অন্তহীন আকাশের নীচে/১৬
অন্তহীন আকাশের নীচে
পর্ব ১৬
দেবপ্রিয়া সরকার
------------------------------
-১৫২৮ খ্রিস্টাব্দ মতান্তরে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৮৪ মতান্তরে ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহারাজ নর নারায়ণ সাফল্যের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন। তিনি তাঁর রাজ্যকে দু’ভাগে বিভক্ত করে সঙ্কোষ নদীর পূর্বদিক অর্থাৎ অসম অঞ্চল তাঁর ভাই চিলা রায়ের পুত্র রঘুদেব নারায়ণকে দান করেছিলেন এবং পশ্চিম অঞ্চল রেখেছিলেন তাঁর নিজের সন্তান লক্ষ্মীনারায়ণের জন্য। প্রবল পরাক্রমশালী রাজা নর নারায়াণের বহু কীর্তির মধ্যে অন্যতম ছিল নারায়ণী মুদ্রা প্রবর্তন, বহিরাগত আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া কামাক্ষাদেবীর মন্দির পুনর্নির্মাণ এবং আরও বহু দেবদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা, দিঘি খনন, রাজপথ নির্মাণ ইত্যাদি। মহারাজের মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র লক্ষ্মীনারায়ণ রাজা হয়েছিলেন। শোনা যায় রাজসিংহাসন লাভের পর লক্ষ্মীনারায়ণের সঙ্গে রঘুদেব নারায়ণ এবং তাঁর ছেলে পরীক্ষিতের সংঘর্ষ বাঁধে এবং সেই যুদ্ধে মোঘল শাসকদের হস্তক্ষেপের কারণে উভয় পক্ষেরই বিস্তর শক্তিক্ষয় হয়েছিল।
-ইন্টারেস্টিং!
চৈত্র বৈশাখের সন্ধেগুলোয় বেশ মনোরম আবহাওয়া থাকে উত্তরবঙ্গে। না শীত, না অত্যধিক গরম। তারমধ্যে গত কয়েকদিনের মেঘলা আকাশ উষ্ণতার পারদকে তেমন চড়তে দেয়নি। আজ সন্ধে থেকেই একটা ফুরফুরে হাওয়া খেলে বেড়াচ্ছে চারপাশে। ঊষারাণীর জন্মদিন উপলক্ষে বেশ কিছু আত্মীয়-কুটুম, পাড়া-পড়শিদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। সঞ্জীবনীর লখনউ থেকে আনা চিকনের ব্লাউজ, জয়শীলার কিনে দেওয়া গরদের শাড়ি, সত্যেন্দ্রর দেওয়া একগাছি মুক্তোর হার পরিয়ে স্বয়ংদ্যুতি, অরুন্ধতীরা সাজিয়ে দিয়েছে ঊষারাণীকে। প্রথমটায় অস্বস্তি হলেও এখন এসব সাজপোশাকে কিছুটা ধাতস্ত হয়েছেন ঊষারাণী। তাঁর শোবার ঘরের খাটের ওপর বসে নীরবে লক্ষ্য করছেন সবকিছু। একটা বড়সড় কেক আনা হয়েছিল তাঁর জন্যে। নাতিনাতনিরা সেটা হাত ধরে কাটিয়ে দিয়েছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে আছে ইন্দ্রায়ুধও। বাড়ির সকলের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ করে সে আর স্বয়ংদ্যুতি বাড়ির হাতায় অতিথিদের জন্যে পেতে রাখা চেয়ারে বসে আগামীকালের ভিডিও শ্যুট নিয়ে আলোচনা করছে। তার কনটেন্টের ধার বাড়ানোর জন্যে ইন্দ্রায়ুধের কাছ থেকে স্বয়ংদ্যুতি জেনে নিচ্ছে কোচ রাজইতিহাসের খুঁটিনাটি। ইন্দ্রায়ুধও একজন মুগ্ধ শ্রোতা পেয়ে উজাড় করে দিচ্ছে তার জ্ঞানের ডালি।
পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে ইন্দ্রায়ুধ একবার দেখে নিল স্বয়ংদ্যুতিকে। তারপর আবার বলা শুরু করল, মহারাজ লক্ষ্মীনারায়ণের পর যথাক্রমে বীরনারায়ণ, প্রাণনারায়ণ, মোদনারায়ণ, বাসুদেবনারায়ণ, মহীন্দ্রনারায়ণ, রূপনারায়ণ, উপেন্দ্রনারায়ণ, দেবেন্দ্রনারায়ণ, ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণরা রাজত্ব করেছিলেন। এই সময় বারবার মুসলিম ও ভুটান রাজাদের আক্রমণ এবং আভ্যন্তরীন ক্ষমতালাভের দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কোচ রাজ্য। ভুটান রাজার সহায়তায় ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণ রাজশত্রুদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বন্দি হন এবং তাঁর জায়গায় দেওয়ান রামনারায়ণ দেবের আশ্রিত পুত্র রাজেন্দ্রনারায়ণ সিংহাসনে বসেন। যদিও ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণের প্রথম স্ত্রী মহারানি কামতেশ্বরী দেবী শিশু রাজকুমারকে নিয়ে রাজপ্রাসাদেই বাস করছিলেন। মাত্র দু’বছর রাজত্ব করার পরেই রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণের আচমকা মৃত্যু হয় এবং বন্দিরাজা ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণের ছেলে ধরেন্দ্রনারায়ণ রাজসিংহাসন অধিকার করেন।
-উপস্! মাত্র দু’বছরেই শেষ হয়ে গেল রাজত্ব? এরপর রাজা ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণ কি মুক্তি পেলেন বন্দিদশা থেকে?
-রাজা ধরেন্দ্রনারায়ণের অভিষেকের পর তিনি এবং মহারানি কামতেশ্বরী দেবী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন এবং কোম্পানির সহায়তায় ভুটান রাজা পরাস্ত হলেন ও মুক্তি পেলেন বন্দি রাজা ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণ।
-কোম্পানি তো এমনি এমনি সাহায্য করেনি নিশ্চয়ই?
-সে তো করেইনি। তারা রাজা ধরেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে কোচবিহারকে করদমিত্র রাজ্যে পরিণত করেছিল। ধরেন্দ্রনারায়ণ ভূপের অকাল মৃত্যুর পর তাঁর পিতা বৃদ্ধ ধৈর্য্যেন্দ্রনারায়ণ দ্বিতীয়বারের জন্যে রাজা হন। বয়স্ক রাজা পরলোক গমন করলে মহারানি কামতেশ্বরী দেবীর অভিভাবকত্বে মাত্র দু’বছর বয়সে ছোটরানির পুত্র হরেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল।কিন্তু সমস্যার নিষ্পত্তি তখনও হয়নি। হরেন্দ্রনারায়ণ ভূপ রাজা হওয়ার পর নাজির খগেন্দ্রনারায়ণ রাজভক্ত কর্মচারী এবং মহারানির বিশ্বস্ত অনুচরদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। তার উদ্দেশ্য ছিল রানি এবং বালক রাজাকে সরিয়ে রাজসিংহাসন দখল করা। মহারানি কামতেশ্বরী দেবীর সঙ্গে নাজির খগেন্দ্রনারায়ণের দ্বন্দ্ব একসময় চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রাজ্যে সুস্হিতি বজায় রাখতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আসরে নামতে হয়।
নীল ডেনিমের ওপর সুতোর কারুকাজ করা সাদা পাঞ্জাবিতে সজ্জিত ইন্দ্রায়ুধের দিকে অপলক চেয়েছিল স্বয়ংদ্যুতি। উপভোগ করছিল তার বাচনভঙ্গি, জ্ঞানের গভীরতা। অপরদিকে কথার ফাঁকে ফাঁকে ইন্দ্রায়ুধের মুগ্ধদৃষ্টিও ছুঁয়ে যাচ্ছিল স্বয়ংদ্যুতিকে। আজ একটা লাল টুকটুকে শান্তিনিকেতনী জমাট কাঁথাকাজের শাড়ি পড়েছে সে। সঙ্গে মানানসই গয়না, ছিমছাম সাজ। হাতে একটা নোটপ্যাড নিয়ে সে ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্টগুলো লিখে নিচ্ছিল যত্ন করে, যাতে ভ্লগ তৈরির সময় কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস না হয়ে যায়। স্বয়ংদ্যুতি এবং ইন্দ্রায়ুধের এই মুখোমুখি আলোচনা দূর থেকে লক্ষ্য করছিল একজন। ঊষারানীর ঘরের দরজার কাছে পাখিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরুন্ধতী বলল, কী হল পাখি এখানে এভাবে একলা দাঁড়িয়ে কী দেখছিস?
অপ্রস্তুত পাখি হেসে বলল, কিছু না টাপুরদিদি এমনিই দাঁড়িয়ে আছি।
-বেশ, তবে যা তো টুপুর আর ইন্দ্রায়ুধকে কোল্ড ড্রিঙ্কটা সার্ভ করে আয়।
অরুন্ধতীর কথা শুনে বুকের ভেতরটা সজোরে কেঁপে উঠল পাখির। খোশগল্পে মত্ত স্বয়ংদ্যুতি আর ইন্দ্রায়ুধের মুখোমুখি হতে হবে ভেবেই একটা চোরা কষ্ট তাকে আচ্ছন্ন করতে শুরু করেছিল। ঠিক সেইসময় বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে এল বকুলের আওয়াজ, পাখি, পাখি, একবার এদিকে আয় তো। দিদার খাবার সময় হয়েছে। দুধ ভাত মেখে রেখেছি, একটু খাইয়ে দে না মা। আমার ওদিকে অনেক কাজ জমে আছে।
বকুলের কথায় আবার প্রাণ ফিরে পেল পাখি। শুকনো হাসি হেসে বলল, মা ডাকছে টাপুরদিদি, দিদাকে খাওয়াতে হবে। আমি যাই তবে?
আর কোনও উপায় নেই দেখে অরুন্ধতী বলল, ঠিক আছে তুই যা। দিদাকে এখন খাওয়ানোটা বেশি জরুরি। আমিই যাচ্ছি ওদের কোল্ড ড্রিঙ্ক দিতে।
হাতে ঠান্ডা পানীয় ভরা দুটো গ্লাস নিয়ে অরুন্ধতী নেমে গেল বাগানের দিকে। স্বয়ংদ্যুতির সামনে এসে বলল, তোকে নিয়ে আর পারি না টুপুর! ইন্দ্রায়ুধকে পেয়েই ইতিহাস কপচাতে বসেছিস? নেমন্তন্ন করে এনেছিস বেচারাকে, কিছু খাবার, পানীয় অফার করবি না? দারুণ হোস্ট তো তুই!
স্বয়ংদ্যুতি লজ্জিত হয়ে বলল, এবাবা! এক্কেবারে ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ কিছু মনে করো না ইন্দ্র।
অরুন্ধতী কপট রাগ দেখিয়ে বলল, হয়েছে হয়েছে এখন আর ভদ্রতা করতে হবে না। তোর খেয়াল নেই দেখে আমিই ওর জন্য সফট্ ড্রিংক নিয়ে এলাম। ডিনার রেডি হয়ে গিয়েছে। সময় মতো ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করিস। আবার ভুলে যাস না যেন। নাহলে বেচারাকে শুধু ইতিহাস গিলেই রাত কাটাতে হবে।
অরুন্ধতীর কথা শুনে হেসে উঠল সকলে। রাধাকান্ত এবং সত্যেন্দ্রও এসে যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। ইন্দ্রায়ুধকে দেখিয়ে রাধাকান্ত বললেন, এই ইয়ংম্যানটিকে চিনে রাখো সতুদা। এ হলো আমাদের সরোজের সুযোগ্য সন্তান, ইন্দ্রায়ুধ।
সত্যেন্দ্র কী যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, সরোজ মানে তোদের ব্যাচের সেই ব্রাইট ছেলেটা যে অংক কষার কম্পিটিশনে প্রত্যেকবার ফার্স্ট হতো?
-একদম ঠিক ধরেছ সতুদা, সেই সরোজ।
ইন্দ্রায়ুধের দিকে তাকিয়ে সত্যেন্দ্র বললেন, তোমার বাবাকে আমরা বলতাম অংকের জাহাজ। শুধুমাত্র নিজের ক্লাসের নয়, আমাদের মতো এক’দু ক্লাস উঁচু ছাত্রদের অংক নিয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে ডাক পড়ত সরোজের।
-তবে শ্রীমান ইন্দ্রায়ুধ বাবার মতো অংকের জাহাজ না হলেও তাকে ইতিহাসের ডুবোজাহাজ বলতেই পারি। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও তলে তলে কাজ করে চলেছে নিজের মতো। ঠিক কিনা বল, টুপুর?
-একদম ঠিক বলেছ বাবা। জানো তো মেজমামা ইন্দ্র কোচবিহার রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করছে আর ওর সাহায্যেই আমি রাজবাড়ির ওপর ইউটিউব ভিডিও বানাতে চলেছি।
-ওহ্! আই সি। তোর আবার ইউটিউব চ্যানেল আছে নাকি?
-হ্যাঁ, মেজোমামা, আছে একখানা ছোটোখাটো চ্যানেল। মূলত ইতিহাসবেসড্ ভ্লগ বানানোর চেষ্টা করি।
-ভেরি ইন্টারেস্টিং! আমাকে চ্যানেলের লিংকটা পাঠাস তো, দেখব’খন। বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করা আছে আমার। সেগুলো বেশিরভাগই ট্র্যাভেল রিলেটেড। হিস্ট্রির ওপর তেমন কিছু পাইনি এখনও। তারওপর ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি হলে তো সোনায় সোহাগা!
-ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি তো বটেই, আমাদের এই বাংলার প্রচারের আলোর বাইরে থেকে যাওয়া ইতিহাসকে আমি মানুষের সামনে তুলে আনার চেষ্টা করছি ইদানিং।
-বাহ্ টুপুর! আই মাস্ট সে, খুব ভাল ইনিশিয়েটিভ। তবে কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে যখন কাজ করছিস তখন চিলাপাতার জঙ্গল আর নলরাজার গড় নিয়েও একটা এপিসোড রাখিস।
-নলরাজার গড়! সেটা কী গো মেজোমামা?
-যা বাব্বা! নলরাজার গড়ের কথা শুনিসনি তুই? চিলাপাতার জঙ্গল দেখিসনি কখনও? তা বীর চিলা রায়ের নাম শুনেছিস তো?
-হ্যাঁ তা শুনেছি।
-লোকমুখে প্রচলিত আছে চিলা রায়ের নাম অনুসারেই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মাঝে থাকা বনভূমির নাম হয়েছিল চিলাপাতা। আর সেই জঙ্গলের ভেতর রয়েছে এক পুরনো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, যাকে সকলে বলে নলরাজার গড়। বহুকাল যাইনি সেখানে। আজকাল শরীরের যা অবস্থা বনেবাদাড়ে ঘোরার মতো হাতেপায়ে জোর আর নেই। তুই যদি ভিডিও করিস তবে আবার দেখতে পাব।
-সে তো করতেই পারি। কিন্তু এই নলরাজার গড়ের সঙ্গে কোচবিহারের ইতিহাসের কী কানেকশন?
এতক্ষণ দু’জনের কথা নীরবে শুনছিল ইন্দ্রায়ুধ এখন থাকতে না পেরে বলল, শোনা যায় মহারাজ নর নারায়ণের রাজত্বকালে বীর চিলা রায় ভুটানি সেনার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ওই দুর্গ তৈরি করেছিলেন। নররাজাই লোকমুখে একসময় নলরাজা হিসেবে পরিচিতি পায়।
-বুঝলাম। তবে তো যেতেই হচ্ছে একবার চিলাপাতা। কিন্তু কবে যাব? সময় হাতে নেই বললেই চলে। কাল রাজবাড়িতে ভিডিও শ্যুট। তারপর থাকবে আর মাত্র একটা দিন। সেদিন ভেবেছি ভিডিওর এডিটিংগুলো সেরে ফেলব। একবার কোচবিহার ছেড়ে চলে গেলে তোমায় আর কাছে পাব না। তখন কোনও ইনফো দরকার হলে আবার ফোনাফুনি করতে হবে।
সত্যেন্দ্ররা বিদায় নিতেই স্বয়ংদ্যুতির মুখে তৈরি হওয়া চিন্তার ভাঁজ দেখে একটা কৌতুকের হাসি হাসল ইন্দ্রায়ুধ। বলল, এতো চাপ নিতে হবে না টুপুরদেবী। সকাল সকাল ভিডিও শ্যুট সেরে দিব্য ঘুরে আসা যাবে চিলাপাতা থেকে। আমি অনলাইনে বিকেলের ট্রিপে জঙ্গল সাফারির টিকিট খোঁজ করছি। যদি তোমার ভাগ্য ভাল থাকে তবে নলরাজার গড়ের দর্শনও পেয়ে যেতে পারো।
-সত্যি! একদিনে কভার করা যাবে সবটা? তাহলে খুব ভাল হবে। রাজবাড়ির শ্যুটিং কমপ্লিট করেই আমরা রওনা দেব চিলাপাতার উদ্দেশে। বাইক নিয়ে যাওয়া যাবে তো?
-খুব যাবে। ঘন্টাখানেক সময় লাগবে বড়জোর। চল্লিশ কিলোমিটার মতো ডিসটান্স হবে।
-ওয়ান্ডারফুল! তাহলে লাঞ্চের আগেই আমরা দু'জন বেরিয়ে পড়ব। দুপুরের খাবার নাহয় রাস্তায় কোথাও খেয়ে নেব, কেমন?
এরকম একটা প্রস্তাবের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না ইন্দ্রায়ুধ। একটা ঢোঁক গিলে সে বলল, কিন্তু আমার কোচিং...
তাকে পুরো বাক্যটা শেষ করতে না দিয়ে স্বয়ংদ্যুতি বলল, জানি তোমার কোচিং ক্লাস আছে। শুধু কালকের দিনটাই তো ইন্দ্র আর কোনওদিন কিচ্ছু চাইব না, প্রমিস। পারবে না, তোমার জীবন থেকে একটা দিন আমায় দিতে?
একটা অদ্ভুত ঘোরলাগা দৃষ্টিতে ইন্দ্রায়ুধের দিকে তাকিয়ে থাকল স্বয়ংদ্যুতি আর তার দুর্বোধ্য সেই চোখের ভাষা ইন্দ্রায়ুধের মনে অজস্র প্রশ্নচিহ্নের জন্ম দিয়ে গেল।
*তথ্যসূত্রঃ- i) কোচবিহারের ইতিহাসঃ ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ii) কোচবিহারের সম্পূর্ণ ইতিহাসঃ মহেন্দ্র দেবনাথ
iii) Vir Chila Roy (Chilarai)- The Great Warrior (Aboriginal blog written by Vivekananda Sarkar)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴