সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 427

শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-১৪
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

গাউরটিকে বনের ভিতর একটি জলাজায়গার কাছাকাছি নামানো হয়েছে। কারণ ঔষধের আচ্ছন্নতা কেটে গেলে জল পিপাসা মেটাতে গাউর যেন কাছাকাছি জল পায়। গাউরটিকে বাঁ কাৎ করে শোয়ানো এবং পায়ের সব বাঁধন এখন খোলা। ঔষধের বাঁধন আলগা হলেও মনের ও শরীরের উপর থেকে কেমিকালের প্রভাব সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয়নি। মাঝেমধ্যে কান নাড়া দিচ্ছিল। চোখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গাড়ি থেকে নামানোর পর গাউরের শরীরে জল ঢালার জন্য শরীরের কোথাও কোথাও লোমগুলো চামড়ার সাথে লেপ্টে রয়েছে। ট্রাংকুইলাজিং করার পর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঝমাঝে শরীরে জল ছিটাতে হয়। সব কাজ সবাই মিলে শেষ করে যে যার গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে- কখন গাউরটি সম্পূর্ণ জেগে ওঠে। পশুচিকিৎসক নিজের ঘড়ি দেখছেন বাঁচন ( Revival)ঔষধ দেওয়ার কত মিনিট হল। সবাই এত চুপচাপ যেন ধ্যানযজ্ঞ চলছে। চাঁদের আলোতে অসংখ্য জানাঅজানা পতঙ্গের ডাক আর বুনো হাওয়া বয়ে যাবার জন্যে গাছের পাতার সরসর শব্দ যেন নিসর্গ তানপুরার সংগত। সবাই যেন তাদের বিশ্বাসের শক্তিকে ডাকছে – “গাউরটিকে বাঁচিয়ে দাও”। গাউরের পেট হাপরের মত উঠছে-নামছে। উপরের দিকের সামনের ও পিছনের পা দুটি মাঝেমধ্যে ঝাড়া দিচ্ছিল। 

বিকাশের গাড়ী এসে ক্যাঁচ করে থামতেই গাউরটি এক ঝটকায় উঠে বিকাশের গাড়ীর দিকে ছুটে যায় এবং গাড়ীর সামনে থেকে ডানদিকের বনে নিমেষে মিশে যায়; কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে। বনকর্মীদের কেউ কেউ বলে ওঠে – স্যার, আপনার জন্যে মনে হয় গাউরটি অপেক্ষা করছিল। আপনি আসামাত্র উঠে ছুটে গেল; তারপর বনে মিশে গেল। বিকাশ জানে গাউরের এইভাবে হঠাৎ উঠে বনে চলে যাবার বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। ট্রাংকুইলাজেশন পরবর্তী দেখভাল বনকর্মীরা খুব ভালভাবে করেছিল। গভীর নির্জনতায় বুনো পরিবেশে ক্লান্ত দুর্বল গাউরটি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিল- যেমন শিশু ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের কোলে। বিকাশ ভাবে – রবির এত শব্দ করে গাড়ী থামানো ঠিক হয়নি। তবে সে যাইহোক গাউরটি নিজের চোখের সামনে উঠে বনে যেভাবে মিশে গেল তাতে মনে হল গাউরটি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। কোন একটি গাউরকে ট্রাংকুইলাজিং করার সময়কার কর্মকাণ্ড এবং গাউর পরিবহণ গাড়ীতে নামানো-ওঠানোর সময় নানা প্রতিকূলতা দুর্বল চিত্তের গাউরের বাঁচার আশাকে ক্ষীণ করে দেয়। কিন্তু আজ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। কত কী ঝামেলার পরও গাউরটি সুস্থভাবে বনে ফিরে গেল। বিকাশ ভাবে বড় বাঁশঝাড়টি না থাকলে কী যে হত। ভালো ব্যাক্টোরিয়া থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত তাঁর নিজের বাসস্থানে ( Habitat) থাকলে কত নিশ্চিন্ত মনে থাকে। অবশ্য খারাপ ব্যাক্টোরিয়া আর খারাপ মানুষের কথা আলাদা। বনে গাউরটি ফিরে যেতেই নিলয় গাড়ী থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যায়। নিলয়কে ধরতে গিয়ে তাপস নিজেও পড়ে যায়। এতক্ষণ নিলয় বুঝতেই পারে নি যে ক্ষ্যাপা মানুষের বিনা কারণের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালাবার সময় ওর পায়ের গোড়ালি মচকে গিয়েছিল। তাপস বুঝতে পারে নি যে তার ডানহাত কাজ করছিল না। ব্যাথায় কখন অবশ হয়েছিল বুঝতে পারেনি। কে যে কখন কী ভাবে কোথায় আঘাত করেছিল কিছুই মনে করতে পারে না।  ট্রাংকুইলাজিঙ্গের সময় কে কখন কীভাবে বিনা কারণে আঘাত পাবে কেউ জানে না। এই এক অদ্ভুত ব্যাপার। অজানা অচেনা যায়গায় অজানা আক্রমণকারীদের আক্রমণ বনকর্মীদের কেমন যেন গা সহা হয়ে গেছে। গাউর বনে ফিরে যেতেই ওদের সবার মনে ফুরফুরে হাওয়া বইছিল। ব্যথাবেদনা ভুলে মন ভাসছিল শিমূল তুলোর মত। বিকাশ সবাইকে সাবাসি দিয়ে- নির্মলবাবুকে বলেন-
- অফিসে ফেরার পথে নিলয় ও তাপসকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাবেন। 
- ঠিক আছে স্যার।
- হ্যাঁ।যাবার পথে যেখানে লাইন হোটেল পাবেন খেয়ে নেবেন। আমি অফিসে ফিরছি। দেখি আবার কী খবর আসে।
বিকাশ ভাবে কত রাতে এইভাবে লাইন হোটেলে খাবার খেয়ে কেটে যেত সময়। ঘরের খাওয়া নষ্ট হয়েছে কতদিন। সকালে অপরূপার দলাখাওয়া শরীরে ও মনে যে শক্তি দিয়েছিল তা এখন তলানিতে। বিকাশের পিপাসা পায়। অপরূপার দেওয়া বোতলের জল দিয়ে গলা ভেজায়- প্রাণ যেন জুড়ায়। এতক্ষণ গাউরটির জন্যে মন কেমন করছিল।বিকাশের কেন যেন প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল আজকের গাউরটি বেঁচে যাবে। শেষপর্যন্ত গাউরটি বাঁচল। এর থেকে বড় আর কী হতে পারে। এই মন জানাজানির ( telepathy ) কোন ব্যাখ্যা হয়না। যার ক্ষেত্রে এই মন জানাজানির বিষয়টি ঘটে যায় সে শুধু বুঝতে পারে। বিকাশের মনে পড়ে মন জানাজানির কত ঘটনা। মনে পড়ে অপরূপার সাথে কলেজে প্রথম দেখার কথা। মনে পড়ে মাধুরীর কথা। অল্প অবকাশে মনের মানুষের দেওয়া চিহ্ন-স্পর্শ মানুষকে যে তাঁর প্রিয় মানুষের কাছে নিয়ে যায়। তারপর সাথে যদি থাকে মাধুরীর মত অনুঘটক। একাদশ শ্রেণী বিজ্ঞান বিভাগ। বিকাশের কাছে আতরদানি। সবকিছুই ভালো।
- বিকাশ দ্যাখ।
- কী?
- ঐ যে মেয়েটি আসছে।
- দারুণ তো।
- কী
- পারুল ফুল।
বিকাশ কেন পারুল ফুল বলেছিল তখন কিছুই জানতো না। গোলাপ না, পদ্ম না, পারুলফুল। উদ্ভিদবিদ্যার দিকে ঝুঁকে যাওয়া বিকাশ কেন পারুল ফুল বলেছিল বুঝতেই পারেনি। যাষ্ট বলে ফেলেছিল। সেটা শুনে মাধুরী হেসে উঠেছিল খিলখিল করে। অপরূপা যখন বিকাশ মাধুরীকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল মাধুরী বলে - 
- পা-রু-ল---
অপরূপা ফিরে তাকায় বিকাশদের দিকে। বিকাশের মনে হয় একটা ঢেউ এসে ভেঙে পড়ে ওর ওপর। বিকাশ প্রথম অনুভব করে ঢেউ ভাঙলে ঢেউ চলে যায় না। একটা ঢেউ ভাঙলে কতশত ওঠে মনে।  বিকাশ বলে-
- আমি বিকাশ।
মাধুরী দুই পা এগিয়ে এসে বলে-
- আমি মালার সুতো- মাধুরী। আমি ও বিকাশ বায়ো-সায়েন্স। তুমি?
- আমি পিওর সায়েন্স।
বিকাশ তখন বুঝতে পারেনি সে কীভাবে অপরূপার কাছে সবসময়ের জন্য পিওর হয়ে উঠেছিল। বিকাশের মাঝেমধ্যেই অপরূপার জন্য মনজানাজানি প্রকট হয়ে উঠত। বিকাশ বলত- মাধুরী দেখবে পারুল আজ কলেজে আসবে না। অপরূপা সেদিন ঠিক কলেজে আসতনা। কোনদিন বলতো- জান মাধুরী, আজ পারুল গোলাপি শাড়ি পরে আসবে; সেদিন অপরূপা গোলাপি শাড়ি পরেই আসত। আড়ালে গোপনে বিকাশ অপরূপাকে পারুল বলে ডাকে। গোপনে বিকাশ অপরূপাকে আরো কী ভাবত তা মাধুরী বুঝতে পারে- মাটিতে ঝরা ফুল দেখে গাছ চেনার মত। মাধুরী ছোটবেলা থেকে বিকাশকে চেনে আমগাছ- কাঠালগাছের মত। বিকাশ মাধুরী কতদিন ডালিম ফলে লেগে থাকা ফুলের গর্ভকেশর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করেছে একসাথে। কিন্তু কেন যেন ফল তোলার কথা মনে হয়নি কখনো। ওদের সময় কাটতো কঁচি কাঠালপাতা আর কাঁচাআম পাড়তে।  নির্জন দুপুরে ঘুঘু যখন ডাকত- ওরা কাঁচাআম-কচিকাঁঠালপাতা খেত নুনলংকা দিয়ে। কিন্তু পারুলগাছ ওদের কল্পনা। পারুলের মত কত কী কল্পনা কত কথা হাওয়ার মত ঘুরপাক খায়। সব হাওয়া ঝড় হয়ে ওঠেনা। মৃদু- মন্দ বয়ে চলে। মাধুরী কিছু বলে না।বিকাশের মনে পড়ে কেমেস্ট্রি প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের কথা। বিকাশ কিছুতেই ট্রাইট্রেশনে উজ্জ্বল গোলাপি রঙ আনতে পারছে না। কপালে ঘাম জমছিল। তখন অপরূপা ঝুঁকি নিয়ে অন্যায়ভাবে বিকাশকে আড়ালে সাহায্য করে। অপরূপা ট্রাইট্রেশনে গোলাপি রঙ দ্যাখে। বিকাশ অপরূপার ফর্সা গালে গোলাপি রঙ দ্যাখে। সেই গোলাপি রঙ লেগে থাকে জীবনে; বাড়ির আমগাছে বনের গাছে গাছে। বিকাশের মনে পড়ে প্রথম যখন বনে সত্যিকারের পারুল গাছ দেখেছিল সেইদিন বিকাশের মন কত রোমাঞ্চিত হয়েছিল। 

পারুলগাছ শালসিঁড়ির সাথী। একদিন বনে হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়িয়ে পড়ে বিকাশ। রাস্তায় পড়ে রয়েছে গোলাপি রঙের হলুদঠোঁটের ছোট ছোট ফুল। যে গাছটির নীচে ঐ ফুল পড়েছিল সেই গাছটিকে দ্যাখে বিকাশ।ভাবে এই সেই পারুলগাছ! কত ভাবনা ছিল এই গাছকে নিয়ে। জানতে পারে গাছটির কাঠ খুব শক্ত। গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যায় মানুষ গৃহপালিতের খাদ্য হিসাবে।কাঠ হিসাবে কেউ তেমন ব্যবহার করে না। কতগুলো নেড়া পারুল গাছ দেখে বিকাশের মন খারাপ হয়ে যায়। ভাবে পারুলরা কী এমনই হয়! নিজের সমস্ত ডালপালা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একা! শালসিঁড়িরদেশ এমনই নিঃস্বার্থত্যাগী। দিয়ে যায় কত কিছু। 
বিকাশের মন কেমন করছিল অপরূপার জন্য। মন কেমন করে শালসিঁড়ির জন্য। গাছে গাছে মনখারাপের পাতা ঝরে আনন্দের পাতা গজায়।  বিকাশ ভদ্রাসির ফল খায় জলপাইয়ের মত। ময়না গাছে ময়নাপাখি ধনেশপাখির ছেড়ে যাওয়া গাছের কোটরের নীড় হাওয়ায় বাঁশি বাজায়। শিমূলফুলে বেনেবৌ সোনাবৌ মন কষাকষি করে। বুলবুলি ফিঙ্গেরা ঝগড়া করে। ভিমরাজের ল্যাজে কে যেন ঘুড়ি ওড়ায়। শাল চাপ চিক্রাসিরা ডালে ডালে কথা বলে। হাতিপাইলা গাছ হাতির পা পাতায় ধরে রাখে।সেই গড়ে বসে সম্বর খায় শালগাছের গায়ে বেড়ে উঠা পান আমলকি দিয়ে। সেই পান খেয়ে শালসিঁড়ি যেন হাসে ঠোট লাল করে ওদালফল চিরে। রাতে ফিসিংআউল বসে থাকে নদীর পাড়ে;মাছ ধরে ডিনার সারে। চিতাবাঘ গাউরের বাচ্চা শিকার করতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে গাউরের গড়ে। হাতি ব্রেকফাস্ট সারে চালতাতলায় হাতির আপেল খেয়ে। কানাইডাংগা যেন তরবারি তুলে রক্ষা করে শালসিঁড়ির গড়।এইভাবে বিকাশ কতদিন কত রাত বনে বনে হাঁটে; কত কী দ্যাখে- বসে থাকে বনে;শাল সিঁড়ির দেশে। কখনো সে রক্ষক কখনো সাধক। বন কর্মভূমি- পূণ্যভূমি। সারপেন্ট ঈগল সাপ খায় -সাপ ব্যাঙ - ব্যাঙ পতঙ্গ খায়। ভাবে বন যেন জীবনমরনের নগরদোলা। বিকাশ বনে বনে নাগরদোলার মত ঘুরপাক খায়। বিকাশকে বনে পায় কখন কীভাবে বিকাশ জানেনা।  অপরূপার মত বনের সাথেও বিকাশের মনজানাজানি হয়। বিকাশের মনে পড়ে একদিন রাতে ও ঘুম থেকে উঠে পড়ে। অপরূপার ঘুম ভেঙে যায়; অপরূপা বলে
- কী হলো?
- বনে যাবো
- এখন???
- হ্যাঁ।
- কেন
- আমার বনে যেতে ইচ্ছে করছে। 
- কই, কোন তো খবর আসেনি; কেউ তো ডাকেনি ; তাও এতরাতে কেন বনে যাবে। 
- কেন যেন মন ডাকছে। কিছু একটা হচ্ছে। 
সেদিন অপরূপা বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়েছিল। বিকাশ ঘরের বাইরে তালা বন্ধ করে; কয়েকজন স্টাফ সাথে নিয়ে চলে যায় বনে। বসে থাকে নদীর পাশে বনের ভিতরে চুপচাপ। রাতের ঝিঁঝিঁপোকার ডাক রাতকে করে তুলছিল আরও মোহময়ী। মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠছিল জোনাকিপোকা নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতা নিয়ে। পাতার মচড়মচড় শব্দ জানান দিচ্ছে যে তখনও শিকারি শিকার করতে পারেনি রাতের খাবারের জন্যে। বিকাশের মনেহয় এই বন বড় বিচিত্র। বন সভ্য সমাজকে জীবনের নিশ্চয়তা দিলেও বনের আবাসিকদের  খাদ্য সহজলভ্য করে দিতে পারে না। খাদ্য আছে খেতে পারলে খাও; নাহলে যাও; কেউ মুখে তুলে দেবে না। ক্ষুধার্ত শিকারির কেমন লাগে বিকাশ জানে না । কিন্তু বিকাশের খুব ভালো লাগে।  বিকাশের মনে পড়ে ও একবার শুয়েশুয়ে অপরূপাকে আদর করতে করতে বলেছিল-
- রাতের আলো দেখেছ?
- সে আবার কী! 
- রাতে যে আলো থাকে সেটা।যে আলো দিয়ে বুনোরা রাতে দেখতে পায়; সেই আলো।
- রাতে বুনোরা দেখতে পায়?
- নিশ্চয়পায়। তা নাহলে শিকারি শিকার ধরবে কী করে। তবে ওরা সাদাকালো দ্যাখে। 
- তুমি দেখতে পাও?
- রাতে আমিও বনে দেখতে পাই; শুনতেপাই…
হঠাৎ বনে গাছপড়ার শব্দ ভেসে আসে। বনে গাছ কাটার পর মাটিতে পড়ার সময় যে শব্দ হয়, সেই শব্দ কী কষ্টের কী মর্মান্তিক সেটা যে কোনদিন শোনেনি সে বুঝতেই পারবে না। একটি মানুষ খুনে একটা করুণ “মা” ডাক শোনা যায়। কিন্তু একটা গাছ কাটার পর মাটিতে পড়ে যাবার সময় কতশত মা-কান্না-মড়মড়কড়কড়ঝরঝর শব্দ করে ভেসে আসে তা বলে বোঝানো যাবে না। এই শব্দ বনকর্মীদের উন্মাদ উন্মত্ত পাগল করে দেয়। তিনচারজন বনকর্মী পাগলের মত ছুটে যেতে চায় যেখানে গাছ পড়েছে সেই দিকে। বিকাশ বলে –
- দাঁড়াও
- স্যার,যাই ধরি।
- দাঁড়াও। একটু বুঝে নিই ব্যাপারটা।
গাছ পড়ার পর দুষ্কৃতিরা হেঁড়ে গলায় গান ধরেছে- আর মাঝেমধ্যে গাছটিকে টুকরো করার শব্দ ভেসে আসছে। ভেসে আসছে কিছু কথাবার্তা…
- আর একটা ফেলিমো।
- নানা গে। গছটা অনেক বড় মোটা আছে।
- হুম, চাইর লগ কইরলেও শেষ হবার নহে…
দুষ্কৃতিদের চালচলন আন্দাজ করে মনে হচ্ছে সংখ্যায় ১৫ থেকে  ২০ জন হবে। বিকাশরা ৫ জন। বিকাশ বলে 
- না, এখন ধরা যাবেনা।
- কেন স্যার? দুটো বন্দুক আছে। বিপদ হলে গুলি করব। 
- না। রাতের অন্ধকারে একটি প্রাণ চলে গেছে। আর প্রাণ যাক আমি চাইনা। 
- কি করব স্যার?
- চল, চুপিসারে আমরা ওদের এক্‌জিট পয়েন্টে বসে থাকি। ধৈর্য ধর। দিনের আলোয় যা করার করব। 
রাগ-আক্রোশ-উন্মাদনা হল আগুন। ধৈর্য হল লোহার কড়াই। আগুনে কড়াই জ্বলে গেলে খাদ্য রান্না হবে কীভাবে। বিকাশ জানে এটাই বাস্তব। আহত শালসিঁড়ি যত দেখবে ট্রাংকুইলাইজড গাউরের মত ওদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে কিন্তু পুড়ে গেলে চলবে না। কিন্তু কখনো কখনো হড়কা বানের মত কত কি ঘটে যায়। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। বিকাশের মনে পড়ে কাবুর কথা…
কাবু বনরক্ষী। বনরক্ষায় সৎ ও নির্ভীক। একদিন বিকালে ওর চার সহকর্মী নিয়ে বন টহল দিচ্ছিল। টহল দিতে দিতে মুখামুখি হয় বনলুটেরাদের সাথে। বনলুটেরা সংখ্যায় অনেক বেশী হবার জন্য কাবুর আদেশ অমান্য করে গাছ কাটতে থাকে। কাবু আবার আদেশ দেয়-গাছ কাটা বন্ধ না করলে গুলি করতে বাধ্য হবো। গুলি করার কথা শুনতেই দুষ্কৃতিরা রে রে করে ছুটে আসে কাবুর দিকে; হাতে খোলা তরবারি খুকরি লাঠি নিয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় অরাজক অসমযুদ্ধ। কাবু শক্ত করে ধরে রাখে তাঁর সরকারী ১২ বোরের দোনলা বন্দুক। দুষ্কৃতিরা চেষ্টা করতে থেকে কাবুর হাত থেকে বন্দুকটি ছিনিয়ে নিতে। সেই তীব্র টানাটানিতে কাবুর বন্দুক থেকে গুলি বেরিয়ে পড়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। সেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় এক দুষ্কৃতীর বুক। গুলির আকস্মিকতায় ঘাবড়ে যায় সব দুষ্কৃতী। পালিয়ে যায় এদিক ওদিক। পড়ে থাকে এক নিথর লাশ। তারপর পুলিশ আসে ; মানব অধিকার আসে; অফিস ভাঙচুর হয় কত মানুষ কত কী বলে বিকাশদের – পরিস্থিতি না বুঝে। প্রশ্ন ওঠে কে বড় মানুষ,না গাছ… এই প্রশ্নের উত্তর এখনও খোঁজে বিকাশরা। সুনীল রাতের অন্ধকারে বসার জায়গা খুঁজে চুপিচুপি বলে –
- স্যার, ঐ ময়নাগাছের নীচে বসি। গাছটার অনেক বড় পাঙ্খা আছে।
- তাই চল।
রাতের আলোয় দ্যাখা যায় দুষ্কৃতিরা কাঠের লগ চারজন মিলে কাঁধে করে নিয়ে নিয়ে নদীর পাড়ে রাখে। বিকাশরা পুব আকাশ দ্যাখে ,কখন রাতের আলো ঠেলে দিনের আলো ফুটে উঠবে। আজকে রাতের আলো বড় ভয়ানক। পুব আকাশ দেখে মনে হয় ভোর হতে আর বেশী দেরি নেই। মাংসাশীরা বেরিয়ে পড়বে শিকারের খোঁজে। সুনীল ফিসফিস করে বলে-
- স্যার, দেখুন সাপ; আমাদের ময়নাগাছের গা বেয়ে ওপরে উঠছে। কী ভয়ঙ্কর!
বিকাশ দ্যাখে একটা সাপ ময়নাগাছটির ওপরে পাখির কোটরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয় পাখির ছানা শিকার করবে। আলোআঁধারে সাপটিকে চিনতে পারেনা। বনের কত কিছু চেনা যায়না। সাপটি ওদের গায়ের পাশ দিয়ে গেল; ওরা বুঝতে পারলো না। বনের এই এক অমোঘ নিয়ম। শিকারি শুধু শিকার দ্যাখে আর কিছু দ্যাখে না। বনে যে আগে পজিশন নেয় সেই জিতে যায়… বিকাশ জানে। বিকাশ ফিসফিস করে বলে-
- সবাই শোন; আমি যখন হুম বলব সবাই এক সাথে হল্লা করবে- তীব্র স্বরে। আর তক্ষনি সুনীল একবার আকাশে গুলি ছুড়বে। দেখবে কি হয়!
যেমন আদেশ তেমন কাজ। বিকাশ ‘হুম’ করতে সবাই একসাথে গগনভেদী চিৎকার আর সাথে সাথে সুনিল আকাশে একবার গুলি ছোড়ে। ঘটনার আকস্মিকতা ব্যাপকতা ও ভয়ানকতায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কাঠচোরেরা এদিক সেদিক পালিয়ে যায়। ধৈর্য ও বুদ্ধিতে বিকাশরা জিতে যায় এক অসম লড়াই। বিকাশরা যখন  সব কাঠ নিয়ে ঘরে ফেরে তখন সবাই দুপরের খাওয়ার আয়োজন করেছে। বিকাশ তালা খুলে ঘরে ঢুকে বাথরুমে যায়। অপরূপা কথা বলে না অনেক্ষণ-অভিমানে। হিরামনি সেদিন কাজে ঢোকে পিছনের দরজা দিয়ে…
এইরকমের নানা কথা মনে পড়াতে বিকাশের মন আজ যেন বেশী কেমন কেমন করছে। মন জানাজানির এই এক জ্বালা। বিকাশের মনে হয় ঘরে কী কোনকিছু ঘটল। হাতে ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে; বুঝতে পারেনা এতরাতে ফোন করবে কিনা অপরূপাকে। যদি অপরূপা ঘুমিয়ে পড়ে- কী লাভ কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে, ওতো আজ আর ঘরে ফিরবে না। নানা ভাবনায় ফোন করা হয়না ; রাতের রাস্তায় গাড়ী এগিয়ে চলে অফিসের দিকে…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri