সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 442

শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-১২
বিমল দেবনাথ
--------------------

ডিং ডিং ডং ডং …
মোবাইল ফোন বেজে উঠে অপরূপার।  অপরূপা অংশুর পাশ থেকে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ড্রয়িংরুমের র‍্যাক থেকে ফোন তোলে। সেই সকালবেলায় বিকাশ বেরিয়েছে, এখনও একবারও ফোন করেনি। বিকাশ এই রকমই। অযথা ফোন করে না। ওর কাছে ফোন হল খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্যাজেট। ফোন করে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে কেটে দেবে। ফোনে অযথা গাল-গল্প  পছন্দ নয়।  খাস গল্প তো বাদই দাও। অযথা কথা বলা মানে রিসোর্সের অপচয়। অপরূপার মনে হয় – মনেরও তো খোরাক চাই। মন হল সব থেকে দামী সম্পদ।  কত দিন পর পর বিকাশের সাথে দেখা হয়, ফোনে মাঝে মধ্যে একটু খোস- গল্প করবে তার উপায় নেই। ফোন করে দরকারি কথা সেরে ফোন কেটে দেয়। অপরূপার খুব  রাগ হয়। অফিসের বস, কলিগদের সাথে কথা বলার সময় সময়ের হিসাব থাকে না। বউ’এর বেলায় সব।  মাঝে মাঝে মনে হয় পাশে থাকলে খামচে লাল করে দিত। তারও উপায় নেই। কত দিন পর পর দেখা হয়! তত দিনে রাগ ফুল হয়ে যায়। অভিমানের রাগ হল ফুলের কুঁড়ি। যত বেশি অভিমান তত রঙিন ফুল।  অপরূপা বুঝতে পারে ওর গাল গোলাপি হয়ে উঠছে। ফোন ধরে…
- হ্যালো…
- মাধুরী, বল। সবাই ভালো তো…
- আর বলো না। সকালে বিকাশ বেরিয়ে গেল; তারপর ছেলেটার জ্বর এল। ওর পাশেই বসে ছিলাম।
- সেই তো। এখন এই করোনা কালে জ্বর-জামারি হলে কত চিন্তা হয়; বল।
- না না আসতে হবে না। এটা সীজন চেঞ্জের ফীবার...মনে হয়
- বল না। অত সংকোচ করছ কেন…

অপরুপা ভাবে করোনার আবার কোন সিমটম বের হল নাকি। এই করোনা কালে ছেলেটার আবার জ্বর এল। এখন সৌজন্য প্রকাশের এই হয়েছে এক ধারা।  ফোন হলেই কোভিড-১৯ নিয়ে কথা আসবেই।  উপদেশ নিতেও হবে দিতেও হবে। উপদেশ না নিলে তুমি করোনা সম্পর্কে ক্যাজুয়াল আর উপদেশ দিতে না পারলে তুমি ব্যাক-ডেটেড।     

- মাধুরী বল কী বলবে?
- খবর দেখব? দাঁড়াও খুলছি …

অপরূপার বুকের ভিতর সেঁকা লাগে। মনে হয় গলাটা যেন  শুকিয়ে উঠছে।  ভাবে, আবার কার কী হোল। এই সময় কালে কোন ভালো খবর তো আসে না। এর মধ্যে কত জানা প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেছে চোখের আঙিনা থাকে। ওরা যে মনের আঙিনায় ঘুরে- ফিরে; কাঁদে। 
- আচ্ছা। রাখ মাধুরী, পরে ফোন করব।  
অপরূপা টিভি অন করে। খবরের চ্যানেল দ্যাখে। ট্যাগ লাইনে স্ক্রোল হচ্ছে। বাইসনের আক্রমনে গ্রামবাসীর মৃত্যু। বন আধিকারিক আক্রান্ত এবং সরকারী গাড়ি ভাঙচুর...

অপরুপা বিকাশকে ফোনে ধরতে চায়। বার বার ফোন রিং হয়ে যায়। বিকাশ ফোন রিসিভ করে না। অংশুর পাশে বসে অংশুর মাথায় হাত বুলায় … ছেলের মুখ দেখে অপরূপার মনে একটা নৌকা প্রশস্ত নদীর এক পাড় ছেড়ে কোথায় যেন পাড়ি দিচ্ছে ক্রমশ … অপরূপা শালসিঁড়ির মতো বিকাশকে খোঁজে। বিকাশই তো এই নৌকার হাল। অপরূপা আবার ফোনে রিং করে। ফোন বেজে চলে ডিং ডং ডিং ডং …

 বিকাশ একটা অন্ধকার কূপের মধ্যে বসে আছে। ওর চার দিকে কত হাজার লোক আছে সে জানে না। এই লোকগুলো যেন এখন ইট - প্রাণহীন কঠিন। গাউরটি পরিবহণ গাড়িতে ওঠানো হলেও তখনও গ্রাম ছেড়ে বের হয়নি। মাস্টারমশাইরা শেষে দেশলাইয়ের কাজটা করেই দিল। সাবিত্রীর মৃত্যুর খবরটা ছড়িয়ে দিল দাবানলের মতো। যে কোন মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু এক মৃত্যুকে ঘিরে অনেক মৃত্যুর উন্মাদনা খুব ভয়ানক। সাবিত্রীর মৃত্যুর খবরে হাজার হাজার লোক ক্ষ্যাপা ভীমরুলের মত ঝেঁকে ধরে বন-কর্মীদের। ভীমরুলের মতো হুল ঢোকাতে থাকে যত্র-তত্র। হুলের বিষাক্ত ব্যথা থেকে বাঁচতে কে যে কোথায় জনঅরণ্যে হারিয়ে গেছে বিকাশ জানে না। এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। গাউরটিকে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি বনে পাঠাতে হবে। গাউরের হৃদয় বড় দুর্বল। অল্প উত্তেজনাতেই কাজ বন্ধ করে দেয়। একটা প্রাণ চলে গেছে আর একটা প্রাণ যাবে যাবে করছে। প্রাণ গেলে প্রাণ ফিরে আসে না। একটা প্রাণ চলে গেলে কী শুধু প্রাণ যায় - চলে যায় কত কিছু। 

বিকাশ একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে নিলয় ও নির্মল বাবু। হাজার হুল ফোটার পরও নির্মল বাবু ও নিলয় বিকাশকে ছেড়ে যায়নি। বিকাশ যেন হাজার লোকের আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দু। মাঝে মধ্যে জনরোষ এত উত্তাল হয়; মনে হয় তক্ষণই ছাদ ভেঙে পড়ে মাথার উপরে। বিকাশ,নিলয়,নির্মল বাবু তখন পাথর। বিকাশ জানে এখন সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়ই পারে মৃত্যুশোক এবং ক্রোধ প্রশমিত করতে। তাই এখন হাজার হাজার প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই; থাকতে নেই। শেষে উত্তর খুঁজতে এসে হাজির হয় মাস্টারমশাই।  সবাই আবার এমন চিৎকার করল যেন আকাশ ফেটে বজ্রপাত হল। সবার বিশ্বাস মাস্টারমশাই এবার হিসাব নেবে। মাস্টারমশাই বলে-
- বলুন সাবিত্রীর কী হবে। 
বিকাশ কী বলল কিছু শোনা গেল না। চারদিক থেকে এমন চিৎকার চেঁচামেচি- কোনো কথা বলা যায় না। মাস্টারমশাই বলে, সবাই চুপ করুন। ফয়সালা করে নিই।

বিকাশ জানে - মৃত্যুকে সামনে রেখে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে কথা বলা বড় কঠিন। আগেও কয়েকবার এই রকমের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনো মৃত্যু নিয়ে হঠকারিতা ওর পছন্দ নয়। মৃত্যু শুধু সব নিয়ে যায় না। দিয়ে যায় কত কী। একটা মৃত্যু যদি একটি সম্ভাবনা নিয়ে যায়, দিয়ে যায় হাজার সম্ভাবনার জন্ম। এই মৃত্যু গর্বের। এই রকম কত মৃত্যু আছে - মাস্টারদা, বিনয় বাদল দীনেশ, ক্ষুদীরাম… 

বিকাশ বলে-  গাউরটাকে কি নিয়ে গেছে?
হাজার লোকের কান ফাটানো গগন ভেদী চিৎকারে জানান দেয় “না”। বিকাশ মাস্টারমশাইকে বলে- 
- আমার স্টাফদের গাউরটিকে নিয়ে যেতে দিন।
আবার হাজার লোকের চিৎকার-“না। যেতে দিবো না। ওই বাইসনটা খুনি। খুনের বদলে খুন চাই”।  
বিকাশ বলে-
- মাস্টার মশাই- আপনি জানেন অনিচ্ছাকৃত খুন আর ইচ্ছাকৃত খুনের শাস্তি কিন্তু ভিন্ন। আমি এখানে আছি - আপনাদের সব উত্তর দিয়ে তবেই এই গ্রাম  ছাড়বো। নিরীহ প্রাণীটিকে বাঁচতে দিন। গাউরটিকে  নিয়ে যেতে দিন। 

এর মধ্যে কতগুলো লোক হারানকে বিকাশের কাছে নিয়ে আসে। আবার যেন জনরোষে ঘি ঢেলে দেয়। বিকাশ নিজের চেয়ারে হারানকে বাসায়। আবার বলে-

- মাস্টারমশাই গাউরটিকে নিয়ে যেতে দিন। আমি আছি এখানে। আপনারা যতক্ষণ আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন না, আমি এখানেই আছি - দরকারে সারা রাত।

চেয়ার পাগল মাস্টারমশাই জানে চেয়ারের কী মাহাত্ম। মাস্টারমশাই বলে-
- দেখছি। একটু সময় দিন।
- একটু তাড়াতাড়ি করবেন প্লীজ। 

মাস্টার মশাই হারিয়ে যায় আবার জনঅরণ্যে। ক্ষ্যাপা লোকগুলো রাণী মৌমাছির পিছু নেওয়া মৌমাছির মতো মাস্টারমশাইয়ের পিছু নেয়। কিছু হুলহীন মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিকাশের চারপাশে। বিকাশ  হারানকে দেখে। যে লোকগুলো সবিত্রীর ‘কী হবে কী হবে’ করছিল, তারা এখন এখানে নেই। তারা একবারও ভাবেনি নিঃসন্তান হারানের কী হবে। যে চলে গেল তার জন্য চিন্তা,  যে আছে তার কথা কেউ বলছে না। এই লোকগুলো কি ভাবছে বিকাশ জানে। সুযোগসন্ধানীরা পরিস্থিতির ফয়দা তুলতে ওস্তাদ।  বিকাশ হারানকে দেখে। সাবিত্রী ছাড়া নিঃসন্তান হারানের অবস্থা কী স্কারলেট ম্যাকাও বা আটলান্টিক পাফিনের মতো হবে? এরা তো সারা জীবনের জন্যে জোড় বাঁধে। হারানকে দেখে বিকাশের ধনেশ পাখির কথা মনে আসে। হারান আর কার জন্যে যজমানি করবে। ঘর যে ওর শূন্য হয়ে গেল। বিকাশের নিজের ঘরের কথা মনে পড়ে। বিপদে, কী হলে কী হবে- এই রকম কত কী মনে পড়ে। অপরূপা-অংশুর কী হবে। বিকাশ অপরূপাও তো ধনেশের মতো। উড়ন্ত পাখি সংসার করতে যখন গাছের কোটরে ঢোকে আর  বের হয় না। বের হয় সন্তান বড় করে। নিজের ও সন্তানের জীবন নির্ভর করে সাথীর উপর। এই সাথী জীবনের; এই সাথী মরণের। উড়ন্ত পাখি মরে গেলে সংসারের পাখি মরে যাবে সংসার নিয়ে। তাই তো পুরুষ ধনেশ নিয়ম শৃংখলার ব্যতিক্রম ঘটায় না একটুও। প্রতিদিন এক ভাবে এক সময় এক দিক থেকে খাদ্য দিয়ে যায় কোটরের স্ত্রী পাখিকে। এই এক অটুট বাঁধন – বিশ্বাস। বিকাশের নিজেকে অসহায় মনে হয়। প্রাণ বাঁচাতে প্রাণ কাঁদে - আবার কেউ প্রাণ বাঁচাতে প্রাণ কাড়ে। বিকাশ হারানের কাঁধে হাত রাখে। মাস্টারমশাই হৈ হৈ করে এসে বিকাশের সামনে দাঁড়ায়। বলে-
- আপনার বাইসনকে নিয়ে চলে গেছে। 
বিকাশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে - আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। 
- বলুন কেন প্রায় ২৫ কিলমিটার দূর থেকে বাইসন এই গ্রামে এল। বাইসনটি না এলে তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
- ঠিক। তবে মোটেও ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে আসেনি। এসেছে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূর থেকে। 
- সেটা কী করে?
- দেখুন মাস্টারমশাই। আমরা আসি আমাদের তৈরি রাস্তায়। আর বনের প্রাণী চলে তাদের রাস্তায়। নদীটির উপর একটা ব্রীজ থাকলেই বনটা এখান থেকে ৩ কিলোমিটার হবে। 
- সে হোক। বনের প্রাণীকে বনে বেঁধে রাখতে পারেন না? 

বিকাশ বুঝতে পারে এই লোকগুলোর উদ্দেশ্য মোটেও হারানের ও সাবিত্রীর উপকারের জন্য নয়। তাদের নিজস্ব কিছু স্বার্থ সিদ্ধি করার একটা মরিয়া চেষ্টা করবে। বিকাশ বলে-
- দেখুন, এই কথার এক কথায় কোন উত্তর নেই। এখন সাবিত্রীর যাবতীয় ব্যবস্থা করা দরকার। হারানের খেয়াল রাখা দরকার। 
- কি আর করবেন, সাবিত্রীকে তো ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। 
- না সে তো ফেরানো যাবে না। তবে তাঁর পোস্টমর্টেম করানো ইত্যাদি অনেক কাজ আছে। সেইগুলো কাজের ব্যবস্থা করুন।

কিছু লোক আবার চিৎকার শুরু করল, বাইসন কেন গ্রামে এল জবাব চাই। বিকাশ এখন অনেক চাপ মুক্ত। গাউরকে বনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। গাউরের সাথে অন্য সব সাপোর্ট স্টাফও চলে গেছে। গাউরের জীবন বাঁচাতে বিকাশ নিজেকে বন্ধক রেখেছে - স্বেচ্ছায়। নিলয়, নির্মলবাবু নিজেদের বিকাশের সাথে যুক্ত রেখেছে দায়িত্ববোধ থেকে। শালগাছের সাথে চাপ, চিলৌনি গাছের মতো। বিকাশ জানে খুন ধর্ষণ সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এই লোকগুলো আর যাই হোক খুনি হতে পারে না। হয়তো আবেগের ক্ষোভের সাথে ক্ষুদ্র স্বার্থের প্রাপ্তির লোভ যুক্ত হওয়াতে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বিকাশ জানে এই সব ঘটনার জন্য কী কী আইনি ব্যবস্থা আছে। এই সব ঘটনার জন্য সরকারী কী সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। বিকাশ বুঝতে পারে এবার ওকে আক্রমণ করতে হবে। “এ্যাটাক ইস দি বেস্ট ডিফেন্স”। বিকাশ বলে-

- হাওয়াকে ঘরে প্রবেশ বন্ধ করাতে পারবেন? পারবেন না। হাওয়া বন্ধ হলে বাঁচতে পারবেন? পারবেন না। সেই রকম বন্য প্রাণ অবাধ। বন্যপ্রানীরা কখন কী করবে কেউ কখনো বুঝতে পারে না বলেই ওদের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বন্যপ্রাণের বিচরণ অবাধ বলেই সরকার নিয়ম নীতি করেছে।
সবাই আবার হৈ হৈ করে উঠল। বলে- 
- কিসের আইন। মানুষ মারার আইন। তাহলে আমরা আপনাদের মেরে দিচ্ছি। 
কে কোন কথা বলছে বোঝা দায়। আবার বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হয়। বেগতিক দেখে মাস্টারমশাই আবার সবাইকে থামতে বলে।
- আরে তোরা একটু থাম। কথা বলতে দে। সব মিলিয়ে দিচ্ছি। বিকাশকে বলে -
- অত আইন কানুন না দেখিয়ে একটু মিলিয়ে নিন। সারা দিন লোকগুলো কোন কাজ কর্ম করতে পারল না। কত জমির গম নষ্ট হল। হারানের বউটা মারা গেল। কত কাজ করতে হবে। ওদের কিছু নগদ টাকা দিয়ে দিন।
- না; সে তো সম্ভব নয়। প্রথমত আমরা যখন এই রকম জরুরী খবর পাই তখন এত দ্রুততার সাথে আপনাদের বাঁচাতে ছুটতে হয় যে আমাদের নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতে হয়। এছাড়া মিলানোর কিছু নেই। যা নিয়মে হবার তাই হবে। 
- কী হবে। 
- যার যা ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেবে আবেদন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে। 
- আর এই ছেলেগুলো যে সারাদিন খাটলো। তাদের কী হবে।
- আমি ওদের থাকতে বলিনি। আর ওরা যে কাজটি করল তাতেই তো এত বিড়ম্বনা হল। ওরা না থাকলে গাউরটি তাড়াতাড়ি ধরা যেত এবং সাবিত্রীর দেখভাল আমি নিজে করতে পারতাম। সে আর হল কই। 
- বেশ, তাহলে তো সব মিটেই গেল। তাহলে আমিও চললাম।
সঙ্গে সঙ্গে কিছু লোকজন হৈচৈ শুরু করে। ধর মার বলে লাফালাফি শুরু করে। সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু। বিকাশ বলে- 
- সে আপনি যেতেই পারেন। কিন্তু আমাকে যেতে না দিলে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব সারা রাত। তাতে আমার যদি কিছু হয় আইন আপনাকেও রেয়াত করবে না। এতক্ষণে সবাই জানে যে আপনি ও আপনার দলবল আমার কাজে সাহায্য বা বাঁধা সব সৃষ্টি করেছেন। 
- তাই বুঝি। 
- হ্যাঁ।
- আপনি তো একদম নন কোঅপারেটিভ। এই চল সবাই। এর দ্বারা কিস্যূ হবে না। উপরে পাঠানোর জন্যে মাস্ পিটিশন লিখি। এমন ব্যবস্থা করব না সারা জীবন মনে থাকবে।

এই বলে সবাই এক এক করে চলে যায়। বসে থাকে স্ত্রী-হারা হারাধন। বিকাশ বলে- 
- চলুন, আপনার বাড়ি যাই। আপনাকে বাড়ি ছেড়ে আসি। সাথে জোটে হারাধনের খুব কাছের কিছু মানুষ- যারা এতক্ষণ ছিল নিষ্প্রভ ‌। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যায়। পুব আকাশে চাঁদ দেখা দেয়। বিকাশের মনে হয়, চাঁদের আলোয় যেন প্রিয় মানুষদের খুব সুন্দর দেখতে হয়। বিকাশ হারাধনকে ঘরে দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে। হারাধনের কাছের মানুষদের বলে-
- আগামীকাল হাসপাতালে যাবেন। সাবিত্রী দেবীর পোষ্টমর্টেম হবে। তারপর ওনাকে নিয়ে এসে সব কাজ কর্ম করবেন। আমার কর্মীরা সব সময় সাহায্য করবে। আর ক্ষতিপূরণের টাকা যথা সময়ে হারাধনের ব্যাংকে জমা পড়ে যাবে। সাবিত্রীর কাজকর্মে যা খরচ হবে সেটা ক্ষতিপূরণ অর্থ থেকে বাদ যাবে। বুঝতে পারলেন? 
সবাই সম্মতি জানায়। বিকাশ, নিলয় নির্মলবাবু রওনা দেয় বনের উদ্দেশ্যে। বিকাশের মন ছটফট করে গাউরের জন্য। সাপোর্ট টিমকে ফোন করতে গিয়ে দেখে অপরূপার অনেক মিসড কল...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri