বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-১৫/রূপন সরকার
বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং
পর্ব-১৫
ড. রূপন সরকার
শৈল শহর দার্জিলিংকে ইউরোপীয় নাগরিকদের স্বাস্থ্যনিবাস হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল প্রথমদিকে দার্জিলিং পৌরসভার প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই দার্জিলিং পৌরসভা, বিভিন্ন বিভাগে যথেষ্ট কর্মচারী নিয়োগ করে। ১৮৮৫ সালের একটি তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র সাফাই বিভাগের জন্যই ইন্সপেক্টর, সুইপার, জমাদার কুলি সব মিলিয়ে ১২৮ জন কর্মচারী নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই একই সময়কালে পৌরসভার জঞ্জাল বহনকারী গাড়ি ছিল ১১টি। রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা, বাড়ি বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে শহরের নিচে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ছিল সাফাই বিভাগের কাজ। এই সময়কালে শহরের বিভিন্ন স্থানে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য ল্যাট্রিন ও শৌচালেয়ের সংখ্যা ছিল ২১টি। প্রাক-স্বাধীনতা সময়কালে এই সংখ্যা বৃৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯৮টি। শহরে ৫টি বড় ও ৭টি ছোট মলশোধনাগাড় ছিল। প্রত্যেক দিন অন্তত্য একবার এই ল্যাট্রিনগুলি পরিষ্কার করা হতো। এগুলির স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ফিনাইল ব্যবহার করা হতো। শহরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য আধিকারিকের ওপর। শহর পরিষ্কার, পরিছন্ন রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য আধিকারিকের টীকাকরণ, জন্ম-মৃত্যুর হিসেব রাখা, বাজারের তত্ত্বাবধান করা, হাসপাতাল ও ঔষধালয়কে জীবাণুমুক্ত রাখা, খাদ্য ও জলকে যথাসময়ে ল্যবটারিতে পরীক্ষা করা ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকতে হতো। ১৮৯১ সালের প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে, এই বিভাগের কর্মচারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ থেকেই বোঝা যায় দার্জিলিং পৌরসভা শহরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সৌন্দর্যায়নে কতটা মনোযোগী ছিল। ১৮৮৯ সালে সেনিটারি কমিশনের রিপোর্টে দার্জিলিং শহরের নিকাশি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পাবলিক ল্যাট্রিন, বাজার, রাস্তাঘাট, জন্ম-মৃত্যুর হিসেব রাখা, টীকাকরণ কর্মসূচী, দাতব্য চিকিৎসালয় সমস্ত কিছুকে সন্তোষজনক বলে উল্লেক করা হয়েছে।
শহরে পাণীয় জলেরও সুবন্দোবস্ত করা হয়েছিল। দুটি জলাশয় থেকে জল সংগ্রহ করে ফিল্টার করে পাইপের সাহায্যে শহরবাসীর কাছে পৌছে দেওয়া হত। গরমের সময় পর্যটকদের চাপে সৃষ্ট জলসমস্যা মেটাতে পৌরসভা কোনখোলাতে একটি বৈদ্যুতিক পাম্পিং প্ল্যান্ট বসিয়েছিল। এখান থেকে অতিরিক্ত জল জলাশয়ে পৌছে দেওয়া হতো। জলাশয় দুটি শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরে সমুদ্রতলদেশ থেকে ৭, ৪৭৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। জলের বিশুদ্ধতা ও জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত তদারকির ব্যাবস্থা ছিল। পৌরসভার কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিল বৈদ্যুতিক শক্তির উৎপাদন ও বন্টন। এই কাজের দায়িত্ব পালন করতেন একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবেশন করে পৌরসভার ভালো রকম আয় হত। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এবং সর্বজনীন জায়াগায় পৌরসভার পক্ষ থেকে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এসমস্ত কিছু ছাড়াও দার্জিলিং পৌরসভা সারাবছর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকত।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴