সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
15-March,2023 - Wednesday ✍️ By- অমিত কুমার দে 896

রিকিসুম গাঁও

রিকিসুম গাঁও
অমিত কুমার দে
------------------ 

কিছু কিছু মূহুর্তকে বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে করে। মুঠো খুললেই যাতে ইচ্ছে মতন দেখতে পারি! রাশভারী অধ্যাপক পার্থ চৌধুরী উদাত্ত কন্ঠে গাইছেন “যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে”, পাহাড়ি জানালা দিয়ে হুহু করে ঢুকছে শেষ ফাল্গুনের মাতাল হাওয়া, আমাদের ভীষণ প্রিয় ব্যতিক্রমী মানুষ জাতীশ্বর ভারতী-র দু’চোখ দিয়ে অঝোরে নোনা জল গড়াচ্ছে। গানের ঘোর লাগছে সবার ভেতরে। গেয়ে উঠছি আমি “ঘরভরা মোর শূন্যতারই বুকের পরে … জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে…”। গাইছেন সদ্য অবসর নেওয়া কৃতী আধিকারিক স্নিগ্ধ ঠাকুর। গান থামলে সাহিত্যের মানুষ সুব্রত বসু বলছেন – “আমি ফিরব না আজ। এখানে এই পাহাড়েই থেকে যাব। এখানে, এই ঘরে।”
রিকিসুম। হঠাৎ করেই আসা। আমরা ন’জন। আমিই অনুজ। বাকিরা আমার দাদা। তাঁরা সবাই অবসর নিলেও অন্তরে তরুণ। বছরে একটা দিন আমরা চলে যাই নিসর্গের কাছে, অন্য রকম একটা দিন কাটাতে। এক গুচ্ছ মেধাবী মানুষের এই সঙ্গটা অনেকখানি অক্সিজেন জোগায় বলে সারা বছর অপেক্ষায় থাকি।
জলঢাকা নদী পেরোতেই জঙ্গল, বাঁদিকে গরুমারা, ডানে চাপড়ামারি। অরণ্য অনেক ঝরা পাতা আর গাছভরা কচি সবুজে জানান দিল – আজ বসন্ত! এ সময় পাখিদের কী চূড়ান্ত আনন্দ এবং প্রেম! এত ফুলের গন্ধে আমাদেরই কি মাথা ঠিক থাকে? খুনিয়া পেরিয়ে আমরা ছুটছি চালসার দিকে। 
মালবাজারে ঢুকবার আগেই আমরা ডানদিকে ঢুকে পড়লাম মাল নদী চা-বাগান, গুরজংঝোরা চাবাগানের ঢেউ-ঢেউ রাস্তায়। চা-পাতারা তখন মেশিনের জল খাচ্ছে!। জল ছিটে এসে গাড়ির জানালা দিয়ে আমাদেরও খানিক ভেজাল। কী সবুজ, কী সবুজ! দুটি বাগান শরীরে মনে মাখতে মাখতে আমরা পৌঁছে গেলাম মীনগ্লাস চাবাগানে। তারপর ডানে বেঁকে গরুবাথানের দিকে। 
স্নিগ্ধ গাইছেন – কতদূর, আর কতদূর…। রক্তিম ওয়াগনর আর সফেদ ইনোভা পাহাড়মুখী হয়ে ছুটছে! মানব মিত্র আর মৃণাল পাল বলছেন – এত দূরের পথ, রাত্রি বাসের ব্যবস্থা হওয়া উচিত ছিল! দীপক দত্ত-র মনে পড়ছে তাঁর বেপরোয়া বিগত দিনগুলোর কথা, বন্ধু তুষার দত্ত-র সঙ্গে বাইকে বাইকে বন পাহাড় চষে বেড়ানোর দুর্দম দিনগুলোর স্মৃতি। একটানা বলে চলেছেন সেই উদ্দাম দিনগুলোর কথা। তরুণ গাড়িচালক সেই স্মৃতিকে সঙ্গত করার জন্যই বোধহয় চালিয়ে দিল কিশোরকুমার রফি লতা...! আমি দেখছি দিগন্তে পাহাড় ফুটে বের হচ্ছে। কুয়াশার আবছায়া মিলেমিশে একটা অদ্ভুত প্রলেপ। 
পাহাড়ের রূপটান দেখে বিবশ শিবেশ মিশ্র, অবসরপ্রাপ্ত ডাকসাইটে হেডমাস্টারমশাই, তাঁর আদর্শ জীবনবোধ সবসময় প্রাণিত করে। শিবেশদা বারবার বলছেন – “আহা, কী সুন্দর রে।” বলেই চলেছেন – “এই একটা দিনের জন্য কত অপেক্ষা করি। মালদা থেকে কত কাজ ফেলে ছুটে এসেছি। এই সঙ্গগুলো আমার কাছে মহার্ঘ্য।” 
অম্বিয়াক চাবাগান, পাপড়খেতি, লাভা পেরিয়ে আমরা ধরলাম আলগারা-র রাস্তা। হাতের নাগালে উন্নতশির পাইনবন। লাভা থেকে ১৩ কিলোমিটারের মতো গেলেই রোজেন রাইয়ের ‘স্বর্ণশিখর হোমস্টে’। কালিম্পং জেলায় আমরা ঢুকে পড়েছি। খাড়া সিঁড়ি ধরে প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের বরাদ্দ ঘরে ঢুকতেই মন ভালো হয়ে গেল। বাইরে থেকে মনে হচ্ছিল সাদামাটা টিনের চালাঘর। কিন্তু ভেতরে ঢুকে তার কাঠের কাজের ইন্টেরিয়র আমাদের মোহিত করল। জানালা খুললেই পাহাড় আর পাহাড়। ঘরের পাশেই একটা খোলামেলা বসবার জায়গা। রিকিসুম গাঁও আমাদের জন্য বসন্তের অনেক ফুল নিয়ে তৈরি। আমরাও মনে মনে তৈরি হয়ে গেলাম!
হোম-স্টে জুড়ে কত অর্কিড ক্যাকটাস, আর রকমারি ফুল। ছোট ছোট টবে কী যত্ন করে যে লাগানো। আমি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। পাহাড়ি মানুষদের এই ফুল-প্রীতি আমাকে চিরদিন মুগ্ধ করে। ছোট্ট জায়গায় ছোট্ট বাসা, কিন্তু ফুলগাছের তুমুল সমারোহ। চোখ আটকে যায়। এমনটা বারবার হয়। রাখবার জায়গা নেই, কিন্তু কার্নিশে, বারান্দায় ঝুলিয়ে, টিনের চালের ওপর, যেখানে একটু স্থান জোটে সেখানেই একটি দুটি টব বসে পড়ে। এই নান্দনিক বোধ নেপালি ভুটিয়ারা বহুকাল ধরে লালন করছেন। এ যেন তাদের রক্তের সঙ্গেই আঁটা।
কিন্তু রোজেন রাইয়ের জায়গার অভাব নেই। এবং প্রতিটি স্থানকেই তিনি বা তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন। প্রকৃতির অনাবিল দাক্ষিণ্যে ফুলেদের রঙেও রীতিমতো প্লাবন। আর তাই বুঝি স্নিগ্ধ বলে উঠলেন – “হোক না বসন্তকাল, আমার মনে যে বর্ষা ভিড় করছে! একটা ভানুসিংহের পদাবলী গাই?” সবাই একবাক্যে ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ করে উঠতেই স্নিগ্ধ গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলেন - “শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা নিশীথ যামিনী রে…”। আমরা তখন সকলেই মনে মনে বর্ষণস্নাত। সারা শরীর দিয়ে জল গড়াচ্ছে!!
রিকিসুম গাঁও কেমন যেন একাকি। নিজের মতো।  খুব বেশি ঘরবাড়ি চোখে পড়ল না। পরের বার এসে সেসব ঘরবসতের খোঁজে হাঁটব, মনে মনে বললাম। এখান থেকে অনায়াসে ঘুরে আসা যায় লাভা, কোলাখাম, রিশপ, লোলেগাঁও, ডেলো, কালিম্পং ইত্যাদি। স্নিগ্ধ বললেন – শুনেছি এখানে রডোডেনড্রন ফোটে। রক্তদ্রোণের জন্য হয়তো আরো সময় দরকার! কোনও পাহাড়ি ঢালে তারা ফুটে আছে নিশ্চয়! খুঁজতে আসব আবার। 
   
কীভাবে চার-পাঁচটি ঘন্টা পাখনা মেলে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল কেউ যেন টেরই পেলাম না! 
--------------------------------------------------------------------------------------------- 
স্বর্ণশিখর হোমস্টে (রোজেন রাই) : ৯৪৩৪১৪২৭১৯ 
 



   

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri