ি, রামঝোরা ইত্যাদি বাগানগুলির উল্লেখ করা যায়। কয়েকবছর অবহেলা এবং অনিয়ম চালানোর পরে মালিকদের স্বচ্ছন্দে লুটপাট চালিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে সেটাও দেখা যায়। এই পরিস্থিতি সাম্প্রতিককালে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। চা বাগানে অপুষ্টি, দারিদ্র্য, এবং মৃত্যুর ভয়াবহ ঘটনাগুলিকে বন্ধ করা এবং শ্রমিকদের তাদের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবন থেকে বের করে আনার একমাত্র রাস্তা হল চা শিল্পকে তাদের পরিচালন পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন এনে বাগানগুলি যাতে সক্রিয় থাকে এবং সুষ্ঠুভাবে চলে তার ব্যবস্থা করা।
ভারতের দুই প্রধান চা উৎপাদক অঞ্চল অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকরা মূলত আদিবাসী। ঔপনিবেশিক বাগান মালিকেরা আজ থেকে একশো পন্চাশ বছরেরও আগে এদের পূর্বপুরুষদের ঝাড়খন্ড, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা এবং মধ্যপ্রদেশের মত রাজ্যগুলি থেকে জোর করে তুলে এনে এই বাগানগুলোতে কাজে লাগিয়েছিল। সারা দেশের ১৬৮৬ টি টি এস্টেট এবং এক লক্ষ সাতান্ন হাজার পাঁচশো চারটা ছোট বাগিচার মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩৫ লক্ষেরও বেশি। এর বেশিরভাগই মহিলা। পরিসংখ্যান বলছে চা শিল্প শ্রমিক সংখ্যার দিক থেকে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম। চায়ের বাজারে ভিড় করে আছে মধ্যস্বত্বভোগীরা এবং তাদের মাথায় বসে আছে করপোরেটরা। এই পিরামিডের সবচেয়ে দূর্বল এবং ভঙ্গুর বিন্দুতে যে চা শ্রমিকেরাই থাকবেন তা বুঝতে আলাদা বুদ্ধি লাগে না। এখানে তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। থাকলেও খুবই সামান্য। ফলে বিশ্ব বাজারে চায়ের দাম শিখর স্পর্শ করেছে। কিন্তু চা শ্রমিকরা আজ থেকে বাজারের মূল্যনিরিখে বিচার করলে ৩০ বছর আগে যে মজুরি পেতেন এখনও প্রায় তাই পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে সেটাও কমে গেছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে একটা বাগানের ভালো দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে মালিক, ম্যানেজমেন্ট, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট সকলের দায়িত্ব আছে। সঙ্গে অবশ্যই এটাও নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকরা যেন তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। সমস্ত চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি আবশ্যিক তো বটেই, তার সঙ্গে তাদের সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্যান্য চাকরিগত সুযোগ সুবিধাগুলিকেও নিশ্চিত করতে হবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri