সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
16-December,2022 - Friday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 519

তিস্তাবাথান-১৪

তিস্তা বাথান
পর্ব-১৪
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
^^^^^^^^^^^^^

গত রাতেও টাকীমারির চরে বাঘের কান্না শুনে ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়েছিলেন ইউনুসদা। একটা হ্যারিকেন জ্বেলে ঝুলিয়ে দেন বাথানের শোবার ঘরের বাইরে। এই আলো দেখলে বাঘ এমুখো হবার চেষ্টা করবে না। খোলা আকাশের নীচে বেড়ি বাঁধা মহিষেরা সুরক্ষিত থাকবে। তারপর ঝড় এল, বৃষ্টি এল, রাত কেটে ভোর হল। বাথান থেকে মিটার পঞ্চাশ দূরে দুলতে থাকা হোগলার বনে মুখ বের করে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি হরিণ। শিং রয়েছে তার। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছে ইউনুসদার দিকে। কুকুরেরা দলবদ্ধভাবে ছোটে তার পেছনে। আটক করে ফেলে হরিণটিকে। ছুটে যান ইউনুসদা তার দুই মৈষাল। আহত হরিণটিকে ধরে এনে বেঁধে রাখেন বাথানের পরুর ঘরের খুঁটিতে। গোছা ঝুলিয়ে দিতেই অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে আটক হরিণটি। 

বৃষ্টি তার ঘনত্ব বাড়িয়ে চলে। ঝোড়ো হাওয়া পাগলের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে এপাশ থেকে ওপাশ। ঝড়বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণই নেই। বেলা দুটোর দিকে নদী ছাপিয়ে জল প্রবেশ করে বাথানের ঘরে। অতিবৃষ্টিতে ঘরের ভেতর এই জল ঢুকে পড়াটা তিস্তাচরের অতি সাধারণ এক বিষয়। তাই মোটেই বিচলিত হন না ইউনুসদা ও তার বাথানের রাখালেরা। চারটে বাজতে বাজতে ঘরের ভেতর জল হয়ে ওঠে এক হাঁটুর থেকে বেশি। বৃষ্টি ঝড় চলছে অনবরত। এবার কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে ইউনুসদাদের। বাইরে গুমোট-কালো আকাশ, ঝোড়ো-হাওয়া আর অবিরাম-বৃষ্টির দলবদ্ধ এক অশুভ সংকেত।  ভাবিয়ে তোলে তাঁদের। হরিণের পায়ের দড়ি খুলে মুক্ত করে দেন তাঁরা। পরিবেশের রক্তরাঙা চোখকে ভয় পায় একলা হরিণ। জল পেরিয়ে সে আর ছুটে যেতে চাইছে না নিজ আস্তানায়। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বাথানের উঠোনে। হঠাৎ আকাশফাটা গর্জন। বড্ড ভীত হয় সে। প্রাণভয়ে ছুটে পালায় সামনের হোগলা বনের দিকেই।

বিকেল পাঁচটা। ঘরের জল বেড়ে চাংরি ছুঁই ছুঁই। খাওয়া দাওয়া তারাতারি সেরে নেন মৈষালেরা। পরুর ঘরের দরজার বাঁশের ঠেগা সরিয়ে দেন। মহিষ শাবকেরা প্রাণভয়ে গলা জলে বাইরে বেরিয়ে আসে। চাংরি খুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওপরে তোলা হয়। মুখমারা চাউলের টিনটিকে চাংরির ওপরে তোলেন ইউনুস দার কাকা(মৈষাল বন্ধু)। ঝর-বৃষ্টি আর জল কমবার আশায় সেই চাংরির ওপর বসে সময় গুনতে থাকেন তাঁরা। এদিকে জল বেড়ে চলে ক্রমাগত। মহিষ শাবকেরা(পরু, বখনা) চোখের সামনেই এক এক করে ভেসে গেছে আগেই। এবার জলের তোড়ে ভেসে যায় সব বড় মহিষেরা। বড় বড় কাঠ ভেসে এসে ধাক্কা মারতে শুরু করে বাথানের ঘরগুলিতে। পরুর ঘর ও রান্নাঘরকে খরকুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায় ফোলা-তিস্তা। শোবার ঘরটিকেও বড় কয়েকটি কাঠের লগ এসে সজোরে ধাক্কা মারে। হেলে যায় তাঁদের আস্তানা। ঘর থেকে জলের তোড়ে এক এক করে বেরিয়ে যেতে থাকে বাথানের সাজসরঞ্জাম। ভেসে যায় অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র ভরে রাখা বড় কাঠের বাক্সটিও। আর ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। ঘরের ভেতর ছাপা (চাপা) পরে তাঁরা আটকে যেতে পারেন। এই ভয়ে চাংরি থেকে নেমে পরেন তাঁরা।গায়ের জামাকাপড় সব খুলে ফেলে দেন। শুধু গামছাটুকু শরীরে রেখে গলা সমান জলে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন রাত বারোটার মত হবে বলেই জানিয়েছেন ইউনুস দা। 

সুতীব্র স্রোত বইছে তখন ভয়াল তিস্তার বুকে। চারিদিক ঘন কালো অন্ধকার। আকাশ ফুটলে দেখা যায় চারিদিকে শুধু জল আর জল। প্রচুর কাঠ ভেসে যাচ্ছে চারপাশ দিয়ে। ভেসে যাচ্ছে মানুষ, ভেসে যাচ্ছে গরু, ছাগল, মহিষ। চারিদিকে চিৎকার। 'বাবারে, বাচাওরে, এমা, এবাবা ওঠাওরে'। তখন আর কে শোনে কার কথা? 'নিজে বাঁচলে বাপের নাম'।  ঘরের দরজায় একটি ভাসা কাঠ ধরে তার ওপর উঠে পরেন ইউনুস দা। বাঁকিদেরও বলেন কাঠ ধরে ভাসতে। তিনজনই তিনটি আলাদা আলাদা কাঠে ভাসেন তিস্তার তীব্র স্রোতের মাঝে। সাত-আট বিঘা ভাটির দিকে রয়েছে নলবন। বিদ্যুতের ঝলকানিতে নলবনের আগা দেখা যায়। মধ্যরাতের সেই বিভীষিকার মাঝেই ভেসে চলেন তারা। প্রচুর কাঠ লেগেছে নলবনের মাঝে। নিজের ছোট কাঠ ছেড়ে দিয়ে বড় একটি ভাসা গাছের ওপর উঠে পরেন ইউনুস দা। বাকী দুই মৈষালও বড় কাঠ পেয়ে যান খুব সহজেই। ইউনুসদার কাঠটি নাকি এত বড় ছিলো যে তার ওপর দিয়ে হেঁটে-চলে বেরালেও বিন্দুমাত্র নড়েনি।এতবড় সুরক্ষিত কাঠ পেয়ে বাকী দুইজনকেও ইউনুসদা ডেকে নেন তাঁর কাঠের ওপর।অক্টোবর মাস। একে ঠান্ডা তার ওপর ঝর ও বৃষ্টি। তারই মাঝে খালি গায়ে নলবনের মাঝে জলের ওপর এভাবে ভেসে থাকতে যে কতটা প্রানশক্তির প্রয়োজন তা বোধকরি বলার অবকাশ রাখে না। অনুভব করা প্রয়োজন সেই হারহিম করা মুহুর্তকে।

বেঁচে থাকবার এই লড়াই চলতে চলতেই ভোরের আবছা আলো এসে দৃশ্যমান হয় সব। টাকীমারির চরের পুর্বদিকে বস্তিটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেখানকার ঘরবাড়ী-মানুষজন সব বন্যায় ভেসে গেছে। বস্তির ওখানে একটিমাত্র ঘর টিকে রয়েছে। হয়তো শালের খুঁটি দেওয়া ছিলো। সেই ঘরের চাল দেখা যায়। ঘরটির সাথে লেগে  রয়েছে প্রচুর কাঠ ও কাঠের লগ। তারা মনস্থির করেন সেখানে সাঁতরে পৌঁছাবার। নলবনের আগায় গামছার সুতো বেঁধে রেখে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করে চলেন জলের কমা বারা? বেলা একটার পর থেকে তিস্তা বসতে শুরু করে। কিন্তু স্রোত কমেনি মোটেই। তিস্তার সেই প্রচন্ড স্রোতের মাঝেই ঝাপিয়ে পরেন ইউনুস দারা। পাঁচবিঘা সমান জমি সাঁতার কেটে পৌঁছান সেই কুটিরের কাছে। সেই ঘরের সাথে লেগে থাকা কাঠের গাঁদি (স্তুপ) যেন তখন তাদের সুখপালঙ্ক হয়ে ওঠে। গত রাত থেকে চোখের পাতা এক হয়নি। পেটেও দানাপানি পরেনি কিছুই। রক্ত-মাংসের এই শরীর তো আর বন্যার ঘোলা জলে চলতে পারে না। চারিদিকে জল ছাড়া যে কিছুই নেই। তাই শরীর চালাতে কি করবেন ভেবে উঠতে পারেন না কোনমতেই।

বিকেল চারটার পর জল অনেকটাই কমে। বৃষ্টি থেমে যায়। ইউনুস দাদের বাথানের ঘরটি হেলে গেলেও কোন এক দৈববলে ভেসে যায়নি। ইউনুসদার মৈষাল কাকা সাঁতরে পৌঁছান তাদের সেই বাথান ঘরে। পেছন পেছন আসেন ইউনুস দাও। ঘরের ভেতর দিয়ে তখনও জল বইছে প্রায় এক মানুষ সমান। লম্বা একটা বাঁশের বাতা জোগার করে তারা চাংরির ওপর খোঁচাতে শুরু করেন। খোঁচাতে খোঁচাতে পেয়ে যান সেই মুখমারা চালের টিনটি। টেনে ওপরে তোলেন সেই মুখমারা টিন। জল ঢোকেনি তাতে। অক্ষত রয়েছে সেটি।  টিনে প্রায় দশ কিলো চাল রয়েছে। রয়েছে পাঁচ-মোঠা বিড়ি, সলাই আর ইউনুসদার বাড়ি থেকে আনা তিন টাকা। তাঁরা চালের টিনকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে বস্তির সেই ঘরের কাছে। কাঁচা চাল চিবিয়েই ক্ষুধা মেটানোর পরিকল্পনা তাঁরা যখন করছেন ইউনুসদার নজরে আসে একটি ভাসমান মাটির হাঁড়ি। জল থেকে তুলে নেন তারা হাঁড়িটিকে। হাঁড়িটিকে ভেঙ্গে করাইয়ের রূপ দেন। ঘরের চাল থেকে অপেক্ষাকৃত শুকনো  খড় খুলে নেন। সলাইতো ছিলোই টিনের ভেতর। বড় একটি কাঠের ওপর উনান বানিয়ে বহুকষ্টে চালভাজা করা হলো। সেই চালভাজা আর বিড়ির সংগ্রামী টানেই বিনিদ্র রাত জাগেন তাঁরা। কাঠের গাঁদির সেই সুখপালংকে ঘুমোতে না পারলেও খোলা আকাশতলে শরীর এলিয়ে কিছুটা সতেজ হতে পেরেছিলেন বৈকি।

ভোর হল। ভাটির পূর্বদিকে বেঁচে থাকা কিছু মানুষ নজরে আসে তাদের। সেখানেও একটি ঘর টিকে রয়েছে। তিস্তা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। তিস্তা তখন দুভাগে বিভক্ত হয়ে দূরে সরে গেছে অনেকটাই। বড় তিস্তা বইছে পূর্বদিকে আর ছোটো তিস্তা পশ্চিমে। দুই তিস্তায় জল কমলেও স্রোত কমেনি মোটেই। তিনজন মিলে সাঁতরে পৌঁছান সেই ভাগ্যবান মানুষগুলির কাছে। খানিক্ষন আগেই একটি বাচ্চা ছেলে মারা গেছে সেখানে। তাঁর ভাই ও মা রয়েছে সাথে। বাবা সাথে নেই। তিনি তখণও এসে পৌঁছাতে পারেননি নিজের স্ত্রী-পুত্রদের কাছে। চালভাজার টোপলা সাথেই এনেছিলেন ইউনুস দারা। ক্ষুধার্ত পেটগুলির একটু হলেও স্বস্তি মেলে। 

দশ-বারোজন লোকের মাঝে একটি মৃতদেহ পরে রয়েছে। সবাই পরামর্শ করে মৃত ছোট্ট ছেলেটির দেহ ভাসিয়ে দেন তিস্তার জলে। তারপর সেখানেও কাটে একটি রাত। পরের দিন সকালে সেই ছোট্ট ছেলেটির বাবা এসে পৌঁছান একটি পানসাই নৌকা নিয়ে। এক ছেলের মারা যাবার মত নিদারুন ঘটনা তার চোখে জল আনেনি। বরং স্ত্রী ও আরেক পুত্রকে জীবিত পেয়ে তাঁর চোখ ভেজে আনন্দাশ্রুতে। অনেক বলে কয়ে সেই পানসাই নৌকা  নিজে চালিয়ে ইউনুস দা পৌঁছান তার চৌরঙ্গীর বাড়িতে। সাথে ছিলেন সেই নৌকার মালিক ও তার স্ত্রী-পুত্র। ইউনুস দার কন্ঠে আক্ষেপের সুর। সেই দুঃসময়েও তাকে ভারা গুনতে হয়েছিলো একটাকা। চালের টিনে রাখা তিনটাকা যে এইভাবে কাজে আসতে পারে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ইউনুসদা। রাত যখন নয়টা বোদাগঞ্জ থেকে ঘুরপথে পায়ে হেঁটে তিনি পৌঁছান নিজের বাড়িতে। বাড়িতে তখণ কান্নার রোল ওঠে। নসিরুদ্দিন বাবুতো ধরেই নিয়েছিলেন তাদের ছোট ছেলে আর বেঁচে নেই। তিস্তার জলের তোরে আর হাজারটা মানুষের মতোই ভেসে গেছে।

চতুর্থ দিন সকালে বোদাগঞ্জে খেওয়া দেওয়া একটি নৌকা ভাড়া করে ইউনুস দা পৌঁছান তার বাথানের দুই মৈষাল ও বাকী মানুষগুলির কাছে। সাথে নিয়ে যান চিরা, মুড়ি আর শক্ত মিঠাই (গুঁড়)।তিনদিন থেকে না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর ক্ষিধে কিছুটা হলেও মেটে তাতে। ইউনুসদা সাঁতারে যেমন পটু তেমনি পটু নৌকা চালাতেও। তিস্তার সুতীব্র স্রোতকে হার মানিয়ে সকলকে উদ্ধার করে নিয়ে বোদাগঞ্জের ঘাটে আসতে সমর্থ হন। আটষট্টির এই ভয়াবহ বন্যায় কাঠাম বাড়ির পূর্বদিকের পেছনের বাঁধটি প্রথমে ভাঙে। তারপর  রংধামালির বাঁধ ভেঙ্গে তিনটুকরো হয়। সবশেষে ভাঙ্গে দোহমনির বাঁধ। কাঠামবাড়ির আর রংধামালির বাঁধ না ভাঙ্গলে ইউনুসদারা বেঁচে ফিরতে পারতেন কিনা সন্দেহ। দোমহনির বাঁধ না ভাঙলে  জলপাইগুড়ির পরিনতি কি হত তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। তবে একথা সর্বৈব সত্য যে, মধ্যতিস্তার চরে চরে ঘরবাঁধা মানুষের প্রায় সকলেই সেদিন ভেসে গেছেন তিস্তার জলে। সরকারী হিসেবে তার প্রতিফলন ঘটেছিলো কিনা লেখকের তা জানা নেই। 

১৯৬৮ সালের লক্ষীপূজার রাতের এই মানষিমারা বাণের ধ্বংসলীলা যে কি ভয়াবহ ছিল তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় বেলতলীর ধনেশ্বর বাবুর গলায়। 'নদী কোথা থেকে বেরিয়ে এসে একটা ফ্লাড করে দিলো। কাগজ পত্র, জমিজমা , সম্পত্তি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। ওইযে নদী চালু হলো। আজও চলছে'। ধনেশ্বর বাবুর কথায় এটা সহজেই অনুমেয় যে বেলতলীর যে স্থান দিয়ে বর্তমানে তিস্তা বইছে আটষট্টির বন্যাত আগে সেই স্থানে তিস্তা ছিলো না। এখণ যেখানে শিশামারির চর বেলতলীর বাজার ছিল পূর্বদিকের সেই চরের ভেতরেই। এর একটু আগেই রয়েছে বগুরার চর। বগুরার চরে এখন লোক থাকে না। তবে লোক থাকে পাশেই চল্লিশের চরে। চল্লিশের চরের আগে ছবির মত সুন্দর একটি চরগ্রাম রয়েছে। নাম তার ঝুরির ঘাট হলেও বাস্তবে কোন ঘাট সেখানে নেই। কতচর আর ঘাট রয়েছে বেলতলীর আশেপাশে । কালামপুরের চর, পানিয়ার চর, সাতজনের চর, নিজতরফ ৭২ ইত্যাদি ইত্যাদি। কৃষ্ণা ঘাট, সাহেবগঞ্জের ঘাট, মেধ্যার ঘাট, বাইদ্যার ঘাট এমনি অনেক ঘাট আজও সচল রয়েছে। তবে দুঃখের কথা এই যে তিস্তা ব্রীজ হবার পর যেমন কিংসাহেবের ঘাট ও বার্ণিশের ঘাটের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে ইতিহাস হয়েছে ঠিক তেমনি জয়ী সেতু উদ্বোধন হবার পর বেলতলীর ঘাট, সাহেবগঞ্জের ঘাট ও কৃষ্ণা ঘাট হারিয়ে যেতে চলেছে। প্রথম লকডাউনের আগের বছরই সরকারীভাবে এই তিনটি ঘাটের ডাক হয়েছিলো। সরকারী ভাবে এই ঘাটগুলির ডাক ভবিষ্যতে আর হবেনা বলেই মনে করি।

ভাবলে চমকে যেতে হয় বর্তমানে বেলতলী ও তার আশেপাশের এলাকায় যে লোকসংখ্যা রয়েছে ১৯৬৮ এর বন্যার আগে নাকি সেখানে বর্তমান লোকসংখ্যার চেয়ে বিশগুন বেশী লোক ছিলো। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষেরা তখনো এই এলাকায় বসতি গড়েন নি।স্থানীয় মানুষের কোলাহলেই মুখরিত হত বোয়ালমারির বিখ্যাত হাট যা ছিলো বেলতলী বাজারের পশ্চিমেই। সেই হাটে গরু, মহিষ, ছাগল, ধান, পাটের দেদার বিকিকিনি হত। ঘাটগুলির ব্যস্ততাও ছিলো চোখে পরার মত। বোয়ালমারির সেই বিখ্যাত হাটটি আজ আর নেই।পাঠকবর্গ আপনারা বর্তমানের কচুয়া বোয়ালমারির হাটের সাথে এই হাটকে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন।

বেলতলী ও তৎসংলগ্ন এই এলাকাতেই লক্ষীপূজার রাতে তিস্তা তার গতিপথ বদলে হুরমুরিয়ে ঢুকে পরে। নিমেষেই ভেসে যায় সব বাড়িঘর। কতমানুষ যে ভেসে চলে যায় তার কোন হিসেব নেই। ভেসে যায় কাগজপত্র, ধন-সম্পত্তি। জমিজমা-ভিটেমাটি সব দখল করে নিয়ে তিস্তা বইতে শুরু করে তার ওপর দিয়ে। কিছু কাগজ খুঁজে পেলেও বর্তমান পরিস্থিতে তা দেখিয়ে কোন লাভ হবে কিনা জানেন না ধনেশ্বর বাবুর মত বয়স্ক মানুষেরা। কারন জমিতো কাগজে রয়েছে। কিন্তু তিস্তা যে জমিতে রয়েছে। মজা করতে করতে দিনাজপুর থেকে আসা ধনেশ্বর রায় বলেই ফেললেন,” স্যার আমার দশ বারো বিঘা তিস্তা আছে, সেই তিস্তার কাগজও রয়েছে, এন.আর.সি. হলে সেই কাগজে কাজ হবেতো?”

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri