সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
15-September,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 621

শুভ বিবাহ/শুক্লা রায়

শুভ বিবাহ
শুক্লা রায়

ঝুম বৃষ্টি বিকেল থেকে। মানসীর মা একা একাই বিড়বিড় করে, "বিয়ে বাড়িটা বোধহয় গেল ভেসে। এমনি ওদের বাড়িটা ডোবার ধারে। এই বৃষ্টিতে বোধহয় জলে জলে রাস্তাঘাট সব সমান হয়ে গেল।"
চা খাওয়া শেষ। হুঁকোয় একটা আয়েশি টান দিয়ে বারান্দা থেকে মুখ বাড়িয়ে উঠোনের জলের মধ্যে একদলা থুতু ফেলে শিবেন বলে, "বরযাত্রীই আসতে পারে কি না পারে।"
মানসীর মা আঁতকে ওঠে, "ওরকম অলুক্ষুণে কথা বল না। মেয়েটা লগ্নভ্রষ্টা হলে কী ভালো হবে!"
কিন্তু না, শিবেনের আশঙ্কা ঠিক হয়নি। বৃষ্টি দেখে বিকেল বেলাতেই তিনখানা গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী এসে হাজির। বেচারি সাবুল, একেতে গরীব মানুষ, এত তাড়াতাড়ি বরযাত্রী আসায় বড় বিপদে পড়ে গেল। চা, বিস্কুট, জলখাবারের খরচা একটু বেশি পড়ে গেল। তাছাড়া বসতে দেবে কোনখানে এই ভেবেই তো মাথাখারাপ অবস্থা! কিন্তু উপায় তো নেই! অন্ধকারে রাত্রিবেলা পাত্রপক্ষের পক্ষেও বিয়ে করতে আসাটা দুরূহ কাজ।
 এই ঝড়-বাদলে বিয়ে বাড়ি যাবে কী যাবে না এই দোনোমনা করতে করতেই মানসীর মা বলে, "ক'টা চাল ভেজে, দুপুরের সব্জি, আর চা দিয়ে খাই, বিয়ে বাড়ি আর যেতে ইচ্ছে করছে না, ভোর ভোর সময়ে বৃষ্টি কমলে শাড়িটা দিয়ে আসা যাবে।"
শিবেনেরও মনে হল সেরকমই ইচ্ছে। এমন সময় বাইরে খুব হাঁকডাক শোনা যেতে লাগল। এই বৃষ্টিতে কে এল। এই পাড়ায় শিবেন একটু অবস্থাপন্ন লোক। গোটা বাড়িটা বাঁশের ফালির তৈরি বেড়া দিয়ে ঘেরা। সামনে একটা দরজা। তবে আজকে আলসেমিতে দরজা লাগানো হয়নি, তাছাড়া বিয়ে বাড়ি যেতে হবে এরকম ভাবনাও একটা ছিল। হাঁকডাকে শিবেন অস্থির হল, ডাকাত টাকাত নয় তো? গন্ড গ্রাম বলেই হয়ত, একটু জোর বৃষ্টি হল কি খুব শীত - কারো না কারো বাড়িতে ডাকাতির খবর শোনা যাবে আর যাবেই। শিবেনও মনে মনে সতর্ক হয়। গতমাসেই পাশের গ্রামে ডাকাতি হল। ওই বাড়ির বুড়োটাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গেছে কাঁধে। সদরে নিয়ে যেতে হয়েছে চিকিৎসা করাতে। মেলা টাকার খরচ। এদিকে ডাকাতিতেও সর্বস্বান্ত অবস্থা। কী হল, পুলিশ এল আর গেল। লাভের মধ্যে পুলিশের খাতিরদারী করতে গিয়ে আরো কিছু গচ্চা গেল।  শিবেন তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ছাতা মাথায় তিন চারজন লোক উঠোনে ঢুকে পড়ল। শিবেনে বুকটা সঙ্গে সঙ্গে দুরু দুরু করে উঠল। ফট করে ঘরে ঢুকেই কপাটের কোণায় রাখা বল্লমটা নিয়ে রুখে দাঁড়াল। এমন সময় বিষাদু ডেকে উঠল, "দাদারে, আমরা, আমরা। একটা পরামর্শের জন্য এসেছি।"
পাশ থেকে সাবুল শুধরে দেয়, "পরামর্শ আর কী, বল সাহায্যের জন্য এসেছি।"
বলতে বলতেই ভেজা পায়ে কাঁচা বারান্দায় উঠে এল সবাই। সাবুলকে দেখে শিবেন অবাক হয়। "কিরে, কী সমস্যা? সব যোগাড় হয়নি?"
সাবুল এবার কেঁদে ফেলে। "সাইকেলটা পরে দিব বলে ঘটককে দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলাম। তখনকার মতো হবে বলেছে। এখন ছেলের মামা এসেছে বরকর্তা হয়ে। সাইকেল না দিলে বিয়ে হবে না বলে দিল। দাদারে, তুই এখন আমার মেয়েটাকে বাঁচা।" বলেই সাবুল ওই জলকাদার মধ্যেই শিবেনের পায়ের কাছে সোজা শুয়ে পড়ে। শিবেন তটস্থ হয়ে সরে গেল। আমতা আমতা করে বলল, "টাকা চাইলেই কী হঠাৎ করে পাওয়া যায়! এতগুলো টাকা এখন আমি কোথায় পাই!" টাকা আছে এটা ওরা জেনেই এসেছে। কিন্তু তবু প্রথমে কেউ কিছু বলে না, চুপ করে থাকে। শিবেনের পরের কথার জন্যই হয়ত অপেক্ষা করে। কিন্তু শিবেনও আর কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। আসলে আগের হাটে শিবেন একটা গাই বিক্রি করেছিল। সে টাকাটা ওর কাছে আছে এটা সবাই জানে। কিছুতেই বাচ্চা হচ্ছে না গাইটার। এত ঝাড়-ফুঁক, কবিরাজী ঔষধ, কিছুতেই কিছু হল না। গরুটার কোনো সমস্যাও নেই। সবাই বলছে 'তোকে ধারে নাই। হাত বদল হলে ঠিক হবে।' তা সেটাও করা হল। শিবেনের হাত থেকে শিবেনের বৌয়ের হাতে তুলে দিয়ে কিছুদিন দেখল। তারপর ওর মেয়েকে, ছেলেকে। সবাইকেই একবার করে দেওয়া হল। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। অবশেষে আগের হাটে গাইটা বিক্রি করে ঠিক করল একটা হালুয়া কিনবে। একটা আছে। আর একটা কিনে জোড়া করবে। সেদিন পায়নি কারণ গাইটা বিক্রি করতেই সন্ধ্যা পাড়। তখন আর গরু দেখবে কোথায়! হাট ভাঙার পথে। সে গরুটা বিক্রি করতে বুকে বড় কষ্টও হয়েছিল। সেজন্য আর কোনোদিকে না তাকিয়ে সঙোজা বাড়ি এসে শুয়ে পড়েছিল। খায়ওনি আর রাতে। সে টাকাটা এভাবে কোথাও দিয়ে ফেলে কি করে নষ্ট করে শিবেন!
শিবেনকে নিরুত্তর দেখে সবাই এবার মানসীর মা-কে ধরে। "বৌদি, তুমি বল। তুমি বললেই দাদা রাজী হয়ে যাবে।"
মানসীর মা ও হতবুদ্ধি হয়ে যা। কী বলবে! টাকাটা গেলে তো সংসারেরই যাবে। ওদিকে মেয়েটার বিয়ে হবে না, ক'টা টাকার জন্য আটকে যাবে সেটাও তো হতে দেওয়া যায় না। সাবুল নিজে ফেরিওয়ালা। সাইকেলের পেছনে একটা বাক্স বেঁধে সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়, "লাগবে চুড়ি মালা ফিতে দুল? মায়েরা, বোনেরা, দিদিরা, লাগবে? তার আয় আর কতটুকু? সামান্যই। সে আয়ে মেয়ের জন্য রাজপুত্র ধরে নিয়ে আসা যায় না। ওর মতোই আর এক ফেলিওয়ালা ছেলেকেই জামাই পছন্দ করেছে সাবুল। ছেলে দেখতেও তেমন দেখনদার নয়। মেয়েকে বুঝিয়েছিল, "পুরুষ মানুষের আবার রূপ কী! ওদের কামাইটাই হল আসল। ছেলেটা বাড়ি বাড়ি ডিম কিনে পাইকারের কাছে বিক্রি করে। সারাদিন খাটে। পরিশ্রমী আছে। আর কী চাই!"
মেয়ে বুঝেছিল। কোনো প্রশ্ন করে নাই। খুশিমনেই বিয়ে করতে রাজী হয়েছিল। সে মেয়ে এখন কেঁদে ভাসাচ্ছে। মেয়ের মা ঘন ঘন ফিট হচ্ছে। মেয়ের দিদাও এসেছে। তিনিও কিঁদছেন আর মেয়ের মাথায় তেলজল ঢালছেন। বরযাত্রীর লোকজনের মধ্যে অবশ্য অনেকেই প্রতিবাদ করছে। কেউ কেউ বলছে এরকম জানলে আসতই না। সামান্য একটা সাইকেলের জন্য বিয়ে আটকে যাচ্ছে।
মানসীর মা মুখে সেরকম কিছু বলে না। শুধু একটা ডাক দিয়ে বলে, "মানসীর বাপ, মেয়েটার বিয়ে আটকে গেলে তো গোটা পাড়াটার অসম্মান। কিছু তো বল।"
তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমরা কিছু দেই, আরো দু'একজনকে বল, সবাই কিছু কিছু দিলেই না উঠে যায় টাকাটা।"
এটা আসলে কথার কথা। বিয়েতে পাড়ার সবাই কম-বেশি সাহায্য করেছে। এখন আর কেউ সেরকম কিছু দিতে পারবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া এই বৃষ্টিতে বাড়ি বাড়ি যাওয়াও সম্ভব নয়। সেজন্য পরিস্থিতিটা সবাই একটু আলোচনাও করে নিল। সবশেষে ওই একটাই কথা, "দা'রে, তুইই এখন বাঁচাতে পারিস সাবুলটাকে।" অগত্যা! শিবেন উঠে কোমরের ডুরিতে বাঁধা ছোট্ট একটা চাবি ঘুরিয়ে কাঠের পুরনো আলমারীটা খোলে। টাকাটা হাত পেতে নিতে নিতে সাবুল আর নিজেকে সামলাতে পারে না, হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri