শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১৫
শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব : ১৫
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^
জীবন-যাপনের প্রতিটি কাজে সতর্ক থাকতে হবে তাতে সময় ও বস্তু যতদূর সম্ভব কম খরচ হয়। প্রাজ্ঞ জনের এই কথা মাথায় রাখলেও বাস্তবে মেলানো যায় না, গেল না।বাড়ি ফিরে দেখি আবার ইন্টারভিউ লেটার। আবার পিএসসি আবার কলকাতা, ভবানী ভবন। আবার আর্থিক চিন্তা, আবার যন্ত্রণার জার্ণি। যেতে তো হবেই! খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে দুটো সরকারি চাকরির প্যানেল হয়েছিল তার একটা ক্যানসেলড! অপরটির নিয়োগ কবে হবে কে জানে! অতএব চলো আবার কলকাতা। হায় বিধাতা! বিধাতা কেন! কে বিধাতা? এই এক সময় যখন বামুনের ছেলের পুজো আচ্চায় বিশ্বাস ছিল না, ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস নেই। আছে মার্ক্সবাদ। যখন শিক্ষকতায় এসেছিলাম তখন ছাত্র-ছাত্রীদের শেখাতাম তুমিই ভগবান। ভগবান মানুষ সৃষ্টি করেনি, মানুষই ভগবান সৃষ্টি করেছে। তাই ভগবানের চেহারা তোমার মতো। তোমার মতো হাত পা। হ্যাঁ, হয়তো তিনটে চোখ, চারটে পাঁচটা মাথা। ও হল সুপার ইম্পোজিশন। নাহলে তুমি ভয় পাবে কেন! ভয়, ভক্তি কোনোটাই আমার ছিল না! আমার এক বন্ধু নাম প্রদীপ বাগচী দুজনে এক ভাবনায় ছিলাম। ও অবশ্য মার্ক্স পড়েনি কিন্তু ধর্মে বিশ্বাস ছিল না। হায়ার সেকেন্ডারির পর দু'জনে ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত। একবার রাসমেলায় সাধু খেপাতে গিয়ে সেই কি বিপদ! সাধু আমাদের হাতে প্রসাদ তুলে দিয়ে বলে লে বেটা পরসাদ। আমরা বলি মহারাজ ইয়ে তো সন্দেশ হ্যায় কাহেকা পরসাদ। ব্যস্, আর যাবে কোথায়। বেটা সাধু ত্রিশূল নিয়ে মদনমোহন বাড়ির বাইরে থেকে রাসমেলার মাঠ পর্যন্ত দৌড় করিয়েছে। তবু ভূত ভগবান শয়তান কোনোটাই মানিনি।
ড: আব্রাহাম কাভুর আর নজরুল ইসলাম 'আমি আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কুর্ণিশ'। মাথায় ঢুকে গেছে বীজমন্ত্র 'ধর্ম আফিং'। তখন পড়ে যাচ্ছি রুশ সাহিত্য 'মানুষের মতো মানুষ', গোর্কির মা, তলস্তয়।সস্তায় কেনা গ্লসি পেপারে ছাপা রুশ সাহিত্য।কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে।কিনতে শুরু করলাম চীনা সাহিত্য। লুস্যুন-এর ইংরেজি অনুবাদ 'The wild grass' এবং শুরু করলাম অনুবাদ। কলকাতায় তখন অরুণ মুখোপাধ্যায় চেতনা গোষ্ঠী লুস্যুনের আ কিউ-কে নাটক করছেন 'জগন্নাথ' নামে। নাটক দেখে ও ল্যুস্যুন পড়ে মুগ্ধ। ছোট্ট গল্পগুলো অনুবাদ করতে শুরু করলাম। ছাপা হল জলপাইগুড়ির 'সম্ভবকাল' পত্রিকায়। আরো কিছু কাগজে।সেই লেখা পড়ে এক দিদিমণি এলেন নাম কুমকুম রায়। শুরু হল আর এক যাত্রা। ভাই পাতালেন কুমকুম রায়। মাসিমা আর দুই দিদি যত্ন করে খাওয়াতেন। দুজনের পরিকল্পনা ও সম্পাদনায় বেরোল 'তূণীর' আর 'অভিযান' পত্রিকা। কুমকুমদি আমাকে নিয়ে গেছেন শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায়।নিয়ে গেছেন কংগ্রেস নেতা মিঠুদা বা দেবপ্রসাদ রায়ের পদ্মপুকুর সিআইটির ফ্ল্যাটে। কুমকুমদির বাড়িতে এসেছেন কবি সমীর রায়, সব্যসাচী দেব, সৃজন সেন। সমীরদার 'থানাগারদ থেকে মাকে' তখন সবার মুখে মুখে। ধন্য আমি এই কবিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে। এরা সবাই নকশাল পন্থী কবি। আমিও চিহ্ণিত হয়ে গেলাম। এই সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক হল স্কুলের সিনিয়র, পুলিশের হাতে বহুবার মার খাওয়া বন্ধু দেবজ্যোতি রায়। দেবজ্যোতি আজ যা লেখে সেদিনের লেখা পড়লে অনেকেই চিনতে পারবেন না! সেদিন ওর সম্পাদিত 'ব্যতিক্রম' পত্রিকা দেখছিলাম। কি তুখোড় লেখা ও সম্পাদনা। আমার একটা লেখা খুঁজছিলাম 'বাংলা সাহিত্যে অর্থনৈতিক অনুষঙ্গ'। দেবজ্যোতি রায় ও অন্যান্য কবি, যাদের কথা লিখলাম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আমাকে চিহ্ণিত করল নকশালপন্থী রূপে। শহরের একটা স্কুলে ইন্টারভিউয়ে ডাক পেলাম কিন্তু...
আবার কলকাতা। হাওড়া থেকে সোজা ভবানী ভবন। এবার এক্সপার্ট ড: অরুণ কুমার মুখোপাধ্যায়। সদ্য যার বই পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি 'ঊনবি়ংশ শতাব্দীর গীতিকাব্য।' ইন্টারভিউ তো দিলাম কি হবে জানি না! একটা করে পোষ্ট, সরকারি স্কুলে! সব বাঘা বাঘা ছাত্র এম ফিল পিএইচডি করছে। গবেষক বন্ধু হল অরুণ বালা, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির। অনেক দিন চিঠিপত্র চলেছে। আমার প্রথম অবাঙালি বন্ধু শশী মেনন। জার্মান বান্ধবী আমার ওজন সাতচল্লিশ কিলো শুনে অবাক হয়েছিল। অনেকদিন এদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান-প্রদান হয়েছে কিন্তু সাহিত্যে আগ্রহ ছিল না বলে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
পরীক্ষা দিয়েই সোজা বালিগঞ্জ স্টেশন রোড মহাশ্বেতা দিদির বাড়ি। দেখলাম আমার প্রিয় লেখিকাকে। অনেক কথা, গল্প এবং আমাকে দায়িত্ব দিলেন এই অঞ্চলের আদিবাসী জীবন নিয়ে কাজ করতে এবং 'বর্তিকা'য় লিখতে কিন্তু আমি পারিনি! একে তো চাকরি নেই সংসারের হাল খুব ভালো নয়। প্রায়োরিটি চাকরির খোঁজ। বললাম, সব শুনে উনি একটি চিঠি লিখে বললেন এটা হাওড়ায় ডাকবাক্সে দিয়ে যাবি। বুঝতে পারলাম কারো কাছে সুপারিশ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴