সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

07-December,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 396

চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব-১৬
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^
                  
 আশার আলো, আশংকার মেঘ

রাতের খাবার খেয়ে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছিল সুবর্ণ। আজ সকালের ট্রেনে বাড়ি এসেছে। কদিন বাদেই তূর্যর মাধ্যমিক পরীক্ষা। এ সময় ছেলেটার পাশে একটু থাকা দরকার। বাগান বন্ধ থাকায় ওর মনের ওপর চাপ পড়েছে। সেটা যাতে ওর পরীক্ষার প্রস্তুতির ওপর কোনও ভাবেই প্রভাব ফেলতে না পারে তার জন্য তূর্ণা ভীষণ সজাগ। সংকটের গভীরতা কতটা সেটা কখনোই ছেলেকে বুঝতে দিতে চায় না। বরং ওকে বলা হচ্ছে এটা সাময়িক একটা ক্রাইসিস। খুব শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে। সুবর্ণ নিজেও বাড়ি এলে আচরণে বা শরীরি ভাষায় কোনরকম আশাহীনতা প্রকাশ করে না। চনমনে থাকার চেষ্টা করে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দুজনেরই অনেক আশা। ছোট থেকে ভাল রেজাল্ট করে আসছে তূর্য। স্কুলের টিচার থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিউটররা সকলেই ওর বিষয়ে আশাবাদী। 

বুঝতে না দিলেও চাপা টেনশন যে কাজ করছে ওর ভেতর সেটা আবারও বোঝা গেল খাবার টেবিলে। খাবার দিয়ে তূর্ণা কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিচেনের দিকে আড়াল হতেই ও নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে,' বাগান কবে খুলবে , বাবা? '

রুটি ছিঁড়তে গিয়ে থমকে যায় সুবর্ণ। পরমুহুর্তেই নাটকীয় ভাবে মুখে তীব্র উচ্ছাসের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে বেশ জোরেই বলে ফেলে- 'আরে, তোমাদের তো বলাই হয় নি আসল কথাটা... '

কিচেন টাওয়েলে হাত মুছতে মুছতে এসে চেয়ারটা টেনে  আড়চোখে সুবর্ণকে একবার দেখে নিয়ে তূর্ণা খুব নির্লিপ্ত স্বরে জানতে চায়, 'কী কথা? '

তূর্ণার নির্লিপ্তি দেখে ইচ্ছে করেই ততোধিক শীতল গলায় কথাটা আলতো স্বরে ভাসিয়ে দেয় সুবর্ণ -' কালই হয়ত বাগান খুলে যেতে পারে।', 

-'তাই নাকি...! উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠেছিল তূর্য। তূর্ণা মৃদু ধমক দেয়, ' আস্তে, দাদু ঘুমোচ্ছে । '

- ' এতবড় কথাটা চেপে রেখেছিলে তুমি...!' অনেকটা স্বর নামিয়ে প্রায় ফিসফিসিয়ে ওঠে তূর্য। শত চেষ্টা সত্ত্বেও তূর্ণা যে এতদিনে ওর টেনশনটা বিন্দুমাত্র মুছে দিতে পারে নি তা বিলক্ষণ বোঝা যায় ওর এই প্রতিক্রিয়ায়। 

-'হ্যাঁ, কাল মিটিং ডেকেছে লেবার কমিশনার। এবারে ফয়সালা হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। ' কথাটা বলে তূর্ণার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে সুবর্ণ। আপনমনে চামচে করে প্লেটে তরকারি নিতে নিতে তূর্ণা নিস্পৃহ গলায় তূর্যর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে ' কাল সায়েন্স টিচার যেতে বলেছেন না?  পরীক্ষার আগে কি একটা স্পেশাল ক্লাস নেবেন বলেছিলেন ...?' 

-' হয়ে গেছে...হোয়াটসঅ্যাপে  সাজেশনসগুলো পাঠিয়ে একবার দেখে নিতে বলেছেন... আচ্ছা বাবা..বাগান যদি...' - আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তূর্য। তূর্ণা বাধা দেয়-' তোমার এ সবে না থাকলেও চলবে। বাগান খুললে জানতেই পাবে। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে যাও, পড়ায় কনসেনট্রেট করোগে। '

কথাটা মনঃপূত না হওয়ায় মুখ গোঁজ করে খাওয়া সেরে বেসিনে মুখ ধুয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় তূর্য। 

-' এভাবে বলতে গেলে কেন? বেচারা হয়ত টেনশনে ছিল এতদিন। খবর টা শুনে বোধহয়...। '

সুবর্ণকে থামিয়ে দিয়ে তূর্ণা বলে ওঠে,' সেটা যে আমার টেনশান বাড়িয়ে দেয় তা বোঝো ? জীবনের প্রথম ভাইটাল পরীক্ষাটা  দিতে যাচ্ছে। এ সময় কোনোভাবেই যাতে ওর কনসেনট্রেশন নষ্ট না হয় সেজন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর তুমি কি না...''

কথা শেষ হয় না, লাগোয়া বেডরুমের ভেজানো দরজাটা হঠাৎ খুলে যায়। টালমাটাল পায়ে শিশুর মতো ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সুধাময়। অন্ধকার থেকে আলোয় এসে বোধহয় চোখ ধাঁধিয়ে গেছিল। টাল সামলাতে একহাতে ফ্রিজটা আঁকড়ে ধরে অন্যহাতের তালু দুই ভ্রুর ওপর আনুভূমিক ভাবে রেখে কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন। তারপর হঠাৎ চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন, ' তুমলোগ ক্যায়া করতা হ্যায়....ই-ঠো কৌন ইস্টেশান হ্যায় ...? ' বলেই ফোকলা মুখে হেসে, হাঁ করে চেয়ে থাকেন। 

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যায় দুজনে। সুধাময়ের মুখে আচমকা অসংলগ্ন হিন্দি বাক্য শুনে দুজনেই উদ্গত হাসি চাপার চেষ্টা করে। লাঠি ছাড়া বেশীদূর এগোতে পারেন না সুধাময়। পা দুটো কাঁপতে থাকে। খাবার ফেলে চটপট উঠে একহাতে বাবাকে ধরে সুবর্ণ মৃদু ঝাঁকুনি দেয়, 
-' কী বলছ বাবা...এটা তো বাড়ি! তুমি বাড়িতে... ' 

-'অ্যাঁ,' -  হাঁ মুখটা বন্ধ হয়ে যায় ঝপ করে। এরপর চারপাশটা  নিরীক্ষণ করে সুবর্ণর মুখের দিকে চেয়ে থাকেন ফ্যালফ্যাল করে। 

'- স্বপ্ন দেখেছেন বোধহয়। শুইয়ে দাও ভেতরে নিয়ে গিয়ে'- পেছন থেকে তূর্ণা বলে ওঠে। 

বাবাকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিতে গিয়ে সুবর্ণ লক্ষ্য করে বাবার ঠোঁটটা শুকিয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করে, 
' জল খাবে বাবা? ' 
কথা বলেন না, মুখটা হাঁ করেন সুধাময়। পাশের টেবিলে রাখা জলের বোতল থেকে একটু একটু করে জল ঢেলে দেয় সুবর্ণ বাবার মুখে। জল খেয়ে বাধ্য ছেলের মতো কাত হয়ে শুয়ে পড়তেই বাবার গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে বলে, ' ঘুমোও এবার। বাতিটা জ্বালিয়ে দেব বাবা?' হ্যাঁ বা না কিছুই বলেন না সুধাময়। চোখ বুজে ঘুমোনোর চেষ্টা করেন শুধু। 

টেবিলে অপেক্ষা করছিল তূর্ণা। সুবর্ণর খেতে ইচ্ছে করছিল না। বেসিনের দিকে এগোতেই তূর্ণা জিজ্ঞেস করে, 'খাবে না আর? '

-' না, ইচ্ছে করছে না। তুমি খেয়ে নাও। ' টাওয়েলে মুখ মুছতে মুছতে সুবর্ণ দেখে তূর্ণাও উঠে পড়লো বাকি খাবারগুলো রেখে। 
একে একে তরকারির বোলগুলো ফ্রিজে ঢোকাতে ঢোকাতে বলে, 

-' বাগান খুলে গেলেও ওর পরীক্ষা চলাকালীন কিন্তু থাকতে হবে তোমাকে এখানে। দেখছই তো সব। কোনদিক সামলাব আমি। ছেলে পাশ করলে ওকে কোথাও হস্টেলে রাখার বন্দোবস্ত কোরো আগে থেকেই। তোমাকে ছাড়া এভাবে থাকাটা কিন্তু রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। '

কোনও উত্তর না দিয়ে মোবাইল আর সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে ছাদে চলে যায় সুবর্ণ। সিগারেট ধরিয়ে মোবাইলটা স্ক্রল করতেই চোখে পড়ে মিনিট দশেক আগে সুমন্তর মোবাইল থেকে দুটো কল। তার আগে ভবেশ ডাক্তারের মোবাইল থেকে আরও একটা মিসকল এসেছে। সন্ধে থেকে রিংটোন লো করে রাখতে হয় তূর্যর পড়াশোনার জন্য। শোনা যায়নি। 

সুমন্তকে কল করলে ফোনটা বেজে যায়। কেটে যেতে না যেতেই ভবেশ ডাক্তারের ফোন, 

' আরে, কখন থিকে ফোন করতেসি আপনাকে...বাগান বাবুর মোবাইল থিকেও একবার কল দিলাম...তোলেন নাই কেন? '

-' শুনতে পাই নি... কেন কী ব্যাপার? ' সুবর্ণ জানতে চায়। 
-' আরে বাগানবাবু হঠাৎ কইরে অসুস্থ হয়ে পড়সে।... '

-কী হয়েছে সুমন্তর...! বিকেলেই তো আমার সাথে কথা বললো। ' সুমন্ত অস্থির হয়। 

-'বুকে ব্যথা। আমাকে ফোন করে ডাকল। আইসে ওষুধ পত্র যা দিবার দিলাম, কমতেসে না কিছুতেই.. 

-ও কথা বলতে পারছে..? সুমন্ত জিজ্ঞেস করে। 

-' হ্যাঁ, পারবে মনে হয়.. ন্যান্ কথা বলেন। '
ফোন নিয়ে সুমন্ত কথা বলার চেষ্টা করে। বোঝা যাচ্ছিল বেশ কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে। যতটুকু বোঝা গেল তাতে মনে হচ্ছিল মেয়ের সম্পর্কে কিছু বলতে চায়। 

সুবর্ণ আস্বস্ত করে, ' ওর কথা ভাবতে হবে না। তুই নম্বর দেওয়ার পর কথা হয়েছে ওর সাথে। ট্রেন ছেড়েছে। ওকে রিসিভ করে নেব আমি...বুকে কোন দিকটা ব্যথা হচ্ছে তোর? 

কাতরাতে কাতরাতে সুমন্ত জানায় ব্যথা শুধু নয়, জ্বালা। অসহ্য জ্বালা হচ্ছে বুক জুড়ে। ফোনটা ডাক্তার বাবুকে দিতে বলায় আরো কিছু বলতে চাইছিল সুমন্ত আপ্রাণ। বোঝা গেল না পুরোটা । শুধু মনে হলো বলতে চাইছে, মেঘাকে কিছু না জানাতে। ভবেশ ডাক্তার ফোন নিতেই সুবর্ণ জিজ্ঞেস করে, 

'এখন কী করবেন ... ওকে তো তাড়াতাড়ি শিফট করা দরকার ...অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছেন? '

-' অ্যাম্বুলেন্সে তো ত্যাল নাই। ড্রাইভারও নাই। বড়বাবু কাকে য্যান ফোন করলো এইমাত্র..'
ভবেশ ডাক্তারের কথা শুনে সুমন্ত বলে,' দিব্যেন্দুদা আছে নাকি ওখানে? ফোনটা ওঁকে দিন তো । '

বড়বাবুর সাথে কথা বলে সুবর্ণ জানতে পারে গাড়ি ডাকা হয়েছে নাগরাকাটা থেকে। চলে আসবে মিনিট দশেকের ভেতর। কলিগদের মধ্যে আরও অনেকে চলে এসেছে। গাড়ি এলেই সুমন্তকের নিয়ে ভবেশ ডাক্তার আর একজন হেলথ- অ্যাসিস্ট্যান্ট  বেড়িয়ে পড়বে। 

ফোনটা খোলাই ছিল সারারাত। মাঝে একবার ভবেশ ডাক্তারকে ফোন করে সুবর্ণ জানতে পারে আসার পথে ব্যথা বাড়ায় সুমন্তকে মালবাজার হাসপাতালের এমারজেন্সি তে ঢোকানো হয়েছিল। ডাক্তার সন্দেহ করছে সিভিয়ার কার্ডিয়াক অ্যাটাক। একটা ইনজেকশন দিয়েই ওরা রেফার করে দিয়েছে মেডিকেল কলেজে। আরো প্রায় সত্তর কিলোমিটার পথ। মাঝপথে অবস্থার অবনতি হলে কিছু করার নেই। লাইফ সাপোর্টের কিছু নেই। পুরোটাই ভগবান ভরসা। 

ঘুম আসছিল না কিছুতেই সুবর্ণর। খবরটা শোনার পর থেকে মনটা দমে গেছিল ভীষণ। নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল মনের ভেতর। সুমন্তর গ্যাসের সমস্যা ছিল। মাঝেমধ্যে ওষুধও খেত। কিন্তু বুকে ব্যথার কখনও বলেনি তো! ভবেশবাবু অবশ্য অন্য কথা শোনালেন, যেটা শোনার পর সুবর্ণর মনে হল খুব কাছের বন্ধু হয়েও অনেক কিছুই চেপে গেছে সুমন্ত তার কাছে। ইদানিং প্রায়ই বুকের বাঁদিকটায় নাকি চিনচিনে ব্যথা হতো। ভবেশ ডাক্তার সাবধান করে বলেছিলেন একবার কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে। গিয়েওছিল। ই. সি. জি তে গন্ডগোল ধরা পড়ার কথাটা  চেপে রাখতে বলেছিল ভবেশ ডাক্তারকে। বলেছিল খুব শিগগিরই কলকাতা গিয়ে বড় ডাক্তার দেখিয়ে যা করার করবে। এই শরীর নিয়েই তবু ও লড়ে গেছে । লড়ে গেছে সকলের স্বার্থে। দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন থেকেছে আপনজনের কাছ থেকে। অসুস্থ হলেও কেউ দেখার ছিল না । না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও বলার ছিল না কেউ। তার ওপর অসুখী দাম্পত্যজীবনের অবসাদ, আদরের মেয়েকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট ওকে বারবার ঠেলে দিত যন্ত্রণা ভুলে থাকা বিষপাত্রের দিকে। আর ওটাই কী শেষমেশ ডেকে আনলো সর্বনাশ! বাড়ি ফিরে মদের গ্লাস আর কিশোরকুমারের গান এই দুটোই যে ওকে ক্ষণিকের শান্তি ফিরিয়ে দিত। 

শুনতে খারাপ লাগলেও ভবেশ ডাক্তারের কথাগুলো কানে বাজে, ' আরে মশায়, বাবুরা যদি সায়েবদের মতো চলতে চায় তা হইলে কি হয়! সায়েবদের আগে পিছে কাজের লোক। অদের বউ-বাচ্চা বাইরে থাকলেও অসুবিধা নাই। আপনার আমার বউ না থাকলে তো 'প্যাটে-খাটে-পকেটে' সর্বত্রই বিপদ...আসলে এখন এইটা একটা ফ্যাশন। বড় স্কুল, ইংলিশ স্কুলে না পড়লে পোলাপান নাকি মস্ত মানুষ হয় না... যত্তসব।'

বিছানা ছেড়ে নেমে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় সুবর্ণ। একটা সিগারেট ধরিয়ে চেয়ে থাকে দূর ক্যানেল রোডের দিকে। গাড়ির আলোগুলো যেখানে বুদ্বুদের মত ভেসে উঠেই হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। খানিক এগোলেই নৌকাঘাট মোড়। সেখান থেকে মেডিকেল কলেজ বড়জোর মিনিট দশেক। রাত দুটো। এতক্ষণে কি সুমন্তকে নিয়ে ওরা পৌঁছে গেছে!  ডাক্তারবাবুর মোবাইলটাও সুইচড অফ দেখাচ্ছে। কেমন আছে সুমন্ত কে জানে। কয়েকমাস যাবত বাগান খোলানোর ব্যাপারে কি অমানুষিক পরিশ্রমই না করে গেছে ছেলেটা। আগামীকাল ত্রিপাক্ষিক মিটিংয়েও ওর যাওয়ার কথা ছিল। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, শারীরিক অসুস্থতা,পারিবারিক সমস্যা--সব মিলিয়ে এই চাপটাই কি ও নিতে পারল না শেষমেশ! আর কয়েকঘন্টা বাদে মেঘা এসে পড়বে। বাবার সঙ্গলাভের জন্য ছুটে আসছে মেয়েটা। এসে এ সব দেখে ওর মানসিক পরিস্থিতি কি হতে পারে ভাবতে খারাপ লাগছিল সুবর্ণর। বাড়ি এসে একটু রিল্যাক্সড হওয়ার পর ধিরেসুস্থে  যা বলার তূর্ণাকে দিয়েই বলাতে হবে। 

অস্থির পায়ে প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করছিল সুবর্ণ। নেটে দেখাচ্ছে ট্রেন আলুয়াবাড়ি পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ হল। মেঘাকে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তি হচ্ছে না কিছুতেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ সুমন্তর মেয়েকে দেখার জন্য যে অস্থিরতা সেটাই যেন এই মুহূর্তে নিজের মধ্যে অনুভব করতে থাকে সুবর্ণ । সকালে কথা হয়েছে ভবেশ ডাক্তারের সাথে। উনি সুমন্তকে মেডিকেলে ভর্তি করে দিয়েই ভোররাতে বাগানে ফিরে গেছেন। হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছেলেটা রয়েছে ওর কাছে। বাড়ির লোক কেউ গেলে সে-ও চলে যাবে।  ছেলেটি জানিয়েছে ডাক্তার রাউন্ডে এসে বলে গেছে হার্টের অবস্থা বেশ খারাপ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ইমেডিয়েট আই. সি. ইউ এর লাইফ-সাপোর্ট দরকার। মেডিকেলের আই সি ইউ তে বেড নেই। বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে চাইছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাড়ির লোক বলতে তো মেঘা । ও বাচ্চা মেয়ে। বাবাকে এ অবস্থায় দেখে হয়ত ভেঙে পড়বে। সিদ্ধান্ত নিতে হলে পায়েলকে ফোন করা দরকার। দেরি হয়ে যাচ্ছে...বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে। সুবর্ণর বুকের ভেতর নাকাড়ায় কেউ যেন আঘাত করে। দ্রিমি দ্রিমি শব্দে দুশ্চিন্তাগুলো ক্রমশঃ বৃত্তাকার তরঙ্গের মত ছড়িয়ে যেতে থাকে চেতনার গভীরে । পায়েলের ফোন নম্বর নেই। মেঘা এলে তবেই সম্ভব ওকে ফোন করা। পায়েল যেখানে বলবে সেখানেই ওকে মুভ করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। প্রাইভেট নার্সিং হোমে নিতে গেলে টাকাপয়সার একটা ব্যাপার আছে। সুমন্তর কী মেডিক্লেম করা আছে? মনে তো হয় না। গুছিয়ে সংসার করা ধাচের ও নয়।  'যো হোগা দেখা যায়গা' টাইপ মানুষ ও। তাছাড়া বেশিরভাগ চা-কর্মচারীদের পক্ষেই ইচ্ছে থাকলেও বছর বছর মেডিক্লেমের প্রিমিয়াম চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।  না থাকলে কীভাবে কি হবে... পায়েল কি রাজী হবে...! তেমন হলে ইউনিয়নের সদস্যদের কাছে আবেদন করা যেতে পারে, বাগান খুললে ম্যানেজারকে বলে যদি কিছু অ্যাডভান্স নেওয়া যায়.... 
ঘনীভূত দুর্ভাবনার মেঘগুলো সরাতে সরাতে অজান্তেই কখন যেন প্ল্যাটফর্মের ম্যাগাজিন কর্ণারের সামনে এসে পড়েছিল সুবর্ণ।কাছে আসতেই হঠাৎ চোখে পড়ে, বিজন তালুকদার পেছন ফিরে একটি ইংরেজি নিউজ ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছেন একমনে। 

-' বিজনদা! ' ডাক শুনেই ঘুরে তাকায় বিজন তালুকদার। 
- 'আর-রে-এ তুমি এখানে...! '
-একজন আসছে। তাকে রিসিভ করতে এসেছি। আপনি? '
-' আমারও তাই... ভালই হলো... একেই বোধহয় টেলিপ্যাথি বলে। কাল থেকে তোমার কথাই ভাবছিলাম... '
-'কেন...হঠাৎ? '
-' চলো ওদিকে। গাড়ি আসার আগে একটু চা হয়ে যাক। খেতে খেতে বলছি।'  টি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বিজন তালুকদার জানান যাকে নিতে এসেছেন সে কলকাতার ওদিকে একটি কলেজে সোসিওলজি পড়ায়। বাড়ি কলকাতায়। চা বাগানের নারী শ্রমিক বিশেষ করে বন্ধ চা বাগানের নারী শ্রমিকদের ওপর কিছু কাজ করতে চায়।'

-' আপনার পরিচিতা? 'সুবর্ণ প্রশ্ন করে। 

-'  ওর মাসতুতো দাদা আমার ক্লাসমেট ছিল। ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়েছি। এখন ব্যাঙ্গালোরে থাকে। ওই আমার ঠিকানা দিয়েছে। মাঝে দুদিন কথা হয়েছে মেয়েটির সাথে। এই কাজটার ব্যাপারে খুব ফোকাসড মনে হল।  দু একটা চা-বাগানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে অনুরোধ করেছে। তখনই তোমার কথা মনে পড়ল।' 

-' তা আমাকে কী করতে হবে? '

-'তেমন কিছু নয়। কিছু ডেটা নেবে হয়ত। আর কিছু মানুষের ইন্টারভিউ, ছবি। এই আর কি।'

-' কি হবে এসব করে। কত কেউ তো এলো। এসে ইন্টারভিউ নেয়, কাগজে লেখালেখি হয়, বড় বড় কথাই সার। কাজের কাজ কিছু হয় না। তা, এত কিছু থাকতে বন্ধ চা বাগান নিয়ে এত ইন্টারেস্ট আপনার বন্ধুর বোনের? '

-'  জানিনা, তবে বন্ধ বাগান বলেই নয় চা-বাগান সম্পর্কেই খুব অবশেসড মনে হল। 

-'কী করে বুঝলেন? '

-'মেয়েটির জন্ম নাকি চা বাগানে। আসামের কোনও একটি চা বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ছিলেন ওর বাবা। একটি দুঃখজনক ঘটনায় ওর বাবা উত্তেজিত শ্রমিকদের হাতে খুন হয়ে যায়। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয় ওর মা। সে সময় ও ছোট। ওকে বাঁচায় ওদের বাংলো সারভেন্ট একটি আদিবাসী মেয়ে। ওকে কোলে করে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে ছিল চা জঙ্গলের ভেতর। বাগানটি তারপর বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন বন্ধ  থাকার পর খোলে। আজও নাকি সেই ঘটনাটি দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে ওকে। '

-' তবে তো চা-বাগান ওর কাছে নাইটমেয়ার। তবু আসছে... '

-' এমনও তো হতে পারে, ঐ আদিবাসী মেয়েটির কথা ও ভোলেনি। ওর প্রতি কৃতজ্ঞতা বশঃতই ও তুলে ধরতে চায় ওদের অ্যাডভারসিটির কথা। '

-'একাই আসছে মেয়েটি? '

-' না আরো দুজন কলিগ আসছে ওর সাথে। কয়েকদিনের জন্য ট্রাভেল করবে দার্জিলিং আর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায়। ফিরে এসে অন্যরা চলে যাবে। ও থেকে যাবে এই কাজটার জন্য। বাই দি ওয়ে, তোমাদের বাগান কিন্তু খুব শিগগিরই খুলে যাচ্ছে, জানো তো। '

-' বাব্বা। আপনি তো দেখছি বেশ কনফিডেন্ট। তা জানলেন কীভাবে? '

-' আরে,রাজনীতি করি। সব খবর রাখতে হয়। কাল তো এখানেই মিটিং। যা হোক, খুলে গেলে জানিও। আর শোনো, ট্রেন এলে একটু অপেক্ষা কোরো। চলে যেও না। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব মেয়েটির। '

কথা বলতে বলতে মোবাইল বেজে ওঠে সুবর্ণর। অচেনা নাম্বার। রিসিভ করতেই ওদিক থেকে একজন জানতে চায়, ' আপনি কি সুবর্ণময় মিত্র?'

-' হ্যাঁ, বলুন। '
- নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল থেকে বলছি। সুমন্ত স্যান্যাল... '
-' হ্যাঁ, আমার বন্ধু... কী হয়েছে। '
-' না, মানে উনার বাড়ির লোক কেউ  আসেনি এখনও। ডাক্তার বাবু কথা বলতে চান। জরুরি কিছু কথা। এখানে আপনার নম্বর দেওয়া আছে তাই জানাচ্ছি। উনার কন্ডিশন কিন্তু ভাল নয়। কারো আসা দরকার...  আই মিন বাড়ির লোক। '
কথা শুনে সুবর্ণ বুঝে যায় ভবেশ ডাক্তার ওর নাম্বার টা দিয়ে গেছে যাওয়ার সময়। 

-''ঠিক আছে, ঠিক আছে...আপনি রাখুন, আমি দেখছি... ' সুবর্ণ অস্থির হয়ে ওঠে। ফোন কেটে যায়। 

-'কী ব্যাপার, টেন্সড দেখাচ্ছে তোমাকে, ' বিজন তালুকদারের কপালে ভাঁজ পড়ে। 

ঘটনা খুলে বলতেই বিজন তালুকদার বলেন, 'এভাবে ওখানে ফেলে রেখেছ কেন। শুনে যা মনে হচ্ছে অযথা দেরি করে ফেলছ তোমরা। যা হোক, কোনও দরকার পড়লে জানিও... '

দু' নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই দুজন দুদিকে সরে যায়। ট্রেন থামতেই যাত্রীদের ভীড়ে ভরে ওঠে প্ল্যাটফর্ম। বুকের ভেতর উৎকন্ঠা লুকিয়ে ভীড় ঠেলে নির্দিষ্ট কামরার দিকে এগোতে থাকে সুবর্ণ। মেঘাকে নিয়ে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করা যাবে না। ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই ছুটতে হবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মেঘার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে পায়েলের সাথে এক্ষুণি একবার কথা বলা দরকার। ওর মতামতটা এই মুহূর্তে ভীষণ জরুরি। বিজনদার সাথে দেখা করতে গেলে দেরী হয়ে যাবে। দরকার পড়লে পরে ফোন করে নিলে হবে। ঐ মুহুর্তে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না সুবর্ণ র। মোবাইলটা বন্ধ করে দেয় সুবর্ণ।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri