সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

07-December,2022 - Wednesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 372

চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব ১৪
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^^

ফেরা না ফেরার টুকরো ছবি

' ১৯৪৮ এর ৩০শে জানুয়ারি। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক বেদনাময় দিন। আর ঐ দিনটিতেই আমি ফিরে আসছিলাম কাজলিডাঙায়। বালিয়াকান্দি স্কুল থেকে ক্লাস এইট পাশ করে পাকাপাকিভাবে ,ডুয়ার্সে। ভোরের ট্রেনে জলপাইগুড়ি স্টেশনে এসে নামতেই মনে হল চারপাশটা কেমন যেন থমথমে। রিক্সা স্ট্যান্ড ফাঁকা। রাস্তায় লোকজনও খুব কম। ধর্মদাসবাবু স্টেশনের বাইরে গিয়ে খবর নিয়ে এলেন, মহাত্মাজী আর নেই। আগের দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন। জাতীয় কংগ্রেসের ডাকে তাই শহরজুড়ে বারো ঘন্টার বনধ পালিত হচ্ছে। '

-' ধর্মদাসবাবু কে? ' সুবর্ণ জানতে চায়। 

-' উনি ছিলেন বালিয়াকান্দি স্কুলের শিক্ষক। আমাদের সাথে অভিভাবক হিসেবে এসেছিলেন। '

-' আপনার সাথে কি আরও কেউ ছিল? '

-''হ্যাঁ,বলছি তোমাকে। পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর একদিন আমার দূরসম্পর্কের মাসতুতো ভাই বিপ্লবের সাথে দেখা। পাশের গ্রামে ওরা থাকত। ওর বাবা ছিলেন ডুয়ার্সের একটি চা বাগানের বড়বাবু। ও আর ওর বোন পড়াশোনার জন্য দেশের বাড়িতে থাকত। ও জানালো, ওরা নাকি ওর মায়ের সাথে ডুয়ার্সে যাচ্ছে। আমি চাইলে ওদের সাথে যেতে  যেতে পারি। বাড়ি এসে জানালে কেউ আপত্তি করলেন না। মনে পড়ে আসার সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বড়মামি বলেছিলেন, 

'সতু, ফিরা গিয়া আমাদের ভুইলা যাবি না তো'।

শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। বড়মামি আমাকে খুব ভালবাসতেন। বলেছিলাম, ' না, না তা কেন। আমি তো আবার ফিরে আসব'। সেই ফেরা আর হলো না। মামির সাথেও আর দেখা হল না কোনও দিন। 

যাইহোক, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট উঠে গেলে রিক্সা করে আমরা গেলাম কিং সাহেবের ঘাটে। ফেরি পার হয়ে এপারে বার্ণেশে পৌঁছে দেখি বাসগুলো তখনও দাঁড়িয়ে। সেখান থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। আমি চাপলাম ফালাকাটার বাসে। ওরা অন্যটায়। বাস ছাড়তেই নিজেকে ভীষণ একা মনে হল । বাসে আরও যাত্রী থাকতেও কেমন যেন ভয়ভয় করতে লাগলো আমার। কেননা জীবনে ওটাই ছিল আমার প্রথম নিঃসঙ্গ সফর। 

ময়নাগুড়ি পৌঁছে বাসটা দাঁড়িয়ে গেল। দেখি বিরাট মৌন মিছিল বেরিয়েছে গান্ধী হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যে পেরিয়ে কাজলিডাঙায় পৌঁছলাম। বাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাসটা চলে যেতেই বুকটা হঠাৎ করে ঢিপঢিপ করে উঠলো। কেন তা বুঝতে পারলাম না। হয়তো বা আনন্দের আতিশয্যেই। তখনও কাজলিডাঙায় বাবুদের কোয়ার্টারে ইলেক্ট্রিসিটি আসে নি। লাইট-ডিজেল অয়েল চালিত দৈত্যাকার ইঞ্জিনে ডি. সি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শুধু ফ্যাক্টরি ও বাংলোগুলোতে সরবরাহ করা হতো। কোথাও কোথাও খরস্রোতা ঝোরার জল ক্যানেলের ভেতর দিয়ে  টেনে এনে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে সেই প্রপাতে টারবাইন ঘুরিয়ে সামান্য বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। আশেপাশে দু'একটি বাগানে এরকম ব্যবস্থা ছিল। যা হোক, বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে  ঘরের ভেতরে কোনও আলোর আভাস দেখতে পেলাম না। মনে হলো বাড়িটা যেন অন্ধকারে মনখারাপ করে বসে আছে। হাতে টিনের বাক্সটা নিয়ে গেট ঠেলে ভেতরে পা রাখলাম। মাকে চমকে দেব বলে সদর দিয়ে না ঢুকে ঘরের পাশ দিয়ে মালিদের যাতায়াতের যে পথ, যেটাকে মা বলতেন 'বারদুয়ার', সেই দিক দিয়ে গেলাম। দেখি রান্নাঘরে কুপির আবছায়া আলো-আঁধারিতে, কাঠের উনুন জ্বেলে পিঁড়ি পেতে বসে, মলিন কাপড় পরিহিতা আমার মা পেছন ফিরে রান্নায় ব্যস্ত। পা টিপে টিপে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম তাঁকে। মা তো আমাকে দেখে অবাক....।'

এই অবধি শুনে কল-রেকর্ডারটা বন্ধ করে দেয় সুবর্ণ। দুপুর থেকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে একটানা লিখে লিখে পিঠটা ব্যথা হয়ে গেছে। বাইরে অন্ধকার নামছে ধিরে ধিরে। বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের বাতিটা জ্বালিয়ে বাইরে আসে সুবর্ণ। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে বেশ । শীতশেষের হিমেল হাওয়া ফিসফিসিয়ে বলে যাচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে...যাওয়ার সময় হল । ভুটান পাহাড়ের দিক থেকে বকের শেষ ঝাঁকটা উড়ে গেল চাপরামারির দিকে। শীত শেষের পাতলা কুয়াশা-আঁচলের আড়ালে পাহাড়ের গায়ে বিন্দু-বিন্দু দু চারটে আলো উঁকি দিচ্ছে। অথচ বর্ষাশেষে শরত কিংবা হেমন্তের এই সাঁঝবেলায় স্নান সেরে প্রকৃতি যখন নিসুতো হয়, খসে পড়ে যাবতীয় আড়াল, পাহাড় তখন উন্মুক্ত করে শরীরের প্রত্যেকটি গোপন খাঁজ । অন্ধকারে তার নীল-নগ্ন শরীর ঝলমলে আলোয় সালঙ্কারা হয়ে ওঠে। চোখ ফেরানো যায় না তখন। রাস্তার বাতিগুলো কে যেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে। বাসালাইনের সব কোয়ার্টারের বারান্দায় আলো জ্বলে নি তখনও। যাদের ফ্যামিলি বাইরে তারা অনেকেই চলে গেছে বাড়িতে। যারা আছে, তাদেরও বাঁধা জীবনের ছক বদলে গেছে যেন। বাড়ির রোজগেরে মানুষটা রোজ এসময় অফিস থেকে ঘরে ফিরত। বাইরের বাতিটা তাই জ্বালানো হত তার আসার অপেক্ষায়। আজ সেই মানুষটাই কর্মহীন। ঘরবন্দী। 

ঘরের ভেতরে মোবাইলটা বেজে উঠল । সুমন্তর কল। কল রিসিভ করে সুবর্ণ বলে, 
' হ্যাঁ, বল্। '
-' কী করছিস? '
-' তেমন কিছু না। একটা লেখা নিয়ে পড়েছি দুপুর থেকে। '
-'ও। বাড়ি যাসনি তাহলে। '
-' না। কাল পরশু একবার যাব ভাবছি। '
-'অ।'
-' ফোন করলি যে। কোনও খবর আছে নাকি? '

-' হ্যাঁ। আগামী পরশু মিটিং ডেকেছে লেবার কমিশনার । শিলিগুড়িতে। ট্রাইপার্টাইট। শুনছি মালিকপক্ষ নাকি বসতে চাইছে এবারে। ফয়সালা হয়েও যেতে পারে কিছু একটা... '

-' বাঃ। ভাল খবর। অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়ন থেকে সেন্ট্রাল লিডাররা থাকবে কিনা কিছু জানিস? মানে যারা ফ্যাঁকরা মারছে তাদের নেতারা...। '

-' জানিনা। না থাকলেও কিছু এসে যায় না। ধরে নে বাগান খুলছেই। সি. এমের চাপ আছে ওপর থেকে। '

-' আশা আছে বলছিস তাহলে...? তুই যাচ্ছিস তো? '

-' হ্যাঁ, তবে একটা প্রব্লেম হয়েছে। '
-' কী? '
-'তুই যদি ঐদিন শিলিগুড়িতে থাকিস তবে একবার এন. জে. পি তে 'পদাতিক' অ্যাটেন্ড করতে পারবি?'
-' কেন, কে আসছে? '
-'আরে, আর বলিস না। মেঘা আসছে ঐদিন। '
-'মেঘা! এ সময়! '
-' মানা করেছিলাম, এই ডিস্টারবেন্সের মধ্যে আসতে । কিছুতেই শুনল না। বলে কিনা আমাকে দেখতে নাকি খুব ইচ্ছে করছে। ক'দিন থেকেই চলে যাবে। রিজার্ভেশন করে ফেলেছে...। '

-' ঠিক আছে। আমি ওকে রিসিভ করে বাড়ি নিয়ে যাব। তুই চাইলে মিটিং সেরে ফেরার পথে...। '

-' হ্যাঁ, আমি ওকে তুলে নেব তোর ওখান থেকে। আসলে বাগান বন্ধ হওয়ার পর থেকে রোজ দুবেলা করে ফোন করে। টেনশন করে বুঝি, কিন্তু কী করব বল।  তোর মত বাড়ি কাছে থাকলে মাঝেমধ্যে আমিও যেতে পারতাম। তাছাড়া দেখছিসই তো কিভাবে জড়িয়ে গেছি ....।' সুমন্তর স্বরে অক্ষমতার সুর ধরা দেয়। 

-ওসব কথা বাদ দে। সব ঠিক হয়ে গেলে একবার কলকাতা থেকে ঘুরে আয় । ' সুবর্ণ বলে। 

-' না-রে। কার জন্য যাব। যাকে দেখতে যাব সে তো চলেই আসছে।'
-' কেন...পায়েলের সঙ্গে কি তোর... '

- ' সবই তো জানিস... বাদ দে ওর কথা।'

-' তোর দাদা দিদিরা... ওরা খোঁজখবর করে না? "

- করে মাঝেমধ্যে। সবাই যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত । কাউকে দোষ দিতে চাইনা। এ যুগে সম্পর্কের বাঁধনগুলো সব ভাসা-ভাসা, বুঝলি। জীবনের চেনা পথ, চেনা মানুষ সব এখন বড় অচেনা মনে হয়। কিশোর কুমারের ঐ গানটা শুনিস নি, ' জিন্দেগী কা সফর, হ্যায় ইয়ে ক্যায়সা সফর, কোয়ি সমঝা নেহি, কোয়ি জানা নেহি... 'সুমন্তকে কেমন যেন অচেনা শোনায়। নেশা করেনি তা বোঝা যাচ্ছে। স্বাভাবিক অথচ যেন ক্লান্ত, বিষন্ন। কিছুক্ষণ কথা শেষে ফোনটা কেটে দেয়। 

খানিক বাদে এক কাপ চা তৈরি করে এনে ফের লেখায় ফেরে সুবর্ণ।  কি-প্যাডে হাত রেখে ভাবতে থাকে কীভাবে শুরু করবে। কেননা ঠিক এই বিন্দুতে পৌঁছে দ্রুত বদলাতে থাকে সত্যপ্রিয়র জীবন। পলাশপুর থেকে ফিরে এসে সত্যপ্রিয় লক্ষ্য করে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে বাড়িতে। দাদা বিশ্বপ্রিয় বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে বীরপাড়ায়। সেখানে ব্যবসা শুরু করেছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার পেতেছে সেখানে। বাড়ির সাথে তার যোগাযোগ ক্ষীণ। কুমুদরঞ্জন হঠাৎ যেন ভীষণ গুটিয়ে গেছেন।  ছেলের ফিরে আসায় কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। সে আবার ফিরে যাবে কিনা পলাশপুরে সেটাও জিজ্ঞেস করেননি। সুনয়নীর মুখের হাসি যেন কুয়াশাচ্ছন্ন জোৎস্নার মতো। তাৎক্ষণিক ভাবে কারণটা বুঝে উঠতে না পারলেও সত্যপ্রিয় অনুভব করে কোথাও যেন তাল কেটেছে সংসারের স্বাভাবিক ছন্দের।

এরপর এক ভদ্রলোকের পরামর্শে পড়াশোনার জন্য কুচবিহারে যাওয়া। সেখানে কিছুকাল হস্টেলে , কিছুদিন এক মাস্টার মশায়ের দাক্ষিন্যে তাঁর বাড়িতে থেকে সত্যপ্রিয়র পড়াশোনা চলতে থাকে। দশম শ্রেণীতে উঠে হঠাৎ একদিন বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসা। চরম দারিদ্র্যতার কারনে দু'বছর লেখাপড়ায় ছেদ এবং শেষপর্যন্ত জুনিয়র স্কুল থেকে সদ্য হাইস্কুলের মান্যতা প্রাপ্ত জটেশ্বর স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই স্কুল ফাইনাল পাশ। এই সমস্ত ঘটনাবলী কিভাবে সাজাবে  মনে মনে যখন ভেবে যাচ্ছিল সুবর্ণ ঠিক তখন দূর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শোনা যায়। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে সুবর্ণ। শব্দটা বাসালাইনের ভেতর থেকেই আসছে। চটিটা পায়ে গলিয়ে চাদর গায়ে চাপিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই কথাগুলো শোনা যায়, 

'  এ ডাগদর বাবু...দুরা খোল....মোর আউরত সিরিয়স হোই যাহে...জলদি চল....উকর কোনও হো-ই হালে তোকে মোয় নি ছোড়বু...জলদি হাসপাতাল চল্...দাওয়াই দে...নিতন  হিনে তর দুরা বাটে মোর বেটিকে মাড়ায়কে  চইল দেবু...' 

ডাক্তারবাবুর কোয়ার্টারের সামনে  অন্ধকারে দাঁড়িয়ে লোকটা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। স্বর জড়ানো। বোঝাই যাচ্ছে বেশ নেশা করে আছে। গলাটা চিনতে অসুবিধে হয় না সুবর্ণর। এ নির্ঘাৎ ফাগুর গলা। তবে কি বাপ মারা যাওয়ার পর ও কবে ফিরে এসেছিল কেরালা থেকে! কবে এলো। এসে দেখাও তো করেনি । কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে ওর বৌ অসুস্থ। ডাক্তারবাবুর ওপর হম্বিতম্বি করছে কেন কে জানে!  না গেলে মেয়েকেই বা দরজার সামনে ফেলে রেখে চলে যাবে বলছে কেন ! 

' আরে তুম ঘরমে কাহে আয়া....হাসপাতাল যাও...নার্স কো ফোন কর দিয়া... ও দাওয়াই দে দেগা...তুম চলা যাও হাসপাতাল...হাম নেই যায়গা... '

জানালার পর্দা তুলে সমান তালে চেঁচিয়ে চলেছেন ভবেশ ডাক্তার। এসব 'উৎপাত' এড়াতে রাতে এমনিতেই সচরাচর দরজা খোলেন না তিনি। বয়সকালে অনেক সামলেছেন। এখন এই বয়সে আর এসব ঝুটঝামেলা পোয়াতে  ইচ্ছে হয় না। সত্তরোর্ধ বয়স। একযুগ আগে তরাইয়ের কোন এক চা বাগান থেকে রিটায়ার করার পর এ-বাগান সে-বাগান ঘুরে এসে শেষে নীলপাহাড়িতে থিতু হয়েছেন। পে-রোল বহির্ভূত কর্মচারী তিনি। একদা ভাউচারে সই করে বেতন নিতেন বলে বাগানীয়া ভাষায় তিনি 'ভাউচার-স্টাফ' পর্যায়ভুক্ত। এখন অবশ্য স্যালারি ব্যাংকে ক্রেডিট হয়। সাত বছর হলো টিকে আছেন। কোম্পানি ছাড়েনি তাকে। তিনিও ছেড়ে যাননি কোম্পানিকে। দু'পক্ষেরই দু'পক্ষকে প্রয়োজন। হাসপাতালে ডাক্তার না থাকলে ইউনিয়ন চাপ দেবে। সুতরাং 'ধরো-লক্ষণ' ভবেশই হোক আর 'গোবর্ধন-গণেশই' হোক,নামের আগে ডাক্তার বিশেষণটি ঝুইল্যা থাকলেই হলো, তাকে চেয়ারে বসিয়ে দায় সারা যায়। যে টাকায় আর.এম.পি ডিগ্রিধারী ভবেশ ডাক্তার টিকে আছেন সে টাকায় এ বাজারে নতুন কেউ আর আসবেও না। সুতরাং ভবেশের ভবলীলা সাঙ্গ হওয়া ইস্তক চাকরির লাইফ-টাইম গ্যারান্টি। রিটায়ারমেন্টের পর পেনশন নেই, দু বেলা চারটে নাড়ি টিপে যা-ই পাওয়া যায় সেটুকুই বা মন্দ কি। শুধু মাঝেমধ্যে এ ধরনের উটকো আপদ দেখা দিলে কিংবা টেঁটিয়া বড়বাবু দিব্যেন্দু রায় তার গ্রহনযোগ্যতা কিংবা হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট  নিয়ে ঠারেঠোরে কথা শোনালে মনটা ভীষণ দমে যায় ভবেশ ডাক্তারের। টেনশন বেড়ে হাইপার টেনশড হয়ে যান। এ বয়সে অপমান জনক কথাবার্তা হজম হয় না। মনে হয় দুম করে চাকরি ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যান গ্রামের বাড়িতে। রাগের মাথায় একদিন রেজিগনেশন দিয়েও ফেলেছিলেন। দিয়ে পরে মনে হয়েছিল কাজটা ঠিক হয়নি। দুরুদুরু বক্ষে বেশ কিছুদিন দু'বেলা হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পরও যখন বুঝে উঠতে পারলেন না যে ইস্তফা গৃহীত হলো না প্রত্যাখ্যাত, বুঝলেন মেঘ কেটে গেছে। অল কোয়ায়েট অন দ্য হেড-অফিস ফ্রন্ট। সেই থেকে অদ্যাবধি লড়ে চলেছেন ডাঃ ভবেশচন্দ্র দাস, এম. ও, নীলপাহাড়ি  টি এস্টেট। 

বাগান বন্ধ হতেই ম্যানেজাররা সব বাগান ছেড়ে চলে গেছেন। লাফরা হলে সামলানোর কেউ নেই। তাই 'উটকো ঝামেলা' এড়াতে বাইরের বাতিটাও নিভিয়ে রাখেন। রেখেও যদিও খুব একটা লাভ হয়না। রাতবিরেতে কোয়ার্টারের দরজায় আকছার এমন মূর্তিমান পেশেন্ট-পার্টির আবির্ভাব ঘটতেই থাকে। সেক্ষেত্রে পার্টি আর কেসের গুরুত্ব বুঝে তবেই ভবেশ ডাক্তার সক্রিয় হন। কুইনাইন-গেলা-মুখ করে টর্চ হাতে তখন কেস অ্যাটেন্ড করতে হাসপাতালমুখো হন। তবে পেশেন্টের সাথে এ র'ম দু-এক পিস নাছোড় 'মাতাল- পার্টি ' এলে তার জন্য লাইন -অফ -অ্যাকশন ঠিক করা আছে। প্রথমে পার্টিকে বলা হবে পেশেন্ট নিয়ে হাসপাতালে যেতে। সেখানে ডিউটি-চৌকিদার প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে ওয়ার্ডের দরজা খুলে পেশেন্টকে ভেতরে নিয়ে বসাবে। তারপর লাগোয়া কোয়ার্টার থেকে ডেকে আনবে নাইট ডিউটিরত নার্সকে। ঘুম থেকে জেগে চোখ কচলাতে কচলাতে এসে নার্স সব দেখেশুনে হাওয়া বুঝে কেসের 'সিরিয়াসত্ব' কে আরেকটু সিরিয়াস করে দিয়ে বেশ গম্ভীর স্বরে  বলে দেবেন, '

' ইনকো বাহার ভেজনা পড়েগা, '

কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নার্স চৌকিদারকে পাঠাবেন গ্যারাজেের গুমটি ঘরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে খবর দিতে। সে যদি থাকে  তো ভাল। তাকে ঠেলে-ধাক্কে  তুলে বলা হবে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালে যেতে। নইলে ফোন করে তাকে ডেকে আনতে হবে বাড়ি থেকে। কাঁচাঘুম ভেঙে হাই তুলে, আড়ভেঙে সে গিয়ে স্টিয়ারিং ধরবে। এরপর যদি দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্স স্টার্ট হচ্ছে না কোন কারণে, তখন দু-তিনজন মিলে ধাক্কা দিয়ে চেষ্টা করা হবে সেটা সচল করে তুলতে। ভাগ্য ভাল থাকলে  হেঁচকি দিতে দিতে একসময় গর্জে উঠবে ইঞ্জিন। নয়ত ঠেলতে ঠেলতে রাত কাবার। ইন- দ্যাট- কেস রোগীর ভবিতব্য কেয়ার অফ ওপর-ওয়ালা । 

ছোটখাটো কাটাছেঁড়া, জ্বরজারি কিংবা ডায়েরিয়া কেস হলে তবু কিছুটা সামাল দিয়ে বাড়ি পাঠানো যায়, সামান্য বেগতিক দেখলে গল্প একটাই-- পত্রপাঠ ব্লক হাসপাতাল। না করে উপায়ও যে নেই। বেশিরভাগ বাগান-হাসপাতালেই ওষুধের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। হাসপাতাল,ওষুধ,ডাক্তার -- এসব চা-কোম্পানির অ্যাকাউন্টিং কোডে নন-প্রোডাকটিভ সাবজেক্ট। ডাক্তারবাবুরা সব ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম। সুতরাং 'রিস্ক নিয়া লাভ নাই' ,পাঠায় দাও বাইরে, ম্যানেজমেন্টের ট্যানশন নাই ' এটাই পরম ভাষ্য এখন অধিকাংশ বাগানের ডাক্তার বাবুদের । 

তেমন হলে চটপট টুকরো কাগজে খসখস করে লিখে হাতে ধরিয়ে দিয়ে ডাক্তারবাবুরা বলে দেন,' লে যাও। রেফার কর দিয়া...'। পেশেন্ট পার্টি হামেশাই শোনে 'ডেফার'। ওরা তাই প্রাপ্ত চিরকুট নিয়ে ব্লক হাসপাতালের ওপিডি তে গিয়ে দেখিয়ে বলে, 

'এ-লে, বাগানকর ডাগদরবাবু হিনে 'ডেফার' করলক। এখন কা-করবে জলদি কর্।' 

চেঁচামেচি ক্রমশ বাড়ছে দেখে দরজাটা ভেজিয়ে এগোতেই পকেটে মোবাইল টা বেজে ওঠে। ভবেশ ডাক্তারের ফোন, 

-' আরে কী মুস্কিল দ্যাখেন তো... আপনার মালি... দারু খায়ে আইসে কি শুরু করসে বাড়ির সামনে...কথাই বোঝে না। '

-' কেসটা কী... শুনেছেন। '

-' কী য্যান...বলে ওর বউয়ের নাকি কিছু হইছে...তো বাড়িতে কী... হাসপাতালে যা...ওষুধ কি আমি বাড়িতে রাখি? '

কথা বলতে বলতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় সুবর্ণ। ডাক্তারবাবুর কোয়ার্টারের গেটে অন্ধকারে সাইকেলের হ্যান্ডেলটা ধরে টাল খাচ্ছে ফাগু। পিঠে কাপড় দিয়ে বাঁধা ওর ছোট্ট মেয়েটা ঘুমিয়ে কাদা। গেটটা খুলতে না পেরে ভেতরে যেতে পারছে না। বাইরে থেকেই চেঁচিয়ে চলেছে। 
-' ক্যায়া হুয়া রে...! 'সুবর্ণ একটু ধমকের সুরেই বলে। 

গলা পেয়ে ঝপ করে চুপ করে যায় ফাগু। সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলে না । বউ এর কথা জিজ্ঞাসা করতেই খানিক চুপ থেকে সাইকেলের প্যান্ডেলে মাথা রেখে হঠাৎ হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে, 

' উ থাইমেট খাই দেহে বাবু...  ডাগদর কে জলদি বুলায় দে ... উকে বাঁচায়ক পড়ি বাবু...দেরি হোই গেলাক হালে মইর যাবয়ঁ..মইর যাবয়ঁ মোর সুরন্তি...উ-ঠো মইর গেলাক হলে...' শেষের কথাগুলো শেষ হয় না, সাইকেলটা  হাত থেকে সশব্দে পড়ে যায় রাস্তায়। 
কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় সুবর্ণ। চা-গাছ রোপনের সময় প্রয়োগকারী উইপোকা নাশক এই তীব্র গন্ধযুক্ত বিষ 'থায়োমেট' অনেকের জীবন কেড়ে নিয়েছে চা বাগানে। কিভাবে যেন এরা যোগাড় করে নেয় এই মারণ কীটনাশক । তারপর জীবনের কোনও অন্ধকার বাঁকে এসে যখন আর পথ খুঁজে পায় না, বেঁচে থাকা যন্ত্রণার হয়ে ওঠে, অবলীলায় এরা অমৃত করে নেয় এই গরল। 
সুবর্ণ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ' ক'নে তোর বুড়িয়া...?'

কিছুটা সামলে নিয়ে ফাগু যা বলে তার মর্মার্থ হল,  লাইনের কেউ একজন সুরন্তিকে বাইকে করে দুজনের মাঝখানে চেপে বসিয়ে নিয়ে গেছে  হাসপাতালে। খবর পেয়েই পেছন পেছন  ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে পিঠে বেঁধে ও প্রাণপণ সাইকেল চালিয়ে পাকদন্ডি রাস্তা ধরে সর্টকাটে ছুটে এসেছে ডাক্তারের কাছে।

বউটা বিষ খেল কেন প্রশ্ন করার মত সময় ছিল না। সুবর্ণ গলা শুনে ভবেশ ডাক্তার চলে এসেছিলেন বাইরে। সব শুনে কেসের গুরুত্ব বুঝে ফাগুদের বে-আক্কেলে মনোভাবের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে তিনি হাসপাতালে ছোটেন । 

সে রাতে কোনও মতে তড়িঘড়ি স্টমাক-ওয়াশ করে যমের দুয়ার থেকে ফাগুর বৌটাকে ফিরিয়ে আনেন ভবেশ ডাক্তার। যতক্ষণ ওয়াশ চলছিল, হাসপাতালের বারান্দায় ঠায় বসেছিল ফাগু। আর যে ছেলেটা বাইকে চাপিয়ে ওর বউকে তুলে এনেছিল মৃতপ্রায় অবস্থায়, সে বসেছিল দূরে চাঁপাগাছটার তলায়। খবর পেয়ে লাইনের আরো দু'চারজন লোক যারা জড়ো হয়েছিল হাসপাতাল চত্বরে, তারাও এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছিল। 

একটু সুস্থ হতেই বৌটাকে স্যালাইন দিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় ফিমেল ওয়ার্ডে। ফাগু দূরে বসে উদ্বিগ্ন চোখে সব দেখতে থাকে।অপারেশন শেষে বাইরে এসে ভবেশ ডাক্তার হাত মুছতে মুছতে যখন ঘোষণা করে ' নে, আর ভয় নাই। খুব জোর বাঁইচে গেছে তোর বউ....আউর থোড়া দেরি হোনেসে খবর হো যাতা... ' ফাগু একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে বউয়ের দিকে। ঘুম ভেঙে বাচ্চাটাও কাপড়ের আড়াল  থেকে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে তার ঘুমন্ত মাকে। 

এরপর কখন যেন সবার অলক্ষ্যে হাসপাতালের লনে শুইয়ে রাখা সাইকেলটা উঠিয়ে ঘরের পথে পা বাড়ায় ফাগু। আর চাঁপাগাছের নিচে এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছেলেটা নিঃশব্দে উঠে এসে দরজার বাইরে থেকে ফাগুর বৌটার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। খবর পেয়ে যারা ছুটে এসেছিল,উত্তেজনা থিতিয়ে যেতে তারাও ঘরমুখো হয় আর নেপথ্যের গল্প গুলো হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে  সুবর্ণর কানে এসে পৌঁছয়। 

ফাগু ঘর ছাড়তেই নাকি ঐ ছেলেটা, যে ওর বউকে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিল, তার সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল ওর বউ। ছেলেটা বাগানে বাগানে লেবার সাপ্লাইয়ের কাজ করে। বন্ধ বাগানে যখন পেটে টান পড়েছে, প্রায় অর্ধাহারে দিন কাটছে বউটার ঘরে বাচ্চা আর বুড়ো শ্বশুরকে নিয়ে তখন ওই ছেলেটাই নাকি ওকে কাজ ঠিক করে দিয়েছিল পাশের বাগানে। একদিন ঘরের ভেতর দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায়  দেখে ফেলায় শ্বশুর প্রতিবাদ করে। বাচ্চা নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় ফাগুর বউ। শ্বশুর মারা যেতেই আবার ফিরে আসে। শুরু হয় ওদের উদ্দাম জীবন। খবর পেয়ে ফাগুও ঘরে ফেরে। বউকে  তার অনৈতিক জীবন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করে। সে ফেরে না। একদিন ঘরে বাচ্চা ফেলে রেখে ঘর ছাড়ে ফাগুর বউ ঐ ছেলেটার সাথে। বেশ কিছুদিন বাইরে কাটানোর পর একদিন যদিও ফিরে আসে বাগানে তবে এবারে আর ফাগুর ঘরে ফেরে না। ঐ ছেলেটার সাথেই সংসার পাতে লাইনের একপ্রান্তে । 

ফাগু দুর্ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিল । দূর থেকে বউকে দেখতো। জল আনছে, কাপড় মেলছে, বাইকে চেপে শহরে যাচ্ছে। তীব্র অন্তর্দাহে পুড়তে পুড়তেও বউএর মুখে হাসি দেখে ওর ভাল লাগত। ও খুশিতে আছে জেনে অদ্ভুত একটা আনন্দ হতো মনে। মেয়েটাকে যে ও কতটা ভালবাসত, সেকথা কোনও দিন ব্যক্ত করতে পারেনি । নেশা করে ঘরে ফিরলেও গায়ে তোলা দূরের কথা জোরে ধমকও দেয়নি কখনও। সেই ছোটখাটো, গোলগাল, মিষ্টি-নরম মেয়েটার  গায়ে যদি হাত পড়ে সে সইবে কেন! নতুন ভালবাসা যখন বিষ হয়ে ওঠে, পুরনো সংসার আর পুরনো প্রেমের কাছে ফেরার পথও যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন মানুষ নিজেকে শেষ করে ফেলা ছাড়া অন্য পথ খুঁজে পায় না। মেয়েটাও ঐ চরম পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আচ্ছন্ন ঘুমে সে জানতেও পারেনি সে পথে প্রাণপণে কতটা কাঁটা বিছিয়েছে তার পুরনো প্রেম। ভালবাসাকে মরতে দেয়নি ফাগু। ফিরবে, একদিন সে ফিরে আসবেই  বিশ্বাসের  এই ক্ষীণ শিখাটা আগলে হয়ত ও এখনও বসে থাকে, ওর  বিজন ঘরের শূণ্য হাহাকারের ভেতর।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri