সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

15-December,2022 - Thursday ✍️ By- রণজিৎ কুমার মিত্র 477

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/চতুর্দশ পর্ব
রণজিৎ কুমার মিত্র
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
   
স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-র প্রতিটি পর্ব-র শেষেই পেয়েছি পরবর্তী পর্ব লেখা র উৎসাহ প্রেরণা। এই স্মৃতির নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারার জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। গত পর্বে গ্রন্থাগার বিভাগের জ্যোতির্ময় রায় ও পরীক্ষা সমূহ বিভাগের অশোক ঘোষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবার সময় দুটি বিভাগের কিছু  প্রসঙ্গের উত্থাপন করেছিলাম। 
কারো নাম  বাদ পড়ে যাওয়া কিন্তু কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, একান্ত ই অনবধানতার কারণে। ভেবেছিলাম ছাত্র পর্ব শেষ করে চাকরী জীবনের কথা  লিখব, কিন্তু  পরের কথা আগে এসে গেছে।  অগ্রজ ও সমবয়স্ক বহু সহকর্মী ছিলেন যাদের সান্নিধ্য ও ভালোবাসা আমাকে কর্মকুশলী ও অভিজ্ঞ হতে সহায়তা করেছে। গ্রন্থ ভবনের মনোজদার সাথে শুধু গ্রন্থাগারে নয় গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে একসাথে বহু বছর অধ্যাপনা করেছি। অনেক মধুর স্মৃতি জমা হয়ে আছে। আর  সুখময় নয়, সুখরঞ্জন সরকারদা, তনয়াদি আমার ত্রুটি সংশোধন করে দিয়ে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। অকৃত্রিম সুহৃদ মহেশ গোপের সাথে এখনো বন্ধুত্ব অটুট আছে। বাইন্ডিং সেকশনের নরেশ নাগ খুব স্নেহ করতেন যে সময়ের কথা বলছি তখন গ্রন্থাগার বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ বৃত্তি কুশলী ছিলাম আমি। সবচেয়ে আশ্চর্য হতাম বিভূতিবাবুকে দেখে, লাইব্রেরী যার কাছে মন্দিরের মতো। জ্যনিটরে বসতেন। লাইব্রেরির প্রবেশমুখে প্রণাম করে ঢুকতেন। একদিন রেজিস্টার বাজপেয়ী স্যার   লাইব্রেরি ঢুকতে গিয়ে দেখেন বিভূতিবাবু তন্ময় হয়ে বই  পড়ছেন। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলেন - কি বই? বইটি সাংখ্য দর্শনের। লাইব্রেরিতে বহু স্বল্পশিক্ষিত  কর্মীদের আমি দেখেছি, যারা প্রকৃত অর্থেই স্বশিক্ষিত। ঘোষবাবু, ভূষণ, অশোক, প্রদীপ, ফলেন, এরা যেভাবে গ্রন্থাগার পরিষেবা দিয়েছেন তা শিক্ষিত গ্রন্থাগার বৃত্তি কুশলীদের তুলনায় কম কিছু নয়।  একাডেমিক ডিগ্রিধারীদের তুলনায় গ্রন্থাগারের এই কর্মীদের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল।  প্রমথ চৌধুরীর সেই  বই পড়া প্রবন্ধের অমোঘ উক্তি  এরা যেন জীবন দিয়ে  প্রমাণ করেছেন "শিক্ষিত ব্যক্তি মানে  স্বশিক্ষিত।" পরবর্তী কালে আরো অনেকেই এসেছেন। 
তাদের কথাও পরে বলব। গ্রন্থাগারে কাজ করতে গিয়ে অনুভব করেছি, যারা আগের পরবর্তীদের সম্বন্ধে তাদের যেমন ঔদার্য ও অসংকীর্ণতা থাকা দরকার, আবার যারা পরে এসেছেন পূর্ববর্তীদের সম্বন্ধে তাদেরও চাই সেই রকম শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি। 
 
আমার ছাত্র পর্বের কথা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি, আসলে দু বছরের এই স্বল্পমেয়াদী পর্বকেই  মনে হয় দীর্ঘমেয়াদী,  যে স্মৃতি সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে যা কখনো ফুরিয়ে যায় না, ভোলা যায় না । পৌনঃপুনিক নামতার মতো আওড়াতে ইচ্ছে করে।  তবে  ইচ্ছে যাই হোক, শেষ তো করতেই হবে, তাই বেছে বেছে যে ক'টি স্মৃতির ছবি এখনো আলো ছড়ায় সেটুকুই বলি, বাকিটুকু তো এক রবীন্দ্রানুসারী হেডমাস্টারমশাই কবির কয়েকটি লাইন যা প্রায় সকলেরই জানা! "বর্ষে বর্ষে দলে দলে আসে বিদ্যামঠতলে, চলে যায় তারা সগৌরবে/মালিকা পড়িলে গলে, প্রতি ফুলে কেবা মনে রাখে" - এসব লাইন খুব পুরনো, কিন্তু চিরদিনের।

আমাদের সেই  সময়ে, উপাচার্য অম্লান দত্ত-র
উদ্যোগে খুব ঘটা করে বৃক্ষরোপণ উৎসব হয়েছিল। অধ্যাপক প্রণয় কুমার কুন্ডুর উদ্যোগে গীতি আলেখ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা 'মরুবিজয়ের পতাকা' 
উড়িয়েছিলেন। অধ্যাপক -গবেষক -ছাত্র-- ছাত্রী-আধিকারিক, শিক্ষাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত স্তরের কর্মীরা বৃক্ষচারা রোপন করেছিলেন। সেই সব  চারাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এখন ঘন সবুজ নিয়ে। 
     
নীল আকাশের তলে, জেগে ওঠা সবুজ  পাহাড়। শাল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ায় সেজে ওঠা ক্যাম্পাস শুধু ছাত্রদের মধ্যে নয় শিক্ষকদের মধ্যেও কবিমন সক্রিয় ছিল। আমার আর পলিটিক্যাল সাইন্স-এর ধ্রুবজ্যোতির মাথায় ঢুকল ক্যাম্পাসে কবি সম্মেলন করতে হবে।  কয়েকজন অধ্যাপক, অধ্যাপিকার কাছে প্রস্তাব করলাম। ছাত্র-অধ্যাপকরা একযোগে স্বরচিত কবিতা পড়বেন, সানন্দে রাজি হলেন অনেকেই, আবার কেউ বক্রদৃষ্টি হানলেন ।  ড্রইং শীটে সুদৃশ্য পোষ্টার করে প্রচার শুরু করে দেওয়া হল, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হল সেই পোস্টার। কবিতা পাঠের স্থান, বিদ্যাসাগর ভবনের সেমিনার কক্ষ,  সন্ধে ছটা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে।আমাদের বন্ধুরা অলংকরণ করে পোস্টার লিখেছিলেন, কবিতা সন্ধ্যা। কলা বিভাগের ডিন সানন্দে অনুমতি দিয়েছিলেন। এস্টেট অফিসার অধিকারীবাবু চেয়ার টেবিল মাইক সেমিনার কক্ষের সমস্ত সাজসজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছিলেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকদের মধ্যে কে কে কবিতা পড়বেন,  তারও তালিকা তৈরি হল।  সব বিভাগের  হেড দের নিমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছিল। মনে আছে - ইংরেজি বিভাগের প্রধান ডাকসাইটে অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ সেনগুপ্তর কাছে আমি  আর ধ্রুব গিয়েছি নিমন্ত্রণপত্র দিতে ভয়ে ভয়ে, কবিতা পাঠের আসর এর কথা শুনে স্যার বাঁকা হাসি হেসে বললেন, "স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ইলেকশন সামনে নাকি?" কী উত্তর দেব - আমি আর ধ্রুব মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলাম, বাঁচিয়ে দিলেন অধ্যাপক বিনয় ব্যানার্জি। আমাদের সময়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি, কি আইনগত কারণ বা ইনজংশন জারি ছিল। উদয় দুবে, কাঞ্চন শর্মারা ছাত্র সংসদ চালাতেন। শিলিগুড়ির রাজনীতি ও সংস্কৃতি  জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুখ পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন উদয়দা, সেই উদয়দা আর নেই, উদয়দা রাজনীতি ছেড়ে শেষের দিকে  মিত্র সম্মিলনীর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। যাই হোক বিনয়বাবু সেদিন কবিতা তো পড়েছিলে ই, সব রকমের সহায়তা করেছিলেন। তখন ইংরেজি বিভাগে ছিলেন বুদ্ধদেব বসুর কন্যা অধ্যাপিকা দময়ন্তী ঘোষ। তিনিও সমান উৎসাহ দিয়েছিলেন, কবিতা পড়েছিলেন। অন্যান্য অধ্যাপকদের মধ্যে বাংলা বিভাগের শিবচনদ্র লাহিড়ী, প্রণয় কুণ্ড কবিতা পড়েছিলেন। অশ্রুবাবু তখন শিলিগুড়ির বাইরে ছিলেন, আমরা এরকম একটা অনুষ্ঠান করেছি জেনে খুব খুশি হয়েছিলেন। পলিটিকাল সায়েন্স-এর অধ্যাপক শেখর
ঘোষ, সমাজ-নৃতত্ত্ব বিভাগে 
র নমিতা চৌধুরীরাও কবিতা পড়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে  যে নামগুলি মনে আছে, ইংরাজীর শিপ্রা সেন, তৃপ্তি সাঁতরা, 
রাম পাত্র। কমার্স-এর প্রকাশ অধিকারী ও আরো অনেকেই। কবিতা পাঠের আসরে ঠিক কি হতে যাচ্ছে - ধ্রুবর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল সিকিম থেকে আসা পলিটিকাল সায়েন্স-এর  উজ্জল ছাত্র জীবন থিম। জীবন ইংরেজীতে  কবিতা লিখত, কিন্ত বাংলায় কবিতা পড়বার ওর প্রবল ইচ্ছা, বাংলা কথা একটু আধটু বুঝতে পারে, দুচারটে শব্দ বলতে পারে এই মাত্র। বাংলা পড়তে পারে না, সে কি করে বাংলায় কবিতা পড়বে? উপায় বের হল। আমি আর ধ্রুব জীবনের ইংরেজী কবিতা বাংলার অনুবাদ করে, রোমানে লিখে দিলাম, খুব আনন্দ হয়েছিল ওর। বাংলায় কবিতা পড়তে পেরে জীবন খুব খুশি হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়-এর  পাঠ শেষ করে জীবন সিকিমে ফিরে যায়, কিন্তু অল্প দিন পরে মারা যায়। শুনেছি সিকিমে ও খুবই জনপ্রিয় কবি, ওর প্রস্তরমূর্তিও আছে সিকিমের কোনোখানে। 
 ক্যাম্পাস জীবনে ওর সাথে থাকত  ওর দুই সখী, রঞজু ধামালা, পার্বতী সুববা-রা। পাহাড়ের পুত্র-কন্যারা বিভাগ নির্বিশেষে একসাথে জোট বেঁধে থাকতে ভালোবাসে। রঞজু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের
হিমালয়ান স্টাডিজ সেনটার-এর  অধ্যাপিকা হন। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক গৌতম বিশ্বাস-এর সাথে বিয়ে হয়। পরে ওরা আসাম বিশ্ববিদ্যালয় চলে যান। 
বেশ কয়েক বছর আগে গৌতম মারা গেছেন। লাইব্রেরিতে নিয়মিত আসতেন, গৌতমের সাথে আমার, বিজয় ছেত্রী-র খুব সখ্য ছিল। গৌতম ভাল নেপালি বলতে পারতেন, বিজয়ের সাথে নেপালিতে কথা বলতেন। পলিটিকাল সায়েন্স-এর সত্যব্রত, তাপস গোস্বামীর সঙ্গেও যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল, এখনো তা অটুট আছে। আমাদের সময়ের অনেকেই পরবর্তী কালে বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক হয়েছেন, মায়া ঘোষ, মহম্মদ ইয়াসমিন, জেতা সামকৃত্যায়ন। কলেজের অধ্যাপক, অধ্যক্ষ অনেকই আছেন, অসীম, মলয় করঞজাই, মলয় সরকার আরো অনেকেই।
 আমাদের সেই কবিতা পাঠের আসরে,₹ কবিতা পড়বার ফাঁকে ফাঁকে গান গেয়েছিলেন শর্মিলা, নন্দিতারা। নন্দিতা পরে জাজ, শর্মিলা রায়গঞ্জ কলেজের দর্শন-এর অধ্যাপিকা। শর্মিলাকে আমরা
আকস্মিকভাবে  হারিয়েছি। অনেকের মনে থাকতে পারে সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কথা। রায়গঞ্জ থেকে কলকাতাগামী সেই  অভিশপ্ত বাস, সেই বাসে শর্মিলাও ছিল ওর  কলেজের কয়েকজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের সাথে। শীতের রাত, দরজা জানালা বন্ধ বাসের। জানা যায়, ঐ বাসে গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। যা লীক হয়ে বিপদ ঘটায়। অগ্নিদগধ হয়ে 
শেষ হয়ে গেল, কতগুলি সম্ভাবনাময় জীবনের।
আমাদের জীবনে সন্ধ্যা নামছে, আর  এই ভয়ঙ্কর কোভিড সংক্রমণের দিনে সবসময় ভয় এই বোধহয় কাউকে হারিয়ে ফেললাম। অসময়ে কত জনকেই তো হারিয়েছি - মন্তেশর, সত্যেন, স্বপ্না, শিপ্রা। সত্যেন ভারতীয় ভাষাপরিষদের অন্যতম অধিকর্তা হয়েছিলেনন। শিপ্রা কবিকমলা দাসকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছিলেন। 'বোধিবৃক্ষ' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। আমাদের সময়ে ছাত্রসংখ্যা কম থাকায় সবাই একে অপরকে জানতেন। এক বিভাগের ছাত্রছাত্রীর সাথে অন্য  বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মেলামেশায় কোনো অন্তরায় ছিল না। 
     
সেবার ছাত্র-ছাত্রীদের, গবেষকদের হোস্টেলের আবাসিকরা প্রায় দুদিন ধরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। গবেষকদের  নাট্যাভিনয়ে অংশ নিয়েছিল শীলা আর তৃপ্তি। গবেষকদের মধ্যে ছিলেন শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় যিনি পরবর্তীকালে অধ্যাপক ও বামফ্রন্ট আমলের  মন্ত্রী হয়েছিলেন। তৃপ্তির সাথে এখনো যোগাযোগ আছে। এই তো সেদিন শিলিগুড়িতে   উত্তরবঙ্গ সাহিত্য আকাদেমি র লিটল ম্যাগাজিন মেলায় দেখা হল, আড্ডা হল। তৃপ্তি সাঁতরা এই সময়ের নামকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গদ্যকার, কবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দলিত সাহিত্য আকাদেমির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শীলা এখন বৃদ্ধাবাসে  অন্তিম দিন গুনছে, ওর পাশের ঘরে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত অধ্যাপক পশুপতি মান্না। মান্না স্যারকে  ক্যাম্পাসে 
দেখেছি। মানুষটি  কেমন যেন অদ্ভুত ভাবে একলা আর  অবিশ্বাস্য হয়ে গেলেন। শুনেছি উনি টিচার্স কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছেন। থাকতেন কোয়াটারে। সেখানকার জল খাওয়া বন্ধ করে দিলেন ।পরে শিলিগুড়ি, শিবমন্দির থেকে জল
আনতেন। সব সময় কেমন ভয়, সন্দেহ  ওনাকে কেউ জলে বা খাবারে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলবেন। শীলার সঙ্গে কখনো-সখনো কথা বলতেন। আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী ওরা গেরুয়া বসন পরিধান করতেন।আলোচনা করতেন 'ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা'। শীলার কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়েছিলাম মান্না স্যরের প্রয়ান সংবাদ। ঐ রকমই একাকী, অসহায় উদভ্রান্তর মতো ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক চেমলিঙ স্যারকে, কখনো অধ্যাপক তপন দাশগুপ্ত, অধ্যাপক সন্তোষ মজুমদারকে। একাকীত্ব, হতাশা এই সব  পণ্ডিত 
অধ্যাপকদের জীবন যে কী দুঃসহ করে দিয়েছিল তা নিয়ে অনেক গল্প চালু থাকলেও মানুষগুলোর হতাশা, একাকী থাকার অবসাদ ঘোরাবার জন্য এই হায়েস্ট পেইড শিক্ষিত সমাজের কোন মানবিক উদ্যোগ তেমনভাবে চোখে পড়েনি।

আমার সমসাময়িকরা  অনেকেই পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের, কলেজের অধ্যাপক হয়েছিলেন, অধ্যক্ষ হয়েছেন কেউ কেউ। আবার কেউ উকিল, কেউ কেরানি, বিধায়ক, সাংসদও হয়েছেন অনেকে। মনে পড়ে শান্তা ছেত্রীকে, কমার্সের ছাত্রী আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্রনাথের 'আফ্রিকা' অত্যন্ত সাবলীলভাবে আবৃত্তি করে শান্তা  প্রথম হয়েছিলেন। মনে পড়ে সলজ্জ গবেষক কানাইয়া লাল আগরওয়ালকে, এখন যিনি  বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দুরন্ত সপ্রতিভ কমার্স-এর অভিশঙ্কর মহলানবীশকে। ভূগোল বিভাগের  অধ্যাপিকা সুমন সাও ছিলেন আমাদের সমকালীন। যিনি শাড়ি পরিহিতাদের মধ্যে একমাত্র বেলবটম, গুরু পানজাবী পরিহিতা। অভিশঙ্করকে মনে আছে, শিলিগুড়ি থেকে  ক্যাম্পাসে দাপটের সঙ্গে ও মোটর বাইক চালিয়ে আসত। একবার উপস্থিত বক্তৃতায় ওর  বিষয় ছিল  "ভূত'', কি যে ভালো বলেছিল। আমাদের কেউ কেউ আবার স্কুলমাস্টার, করণিক, দারোগা, ব্যবসায়ী। কেউ আবার
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা র মতো অমলকান্তি - যে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। অনেকেই চলে গেছেন দূর ভুবনে। কত আখ্যান হয়ে অলিখিত, অপ্রকাশিত থেকে হয়ে যাচ্ছে 'ধূসর পান্ডুলিপি।'

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri