বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-১৩/রূপন সরকার
বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং
পর্ব-১৩
ড. রূপন সরকার
অধিগ্রহণের পর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমান্তরালভাবে শহরের নাগরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলাটাও ছিল রীতিমত চ্যালেঞ্জের বিষয়। শুরু থেকেই শহরের প্রাথমিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে যায়। এরই মাঝে ১৮৪০ সালে কোম্পনির মেডিকেল অফিসার ড: ক্যাম্পবেলের ওপর দার্জিলিংয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তোলার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই ড: ক্যাম্পবেলই ছিলেন দার্জিলিংয়ের পরিকাঠামো গড়ে তোলার আসল স্থপতি, 'Real Architect' এবং ক্যাম্পবেলই ছিলেন দার্জিলিংয়ের প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট। একদিকে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে শুরু করেছিল, যা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে, তেমনি ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে অন্যদিকে কিছু হোটেল ও ৩০টি প্রাইভেট বাড়ি তৈরি করা হয়। ১৮৫২ সালে দার্জিলিং শহরে বাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০টি। এই সময় শহরের জনবসতি থেকে সরাসরি ৫০ হাজার টাকা কর আদায় হত। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শহরে একটি পার্বত্য বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। ক্যাম্পবেলর হাত ধরেই দার্জিলিংয়ের জনবসতির বিস্তার, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি, ইউরোপীয়দের আবাসস্থল তৈরি, বিনোদন ক্লাব, জেলখানা, দেশীয় বাজার সহ একাধিক পরিকাঠামো গড়ে ওঠে।
ড: ক্যাম্পবেলই ছিলেন দার্জিলিংয়ের পরিকাঠামো গড়ে তোলার মূল কারিগর। যখন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন দার্জিলিংয়ের প্রশাসনিক পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। তিনি ছিলেন একাধারে পুলিশ ও প্রশাসনিক প্রধান এবং রাজনৈতিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তাঁকে অনেক সময় দেওয়ানি মামলার বিচারকের দায়িত্বও পালন করতে হত। একই সাথে তিনি ছিলেন পোষ্ট মাস্টার জেনারেল, ম্যারেজ রেজিস্টার এবং দার্জিলিং স্টেশন ফান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। ড: ক্যাম্পবেলকে পাহাড় ও সমতল সমগ্র জেলার রাস্তা সংস্কার তহবিলের তদারকির দায়িত্বও সামলাতে হয়েছে। শহরের স্থানীয় তহবিলের সভাপতি হিসেবে তিনি সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন। এমনকি ১৮৫০ সালে দার্জিলিং পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর শহরের নাগরিক পরিষেবা প্রদান ও তদারকির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ড: ক্যাম্পবেল। শহরের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারি ছিলেন তিনি। সুতরাং প্রথমে সুপারিন্টেনডেন্ট এবং পরে জেলার প্রথম ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দার্জিলিংয়ের নগরায়ণের গতিকে ত্বরান্বিত করতে অর্থাৎ দার্জিলিং শহর গড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্বে ড: ক্যাম্পবেল এক অতিমানবিক কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। যদিও জেলার প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পরিমান সহকারি কর্মী ছিল না তাঁর কাছে। তবে ৫০-এর দশকের শেষ পর্বে জেলার প্রশাসনিক কাজ তদারকির জন্য বেশ কিছু কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। ফলে তাঁর কার্যকালের শেষে ড: ক্যাম্পবেল প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য এক সংগঠিত আমলাতন্ত্র লাভ করেছিলেন। তিনি যখন বিদায় নেন তখন জেলার প্রাশাসনিক উচ্চপদে ডেপুটি কমিশনার ছাড়াও একজন ডেপুটি মেজিস্ট্রেট, একজন অধঃস্থন বিচারক, একটি প্রাত্যহিক আদালত, একজন আয়কর আধিকারিক, একজন পুলিশ, ফরেষ্ট, ট্রেজারি অফিসার ও অন্যান্য অধঃস্থন কর্মচারী নিয়ে একটি সুবিন্যস্ত আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য তাঁর উত্তরসূরিদের কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴