শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১২
শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব/১২
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^
সবার পরে বলে আশুবাবুর সঙ্গে অনেক কথা হল। আমার এই সৌভাগ্য রবি ঠাকুরের ভাষায়ই বলা যায় 'এত যদি দিলে সখা আরো দিতে হবে।' প্রত্যাশা বেড়েই চলল। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে একটা হোটেলে উঠলাম। পরদিন ফিরব। তখন রিজার্ভেশন পাওয়া খুব মুশকিল ছিল! বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম কলেজ স্ট্রীট। তখন একজন পাবলিশার্সের নাম জানি 'বিশ্বজ্ঞান'কর্ণধার সবার প্রিয় দেবুদা, দেবকুমার বসু। কবিবন্ধু প্রবাল বসুর বাবা। টেমার লেনের ছোট্ট একটা ঘরে বসে ছোটখাটো আবার বিশাল হৃদয়ের মানুষটি। গেলাম পরিচয় দিলাম। উনি যেন আমাকে আগেই চেনেন এমনভাবে টেনে নিলেন। রণজিৎদা, সমীরদার খোঁজ নিলেন। ওনাদের কবিতার বই বেরিয়েছে বিশ্বজ্ঞান থেকো। দেবুদা জানতে চাইলেন কেন এসেছি। ইন্টারভিউ-এর কথা শুনলেন পরে উত্তমদাকে (কবি উত্তম দাশ, সম্পাদক, মহাদিগন্ত) বললেন, দেখুন ওর জন্য কিছু করা যায় কিনা! পরিচয় করিয়ে দিলেন গল্পকার কানাই কুন্ডু, রবীন সুর, আরো অনেকের সঙ্গে। এখন যেমন ভাটপাড়া বলতে রাজনৈতিক নেতার নাম বলে সেইসময় ভাটপাড়া বলতে আমি 'রাবনের সিঁড়ির' কবি রবীন সুর নামেই চিনতাম। এইরকম জয়ন্তী বললে আমার চোখে ভাসে কবি জগন্নাথ বিশ্বাস, বীরপাড়া তুষার বন্দোপাধ্যায়, চাবাগান মানে সনৎ চট্টোপাধ্যায়।
না চাকরিটা হল না। লেখাতেই মন দিলাম।শহরে একটু নামধাম শোনা যাচ্ছিল। এসে গেলো প্রিয় সব অনুজ সমর দেব, স্বপন হালদার, অশোক ব্রহ্ম। আমার ভাঙা ঘরে সাহিত্যের আড্ডা। আশিস ভট্টাচার্য তো ছিলই এবং আমার ভাই শ্যামল। আজকের অসুস্থ শ্যামলকে দেখে বলা মুশকিল শ্যামল ত্রিপুরা থেকে সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে। চিত্রকল্প নিয়ে ওই প্রথম ভেবেছে। পরে 'সাম্প্রতিক'। শরীর ওর মনের সঙ্গ দেয়নি। সমর স্বপন উদ্যোগ নিল অমরদার কবিতার বই বের করার। প্রকাশক 'অলক্ষ্যে'। পৃথিবীর আলো দেখল আমার স্বপ্নকথা। সমর দেব তার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তার কবিতায় মুগ্ধ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। তার উপন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। আমি গর্বিত সমরের সাফল্যে। স্বপন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা পায়নি। আমার কষ্ট হয় শ্যামল আর স্বপনের জন্য। অশোক ব্রহ্ম এই শহরের একজন নামী ডাক্তার, নাট্যকার, অভিনেতা এবং অনুভব নাট্যগোষ্ঠীর জনক ও প্রয়োগপ্রধান। অশোক আজও আমার পারিবারিক ডাক্তার। আমি মুগ্ধ ওর সৃজনে।
প্রথম কবিতার বই একেবারেই সাদামাটা তবু অভাবিত সাড়া পেলাম। প্রমথনাথ বিশী, ডঃ সুকুমার সেন, ডঃ অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায়,ভকবি প্রেমেন্দ্র মিত্র, কবি দিনেশ দাস, আনন্দ বাগচী, নবনীতা দেবসেন আরো আরো। গভীর সম্পর্ক তৈরি হল কবি দিনেশ দাশ, কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র-র সঙ্গে। যে মানুষটি আমার কাছে কবিতা ছাপার জন্য টাকা চেয়েছিলেন তিনিই প্রথম অমিয়ভূষণ মজুমদার,নীরজ বিশ্বাস এমন বিখ্যাতদের সঙ্গে সম্বর্ধনা দিলেন আমাকেও!
আমাদের কোচবিহারের সাহিত্যের আড্ডা নিয়ে যুগান্তর ক্রোড়পত্রে লিখলেন কবি রণজিৎ দেব। স্বপন কুমার রায় যিনি এখন কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে আছেন তিনি এলেন পত্রিকার শিল্প সৌন্দর্য ও নানা পত্রিকার পরিকল্পনা নিয়ে। প্রকাশ পেল 'সাগরদিঘী' পত্রিকা, পরে 'অন্যস্বর' বইমেলায় হৈচৈ ফেলে দেয় আমাদের একফর্মার বই ও কবিতার ফ্ল্যাপ। পরিচিতির গন্ডি বড় হচ্ছে।অরুণেশ ঘোষ, নিত্য মালাকার, সন্তোষ সিংহ, বিশ্বনাথ দাশ প্রমুখ কবি লেখকদের সঙ্গে। অকালপ্রয়াত শিল্পী পবিত্র দাস গীতিকার স্বপন দাশ। স্বপন প্রিয় স্বপন দাশ চলে গেল এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে।আমরা হারালাম এক সম্ভবনাময় গীতিকারকে। আমি তখন সংগীত নাটক জগতের সংবাদ সংগ্রহ করি। রাত জেগে ভবানী সিনেমা হলে ক্লাসিক্যাল অনুষ্ঠান দেখি। ধীরেন বসুর গান, বন্দনা সেনের নাচ, ক্যালকাটা কয়ার, ভূপেন হাজারিকার সংগীত পরিবেশন নিয়ে লিখি। কিছু উপার্জন হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴