সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

16.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৬

16.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৬

15.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৫

15.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৫

14.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৪

14.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৪

13.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৩

13.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৩

12.অন্তহীন আকাশের নীচে/১২

12.অন্তহীন আকাশের নীচে/১২

11.অন্তহীন আকাশের নীচে-/১১

11.অন্তহীন আকাশের নীচে-/১১

10.অন্তহীন আকাশের নীচে/১০

10.অন্তহীন আকাশের নীচে/১০

9.অন্তহীন আকাশের নীচে/৯

9.অন্তহীন আকাশের নীচে/৯

8.অন্তহীন আকাশের নীচে/৮

8.অন্তহীন আকাশের নীচে/৮

7.অন্তহীন আকাশের নীচে/পর্ব ৭

7.অন্তহীন আকাশের নীচে/পর্ব ৭

6.অন্তহীন আকাশের নীচে/৬

6.অন্তহীন আকাশের নীচে/৬

5.অন্তহীন আকাশের নীচে/৫

5.অন্তহীন আকাশের নীচে/৫

4.অন্তহীন আকাশের নীচে/৪

4.অন্তহীন আকাশের নীচে/৪

3.অন্তহীন আকাশের নীচে/৩

3.অন্তহীন আকাশের নীচে/৩

2.অন্তহীন আকাশের নীচে/২

2.অন্তহীন আকাশের নীচে/২

1.অন্তহীন আকাশের নীচে-১

1.অন্তহীন আকাশের নীচে-১

01-April,2023 - Saturday ✍️ By- দেবপ্রিয়া সরকার 709

অন্তহীন আকাশের নীচে/১৫

অন্তহীন আকাশের নীচে 
পর্ব ১৫
দেবপ্রিয়া সরকার
------------------------------

রাজবাড়িতে জোর বাজনা বাজছে। নহবতখানায় বসে দুই সানাইবাদক আনন্দের সুর ভাজছে আপন খেয়ালে। ঢোল, তাসার ধ্বনিতে সরগরম চারপাশ। সিংহদুয়ারের সামনে দলেদলে লোক জড়ো হয়েছে। ঝলমলে পোশাক, দামী অলংকার আর সুদৃশ্য পাগড়িতে সেজেছেন হবু রাজাবাহাদুর। আজ যে তাঁর রাজ্যাভিষেক! দেশবিদেশের কত সম্মানীয় অতিথিরা এসেছেন। সুদৃশ্য আসবাবের সমারোহে রাজপ্রাসাদের বৈভব বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। অন্দরমহলের এককোণে দাঁড়িয়ে চোখধাঁধানো সেই আড়ম্বর হাঁ করে দেখছেন ঊষারানী। রাশভারী ব্যক্তিত্বের রাজমাতা তদারকি করছেন সবকিছু। ঊষারানী পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন তাঁর দিকে। দুরুদুরু বুকে কিছু বলতে যাবেন এমন সময় অনেক দূর থেকে ভেসে এল শব্দ, দিদা ও দিদা! উঠবে না? অনেক বেলা হল তো।
বন্ধ ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে প্রবেশ করা একফালি রোদ এসে পড়ছে ঘুমন্ত ঊষারানীর মুখে। ঘনঘন চোখের পাতাগুলো কাঁপছে তাঁর। পাখি একদৃষ্টে তাঁর দিকে চেয়ে আছে। ঊষারানীর কোনও সাড়া না পেয়ে সে আবার ডাকল, দিদা! ওঠো। সকাল হয়ে গেল তো। দেখো, আমি চলে এসেছি তোমার জন্মদিন পালন করতে। 
ধীরে ধীরে চোখ মেললেন ঊষারানী। অবাক হয়ে দেখছিলেন আধো অন্ধকারে ঢাকা ঘরটিকে। কোথায় সেই বেলোয়ারি ঝাড়? কোথায় গেল জড়ির নকশা করা লেসের পর্দা? আর কোথায়ই বা কাশ্মীরী কাজের মখমলি কার্পেট? নাহ্, সানাই তো বাজছে না কোথাও। জানালার বাইরে থেকে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুতান। কোথায় গেলেন রাজমাতা? এখানে তো দাঁড়িয়ে আছে পাখি, বকুলের মেয়ে। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঊষারাণী এতক্ষণ চাক্ষুষ করা ঘটনাবলির সঙ্গে তাঁর চারপাশের দৃশ্যপটকে মেলানোর চেষ্টা করলেন। বুঝতে পারলেন স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। পাখিকে দেখে বললেন, পাখিদিদিভাই! এসে পড়েছিস?
-হ্যাঁ দিদা। তুমি ঝটপট উঠে পড়ো। মা রান্না ঘরে গিয়েছে তোমার চা-জল আনতে। এখুনি এসে পড়বে। আমি তোমার বিছানাটা গুছিয়ে দিই। 
হাত ধরে ঊষারানীকে বিছানায় বসিয়ে দিল পাখি। তারপর অভ্যস্ত হাতে মশারী খুলে বাসি বিছানা তুলে ফেলল। ঊষারানীকে ধরে ধরে নিয়ে গেল কলঘরে। হাতমুখ ধুইয়ে পাখি একখানা ধোয়া পোশাক পরিয়ে দিল। সুগন্ধি তেল লাগিয়ে পাট করে আঁচড়ে দিল চুল। মুখে হালকা পাউডার মাখিয়ে ঊষারানীর  সামনে একটা আয়না ধরে বলল, দেখো তো বার্থ ডে গার্ল নিজেকে চিনতে পারো কিনা? 
ঊষারানী একটা লাজুক হাসি হেসে বললেন, আমার কী আর সাজার বয়স আছে রে পাগলি? স্নো-পাউডার তো তোরা মাখবি। তবে না রাজপুত্তুরদের ভোলাতে পারবি।
কাল রাতের পর থেকে যে যন্ত্রণাটা অনেক কষ্টে দূরে সরিয়ে রেখেছিল পাখি, ঊষারানীর কথার খেই ধরে সেই ব্যথাটা আবার মনে পড়ে গেল তার। জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে বলল, সকলের কপালে কি আর রাজপুত্তুর জোটে গো দিদা?  তার জন্যে তো রাজকীয় ভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হয়। 
পাখির কথাটা কেমন বেসুরো লাগল ঊষারানীর। ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে বললেন, রাজার ঘরে জন্মালেই সবসময় রাজকীয় ভাগ্য হয় না রে দিদিভাই। পরিবেশ, পরিস্থিতি খারাপ হলে রাজার কপালেও দুর্ভোগ নেমে আসে। এই যেমন আমাদের রাজকুমারীর কথাই ধর। তিনি কি কখনও ভেবেছিলেন একটা সময় এমন আসবে যখন তাঁকে রাজপ্রাসাদের আরাম ছেড়ে জেলের চার দেওয়ালের ভেতর দিন কাটাতে হবে? 
পাখি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, মানে! রাজকুমারীকে জেলে যেতে হয়েছিল? কিন্তু কেন? 
এতক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পাখি আর ঊষারানীর কথোপকথন শুনছিল স্বয়ংদ্যুতি। এবার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বলল, দিদা একদম ঠিক বলেছে পাখি। সত্যি সত্যি জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবীকে স্বাধীনতার পর বেশ কিছু দিন দিল্লির তিহার জেলে বন্দি থাকতে হয়েছিল। 
-রাজারানিদেরও জেলে যেতে হয়? এরকম তো কখনও শুনিনি। একটু খোলসা করে বলো না গো টুপুরদিদি। 
-বলছি তবে শোন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দেশ থেকে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হল। এরপর সংসদীয় রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হলেন গায়ত্রী দেবী। স্বতন্ত্র পার্টির হয়ে একাধিকবার তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন এবং সাফল্যের সঙ্গে জয়লাভও করেছিলেন। তারপর এল ১৯৭৫ সাল। দেশব্যাপী জারি হল জরুরি অবস্থা। ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বেশ কিছু নতুন আইন প্রনয়ণ করেছিল। সেই রকমই এক আইনের জালে জড়িয়ে গেলেন রাজমাতা। তাঁর স্বামী মহারাজ দ্বিতীয় সোয়াই মানসিংহের আকস্মিক প্রয়াণ ও একের পর এক আপনজনের মৃত্যু যখন ক্ষত-বিক্ষত করে রেখেছিল গায়ত্রী দেবীকে, তখনই আরও অনেক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ‘কনজারভেশন ওফ ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ স্মাগলিং অ্যাক্টিভিটিজ অ্যাক্ট’ এর দোহাই দিয়ে তাঁকেও জেলে পাঠানো হয়েছিল। পাক্কা ছ’মাস বন্দিজীবন কাটিয়েছিলেন তিনি। 
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল পাখি। আবেগবিহ্বল স্বরে ঊষারানী বলে উঠলেন, রূপকথার গোলাপি আকাশেও কখনও কখনও মেঘ জমে। আকস্মিক ঝড়ের ঝাপ্টায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সাজানো নগরী। স্বপ্নের জগতে ভাসমান পরীদের ভাগ্যেও নামে অন্ধকার। মানুষের জীবন নদীর মতো বাঁক বদলায়। কখনও সে চঞ্চল ঝর্না হয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে আসে, আবার কখনও পলির ভারে হারিয়ে ফেলে গতি। ক্ষীণকায়া হয়ে বাঁচিয়ে রাখে নিজের অস্তিত্বটুকু। তখন না ছিল রাজপাট, না ছিলেন তাঁর পাশে রাজাবাহাদুর। একাকী, নিঃসঙ্গ জীবন কেটেছিল রাজকুমারীর। ভাগ্যের লিখন কেউ কি কখনও খণ্ডাতে পেরেছে রে পাখি দিদিভাই? বয়স পাকতে দে তারপর এসব বুঝবি। 
বকুল ট্রেতে চা, জল-খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, কার ভাগ্যে আবার কী ঘটল এই সাতসকালে? 
কেউ কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু শুকনো হাসি হাসল। স্বয়ংদ্যুতি পাখির কাছে এসে বলল, এই তো বেশ ফ্রেশ দেখাচ্ছে তোমায়। মা বলছিল আজ পয়লা বৈশাখ, তারওপর দিদার জন্মদিন। তাই আমরা সকলে মদনমোহন মন্দিরে যাব ঠিক করেছি, পুজো দিতে। তুমিও চলো না আমাদের সঙ্গে। পুজো দেওয়া হয়ে গেলে শপিংয়ে যাব। তাড়াতাড়ি আবার ফিরেও আসতে হবে। দিদার জন্মদিনের সারপ্রাইজ গিফ্ট পৌঁছে যাবে দুপুর নাগাদ। আমি এখন যাই, চটপট স্নান সেরে আসি।  
দিদার জন্মদিন নিয়ে ভারি উচ্ছ্বসিত স্বয়ংদ্যুতি। সকাল সকাল ক্যামেরা তাক করে ছবি তুলছে, শর্ট ভিডিও করছে একের পর এক। বাড়ির বাইরে ম্যারাপ বেঁধে চলছে প্যান্ডেল তৈরির কাজ। রাতের রান্নার প্রস্তুতি চলছে একদিকে। অতিথি আসবে বেশ কিছু। জয়শীলার রান্নাঘরে রাঁধা হচ্ছে পায়েস এবং ঊষারানীর জন্য বিশেষ কিছু নিরামিষ পদ। যদিও আজকাল গলাভাত ছাড়া তিনি কিছুই খেতে পারেন না। তবুও বাড়ির সকলের সাধ হয়েছে আজ তাঁর সামনে পছন্দের কিছু পদ থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করা হবে। প্রত্যেকটা আয়োজনের খুঁটিনাটি স্বয়ংদ্যুতি ক্যামেরাবন্দি করছে। আগের দিন মদনমোহন মন্দিরে কোনও ভিডিও শ্যুট করা হয়নি। তাই আজ আর সে সুযোগ হাতছাড়া করল না। ইন্দ্রায়ুধের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মন্দিরের ওপর সে একটা ছোট্ট ভ্লগও বানিয়ে ফেলল। 
বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরে স্বয়ংদ্যুতিরা দেখল স্নান করে নিজের ঘরের খাটের ওপর বসে আছেন ঊষারানী। বাড়ির সকলে জড়ো হয়েছে তাঁর ঘরে। প্রথমে রাঘবেন্দ্র এসে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। তারপর একে একে এল জয়শীলা, সঞ্জীবনী, রাধাকান্ত এবং নাতিনাতনিরা। সকলকেই স্নেহভরে আলিঙ্গন করলেন  ঊষারানী। তার চোখ থেকে অবিরাম নেমে আসছে জলের ধারা। তিনি ভাঙা গলায় বললেন, বেঁচে থাকো তোমরা। আশীর্বাদ করি এভাবেই হেসেখেলে বেঁধে বেঁধে থাকো সকলে।   
ডাব্বু ঊষারানীর পাশে বসে বলল, আমরা তো নাহয় তোমার আশীর্বাদ পেলাম। কিন্তু একজন তো বাকি রয়ে গেল, ঠাম্মা। 
-কে রে দাদুভাই? কার কথা বলছিস? 
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন ঊষারানী। ডাব্বু একটা গালভরা হাসি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল এক নিমেষে। পরক্ষণেই ফিরে এল আবার। সঙ্গে করে যাকে নিয়ে এল তার গায়ের রঙ সাহেবদের মতো ফর্সা। গাঢ় বাদামি চুল। পরনে দামী পোশাক। চোখে নামী ব্র্যান্ডের চশমা। ঊষারানীর সামনে দাঁড়িয়ে সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোক বললেন, আমায় চিনতে পারছ মা?
ঊষারানী তাঁর আধবোজা চোখ মিলে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ঝাপসা দৃষ্টি দিয়ে মেলাবার চেষ্টা করলেন তাঁর স্মৃতিতে ধরে রাখা অনেককাল আগের এক যুবাপুরুষের চেহারার সঙ্গে এই প্রৌঢ়ের মুখচ্ছবি। তারপর অস্ফুটে বললেন, সত্যেন্দ্র! আমার সতু না?
ডাব্বু হাসিমুখে বলল, বলেছিলাম না তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এই দেখো তোমার সতুকে খুঁজে এনেছি। এটাই তোমার জন্মদিনের উপহার। পছন্দ হয়েছে তো?
সত্যেন্দ্র ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ঊষারানীকে। মা ও ছেলে উভয়ই কাঁদল কিছুক্ষণ। তারপর সত্যেন্দ্র বলল, আমায় ক্ষমা করো মা। এতকাল তোমাদের কাছে আসিনি। স্টেলাকে বিয়ে করার অপরাধে বাবা যখন আমাকে তীব্র তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন, তখন মনে মনে শপথ করেছিলাম আর কখনও এদেশে পা রাখব না। কিন্তু গতবছর ফেসবুকে হঠাৎই ডাব্বু আমার বন্ধু হয় এবং তারপর থেকে নিয়মিত এখানকার খবরাখবর নিতে থাকি। এই বার্ধক্য বয়সে এসে শিকড়ের টানটা অনুভব করতে থাকি ভীষণভাবে। সেদিন যখন ডাব্বুর মুখে তোমার শততম জন্মদিন পালন এবং সেই উপলক্ষে ফ্যামিলি রিইউনিয়নের কথা শুনলাম তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সব মান-অভিমান ভুলে চলে এলাম তোমার কাছে। 
ঊষারানী সত্যেন্দ্রর বলে যাওয়া কথার খানিক বুঝলেন, খানিক বুঝলেন না। কিন্তু সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হলেন নিঃসন্দেহে। সত্যেন্দ্রর বুকে পিঠে হাত বোলালেন পরম মমতায়। তাঁর বাঁধ ভাঙা অশ্রু দেখে বাড়ির সকলের চোখ ভিজে উঠল।
 ঊষারানীর পছন্দের সোনামুগ ডাল, আমকাসুন্দি, শুক্তো, মোচাঘণ্ট যত্ন করে রান্না করেছে জয়শীলা, সঞ্জীবনী এবং বকুল মিলে। সঙ্গে রয়েছে পাঁচ রকমের ভাজা, বাসন্তী পোলাও। সঞ্জীবনী নিজে হাতে তাঁর মায়ের পছন্দের খাবার সামান্য ঊষারানীর মুখে তুলে দিল। ছেলেমেয়েদের সকলকে অনেক অনেক বছর পর আবার কাছে পেয়ে কেমন যেন ঘোরের ভেতর চলে গিয়েছিলেন ঊষারানী। খাওয়াদাওয়া শেষে সকলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে তিনি বকুলকে চুপিচুপি জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যাঁ রে বকুল যা যা ঘটছে সেগুলো কি সব সত্যি? নাকি, ঘুমের মধ্যে কোনও সুখ স্বপ্ন দেখছি আমি?
বকুল হাসিমুখে বলল, সব সত্যি গো বড়মা, সব সত্যি। এখন একটু শুয়ে বিশ্রাম নাও। বিকেলে তো আবার অনেক অতিথি আসবে। তোমার বেশ ধকল আছে। আমি একটু বাড়ি যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। 
পাখিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি চলে গেল বকুল। আবারও একলা ঘরে একাকী শুয়ে রইলেন ঊষারানী। তার মনের চোখে ফিরে আসছে কিছু ধূসর ছবি। শিশু বয়সের রাঘবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র, সঞ্জীবনীরা ঘিরে বসে আছে তাঁকে আর তাঁর কোলের ওপর শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে ছোট্ট দেবেন্দ্র। জীবনের  শেষ লগ্নে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সন্তানদের আবার কাছে পেলেন ঊষারানী। শুধু দেখা পেলেন না দেবেন্দ্রর। এই পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে অন্য এক জগতে মায়ের অপেক্ষায় বসে আছে সে। ঊষারানী স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন ওই দূর আকাশের পাড়ে বয়ে চলেছে এক স্বচ্ছ জলের নদী আর সেই জলধারার পাশে অপেক্ষমান এক কিশোর ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঊষারানীর দিকে। তিনি অস্পষ্ট স্বরে বললেন, আসছি দেবু, আসছি আমি। আর একটু সবুর কর বাবা।

*তথ্যসূত্রঃ আ প্রিন্সেস রিমেম্বারস্ঃ গায়ত্রী দেবী  

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri