সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

15-December,2022 - Thursday ✍️ By- রণজিৎ কুমার মিত্র 380

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/পঞ্চদশ পর্ব
রণজিৎ কুমার মিত্র
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

 "এ পথে আমি যে গেছি বার বার ভুলিনি তো একদিনও/ আজ কি ঘুচিল  চিহ্ন তাহার উঠিল বনের তৃণ/ "

মনের মধ্যে অদ্ভুত এক বেদনা যেন গুনগুন করে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রঙের দিনগুলি, দু'বছরে যে কিভাবে কেটে গেল। শেষ পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসছিল তত মন খারাপ হচ্ছিল। অবশেষে সেই বিচ্ছেদের দিনটি এসে গেল এবারে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। নিশ্চিত-অনিশ্চিত, আশা-নিরাশা সবকিছুর ইশারা নিয়ে ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে? বন্ধুরা এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি,  আবার কবে দেখা হবে! কোথায়, কিভাবে?  ফেয়ারওয়েল দিয়ে দিল অনুজেরা। যেতে যেতে পিছনে তাকাই, 'সোনার খাঁচার দিনগুলি আর রইল না'। ফেলে আসা ক্লাসরুম, অধ্যাপকদের কণ্ঠস্বর, ইউক্যালিপটাসের পাতায় পড়ন্ত রোদের আলোর বিকেল, শালকুঞ্জে পাতা ঝরার শব্দ, সবকিছুই কি তবে আমাদের জন্য থেমে গেল ! শুধু রেকর্ড রুম-এর কোনো এক খাতায় লেখা থাকবে কোন বছর আর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার। শুধুই সংখ্যা হয়ে যাওয়া ! সময়ের ঘন্টায় বাজে, অশ্রুত এক ধ্বনি, মনে পড়ে! মনে পড়ে! এরপর বছর তিনেকের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছিলাম তারপর আবার যোগসূত্র রচিত হল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থ ভবনে, ৩২ বছর কাটিয়েছি সেখানে কর্মসূত্রে।  নানা  সুরের ওঠানামায়, শুধু মনে বিশ্বাস ছিল/তবুও মনে মনে জানি, নাই ভয়, অনুকূল  বায়ু সহসা যে বয়/- চিনিব তোমায় আসিবে  সময় তুমি যে আমায় চিন।/
  
মাথায় ঢুকে ছিল গ্রন্থাগার বিজ্ঞান পড়বার  ভাবনা, ভেবেছিলাম নেশা আর পেশা দুটোকে এক সূত্রে বাঁধা যাবে এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি  উৎসাহিত করে ছিলেন অধ্যাপক অশ্রুকুমার সিকদার। উত্তরবঙ্গের তখন এই বিষয়টি পড়বার সুযোগ নেই  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্স কোর্স নৈশকালীন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম প্রায় যুদ্ধ করে। ৫০/৫৫ টি সিটের জন্য প্রায় হাজারখানেক আবেদনকারী দুদিন ধরে ইন্টারভিউ দিতে হল। জলপাইগুড়ির মতো মফস্বল শহর থেকে কলকাতা মহানগরের অতি পরিশীলিত তথাকথিত  স্মার্টনেস প্রথম দিকে একটু  অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছিল, নিজেকে একটু  খাপছাড়াও মনে হচ্ছিল! যাদবপুর থানার পাশে  মেইন হস্টেলে ছিলাম।  সেই সময়টা ছিল রাগিং-এর ঘনঘটার যুগ, তবে আমরা স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে  আন্ডারগ্রাজুয়েটদের হোস্টেলে,  বয়সে বড় ছিলাম, তাছাড়া  লাইব্রেরী সাইন্স পড়তে রাজ্যের বাইরে থেকেও অনেক ডেপুটেড ও ফ্রেসার ক্যান্ডিডেট আসতেন। হোস্টেলের কয়েকটি ঘর আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল।  আমার পাশের ঘরে ছিলেন  ধূপগুড়ির স্বপন চট্টোপাধ্যায়। স্বপন  ফার্মাসিটিক্যাল সাইন্সের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। জলপাইগুড়ি আনন্দ চন্দ্র কলেজ থেকে কেমিস্ট্রি অনার্স করে  পরে বি ফার্ম,  এম ফার্ম, সব যাদবপুর থেকে। আর ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য্য সেও, জলপাইগুড়ির ছেলে,  জানতে পেরেছিলাম অশোক পরবর্তীকালে ডিব্রুগড় ইউনিভার্সিটি ফার্মাসিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান হয়েছিলেন অবসর নেবার পর ও সম্ভবত ডিব্রুগরে  বসবাস করছেন। আর সহায় ছিলেন আমাদের দেশবন্ধু পাড়া জলপাইগুড়ির  প্রতিবেশী ও আমার মামার অন্তরঙ্গ বন্ধু সমীর রক্ষিত, বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক, এই পরিচয় তার সুবিদিত, জলপাইগুড়ির সাথে তার সম্পর্ক গভীর। তিনি ছিলেন আমার লোকাল গার্জিয়ান। অধ্যাপক সমীর রক্ষিত যাদবপুর  বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেসময়ে উনি থাকতেন যাদবপুরের কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরির কাছে পরে, সেন্ট্রাল পার্কে বসুন্ধরা নামের একটি  ফ্ল্যাট বাড়িতে।  ওনার স্ত্রী সুনন্দা রক্ষিত আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বিদূষী ও কুশলী গ্রন্থাগারিক ছিলেন তিনি, ছিলেন বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাই স্কুলের লাইব্রেরিয়ান ।সমীর রক্ষিতকে মামার বন্ধু হবার সুবাদে   মামা বলতাম, এই মামা ও মামিমা যাদবপুরে পড়বার সময় যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছেন তা কখনো  ভুলব না, শুকনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেই আত্মিকতাকে ছোট করব না। আজও যোগাযোগ ও সম্পর্ক অটুট রয়েছে। 
লাইব্রেরী সাইন্স ক্লাসে প্রথম দিন থেকেই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, জলপাইগুড়ি মানেই জঙ্গল আর চা বাগান। একজন তো বলেই বসলেন ও জায়গা তো ম্যালেরিয়া আর কালাজ্বরের ডিপো, ওখানে শুধু থাকে আদিবাসী, আর বাঙালেরা। লাইব্রেরী সায়েন্স বিভাগের সব বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীরাই ভর্তি হতে পারতেন প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আসন নির্ধারিত ছিল।  পশ্চিমবঙ্গের বাইরের, আমাদের সাথে বিহার-উড়িষ্যা-ত্রিপুরা-মণিপুরের ছাত্র ছিলেন, তবে এরা ছিলেন সেসময় ডেপুটি ক্যান্ডিডেট। হোস্টেলে আমার সঙ্গে থাকতেন লাহিড়ীদা,  রামাংশু লাহিড়ী এসেছিলেন জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির দিল্লী ক্যাম্পাস থেকে মণিপুর ক্যাম্পাসে। মালদহতে বাড়ি। দিল্লির জহরলাল ইউনিভার্সিটির  ক্যাম্প ইউনিভার্সিটি পরবর্তীকালে মণিপুর ইউনিভার্সিটি হয়েছে। মণিপুর ক্যাম্পাসটি পরে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে  লাহিড়িদা সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যান। উত্তর-পূর্ব ভারতে গ্রন্থাগারিকদের জগতে  তিনি সুপরিচিত। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের একাধিক গবেষণামূলক গ্রন্থ তিনি প্রকাশ করেছেন। সম্ভবত মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রথম লাইব্রেরিয়ান। আমাকে খুব ভালোবাসতেন, প্রায় অভিভাবকের মতো আগলে রাখতেন। যাই হোক প্রথমদিনের আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা বলি অধ্যাপক মুকুন্দ লাল  চক্রবর্তী ক্লাসে এসে জিজ্ঞাসা করলেন কে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছ?  আমি যথারীতি বললাম উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভুরু কুঁচকে স্যার বললেন "ও দ্যাট রুরাল ইউনিভার্সিটি!" কলকাতার এই উন্নাসিকতার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম, অবাক হচ্ছিলাম না  কলকাতার গ্রাম্যতা দেখে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পর্বটিও আমার কাছে অভিজ্ঞতার সোনালী ফ্রেমে বাঁধানো। গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে তখন অধ্যাপনা করছেন এই জগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রেরা - অধ্যাপক আদিত্য ওয়েদদেদার, মুকুন্দ লাল চক্রবর্তী,  মঙ্গল প্রসাদ সিংহ,  বিজয়পদ মুখোপাধ্যায়, ফণিভূষণ রায় - এদের সকলের মধ্যমণি ছিলেন অধ্যাপক প্রবীর রায় চৌধুরী। সকলেই আজ প্রয়াত, কিন্তু আমার মনে এদের সকলের জন্য স্থায়ী আসন পাতা আছে।  অধ্যাপক প্রবীর রায় চৌধুরীর ছাত্র হবার গৌরব ও সৌভাগ্য আজো বহন করে চলেছি, "তোমার পতাকা যারে দাও ,তারে দাও বহিবারে  শকতি "- আমৃত্যু আমার এই প্রার্থনা স্যারের কাছে।
 
এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় থেকেই বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের আজীবন সদস্য হয়েছিলাম,  সেই সম্পর্কে কখনো ছেদ পড়েনি, আজো সেই সম্পর্ক সূত্রে আবদ্ধ আছি। মনে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় গ্রন্থাগার বিল উত্থাপনের কথা। সময়টা ছিল ১২ই সেপ্টেম্বর , ১৯৭৯। এত বড় ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের করবার জন্য প্রবীরবাবু স্যার সব  ব্যবস্থা করলেন, আমরা গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা বিধানসভার দর্শক গ্যালারিতে বসে গ্রন্থাগার বিল উত্থাপনের এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি যাতে প্রত্যক্ষ করতে পারি। আমরা দুদিন ধরে বিধানসভার গ্যালারিতে বসে গ্রন্থাগার বিল নিয়ে তৎকালীন শাসক দল ও বিরোধীদলের তর্ক বিতর্ক শুনছিলাম, বিধানসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর গ্রন্থাগার আইন গৃহীত হয় এবং পরবর্তীকালে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। জাতীয় গ্রন্থাগারে দুদিনের ওয়ার্কশপও স্মরণীয় হয়ে আছে। যাদবপুরের মেইন হোস্টেল, যেটা থানার পাশে সেখানেই থাকতাম, ওই এলাকাটির চেহারা আজকের মতো ছিল না। কাছেই ঢাকুরিয়াতে ছিল কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি, পায়ে হেঁটে ঢাকুরিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে সে বাড়িতে গিয়েছি একাধিক বার।  আমার কলেজের অধ্যাপক দেবব্রত ঘোষের বাড়িতে উনি বেশ কয়েকবার এসেছেন, তখনই স্যার দেবব্রত ঘোষ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও কবি হিসেবে ওর পরিচয় আমার কাছে অজ্ঞাত ছিল না। জলপাইগুড়ির লিটল ম্যাগাজিনগুলিতে বিশেষ করে জলপাইগুড়ির  সৌরাংশু শেখর প্রামাণিকের  'সম্ভব কাল' ও ময়নাগুড়ির দিলীপ ফনীর 'হাতুড়ি' পত্রিকা প্রায় প্রতিটি সংখ্যাতেই বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কবিতা দিতেন, উত্তরবঙ্গের লিটল ম্যাগাজিনগুলিতে কবিতা দিতে তিনি কখনো অরাজি হতেন না, ডুয়ার্সের চা বাগানের শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে  উনি ছিলেন গভীরভাবে সহানুভূতিশীল।  বীরেনবাবু সম্ভবত ডুয়ার্সের কোনো চা বাগানের কলকাতা অফিসের সেক্রেটারি বা বোর্ড অফ ডিরেক্টরস মেম্বার ছিলেন, মালিকপক্ষের মানুষ হলেও বীরেনবাবু সব সময় ছিলেন প্রতিবাদী শ্রমিকদের পক্ষে। 'বীরেন্দ্র সমগ্র'তে 'ডুয়ার্স কৃষ্ণপক্ষ' কবিতাটি ওর ডুয়ার্সের মেহনতী মানুষদের জন্য একটি বহুল পরিচিত দীর্ঘ কবিতা। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সব সময় ছিলেন মানুষের পক্ষে, বিশেষ করে প্রতিবাদী মানুষদের সাথে। যাদবপুরে হোস্টেল  থাকাকালীন সময়ে তার বাড়িতে একাধিক বার গিয়েছি, তার স্নেহ পেয়েছি ।বীরেনবাবু জলপাইগুড়ির বহু সাহিত্য সভাতে কবিতা পাঠের আসরে অতিথি হয়ে এসেছেন। মনে আছে, কমার্স কলেজে একবার অধ্যাপক দেবেশ রায়, মলয় বসুর উদ্যোগে বসেছিল একটি কবিতা পাঠের আসর, যেখানে বীরেনবাবুর সরব উপস্থিতি ছিল। জলপাইগুড়িতে বছরে একবার করে আসতেন । কবির  শতবার্ষিকী আমরা খুব নীরবে  পার করে দিলাম। সৌভাগ্য হয়েছিল অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার, 'বাঙালির ইতিহাস' ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক, এই মানুষটিকে নিয়ে আমাদের সমগ্র বাঙালি জাতির গর্ব । যখন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম সেই সময়ে জলপাইগুড়ির শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন, দুদিন ছিলেন অধ্যাপক দেবব্রত ঘোষের বাড়িতে, পরে যখন যাদবপুরে পড়তে গেলাম তখন অধ্যাপক দেবব্রত ঘোষের  চিঠি নিয়ে নীহাররঞ্জন রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম ।আমি সেসময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বঙ্কিম উপন্যাসের ভাষা' এই বিষয়ে একটি ডকুমেন্টেশন লিস্ট তৈরি করছিলাম সেই বিষয়ে জানতে নীহাররঞ্জন রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম, খুব ভয় ছিল, দেখা করবেন কিনা? তার দর্শনপ্রার্থী হয়ে এসেছি, একথা জানার পর তিনি নিজেই বেরিয়ে এলেন, মনে আছে গালে দাড়ি কামাবার সাবান ঘষতে ঘষতে ধুতি ভাজ করে লুঙ্গির মতো করে পড়া, গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায়! আমায় চিনতে পেরেছিলেন কিনা বুঝতে পারিনি, তবে অধ্যাপক দেবব্রত ঘোষ-এর চিঠি হাতে তুলে দিতেই উনি ব্যস্ত হয়ে আমাকে বসতে বললেন এবং ওই গালে সাবান  ঘষতে ঘষতে, আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন, এই বিষয়ে জ্ঞাতব্য তথ্য কার কার কাছ থেকে, কোথায় পাওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়েও জানালেন, অবাক হয়ে মানুষটিকে প্রত্যক্ষ করলাম, এ এক বিরল সৌভাগ্য। শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়ে ছিলাম কিংবদন্তি এই মানুষটির এমন মাটির মানুষের মতো ব্যবহারে।  সেই সময়ে যোগাযোগ হয়েছিল জলপাইগুড়ির লালটুদা সৌরভ ঘটকের সঙ্গে। লালটুদা আমাদের স্কুলে উঁচু ক্লাসে পড়তেন, সম্ভবত আমরা নাইনে লালটুদারা তখন ইলেভেনে । ফিজিক্সের মেধাবী ছাত্র ছিলেন, বিএসসি করে অদ্ভুতভাবে বিষয় পাল্টে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র হয়েছিলেন লেখক হিসেবেও পরিচিতি হয়েছিল। সেবার কলকাতার 'শিলাদিত্য' পত্রিকায় লালটুদার উপন্যাস বেরিয়েছিল, সম্ভবত শারদ সংখ্যায় ছিল লেখাটি।  লালটুদা  মাঝে মধ্যে হোস্টেলে আসতেন ওর কিছু অনুরাগী ছিল ওই তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে, যার মধ্যে বাংলাদেশের দাউদ হায়দার। লালটুদার মাধ্যমেই দাউদ হায়দারের সাথে পরিচয় হয়েছিল দাউদ তখন  কবি হিসেবে এপার বাংলাতেও যথেষ্ট পরিচিত। হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র থাকতেন মাঝে মাঝে ওর অনুরাগীদের কাছে হোস্টেলে আসতেন। সে  আড্ডায় আমারও ডাক পড়েছে দু-তিনবার। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে আলাপ হয়েছিল কবি রত্নাংশু  বর্গীর সাথে, বিখ্যাত অন্তঃসার পত্রিকা সম্পাদক।  এখনও পত্রিকাটি মাঝে মাঝে পাই,  সুনন্দা শিকদারের 'দয়াময়ীর আত্মকথা' এই পত্রিকাতে প্রথম  আত্মপ্রকাশ করেছিল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে  ১৫ বছর পরে আবার গিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের থেকে ডেপুটেশনে M.Lib করবার জন্য, পুরনো মাস্টারমশাইরা অনেকেই তখন অবসরপ্রাপ্ত ,অতিথি অধ্যাপক হয়ে তখনো পড়াচ্ছিলেন অধ্যাপক প্রবীর রায় চৌধুরী অধ্যাপক বিজয়পদ মুখোপাধ্যায় ,
অধ্যাপক আদিত্য ওয়েদেদার স্যারেরা তখন বিভাগে ছিলেন।  অধ্যাপিকা চৈতালি দত্ত ,অধ্যাপক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায,  অধ্যাপক বিনোদ বিহারী দাসদের পেলাম, সেই সংগে আমাদের অগ্রজ ও  যিনি B. Lib  পড়বার সময় আমাদের সিনিয়র ছিলেন সেই কৃষ্ণপদ মজুমদারকে,  যাকে আমরা তখন থেকেই কেষ্টদা বলতাম। এই কেষ্টদার অন্যতম প্রিয় সহযোগী ছিলেন জলপাইগুড়ির কল্যাণদা, আনন্দচন্দ্র কলেজ অব কমার্সের লাইব্রেরিয়ান। সেই সময় থেকেই কল্যাণদা আজও আমার ফ্রেন্ড-ফিলোসফার-গাইড। প্রাণবন্ত এই মানুষটি শয্যাশায়ী হয়ে  জলপাইগুড়ির শিরিষতলা বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। বলতে গেলে গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘে তিনি আমাকে হাত ধরে এনেছিলেন, আজও কল্যাণদা আমার প্রতি সমান ভালোবাসা ও স্নেহ উজাড় করে দেন। নিজের প্রচন্ড অসুস্থতা সত্ত্বেও আমার সামান্য অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করে খোঁজখবর নেন। এই মানুষগুলি আমার জীবনে যে কতখানি তা লিখে বোঝানো যাবে না।
       
B.Lib পাশ করবার পর শুরু হল গ্রন্থাগারিকের পেশাজীবন, প্রথমে জলপাইগুড়ির সুনীতি বালা সদর গার্লস স্কুলে কয়েক মাস, সেখান থেকে ইসলামপুর কলেজ, শিলিগুরি কলেজ অফ কমার্স, তারপর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থ ভবনে। সেখানে ৩১ বছর কাটিয়েছি, অবসর নেবার পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসে প্রায় দেড় বছর, লকডাউন-এর  কিছু পরে  সেখান থেকে ইস্তফা দিয়েছি।  গ্রন্থাগারের কাজের ফাঁকে, বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের  লাইব্রেরী সাইন্স-এর সার্টিফিকেট কোর্স যখন শিলিগুড়িতে চালু করা হল সেখানে অধ্যাপনা এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় অতিথি অধ্যাপক হয়ে গ্রন্থাগারিকের কাজের সাথে এই অধ্যাপনার পরিষেবাও দিয়েছি ।সেই সময় থেকেই নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের সাথে যুক্ত আছি। পরবর্তীকালে আমার বহু কৃতী ছাত্র-ছাত্রীরা এই পেশায় আমার সহকর্মী হয়েছেন। গর্ব করে বলতে পারি, উত্তরবঙ্গের একাধিক প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, গবেষকদের গ্রন্থাগারের পরিষেবা দিতে পেরেছি।  এই পেশাকে জীবনসর্বস্ব করেছি। শুধু আর্থিক উপার্জন নয়, আরো বহু অভিজ্ঞতা, নলেজ-ইনফর্মেশন-উইজডম এসবের কিছু নুড়িখন্ড  নিজের ঝোলায় ভরতে পেরেছি। এই পেশার তো কোনো বিকল্প হয় না । আজও স্বপ্ন দেখি আমৃত্যু এই পেশায় নিযুক্ত থাকার। এই পেশায় কোন বিস্মরণ, অবসর  থাকতে নেই। জানি সহৃদয়তার সঙ্গে  এই স্মৃতিকথার পাঠকদের প্রশ্রয় আমি পেয়েছি,  তাই সাহস করে বলতে পারি - "পথের ধারেতে ফুটিল ফুল/জানি জানি তারা ভেঙে দেবে ভুল/গন্ধে তাদের গোপন মৃদুল সংকেত আছে লীন।"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri