সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-December,2022 - Friday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 362

বাগানিয়া জার্নাল-১২

বাগানিয়া জার্নাল
পর্ব।।বারো।।
শিশির রায়নাথ
^^^^^^^^^^^^^^^^

চা-শিল্পের কাঁচামাল চা-পাতা আসে যেখান থেকে সেই চা-গাছ সম্পর্কে কিছু কথা এবার জেনে নেওয়া যাক।

যখন চায়ের কাঁচা পাতা ওষধি হিসেবে চিবিয়ে বা জলে ফুটিয়ে খাওয়া হত – তখন তা জোগাড় করা হত পাহাড়ে-জঙ্গলে প্রকৃতিক ভাবে জন্মানো চা-গাছ থেকে।

পরে পাতা জলে ফুটিয়ে পানীয় (beverage) করে খাবার চল হল। ক্রমশ সে চল বাড়তে লাগল। ফলে চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেবার জন্য  চা-চাষের (cultivation) প্রয়োজন দেখা দিল।অর্থাৎ বুনো চা গাছকে গৃহপালিত (domesticated) করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল। 

চিনের ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ থেকে খৃষ্টপূর্ব ১০০০ সাল নাগাদ  অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় তিনহাজার বছর আগে চিনের সিচুয়ান এবং ইউনান প্রদেশে চা-খামারের অস্তিত্বের অবিসংবাদিত  প্রমাণ পাওয়া গ্যাছে।

কয়েক হাজার বছর ধরেই চায়ের নতুন চারা তৈরি করা হত চায়ের বীজ থেকে।চায়ের একচেটিয়াত্ব (monopoly) বজায় রাখার জন্য অর্থাৎ চা চাষ যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারে, চীন সম্রাটের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাই  ভারতবর্ষে চা-চাষের সূচনা করার জন্য ইংরেজরা চীন থেকে বিভিন্ন উপায়ে চোরা পথে সে বীজ এবং চারা নিয়ে এসেছিল বহুবার।

আগে চায়ের বীজকে সরাসরি বাগানে পুঁতে গাছ করা হত। এখন নার্সারীতে বীজ থেকে চারা তৈরি করে বাগানে নিয়ে গিয়ে লাগানো হয়। যদিও বীজ থেকে চারা তৈরির পরিবর্তে এখন প্রধানত কলম (grafting) করে চারা তৈরি করা হয় – তবুও বীজের চারা করার প্রথা পুরোপুরি উঠে যায় নি। এখনও কিছু কিছু বাগানে চায়ের বীজ সংগ্রহ করার জন্য ‘সিডবাড়ি’ (Seedbari) বা গুটিবাড়ি (Guti-Bari)আছে – যেখানে কিছু চা-গাছকে আলাদা করে রাখা হয় -সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করার জন্য।

তবে বীজ থেকে চারা তৈরির থেকে এখন বেশী ব্যবহার করা হয় ক্লোন (clone) করা চা-গাছ যা তৈরি করা হয় কলম করে (grafting) এবং টিস্যু কালচার (Tissue Culture) করে – অর্থাৎ একাধিক জাতের চা-গাছের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উন্নততর সংকর (hybrid) তৈরি করে। এব্যাপারে রিসার্চ করার জন্য দেশে দেশে নানা প্রতিষ্ঠান আছে। চিনদেশের হাংঝউ (Hangzhou)-তে আছে Tea Research Institure (TRI)। আমাদের দেশে আসামের জোড়হাটে  টোকলাই নদীর ধারে  গড়ে উঠেছে Tea Research Association (TRA)। এর প্রাথমিক সূত্রপাত হয়েছিল ১৯০০ খৃষ্টাব্দে।ভারতীয় চা চাষের যাবতীয় রিসার্চ করা হয় এই Tocklai Tea Research Institute, Jorhat (TTRI) -যা এই ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম।এর একটা শাখা আছে আমাদের নাগরাকাটায়।
এছাড়া দার্জিলিং-এর কার্শিয়াং-এ আছে Darjeeling Tea Research and Development Centre (DTR&DC); তামিলনাড়ুর কোয়াম্বাটুরে আছে UPASI Tea Research Foundation।

এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নানা রকমের চাষ-যোগ্য (cultivars)  কলমের  (Clone) এবং সংকর (hybrid) প্রজাতির চা গাছ তৈরি করা হয়। যেমন টিআরএ টোকলাই-এর আছে TV-1 থেকে TV-31, TTRI-1,TTRI-2  ইত্যাদি ; তেমনই  UPASI-র আছে এরকম বত্রিশটা ক্লোনঃ UPASI-1 থেক UPASI-28, TRF-4, CR-6017 ইত্যাদি।দার্জিলিং-এর ক্ষেত্রেও তেমনি আছে DTR&DC-র ক্লোন T-78,P312,AV-2, B-157 ইত্যাদি।

চায়ের বীজ থেকেও নানা রকমের ক্লোন তৈরি করা হয়। যে বাগানের চা-গাছ থেকে ক্লোন তৈরি হয় সেই বাগানের নামেই সেই ক্লোনের পরিচয় - যেমন তিনালি বাগান থেকে তিনালি (১৭/১/৫৪), পানিতোলা বাগানের P38,P133 ইত্যাদি, মার্গারিটা বাগানের MRG-1,MRG-2 ইত্যাদি। 
জলপাইগুড়ি জেলার আমবাড়ি চা বাগানের মালিক-কাম-প্ল্যান্টার বলাই সাহা ১৯৬০ সাল নাগাদ এরকম এক ক্লোন তৈরি করেন যার নাম রাখা হয় AB2 (Ambari Balai 2)। TRA-র পরীক্ষায় তা উত্তীর্ণ হয়ে নাম পায় AV2 (Ambari Vegetative 2)। এই চাগাছের পাতা-উৎপাদনের ক্ষমতা (yield) কম হলেও সুগন্ধ (Flavour) অত্যন্ত বেশী ও আকর্ষক। ফলে দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল এবং পাদদেশে এই গাছের চাহিদা অত্যন্ত বেশী।

এদের মধ্যে কিছু ক্লোন ‘High Yielding’ মানে অন্য গাছের তুলনায় বেশী পাতা দেয়; কেউ আবার উচ্চ গুণমানের (High Quality)। কোন ক্লোনের চা খুব ভাল হয় কিন্তু গাছে পোকার আক্রমণ বেশী হয়; কোন ক্লোন এত তাড়াতাড়ি বাড়ে যে পাতা তুলতে দেরী হলে সে পাতা দিয়ে ভালো চা বানানো যায় না – আঁশে ভরে যায়। এসব থেকে বেছে নিয়েই চাবাগানগুলো নিজেদের প্রয়োজন ও পরিবেশ অনুযায়ী চারাগাছ লাগান। 

চারা বাছাবাছির ক্ষেত্রে দেখা হয় গাছ বছরভরে কত নতুন পাতা দিতে পারে (yield), সারা বছর প্রায় একই রকম পাতা দিতে পারে কিনা, তৈরি চায়ের সুগন্ধ (flavour) কেমন, তৈরি চায়ে কেমন আঁশ (fibre) থাকে ( যত কম আঁশ তত ভালো), গাছে পোকামাকড় কেমন লাগে (কোন কোন জাতের গাছে পোকামাকড় বেশী লাগে), গাছের রোগ-ভোগ কেমন হয়, খরা এবং অতিবৃষ্টি কেমন সহ্য করতে পারে...ইত্যাদি।

চায়ের নার্সারীকে বাগানিয়া ভাষায় বলে ‘বাচ্চাবাড়ি’। সেখানে চায়ের চারা বানিয়ে একটু বড় করে মাটিতে লাগানো হয়। সেজন্য মাটিকে আগে তৈরি করে রাখতে হয়। 

চা-গাছের মৃত্যুহার (mortality rate) খুব কম। একটা চা-গাছ একশ বছরেরও বেশী বাঁচে অনায়াসে। ডুয়ার্সের বান্ধাপানি চা বাগানে আমি একটা গাছ দেখেছি যার বয়স একশ কুড়ি বছরেরও বেশী। সেটা আড়াআড়ি দৈর্ঘ্য–প্রস্থে (নিজে মেপে দেখেছি) ২৪ ফুট X ২২ ফুট। গাছটা এখনও বেঁচে আছে বলে শুনেছি। 

তবে এখানে একটা কথা আছে।
সমস্ত শিল্পের মত চা-শিল্পেও  আয়-ব্যয়ের (cost-benefit) একটা হিসাব আছে। অর্থাৎ যত টাকা একটা চা-গাছকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, পরিচর্চার জন্য (সার, জলসেচ, কীটনাশক, শ্রমদিবস)  বছরভর ব্যয় করা হয় - তার পরিবর্তে তার বছরভর কাঁচা পাতা উৎপাদন ক্ষমতা (yield) – এ দুটোর হিসাব তুলনা করা। প্রাকৃতিক নিয়মেই ছোট চারা গাছ যত বড় হতে থাকে তত বছরভর বেশী পাতা দিতে দিতে একসময়ে তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় – যার পর সেই গাছ আর পাতা বাড়াতে পারে না। সেই অবস্থায় সে আরো বেশ কয়েক বছর পাতা দিয়ে যায়। অবশেষে বুড়ো হতে শুরু করে; প্রাকৃতিক নিয়মেই তার পাতার উৎপাদন ক্ষমতা কমতে থাকে। তখন তার পিছনে ব্যয়িত অর্থ আর তার পাতার পরিমাণ থেকে উঠে আসা আয় দিয়ে পোষায় না। অর্থাৎ গাছটা ‘অকেজো’ হয়ে পড়ে। গাছের যে বয়স পর্যন্ত এই ‘কস্ট-বেনিফিট’টা বজায় থাকে তাকে বলে ‘বাণিজ্যিক কার্যকারিতা’ (Commercial viability)। বীজ থেকে তৈরি চা-গাছের ক্ষেত্রে এর গড় বয়স ধরা হয় ষাট বছর (মানুষের অবসরের বয়সের মতই)। আর ক্লোন চা গাছের ক্ষেত্রে তা গড়ে চল্লিশ বছর। এরপর সেই চা গাছ উঠিয়ে আবার নতুন চারা গাছ লাগাতে হয় – বাগানিয়া ভাষায় তাকে বলে Re-planting। সময় মত রি-প্ল্যান্টিং অত্যন্ত জরুরী। আজকের কিছু বাগানের দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ার একটা অন্যতম কারণ - সময়মতো রি-প্ল্যান্টিং না করায় বাগানের Yield অত্যন্ত কমে যাওয়া। সে কথা বিস্তারিত আলোচিত হবে পরে …
------------------------------------------------------------
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri